নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদিহা মৌ

মাদিহা মৌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুতুড়ে

৩১ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০


সিলেবাসটা যে কই রেখেছে, খুঁজে পাচ্ছে না ইশিতা। সবসময় ওর এইরকম হয়! কাজের সময় কোন কিছুই খুঁজে পায়না। কেন যে ওর সাথে এরকম হয়, কে জানে!

আগামীকাল পরীক্ষা। বলতে গেলে কিছুই পড়া হয়নি। শেষ মূহুর্তে যেটুকু পড়ে নিতে পারে, তাইই নিচ্ছে। কিন্তু সিলেবাসটা যে কোথায় রেখেছে- কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। টেবিলের এলোমেলো বইখাতা গুলোর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো ইশিতা। এর মধ্য থেকে কীভাবে খুঁজে বের করবে সিলেবাসটা? ওটা খুঁজতে হলে সব বইখাতা গুছাতে হবে। সেটা এই মূহুর্তে সম্ভব না! এলোমেলো বইখাতা গুলোকে আরো এলোমেলো করে সিলেবাস খুঁজতে শুরু করলো সে।

পরিচিত বইখাতাগুলোর মধ্যে একটা অপরিচিত ডাক্তারি প্যাড দেখতে পেল ইশিতা। 'এটা কার প্যাড!' নিজেকেই যেন জিজ্ঞেস করলো সে। হাতে নিয়ে শক্ত মলাটের উপরে লেখা টাইটেলটা পড়লো।
"স্বপ্নগুলো"

বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। চেয়ারে বসে পাতা উল্টালো। লেখাগুলো এতোই খারাপ যে পড়াই যাচ্ছে না। তবুও পড়তে শুরু করলো ইশিতা। আগামীকাল যে তার ক্লাস টেস্ট, সেটা বেমালুম ভুলে গেছে।

'…… মরণব্যাধি ধরা পড়েছে আমার। হসপিটালে শুয়ে আছি। ইএন এর বন্ধুরা আসছে একজন একজন ক'রে। মামুনকে দেখলাম ফিচফিচ করে কাঁদছে! বোকা নাকি! ছেলেরা যে এত খোলাখুলি কাঁদেনা, এই সহজ কথাটা কি সে জানে না? কবিরকে দেখলাম, গম্ভীর মুখে নার্সের সাথে কথা বলছে। রাফায়েত কেবিনেই ছিল। কখন বেরিয়ে গেছে, বলতেও পারবোনা। হঠাৎ দরজায় দেখলাম ওকে। হাতে স্যালাইনের প্যাকেটের মত একটা প্যাকেট। কিসের, তা বুঝতে পারছিনা। আমাকে নাকি ওটা খেতে হবে!"

পুরো একটা পৃষ্ঠা পড়েও ইশিতা বুঝতে পারলোনা এগুলো কার লেখা! এরপরের পৃষ্ঠাটা ছিঁড়া। কী লেখা ছিল, কে জানে! আবার পড়তে শুরু করলো সে।

"… বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কোথায় যেন যাচ্ছি। বারবার জিজ্ঞেস করছি, 'কোথায় যাচ্ছি?'
সে নিশ্চুপ।
নীরবে তাকে অনুসরণ করছি।
হাঁটছি।
আমি আর সে।

শহর ছেড়ে গ্রামের পথে হাঁটতে শুরু করেছি তখন। এই পথ আমার অচেনা। ছোট একটা শহরে থাকি আমি। শহরের সব অলিগলি আমার হাতের তালুর মতই পরিচিত। কিন্তু এই রাস্তাটা কখনো দেখিনি কেন?

অনেকক্ষণ হাঁটার পর কোন একটা বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছি। সে বিড়বিড় করে বলল,
'রাস্তা হারিয়ে ফেললাম নাকি!'
আমি তখন উঁকিঝুঁকি দিয়ে বাড়িটা দেখছি। একটা বেদির উপর দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। আইভি লতায় ছেয়ে আছে দেয়াল। দরজা জানালা কিচ্ছু নেই। হয়তো আছে। আইভি লতার জন্য দেখা যাচ্ছে না। বাড়িটার দরজা খোঁজার জন্য পা বাড়ালাম আমি। কিন্তু সে আমার হাত খামচে ধরে উল্টোদিকে দৌড় দিল। কিছু একটা দেখতে পেয়েছে সে। ভয় পেয়ে আমিও দৌড় দিলাম। কীভাবে যেন গাছের গুড়ির সাথে পা আঁটকে গেছে। টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। কিন্তু আমাকে তুলতে এগিয়ে এলো না সে। দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আমার কাছ থেকে বহুদূরে।

দিশেহারা হয়ে তারস্বরে চেঁচাচ্ছি আমি। চিৎকার করে তাকে ডাকছি,
'বাবুই! বাবুই!!'
তৃতীয়বার ডাকার আগে থেমে গেলাম। তার নাম তো বাবুই না! বাবুই ডাকছি কেন আমি?

