নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদিহা মৌ

মাদিহা মৌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি চিঠি ও কিছু কথা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

এই যে বাবুইসাহেব!

কেমন আছেন আপনি?
কি করছেন এখন?
ঘুমাচ্ছেন?
নাকি কাজে গেছেন?
সাড়ে আট হাজার মাইল; তাই না?
কত দূরে থাকেন আপনি! আমাদের ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয় না আপনার? জানি খুব কষ্ট হয়। সারাদিন কাজ করে এসে খাবারটাও বেড়ে দেওয়ার লোক নাই। দুচারটে সুখ দুঃখের কথা বলবেন ওই মানুষটিও নেই আপনার কাছে নেই। জানি সবই। তবুও মন যে মানতে চায় না। কতদিন দেখি না আপনাকে! খুব দেখতে ইচ্ছে করে আপনাকে; জানেন? আপনার করে না?
আপনার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে আপনি জানেন? আধো আধো বুলিতে কথা বলতে শিখেছে এখন! আমাকে কি ডাকে জানেন? মাআআই! এইটা কেমন ডাক হলো বলেন তো? মা তো সহজ। মা না ডেকে; ডাকে মাআই! আর আপনাকে কি ডাকে বলেন তো? বলতে পারছেন না? অনুমান তো করেন? পারছেন না? একটু চেষ্টা করেন? একেবারেই না পারলে শেষ মূহুর্তে বলে দেবো।
উফফফ! পারলেন না তো? আমি জানতাম পারবেন না! ও আপনাকে ডাকে বাবাই! মজা না বলেন? আমি ডাকি বাবুই; আর আপনার মেয়ে ডাকে বাবাই! কি মিল দেখেছেন? আমি কিন্তু শিখিয়ে দেই নি! নিজে নিজেই শিখে নিয়েছে ও।
মেয়েটা খুব রহস্যময়ী হয়েছে জানেন? হবে না!
আপনার মেয়ে যে!

আপনার কথা এখন ঘুমুচ্ছে । আর আমি একা একা ছাদে এসে বসে আছি। অনেক দিন পর এলাম। এখন আর ছাদে আসতে ভালো লাগে না। সব কিছুতেই আপনার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে এলেই হু হু করে কান্না চলে আসে। আটকাতে পারি না। আমার ছাদপ্রীতি দেখে কত পরিকল্পনা করে; কত যত্ন করে এই ছাদ বানালেন আপনি! মোটা করে রেলিং দিলেন পুরো ছাদে! আমি যেনো পা ঝুলিয়ে বসতে পারি। বিয়ে হয়ে গেলেও আমার দস্যিপনা যে সহজে যাবে না; কি করে যেনো বুঝে গিয়েছিলেন আপনি।
দুজনে মিলে কত ফুলগাছ লাগালাম পুরো ছাদ জুড়ে। রকমারি গোলাপ ফুল। আপনার পছন্দ ছিলো হলুদ গোলাপ আর আমার নীল। হলুদ গোলাপের চারা খুব সহজে পেয়ে গেলেও নীল গোলাপের চারা পেলেন না। তাই দেখে আমার চেয়েও আপনার মন খারাপ হলো বেশী। পুরো রোখ চেপে গেলো আপনার্। হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকলেন নীল গোলাপের চারা। কিন্তু আমাকে জানতে দিলেন না। তারপর আমার জন্মদিনে রাত বারটায় ছাদে নিয়ে উপহার দিলেন আমার অসম্ভব প্রিয় নীল গোলাপ। গাছ সহ। জীবনে প্রথম বারের মত আমার পছন্দের ফুল ছুঁয়ে দেখলাম। ফুলের উপর দুইফোঁটা অশ্রুবিন্দু ঝরে পড়ল। না; আপনি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিন নাই। বরং ক্যামেরা হাতে আমার আর নীল গোলাপের ছবি তুলে ফেললেন । আপনার ছেলেমানুষি কান্ড দেখে হেসে ফেললাম আমি। আপনি চট করে আবারো ছবি তুলে নিলেন।

