নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশ্চুপ রাস্তার একলা পথিক

কায়সার ইয়াসিন

সোজাসাপ্টা কথা বলতে ভাল লাগে।সবাই বলে আমি খুব সহজ সরল একজন।তখন ঠিকই তাদের চেহারার দিকে দৃষ্টি দিলে বুঝতে অসুবিধে হয় না আমাকে তারা বোকা বলে সম্বোধন করছে। তবে আমি আমার জায়গায় থেকে যখন কোন কিছু করি নিজেকে খুব পরিষ্কার মনে হয়। পৃথিবীতে আমি মনে করি তিন স্তরের মানুষ আছে। এক নির্বোধ দুই বুদ্ধিমান তিন যাকে কোন নাম দেয়া যায় না।তিন নাম্বারের স্তরের মানুষগুলো যখন কিছু করে তা দেখে কেউ বলে উঠে এত গাধা না হলে এমন কাজ সে করতো না।আবার কেউ বলে উঠে চালাকের সীমা ছাড়িয়ে গেল।হুমায়ূন স্যারের কথাটি সবসময় আমার কানে বাজে জীবন সহজ নয়, জটিলও নয়-জীবন জীবনের মতো। আমরাই একে সহজ করি জটিল করি।আমাদের পথচলার সবচেয়ে বড় চালকটা হচ্ছে বিশ্বাস।তাই আমি বলি এটি যেন কখনো জীবন থেকে হারিয়ে না যায়।কারণ কারো প্রতি জন্ম নেয়া ছোট ছোট আস্থার চারা বড় হওয়ার আগে অকালে ঝড়ে গেলে পরবর্তি বীজ গুলো তার জন্ম নেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

কায়সার ইয়াসিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেতুলমণি

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২০


তারিখ
০৭-০২-০৮
"তুমি আমার কেন্দ্র।
তোমাকে ঘিরে আমি এক বৃত্ত।"

তার চোখে চোখ রেখে বলতেই বলে উঠলো
"আর ন্যাকামি করা লাগবে না।ক'য়টাই আসার কথা ছিল আর আসলে ক'য়টাই?এই বটতলায় একা একটা মেয়েকে বসিয়ে রাখতে খুব ভাল লাগে তাই না?এসেই ভন্ডামি শুরু করলা।
তার হাত ছুঁয়ে বললাম "জ্যামে পড়েছিলাম তেতুলমণি।স্যরি।
সে হাতটি সরিয়ে ছেছিয়ে বলে
"আমি তোমাকে চিনি তো।একদম ছুঁবে না কিন্তু।লোক ডেকে হাত পা ভেঙে দিব"একটা কথাও বলবা না।

আজব একটা মেয়ে তিতলী!অল্পতেই রেগে যায়।আর রেগে গেলে তার নাকের ডগার জমানো ঘাম গুলো আরো সুন্দর হয়ে যায়।তাই মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই রাগায়।যেমনটি আজ করলাম।তার গোমড়া মুখখানি একবার দেখার জন্য।যেন হাজার সন্ধ্যাতারার চেয়েও সুন্দর এই মুখখানি।মাইকেল এঞ্জেলো ঠিকই বলেছিল মেয়েদের কে সবচেয়ে সুন্দর দেখায় রেগে যাওয়ার চরম মুহুর্তে।আর কান্নার ঠিক আগ মুহুর্তে।
বললাম
"এত সুন্দর কেন তুমি?"
তেতুলটা কিছুই বলল না।এক পলকে দেখতে লাগলাম তার চোখ দুটো।কি যেন এক মোহ আছে এই দু'চোখে।মাঝে মাঝে মনে হয় ডুব দিয়ে আসি তার চোখের আঙিনার পুশকনিতে।
-"তেতুলমণি একটু কথা বলো প্লিজ।"
-"বললাম না।চুপ করে থাকো।মেজাজ খারাপ করো না।তুমি ভালো করেই জানো মেজাজ খারাপ হলে আমি কি করি।"