ফিরেও তাকালোনা সে। নিজের মত করে হাঁটতে থাকলো।

উপায় না দেখে আমি নিজে নিজেই মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালাম। প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করলাম। ততক্ষণে চোখের আড়ালে চলে গেছে সে।

একটা মোড় পেরিয়েই তাকে দেখলাম। কিছু অদ্ভুতুড়ে মানুষের সাথে কথা বলছে। মানুষগুলো কেন অদ্ভুতুড়ে- এখন আর তা মনে পড়ছে না . . . "

এটুকু পড়ে ইশিতা ভাবতে বসলো। কার লেখা হতে পারে এটা? ওর কাছেই বা কেমন করে এলো? হাতের লেখাও তো পরিচিত লাগছে না। তাছাড়া লেখাটা যথেষ্টই অদ্ভুত! 'এখন আর তা মনে পড়ছে না' - এই লাইনটা কেন লিখলো রাইটার? এই ঘটনা ঘটার কতদিন পর লেখাটা লিখতে বসেছিল সে? পুরোটা পড়লে হয়তো বোঝা যাবে। লেখায় মনোযোগ দিল ও।

". . . সে অদ্ভুতুড়ে লোকগুলোর প্রধান ব্যক্তির সাথে কথা বলছে। কী বলছে- বোঝা যাচ্ছেনা। কিন্তু দূর থেকে মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলছে। আর লোকটা যেন তার বহুদিনের পরিচিত!

ওকে দেখলাম সিঁড়ি বেয়ে উঠতে। এই মেঠোপথে ইট সিমেন্টের সিঁড়ি এলো কোত্থেকে, বুঝতে পারলাম না। এতকিছু নিয়ে ভাববার চেষ্টাও করলাম না। তার পিছনে পিছনে যাবার জন্য সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম। লোকগুলো তখনো সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

দুধাপ পেরুবার আগেই অদ্ভুতুড়ে লোকটা হাত বাড়িয়ে আমার পিঠে অশ্লীলভাবে হাত বোলাতে শুরু করলো! আমি চিৎকার করে হাতটা সরিয়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু সেটা আরো চেপে বসতে চাইলো। তারপর কীভাবে কী হলো- জানি না। দেখলাম, একটা বাঁশের কঞ্চিতে অদ্ভুতুড়ে লোকটাকে গেঁথে নিয়ে, কঞ্চিটা কাঁধে চড়িয়ে অপরপ্রান্তে যাচ্ছি। সামনে যে ক'জন বাঁধা দিতে এল, তাদের সবাইকে কঞ্চি দিয়ে আঘাত করছি। অন্যপাশের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি, ও অন্য আরেকটা লোকের সাথে কথা বলছে। আর অই লোকটার দেখিয়ে দেওয়া জায়গাটা থেকে কী একটা গাছের শিকড় বের করছে। শিকড় না বলে শ্বাসমূল বলাই ভালো। সাদা রঙ্গের শ্বাসমূল।

আমি কাঁধ থেকে কঞ্চি ফেলে দিয়ে দৌড়ে তার কাছে গেলাম। সেখানে যেতেই আশেপাশের সবকিছু পরিচিত মনে হতে লাগলো। সে আমাকে সেই শ্বাসমূলের বাকলটা ফেলে দিয়ে ভিতরের অংশটুকু খেতে দিল। আমি উচ্চবাক্য না করে তাইই খেয়ে নিলাম। সেও খেল। তারপর বললো,
'তুমি কি জানো, এখানে তোমাকে কেন নিয়ে এসেছি? '
আমি মাথা নাড়লাম।
সে বললো ,
'তোমার রোগমুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে। এসো আমার সাথে।'
আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিল সে। আমি আবার তার সাথে ছুটতে শুরু করলাম।

ওমা! সে তো আমাকে সেই আগের জায়গায় নিয়ে এসেছে! আইভি লতায় ঢাকা বাড়িটার সামনে! সিঁড়ি বেয়ে বেদির উপর উঠল সে। আমার হাতটা তখনো তার হাতকে জড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু তাকে আইভি লতায় ঢাকা বাড়ির দেয়ালের দিকে এগুতে দেখে রয়ে গেলাম আমি। তার হাতটা ছেড়ে দিলাম।

সে পিছন ফিরে আমার দিকে তাকালো। তার চাউনিতে আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভরসা আর ভালোবাসায় শিক্ত সেই চাউনি দেখে আবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো। নরম গলায় সে বললো,
'আমাকে বিশ্বাস করো। এখানে আমাদের রোগ-শোক, জরা, দুঃখ-কষ্ট, হতাশা কিচ্ছু ছোঁবেনা! এমনকি মৃত্যুও না!'

