নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ছি দর্শনশাস্ত্র নিয়ে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখালেখির চেষ্টা করি, তা ফল হিসেবে কাব্যগ্রন্থ \"ভালোবাসা এবং অন্যান্য অশ্লীলতা\" বইমেলা \'১৭ তে প্রকাশিত হয়েছে। একা থাকতে ভালোবাসি।

গালিব আফসারৗ

সাধারণ নৌকার অসাধারণ মাঝি

গালিব আফসারৗ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন আছে আমার জল-জোছনার দিনগুলো?

২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২



বাড়ীর পাশেই নদী। বর্ষাকালে এ কূল থেকে ও কূল দেখা যায় না। শুধু পানি আর পানি। শীত বসন্তে নদীতে তেমন পানি থাকেনা, নদী তখন দু-তিন ভাগ হয়ে যায়। মাঝখানে বিশাল চর পড়ে।

ছোটবেলায় করতাম কি, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিবেশি কয়েকজন ছেলে মিলে এই নদীতে জাল নিয়ে দল বেঁধে যেতাম মাছ ধরতে। (আমরা যে জাল নিয়ে যেতাম আমাদের ওদিকে তার নাম হ্যাঙা জালি)
দুপুর পর্যন্ত মাছ মারতাম। পুটি, বালিয়া, বরেলি, ছাইতান, গচই, আরও কত কত মাছ ধরে খলই বোঝাই করে যখন মাথার উপর রোদটা একদম অসহ্য লাগতো, ক্ষুধায় পেট চোঁচোঁ করতো, তখন ফিরে আসতাম। যখন বাড়ীতে ফিরতাম আমার মা মাছগুলো দেখে সেই খুশি হতো। গোসল করার জন্য টিউবওয়েল চেপে পানি তুলে দিতো, গাঁয়ে পানি ঢেলে ময়লা পরিষ্কার করে দিতো। গোসল শেষে জামাকাপড় ধুয়ে দিতো।

তারপর আমাকে বসিয়ে রেখে সেই মাছগুলো তৎক্ষণাৎ আলু-পিয়াজ আর মসলা দিয়ে চমৎকার করে রান্না করে আমাকে খেতে দিতো। বিশ্বাস করুন, মায়ের সেই মাছভাত এতোই সুস্বাদু ছিলো যে এখনও আমার কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার মায়ের হাতের সেই মাছভাত। আমি দিন-দুনিয়া সব ভুলে চোখ বন্ধ করে সেই খাবার গোগ্রাসে গিলতে থাকতাম। আহ! সে কি মজা!

একবারের ঘটনা, বর্ষাকাল, নদীতে পানি খুব বাড়তেছে। সকাল বিকাল আমরা নদীর ধারে গিয়ে দেখে আসি পানি কতটুকু বাড়লো, এটা জানার জন্য পানির অগ্রভাগে একটা কাঠি পুতে দিয়ে আসতাম। পানি কাঠি ছাড়িয়ে গেলে বুঝতাম কতটা পানি বেড়েছে।

তখন নদীর পানি খুব বেশি হয়েছে।
যেকোন সময় বন্যা আসতে পারে, বন্যা আসলেই মাছ মারার ধুম পরে যাবে। এলাকার পুকুরগুলো তলিয়ে গিয়ে মাছ সব ভেসে যাবে, নদীর মাছ তো আছেই। ভেসে আসা এসব মাছ বন্যার পানিতে সুবিধাজনক যায়গায় জাল ধরে আমরা সবাই ধরে ফেলবো। সারাদিন-রাত শুধু মাছের উৎসব চলবে।

সেরকমই এক বিকেলে আব্বু হাট থেকে আমার জন্য একটা ছিটকি জাল ( বড় নেটের জাল বলে) নিয়ে আসলেন। জাল দেখে আমি সেই খুশি। তখন অনেকটা বড় হয়েছি, ক্লাস নাইনে কি টেনে পড়ি। জালটা রশি আর বাঁশের সমন্বয়ে প্রস্তুত করে ঘুমোতে গেলাম। সকালবেলা আম্মু ডাকাডাকি শুরু করলো "এখনো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিস? ওঠ, উঠে দেখ চারদিকে পানি, বান এসেছে "
আমি উঠলাম, বাড়ীর বাইরে এসে যে দিকে তাকাই সে দিকেই পানি ছাড়া আর কিছু নেই। বিশাল বন্যা।
পানি দেখলেই শিশুর মতো হয়ে যাই, পানিতে দাপাদাপি, ছোটোছুটি, সাতারকাটা শুরু করে দেই। চারদিকে পানি দেখে খুব আনন্দ হচ্ছিলো। আম্মু বললো জালটা নিয়ে যা, মাছ মার, সবাই মাছ মারতেছে।