চুপ হয়ে গেলাম।আমি সত্যিই জানি।মেজাজ খারাপ হলে সে কি করতে পারে।এই তো সেদিন!টিসসি মোড়ে এক পুচকার দোকানে তার সাথে পুচকা খেতে বসলাম।পাশের সীটে হঠাৎ একটা কোহুথেকে মেয়ে এসে বসলো।আমি তার দিকে তাকাতেই সে পুচকার প্লেটটি আকস্মিক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।কিছু বোঝা উঠার আগে যেন অনেক কিছু হয়ে গেল।সেদিন এর পর থেকে আমাদের এখন আর পুচকার দোকানে বসা হয় না।
একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম
-কেন এমন করো
-একটা কথা কান খুলে শুনে রেখো আমি তোমার চুল,নখ ও কারো সাথে শেয়ার করবো না।আর এমনটি কখনো হলে তিতলীকে আর পাবে না।

মেয়েটি তার রাগের মাঝেই যেন লুকিয়ে রেখেছে তার অসীম ভালবাসা।
হঠাৎ তিতলী বলে উঠলো
- এই শোনো! আমার ব্রেস্লেট না গতকাল থেকে পাচ্ছি না।
-কি বলো! কোথায় রেখেছিলে বলো তো।
-শোনো না।আমি ওটা ড্রয়ারে রেখেছিলাম।গোসল করতে গিয়েছিলাম।এসে দেখি গায়েব।কালকে থেকেই নিজের উপর রেগে আছি।
-আজব মেয়ে তুমি!রেগে আছো কেন।মন না খারাপ হওয়ার কথা।
-না রেগে আছি। কেন আমি ওটা খুলে রাখলাম।হোস্টেলে কোন কিছুর কি ঠিক থাকে।আমার অনেক পছন্দের একটা জিনিস এটি।
-সমস্যা না।আর একটা কিনে দিবো।
-না আমার ওটাই চাই।তুমি জানো না ওটাতে আমার কি লুকিয়ে আছে?
-দুষ্টমি করে বললাম কি?
আবার সেই মুখখানি।না এবার আরো কেমন যেন এক অদ্ভূদ সুন্দর লাগছে তাকে।
-আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে এসব ইচ্ছে করে করো
-হুম! আমার তেতুলের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি যদি আমি না দেখি তা কি করে হয়।
ধপাস! করে হাতের উপর পড়ল আদরের ধাক্কা।

গত শীতকালের বাণিজ্য মেলা। ঘুরতে গিয়েছিলাম দুজন।ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখলাম খুব সুন্দর একটা ব্রেস্লেট।ব্রেস্লেটির চেইনটি সাজানো হয়েছে দুটো লেটার দিয়ে।T আর Y।
অদ্ভুদ ছিল আমরা একসাথেই দুজন হাত রেখেছিলাম ওটিতে।দোকানদারকে দাম জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো
-ভাই!স্যরি এটি এই মাত্র ঐ ম্যাডামের কাছে বিক্রি হয়ে গেল।আর এটা 1 পিস।
ম্যাডামের কাছে দৌড়ায়ে গেলাম।অনুরোধ করতে যেন আমাদেরকে দেই।কিন্তু বজ্জাত ম্যাডাম কোন কথাই শোনলো না।
তিতলীর মন খারাপ হয়ে গেল সেদিন। সেদিন প্রথম দেখলাম তিতলীর মন খারাপের চেহারা।তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম।ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে সে।ভেতরে কেমন যেন লাগছিল আমার।যেন কেউ আমার মাংসপিন্ডে এসিড ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে।কিছু করার ছিল না।মেলা থেকে বের হয়ে একটা হোটেলে বসলাম।তিতলী চুপ হয়ে রইল।দেখলাম পাশে বসে আছে সুন্দর একটা পিচ্ছি।বাচ্ছার প্রতি তার অনেক মোহ।কিছু না ভেবে সাথে সাথে সে পিচ্ছিটাকে তার কোলে দিয়ে দিলাম।পিচ্ছিটা পেয়ে সে কেমন যেন এক হাসি দিল
এই হাসিটি খুঁজছিলাম আমি এতক্ষণ।মনে পড়ে গেল রবীন্দ্রনাথের সেই চরণ