কোত্থেকে পেলেন সেই নীল গোলাপ;বললেন না আমাকে। দোলনা বসালাম নীল গোলাপের গাছটার পাশেই। আবার স্টীলের চেয়ার ও রাখলাম দুইটা। সিড়িঘরে সবসময় একটা শীতলপাটি থাকতো। সেই শীতলপাটিতে শুয়ে আমরা রাতের আকাশে তারা খুঁজতাম। সপ্তর্ষি খুঁজতাম। তারা খসা দেখতাম। কখনো চাঁদ দেখতাম। চাঁদের উপর মেঘের ছুটোছুটি দেখতাম। মনে পড়ে?
আমি এখন আর ছাদে আসি না তেমন , জানেন? বৃষ্টি তে ও ভিজি না। চাঁদের উপর মেঘের ছুটোছুটি দেখি না। তারা ভরা আকাশে সপ্তর্ষি খুঁজি না। সব কিছু কেমন যেনো অর্থহীন মনে হয় এখন আমার কাছে। সারাদিন আপনার কথাকে নিয়েই পড়ে থাকি।
আপনার মনে আছে; যেদিন আমাকে আপনারা দেখতে গেলেন; একদেখায় ই আপনার পরিবার আমাকে পছন্দ করে ফেললো। আর আপনি! কি যে পেয়েছিলেন আমার চোখে; আপনি ই জানেন! যতক্ষণ আমি আপনাদের সামনে ছিলাম; আপনি পুরোটা সময়েই ঘরভর্তি লোকের সামনে আমার চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকলেন। আমার পরিবার আপনাদের কাছে আম্মুর অসুখটার কথা না বলেই আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমি যখন নিজ থেকে অসুখটার কথা জানিয়ে দিলাম আপনাদের আপনার পরিবার বেঁকে বসলো। বলল; এই অসুস্থ মেয়ের সাথে কিছুতেই তাঁদের ছেলেকে বিয়ে দিবে না। আপনি ও কোন অংশে কম যান না। বললেন; বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করবেন। আপনার একরোখা ভাব দেখে বাধ্য হয়ে বিয়েটায় মত দিলেন তারা।

আমার ক্ষতি হতে পারে ভেবে আপনি ঠিক করলেন; আমাকে বাচ্চা কনসিভ করতে দেবেন না। কিন্তু তখনো আমার রোগটা ধরা পড়েনি। তাই আমি একপ্রকার জোর করেই কথাকে কনসিভ করলাম . .
কত কেয়ার করতেন আপনি আমার! কত আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন!
আর সেই আপনি গত একবছরে একটা চিঠিও লিখেন নাই আপনি আমাকে। কতদিন আপনার গায়ের গন্ধ পাই না! কি করে এতো ভাবলেশহীন হয়ে গেলেন আপনি? আমি যে পারি না! আমাকে একটু শিখিয়ে দিবেন? আমিও আপনার মত ভাবলেশহীন হতে চাই। কাঁদতে কাঁদতে আমি ক্লান্ত . . .
এতোকিছু বলার কারন কি জানেন? অবশেষে আমার রোগটা ধরা পড়েছে!
হুম! সেই SLE (systemic lupus erythematosus)! ডক্টর কি বলেছে ; জানেন?
"Both kidneys are enlarged &swollen.
Cortical echogenicity is increased.
Cortico medullary defferntiation is not well maintained.
Pelvicalyceal system of both kidneys are not dilated."
Creatinine clearance rate কত জানেন?? 12 ml/min. যেখানে নরমাল ভ্যালু হয় 70-140 ml /min ! শুধু একটার কথা বললাম।
বাকি রেজাল্টগুলো না হয় এসেই দেখবেন?