আমি অসীম বিশ্বাস নিয়ে তার হাত ধরলাম।"

এরপর অনেকটা জায়গা ফাঁকা। নিচের দিকে পেন্সিল দিয়ে গুটি গুটি করে লেখা,
"এর পুরোটাই একটা স্বপ্ন ছিল। একসময় আমি আমার স্বপ্নগুলো জমাতাম। লিখে লিখে জমাতাম। ঘুম থেকে উঠেই আগে ডায়েরি নিয়ে রাতের স্বপ্নগুলো লিখে রাখতাম। মাঝখানে বহুদিন কোন স্বপ্ন দেখিনি। আর হসপিটালে আসার সময় স্বপ্নের সেই ডায়েরিটা আনিনি। তাই এই স্বপ্নটা লিখার জন্য ইশিতা নার্সের কাছে কাগজ চাইলাম . . . "

এটুকু পড়ে চকিতেই ইশিতার মনে পড়ে গেল সব। হাত খরচের জন্য রতন মেমোরিয়াল হসপিটালে নার্স হিসেবে পার্ট টাইম কাজ করতো সে। রোগীদের অসুখবিসুখ দেখে সহ্য করতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছে চাকরিটা। তাও বছরখানেক আগের কথা। কাকে কবে রাইটিং প্যাড দিয়েছে সেটা মনে থাকার কথা নয় তার। আবার পড়তে শুরু করলো সে।

". . . এই স্বপ্নটার শুরুটা সত্যি হয়ে গেছে। কেন যেন মনে হচ্ছে পুরো স্বপ্নটাই সত্যি হবে।

ইশিতাকে আমার খুব ভালো লাগে। যদিও সে জানেনা সেটা। জানার কথাও নয়। যদি হসপিটালে থাকি, তবে ওকে একদিন ডেকে বলবো। আর যদি না থাকি, তবে এই লেখাটা তার হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব . . . "

আর কিছু লিখা নেই। পাগলের মতো পেইজ উল্টে গেল ইশিতা। কিন্তু কোথাও আর কিছুই লিখা নেই। তাহলে এই অদ্ভুতুড়ে লেখাটার ব্যাখ্যা কোথায় পাবে সে? মাথা চেপে ধরে অই পেশেন্টের নামটা মনে করার চেষ্টা করলো। কিছুতেই নামটা মনে এলোনা। তবে পেশেন্টের রোগটার নাম মনে পড়লো। রোগটা খুব রেয়ার। হয়তো খোঁজ পাওয়া যাবে! রতন মেমোরিয়ালের এক নার্সের কাছে ফোন করলো সে। তার কলিগ ছিল মেয়েটা।

ফোনটা তুলতেই সেই রোগ আর রোগিণীর বর্ণনা দিয়ে মেয়েটার সম্পর্কে জানতে চাইলো ইশিতা। নার্স মেয়েটা সহজেই চিনলো রোগিণীকে। বললো,
'১০ নম্বর কেবিনের মেয়েটা? ও তো ঝুম বৃষ্টির এক বিকেলে হসপিটাল থেকে গায়েব হয়ে গেছে! এত বৃষ্টি দিয়ে কীভাবে যে গেছে, আল্লাহ মালুম!'
'গায়েব হয়ে গেছে মানে?'
'চলে গেছে। কাউকে কিছু বলে যায়নি। তার জিনিসপত্র সব ফেলে গেছে।'
'আর হসপিটালের বিল?'
'সেটা তার বন্ধুরা মিটিয়ে দিয়ে গেছে। যারা ওকে দেখতে আসতো প্রতিদিন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, একই দিনে ওর বন্ধুদের মধ্যে একজন ছেলেও কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেছে! ছেলেটার নাম ছিল রাফায়েত। তারও কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার।'

ইশিতার মাথা ঝিমঝিম করছে। নার্স মেয়েটা আরো কী কী যেন বলছিল। তার কিছুই আর ওর মাথায় ঢুকছেনা। ফোনটা নামিয়ে টেবিলে রাখলো সে।

রাইটিং প্যাডটার প্রথম পাতায় উল্টালো সে। ডেট লিখা আছে। গতবছরের ঠিক আজকের দিনের ডেট! ইশিতার মাথা আবার ঝিমঝিম করে উঠলো। তবে কি মেয়েটার স্বপ্নটা সত্যিই ফলে গেছে?

'হ্যাঁ! আমার স্বপ্নটা সত্যিই ফলে গেছে!' কে যেন জবাব দিল ভারি গলায়।

বিঃদ্রঃ ঠিক কী ভেবে এরকম অসমাপ্ত গল্প লিখেছিলাম, তা এখন আর মনে নেই। স্বপ্ন দেখেই লিখেছিলাম হয়ত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭

বিজন রয় বলেছেন: লেখা অসমাপ্ত হলেই আকর্ষণ থেকে যায় বেশি।

আধুনিক একটি গল্প এটি।
++++

৩১ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭

মাদিহা মৌ বলেছেন: প্লাসের জন্য ধন্যবাদ। যদিও অসমাপ্ত গল্প
ভাবনার খোরাক যোগায়, তবুও অনেকে এটাকে গল্পের
দুর্বলতা ভাবে। আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারো
ভাল লাগছে। :)

২| ০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: বেশ এগুচ্ছিলো।

০২ রা জুন, ২০১৬ ভোর ৫:৫৪

মাদিহা মৌ বলেছেন: অসমাপ্ত রাখার কারণ মনে নেই এখন :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.