'আমার সুরে লাগে তোমার হাসি,
যেমন ঢেউয়ে ঢেউয়ে রবির কিরণ দোলে আসি
দিবানিশি আমিও যে ফিরি তোমার সুরের খোঁজে,


এর দুদিন পড়েই টিস্টলে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় সিনিয়র এক আপুর সাথে।কথা বলার ফাকে নজরে পড়লো সেই ব্রেস্লেটটি ঊনি পড়ে আছে।আপুর কাছ থেকে একপ্রকার আকুতি করেই নিয়ে নিলাম এটি।
ব্যস!আর দেরী না করে দেখা করতেই পড়িয়ে দিলাম।চোখের দিকে থাকিয়ে দেখলাম টলমল করছে।এই যেন অঝোর ধারাই বৃষ্টি নামবে।জড়িয়ে ধরলো অনেকক্ষণ।আমার জীবনে গেঁথে যাওয়া একটি দিন এটি।শতের উপরে সেদিন ছবি নিতে হয়েছে আমায়।শুধু ঐ হাতে পড়া ব্রেস্লেটটির।বাচ্ছারা কোন কিছুর আকুতির পর তা হাতে পেলে যে আনন্দ পায়।তার চেয়েও বেশী খুশী ছিল সেদিন।আমার স্পষ্ট মনে আছে সে বলেছিল।এমন হাজারটা নিজে কিনলেও সে এত আনন্দিত হত না।যে খুশী সে এখন পাচ্ছে আমার কাছ থেকে এটি পেয়ে।
তিতলীকে পাওয়া স্রষ্টার কাছ থেকে এক বিশেষ উপহার আমার।দু বছর আগের ঘটনা।ঘর থেকে বের হচ্ছি আকাশ কালো হয়ে আসলো।ছাতাটা ব্যাগে নিয়ে হুড়াহুড়ি করে বের হয়ে গেলাম কোর্সের ক্লাসের উদ্দেশ্যে।ক্লাস পান্থ পথের ধারে।ক্লাস শেষে বসুন্ধরাই ঘুরতে গেলাম। হঠাৎ যেন সবকিছু স্থির হয়ে গেল।মনের এপাশ ওপাশ যেন ডেকে গেল এক ঝাক শালিক।হ্যা!অসাধারণ একটা মোবাইল দূর থেকে চোখে পড়ল।সম্ভবত নতুন এসেছে বাজারে।ও!বলা হয় নি আমি মোবাইলের প্রতি খুব আসক্ত একজন।তাড়াতাড়ি ঐ দোকানটিতে গেলাম তা কনফিগারেশন দেখতে।ঠিক তখনি একটি কন্ঠ শুনতে পেলাম।বলে উঠলো
-এই যে ভাই অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি আমি।একজন বললো ভেতরে গিয়ে নতুন সেট নিয়ে আসছি।তার কোন আসার নাম গন্ধ তো নেয়।তার উপর আপনি আবার নিজেদের মোবাইল এর details নিজেই পড়ে পড়ে দেখছেন।একবার পড়ে মুখস্থ করতে পারেন না।বুঝি! যান ভেতরের মানুষটাকে ডাক দিন।আমার মোবাইল লাগবে না।