ভেবেছিলাম আপনাকে কিচ্ছু জানাবো না। কিন্তু পরে ভয় ধরে গেলো । যদি আপনার আসার অপেক্ষা করতে না পারি? যদি তার আগেই মরে যাই? তাহলে চোখ দুটোতো একরাশ অতৃপ্তি নিয়ে কবরে যাবে। তাছাড়া আমার কথা? ওর কি হবে? আপনাকে তাই আসতে হবে। সব দায়িত্ব আপনার হাতে তুলে দেবো আমি। সেইসাথে দুচোখ ভরে দেখে নেবো আপনাকে।
এই শুনছেন? খুব রাগ করছেন আমার উপর? কেন সময়মতো ডাক্তারের কাছে চেকাপ করাতে যাইনি , এইসবইতো বলবেন ,তাইনা? না , এখন এসব কিচ্ছু শুনব না। রাগারাগি এখন বাদ। এখন আপনার বকাঝকা খেতে ইচ্ছে করছে না।
আর আমি যদি শেষপর্যন্ত আপনার অপেক্ষা নাইই করতে পারি; কথার জন্য ভালো দেখে একটা মা খুঁজে নেবেন। ঠিক আছে বাবুই পাখি?
আর কিছু লিখবো না। এখন শুধু আপনার ফেরার অপেক্ষা . . . .

ইতি
আপনার বৌপাখি

৩৫ বছরের এক যুবকের হাতে ধরা চিঠিখানি। টপটপ করে দুফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ল ওটার উপর্।
আবছা আলোয় গুটি গুটি হাতে লেখা চিঠিখানি কতবার যে পড়েছে; তার কোন হিসেব নেই। তার সহজ সরল বৌটা হয়তো ভাবছে; এখানে এসে ও তাদের ভুলে গেছে! সে তো আর জানে না এই প্রবাসে ও কি অসহায় অবস্থায়ই না দিনাতিপাত
সে তো আর জানে না এই প্রবাসে ও কি অসহায় অবস্থায়ই না দিনাতিপাত করছে! পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ার পর জাল পাসপোর্ট দিয়ে চাকরিটা কন্টিনিউ করতে গিয়ে পুলিশ ধরে এনে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছে আটমাস হলো! ওর পক্ষ হয়ে লড়ার মত কোন উকিল না থাকায়; বিনাবিচারে এই ভিনদেশের জেলখানায় পঁচে মরছে সে। এখান থেকে বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ করার কোন উপায়ই নেই। এই চিঠিটা ভাগ্যগুনে হাতে এসে পৌঁছেছে। মেয়েটা আর বৌকে একনজর দেখতে না পারার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে ওর! ও ভেবে পাচ্ছেনা আল্লাহ কেন তাকে এত বড় শাস্তি দিচ্ছেন! দুনিয়ার দুইপ্রান্তে বসে দুজন কপোত কপোতি যে অধীর হয়ে একজন আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করছে, তা কি তিনি দেখেন না??

গল্পটি পূর্বে গল্পের হাট ২ -এ প্রকাশিত।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭

পুলহ বলেছেন: গল্প মুগ্ধ হয়ে পড়েছি, তবে শেষটায় এসে মনে হোল- অসাধারণ গল্পের শেষটা লেখক নিশ্চই আরো সুন্দর করতে পারতেন! সে ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়েছে :)
অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। সাবলীল গল্পে ভালোলাগা :)

"সে তো আর জানে না এই প্রবাসে ও কি অসহায় অবস্থায়ই না দিনাতিপাত
সে তো আর জানে না এই প্রবাসে ও কি অসহায় অবস্থায়ই না দিনাতিপাত করছে! "... এ অংশে এসে একটা পুনরাবৃত্তি হয়েছে, সুযোগ মতন ঠিক করে নিয়েন :)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১১

মাদিহা মৌ বলেছেন: চিঠিটাকে পূর্ণাঙ্গ গল্পের আকার দিতে গিয়ে হয়তো এলোমেলো লেগে গিয়েছে।

আর দ্বিত্ত আসাটা ভুলে হয়ে গিয়েছে। ঠিক করে নিব।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২১

আম আদমি বলেছেন: অসাধারণ। মুগ্ধ হলাম। কিন্তু মনটা খারাপ ও হয়ে গেল।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১১

মাদিহা মৌ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া! :)

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গভীর প্রেমেপূর্ন দুটো হৃদয়ের অসহায় আকুতি...

