নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের লাগি কলম ধরি\nমিথ্যাকে করি বিনাশ,\nসত্যের বাধা যতই থাকুক\nমিথ্যার হবে সর্বনাশ।

এন এম মিলন

সত্যের লাগি কলম ধরি মিথ্যাকে করি বিনাশ,সত্যের বাধা যতই থাকুক মিথ্যার হবে সর্বনাশ।

এন এম মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫

নিবন্ধ : কবিতার সংজ্ঞা
যদিও বা কবিতা সাহিত্যের প্রাচীনতম
শাখা। তবুও আজ পর্যন্ত কবিতার
সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা পাওয়া যায়
নাই। একেক জনের দৃষ্টিতে কবিতার
সংজ্ঞা এক-এক রকম স্বাদ পেয়েছে।
কবিতা কখনো হয়েছে আবেগ কেন্দ্রিক ,
কখনো অনুভূতিপ্রবণ মনের বহিঃপ্রকাশ,
কখনো সমকালের মুখপাত্র, কখনো
শাব্দিক ঝংকার, কখনো বেদনাবিধুর
হৃদয়ের কান্না, কখনো শোকাহত হৃদয়ের
আর্তনাদ, কখনো সংগ্রামী স্বশস্ত্র
সৈনিক, কখনোবা অধিকার বঞ্চিত
শ্রমজীবি মানুষের মুখপাত্র । কবিতার
জন্য কবিতার সৃষ্টি; আর কারো জন্য নয়।
মানুষের মন থেকে আগত যে কোন ভাব,
মস্তিষ্ক ব্যবহারে ভাবনা, দক্ষতার সাথে
তার পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি ছন্দোবদ্ধ
আকারে প্রকাশই পদ্য। কেউ কেউ স্বীকার
করেন ,” পয়েট্রি ইজ ইমিটিশন অব
লাইফ,ক্রিটিসিজম অব লাইফ,মিরর অব
লাইফ”। এটাই যে কবিতার সংজ্ঞা প্রকৃত
তা কিন্তু নয়।
হুমায়ুন আজাদের মতে, ‘যা পুরোপুরি বুঝে
উঠবো না, বুকে ওষ্ঠে হৃৎপিণ্ডে রক্তে
মেধায় সম্পূর্ণ পাবো না; যা আমি
অনুপস্থিত হয়ে যাওয়ার পরও, রহস্য রয়ে
যাবে রক্তের কাছে,তার নাম কবিতা।’
জটিল কাব্যিক সংজ্ঞা এটি। আসুন এর
ভিতরে প্রবেশ করি। ‘যা পুরোপুরি বুঝে
উঠবো না’ অর্থাৎ কিছুটা বুঝে
উঠবো।’বুকে ওষ্ঠে হৃৎপিণ্ডে রক্তে মেধায়
সম্পূর্ণ পাবো না’ অর্থাৎ আংশিক
পাবো। ‘যা আমি অনুপস্থিত হয়ে যাওয়ার
পরও, রহস্য রয়ে যাবে রক্তের কাছে’
অর্থাৎ মৃত্যুর পরো যার রহস্য নিয়ে
আলোচনা হবে। সম্ভবত তার নাম কবিতা।
‘আমি কবিতা লিখি অনায়াসে । যেমন
সকলেরই ক্ষেত্রে জীবনের আশে-পাশে
অসংখ্য সুলভ দুর্লভ মুহুর্ত নানা রূপে
অনাবৃত হয়েছে আমার সামনে ।আমি কোন
কোন সময় সেই সব মহুর্তের স্বাক্ষর
লিপিবদ্ধ করেছি সত্য-বিচ্যুতি না
ঘটিয়ে। সেই আমার কবিতা।’ অসম্ভব
অর্থপূর্ণ একটি সংজ্ঞা। সিকানদার আবু
জাফরের এই আলোচনা থেকে একটা বিষয়
পরিষ্কার হয় , আমার চোখের সামনে যা
দেখি তাকে অনুভব করেই যা সৃষ্টি হয় তাই
কবিতা।
কবিতা বোঝার বিষয় নয়, এটাকে অনুভব
করতে হয়। কারণ কবি সম্ভবত বুঝেসুঝে
কবিতা লেখেন না; কেবল মাত্র বিষয়কে
সামনে রেখে তাকে অনুভব করেই কবিতার
জন্ম হয়। বুদ্ধদেব বসু এ সম্পর্কে গভীর
ভাবে আলোচনা করেছেন তার
লেখনীতে। ‘ কবিতা সম্বন্ধে ‘বোঝা’
কথাটাই অপ্রসঙ্গিক। কবিতা আমরা
বুঝিনা, কবিতা আমরা অনুভব করি।
কবিতা আমাদের ‘বোঝায়’ না ; স্পর্শ
করে , স্হাপন করে একটা সংযোগ। ভালো
কবিতার প্রধান লক্ষণই এই যে তা ‘বোঝা’
যাবে না , ‘বোঝানো ‘ যাবে না ।’ …
বুদ্ধদেব বসু।
সর্বোত্তম ভাবের সাথে সর্বোত্তম
শব্দের সংযোগই পারে সর্বোত্তম কবিতা