আজিব মেয়ে তো!কোন কিছু না বুঝে আমার উপর রাগ ঝাড়া শুরু করে দিল।আমি বললাম
-কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি স্টাফ নই।আমি ও একজন কাস্টমার।
-আমাকে দেখে কি পাগল মনে হয় আপনার?আপনি এই ড্রেস কেন পড়ছেন?
দেখলাম ওদের গেঞ্জির কালারের সাথে আমারটা মিল।
বললাম
-ড্রেস মিল থাকলে কি স্টাফ হয়ে যায় নাকি?
পরে ভুলবোঝাবোঝির অবসান হল।চিকন গলায় একটা স্যরি বলে চলে গেল।
আমি এরপর আর একটু এদিক ওদিক ঘুরে বের হতেই দেখি এলোমেলো বাতাসের সাথে ঝড়ো বৃষ্টি।ছাতাটা বের করে শপিং মল থেকে নেমে বাংলা মোটরের মোড়ে এসে দাড়ালাম বাসের জন্য।তখনি দেখলাম ঐ মেয়েটি।রাস্তায় দাড়িয়ে প্রায় ভিজে গেছে সবকিছু।আবার আশ্চর্য হলাম! এখানে এত ঠাই নেয়ার জায়গা থাকা স্বত্ত্বেও সে রাস্তায় দাড়িয়ে ভিজছে।নিশ্চয় পাগলের শেষ সীমায় আছে হয়তো।হঠাৎ তার চোখের দিকে তাকাতেই দেখলাম কেমন যেন এক মায়া।কেমন যেন বজ্রপাতবিহীন হ্রদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া।শ্যামবর্ণের সেই সিক্ত হওয়া অপরুপ মেয়েটি সেদিন মনের শিরা উপশিরায় নতুন এক অক্সিজেনের সিলিন্ডার দিয়ে গেল।কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে কাছে গিয়ে বললাম
-আমার মনে হয় আপনার ছাতাটি প্রয়োজন।
কিছু না বলে ছাতাটি লুফে নিল।বললাম
-আপনি চাইলে ওখানে দাড়াতে পারতেন।
-আচ্ছা কোন কারণ ছাড়া কি আমি এখানে দাড়িয়ে আছি ভাবছেন?ওখানেই ছিলাম কিন্তু পেছন থেকে বার বার ইচ্ছে করেই ধাক্কা মারছিল কেউ।
এক বাটি ধমক দিয়ে মেজাা খারাপ করে দাড়িয়ে আছি।
বললাম
-আপনি কোথায় যাবেন?
-মিরপুর।
-এভাবে তো বাসে যেতে পারবেন না।একটি সি এন জি করে চলে যান।
-তাই তো চাচ্ছি।পাচ্ছি না
ভাগ্যক্রমে সামনেই একটা পেয়ে গেলাম।
তুলে দিতে দিতে
-আমার ছাতাটা দিয়ে দিন।
-না!
-ওমা! কেন?
-এটা আমার কাছ থেকে আপনি আর একদিন পাবেন।
-তাহলে নাম্বারটা দিন।
-ছেলে যত বোকা মনে করেছিলাম তত বোকা নই।আমি আপনাকে কেন আমার নাম্বার দিব।আপনারটা দিন।আমি অন্য মোবাইল থেকে ফোন করে জানিয়ে দিব কোথায় দেখা হবে।
সি এন জি টা বৃষ্টির ঝাপ্টাই ঝাপসা হয়ে এল।আর বড় বড় লেখকের বইয়ের পাতাই লেখা প্রথম দেখার মত সেদিনের বৃষ্টি আমার প্রেমের মুকুলের সাক্ষী হয়ে গেল।
এরপর আস্তে আস্তে শুরু হল আমাদের এক সাথে পথচলা।
-----------------------------------

চশমাটা ভালভাবে পড়ে ডায়েরীর সাদা পাতাটিতে ১৬-১০-১৫ তারিখটি বসিয়ে হাত কাপা শরীরে লেখা শুরু করতেই
ওপাশ থেকে শব্দ এলো
-বাবা!কই তুমি?খেতে এসো।বাবা তুমি আবার এই ডায়েরীটা পড়ছিলে।প্রতিদিন এই ডায়েরীটা না পড়ে তুমি খেতে পারো না তাই না।এসো হয়েছে অনেক।খেতে এসো।
-মা! তুই যা এই তো আসছি।


সাদা পাতাটিতে লেখাশুরু করলাম

তেতুলমণি!আজকেও ঐ বটতলাই অনেকক্ষণ বসে ছিলাম।যেখানে আমাদের স্মৃতি গুলো এখন ও সজীব পাতার সুবাস নিয়ে বেঁচে আছে।

হ্যা তিতলী চলে গেছে আমাকে বেচে থাকার আর একটি তিতলী উপহার দিয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.