খুবই ভাল লাগল। :)

++

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৩

মাদিহা মৌ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। চেষ্টা করেছিলাম - আলাদাভাবে প্রেমটা ফুঁটানোর। কতটুকু পেরেছি - তা আপনারাই বলতে পারবেন। :)

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: গল্প ভাল লাগলো। গল্পের শেষটুকু একটু দ্রুত নাটকীয় মনে হলো। পুরো গল্পের মত এর শেষের অনুচ্ছেদটুকুও আরেকটু ধীর লয়ে এগোলে ভাল হতো মনে হয়।
কথার জন্য ভালো দেখে একটা মা খুঁজে নেবেন। ঠিক আছে বাবুই পাখি? - এখানে এসে মনটা খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪

মাদিহা মৌ বলেছেন: হ্যাঁ, আমি শেষ দিকে খুব তাড়াহুড়ো করি। এটা আমার খুব বড় একটা দুর্বলতা।

ধন্যবাদ আপনাকে এত আগের লেখা খুঁজে পড়ার জন্য …

৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:১৪

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: আপনার প্রথম পোস্ট ছুঁয়ে গেলাম , ভাল লাগা রইল ।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:২৯

মাদিহা মৌ বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন।

খুঁজেপেতে অর্ধশতকের মধ্যে প্রথম পোস্ট বের করে ফেলেছেন!

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১২

পথহারা মানব বলেছেন: আমি চিন্তা করতেছি আজই চোখের ডাক্তারের কাছে যাব!! এত অসাধারন একটা গল্প আমার চোখেই পড়ল না। X(
হ্য়ত আপনি আপনার কাছের কোন কোপত-কপোতিকে দেখে লেখছেন...না দেখে থাকলেও বলব দুই প্রান্তে থাকা দুটি মানুষের এরকম ব্যাকুল আকুতি আমাদের এই পৃথিবীর হাজারো বাবুই পাখি আর বৌপাখির শুন্য হৃদয়ের রক্তক্ষরনেরই প্রতিচ্ছবি!!

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৮

মাদিহা মৌ বলেছেন: ইসস! আপনি যেভাবে বলছেন, লজ্জাই পেয়ে যাচ্ছি। আগের লেখাগুলি নিজেই পড়ি না। হাসি পায়। কী যে লিখতাম!

তবে এই গল্পটা অন্যরকম। লেখার সময় হাপুশ নয়নে কাঁদছিলাম। ওদের হৃদয়ের রক্তক্ষরন আমাকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল।

৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

গেম চেঞ্জার বলেছেন: আপনার গল্পে সেঁটে থাকতে হয়! এই গল্পে পুরস্কার না দিলে অন্যায়-ই হতো!

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১২

মাদিহা মৌ বলেছেন: থেংকু থেংকু।
কিন্তু এটা লাভালাভি হয় নাই? ;) অতিমাত্রায় রোমান্টিকতা আর আবেগের বাহুল্য?

তবে সেসময়ে এটার জন্য ভালোই বাহবা পেয়েছিলাম। এখন শত চেষ্টা করেও এত রোমান্টিক গল্প আসবে না আঙ্গুলে।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৮| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: //এখন শত চেষ্টা করেও এত রোমান্টিক গল্প আসবে না আঙ্গুলে। //

ঠিক বলেছেন। আঙ্গুলে আসবে না। তবে এক কাজ করে দেখতে পারেন। চরম রোমন্টিক কিছু ইউটিউব গান(হিন্দি+বাংলা+হলি) দেখে চোখ মুদে প্লট বানানোর চিন্তা করে দেখবেন। আলো আসবেই! :)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৮

মাদিহা মৌ বলেছেন: হাহাহাহা! আমি আর রোমান্টিকতার ধারে কাছে নাই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.