আমি দৌড়ে জালটা নিয়ে এলাম, তারপর যেখানে খাল থেকে পানি উঠে স্রোতে গড়িয়ে যাচ্ছে এরকম একটা সুবিধাজনক স্থানে জাল ধরলাম। কিছুক্ষণ পর পর জাল তুলছি, নাহ! মাছ তেমন পাচ্ছিনা, ছোটোছোটো কিছু চুনোপুঁটি ছাড়া কিছুই নেই, তবুও জাল ধরেই আছি।
কিছুক্ষণ পর জাল তুলে দেখি ইয়া বড় একটা বাইঙ (বাইম) মাছ উঠেছে। আমি তো সেই খুশি, মাছটাকে দুহাতে ধরে শুকনায় নিয়ে গেলাম, শুকনায় ছিলো আমার চাচা, উনি দেখেই চিৎকার দিয়ে বললেন, " এ কি করেছো গালিব? এটা তো সাপ ধরেছো! তাড়াতাড়ি ছাড়ো, কামড় দিবে "

আমি খুব ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে ছেড়ে দিলাম।
তারপর কিছুক্ষণ শুকনোতেই বসে থাকলাম, মাছ না ধরে। কিন্তু ভাবলাম, সবাই মাছ পাচ্ছে, আমি যদি মাছ না নিয়ে বাসায় যাই কেমন হয় না? তাই আবার জাল নিয়ে পুর্বের জায়গাতেই ধরি।
চুনোপুঁটি ছাড়া কিছুই পাচ্ছিনা।

যেখানে আমি জাল ধরে আছি সেখানে প্রায় একবুক পানি। আশায় আশায় জাল ধরে আছি, কিছু মাছ মারতেই হবে। না হলে অন্যদেরকে মুখ দেখাবো কি করে যে আমি মাছ পাই নাই!
অন্যমনস্ক হয়ে জালের বাঁশটা ডানহাতে ধরে রেখেছি। হঠাৎ গাছের গুড়ির মতো কি যেন এসে প্রচণ্ড ধাক্কা দিলো দুপায়ে। জাল উচু করতে চাইছি , পারছি না। শুকনোয় আমার চাচারা ছিলো, ওনাদের ডাকি, উনারা দুজন আসে। জাল ধরে বলে, "বড় মাছ ফেন্দেছে। সাবধান।"
তারপর তিনজন মিলে অতি সাবধানী হয়ে জালখানা উচু করতেই দেখি প্রায় আমার সমান ইয়াবড় এক বাঘাইড় মাছ এসে ফেন্দেছে। ধরে শুকনোয় নিয়ে যাই।
অনেক মানুষ জড়ো হলো, তারা মাছটার রুপ দেখছিলো। অসম্ভব সুন্দর একটি মাছ ছিলো, রুপালি রঙ, গাঁয়ে কেমন কারুকার্য করার মত। দেখতে ভালো লাগে।

মাছটা মাপা হলো, প্রায় ২৫ কেজির মতো ওজন।
চাচা বললো বিক্রি করে দিতে। কিন্তু আমি বাঁধ সাধি, না, এতো বড় মাছ তো আর কোনদিন পাইনি। একে কেটেকুটে খাবো, বিক্রি করে কি হবে।
তারপর আমাদের জন্য কিছু রেখে পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজনকে মাছটা কেটেকুটে ভাগ করে দিই।

আমার মা, মাছটা পেয়ে খুব খুশি। তিনি তার রান্নার নৈপুণ্য আবার দেখালেন, এতো সুন্দর সুস্বাদু করে মাছটা রান্না করলেন, আমি শুধু খেলাম আর খেলাম।

সেই সময়টা চলে গেছে, সেই মাছ আর নেই, কিন্তু আমার এখনো মনে হয়, ঠোটের কোনে সেই স্বাদ এখনো লেগে আছে।

কেমন আছে সেই নদী? আমার শৈশবের নদী।
কয়েকদিন পরই হয়ত বন্যা আসবে। মাছ মারার সেই সুযোগ আর আমি পাবোনা জানি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

ডায়োজেনিস বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণ।

২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪

গালিব আফসারৗ বলেছেন: ধন্যবাদ নিবেন।

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:২০

মাআইপা বলেছেন: নদীর পাশে একটি গ্রাম, ছোট্ট ছোট্ট ছেলের দল মাছ মারছে .................
আর এত কম বয়সে ২৫ কেজি ওজনের মাছ মারার দারুন অভিজ্ঞতা। ভাল লাগলো

২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৩৬

গালিব আফসারৗ বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।।বাড়ির পাশে ধরলা নদী। নদী ঘিরে কত্ত স্মৃতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.