সৃষ্টি করতে। সৈয়দ শামসুল হকের মতে
, ‘কবিতা হচ্ছে সর্বোত্তম ভাবের
সর্বোত্তম শব্দের সর্বোত্তম প্রকাশ’।
কেন জানি এই সজ্ঞাটাকে বড় আপন আপন
লাগছে। তাহলে এটাই কি কবিতার প্রকৃত
সংজ্ঞা ? হয়তো; আবার নাও হতে পারে।।
আল মাহমুদের প্রকাশ ভঙ্গিটা একটু ভিন্ন
স্বাদের। একটা কাব্যিক সংজ্ঞা প্রদান
করেছেন তিনি। যা কিছুটা অর্থবহ।
“পাখীর নীড়ের সাথে নারীর চোখের
সাদৃশ্য আনতে যে সাহসের দরকার সেটাই
কবিত্ব।” এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার
যে কবিতা লিখতে যথেষ্ট সাহসের
প্রয়োজন। অর্থাৎ, কবি সাহসী।
‘যে লেখাটি সমকালের স্মৃতি বা
স্বপ্নকে তুলে আনতে সক্ষম এবং একই
সাথে সমকালকে অতিক্রের যোগ্যতা
রাখে তাকেই বোধহয় কবিতা বলা যেতে
পারে।’ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে নিজেই
সংশয়ে পড়েছেন। সত্যি অর্থপূর্ণ কবিতার
সংজ্ঞা দেওয়া খুবই কঠিন।
কবিতা পরিতৃপ্তির বিষয়। কবিতা তখনই
স্বার্থক হয় যখন কবি মনের পরিতৃপ্তিতে
পূর্ণতা আসে। শেলীর ভাষায় তা স্পষ্ট, ‘
কবিতা হলো পরিতৃপ্ত এবং শ্রেষ্ঠ মনের
পরিতৃপ্তি এবং শ্রেষ্ঠ মুহুর্তের বিবরণ।’
বিভিন্ন জন কবিতাকে বিভিন্ন ভাবে
সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাদের সংজ্ঞায়
ও দর্শনে ফুটে উঠেছে কবিতার
নান্দনিকতা।রবার্ট ফ্রস্টঃ ‘ কবিতা হোল
পারফরমেনস ইন ওয়ার্ডস।’কোলরিজঃ ‘
গদ্য মানে শব্দ সর্বোৎকৃষ্টভাবে
সাজানো। আর পদ্য মানে সর্বোৎকৃষ্ট শব্দ
সর্বোৎকৃষ্টভাবে সাজানো।’এডগার এলান
পোঃ ‘ সৌন্দর্যের ছন্দোময় সৃষ্টি।’
কীটসঃ ‘ কবিতা মুগ্ধ করবে তার সুক্ষ্ম
অপরিমেয়তায়, একটি মাত্র ঝংকারে নয়।
পাঠকের মনে হবে এ যেন তারই সর্বোত্তম
চিন্তা যা ক্রমশ ভেসে উঠছে তার
স্মৃতিতে।’ এলিয়টঃ ‘ কবিতা রচনা হলো
রক্তকে কালিতে রূপান্তর করার যন্ত্রনা
।’ কার্লাইলঃ ‘ কবিতা হলো
মিউজিক্যাল থট।’এরিস্টটলঃ‘ কবিতা
দর্শনের চেয়ে বেশি, ইতিহাসের চেয়ে
বড়ো।’সেন্ট অগাস্টিনঃ ‘ যদি জিজ্ঞাসা
করা না হয়, আমি জানি। যদি জিজ্ঞাসা
করা হয়, আমি জানি না।’বোদলেয়ারঃ ‘
প্রত্যেক কবি অনিবার্যভাবেই
সমালোচক। একজন সমালোচক কবি হয়ে
উঠলে আশ্চর্য হওয়া যতটা স্বাভাবিক
তার চেয়ে বেশি আশ্চর্য হতে হবে যদি
একজন কবির মধ্যে সমালোচক জেগে না
থাকে।’ জনসনঃ ‘ কবিতা হোল
মেট্রিক্যাল কম্পোজিশন। আনন্দ এবং
সত্যকে মেলাবার শিল্প যেখানে reason
কে সাহায্য করার জন্যে ডাক পড়ে
imagination এর।’ মিলঃ ‘ চিন্তা এবং বাক্য,
যার মধ্যে আবেগ পেয়ে যায় নিজের
শরীর।’ মেকলঃ ‘ কবিতা বললে আমরা
বুঝি সেই শিল্প যা শব্দকে ব্যবহার করে
এমন ভাবে যা কল্পনার রাজ্যে জাগিয়ে
দেয় এক স্বপ্ন।’ ওয়ার্ডসওয়ার্থঃ ‘ কবিতা
সমস্ত জ্ঞানের শ্বাস-প্রশ্বাস আর সুক্ষ
আত্না।’
আমার কাছে মনে হয়: মন,আত্মা ও
অনুভূতির চমকপ্রদ প্রকাশই কবিতা।
মন ও আত্মা এক হয়ে যখন অনুভূতিতে
পরিণত হয় তখনই সৃষ্টি হয় কবিতা।
জয় হোক কবির, জয় হোক কবিতার। (সংগ্রহকৃত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.