নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ছি দর্শনশাস্ত্র নিয়ে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখালেখির চেষ্টা করি, তা ফল হিসেবে কাব্যগ্রন্থ \"ভালোবাসা এবং অন্যান্য অশ্লীলতা\" বইমেলা \'১৭ তে প্রকাশিত হয়েছে। একা থাকতে ভালোবাসি।

গালিব আফসারৗ

সাধারণ নৌকার অসাধারণ মাঝি

গালিব আফসারৗ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ রহস্য উন্মোচন। লেখকঃ সুলতান আহমেদ

২১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৩৯



(ডিপার্টমেন্টের ছোটভাই আমাকে নিয়ে এই গল্পটা লিখেছে।)

বসন্তের বাতাস বইছে চারিদিক। সোডিয়ামের বাতিগুলো রাতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে দ্বিগুণ। মনটা বেজায় ফুরফুরে। এমনি ক্ষণে দুজন বিখ্যাত মানুষের সাথে আড্ডা পেতেছি। একজন বিশ্ববিখ্যাত গবেষক প্রফেসর ড. নেগ্রিসাস গেভারহান ওহান। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি'র প্রভাবশালী শিক্ষক এবং আমার প্রিয়তমা সহধর্মিণী। অপরজন সমকালীন বাংলাদেশের প্রধান কবি ও কথা সাহিত্যিক গালিব আফসারী। ভার্সিটি লাইফে ডিপার্টমেন্টের ইমেডিয়েট সিনিয়র এবং একান্ত প্রিয় ভাই। অবিবাহিত এখনো, ছাত্র জীবনে একটাই প্রোপোজ করেছিল। কিন্তু ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে। পরিবার গুণগ্রাহীরা প্রচুর চাপ দিয়েছিল বিয়ের জন্যে, ভাই আমার এক কথার মানুষ। জীবনে ঐ মেয়ে ছাড়া বিয়ে অসম্ভব। জানেনি তো কবি সাহিত্যিকরা সেচ্ছাচারী হয় প্রকৃতিপ্রদত্ত।

আমি আমেরিকাতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের ডিপ্লোম্যাটিক হিসেবে ছিলাম এতদিন। দেশে এসেছি মাসখানেক পূর্বে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগদান করবো বলে। ছেলে-মেয়ে দুইটাও রয়েছে সাথে। গালিব ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি অনেকদিন। তাছাড়া ওহান ও আমার ছেলে-মেয়ে দুইটা ওনার ব্যাপক ভক্ত পাঠক। দিন ক্ষণ ঠিক করে আড্ডা দিতে এসেছি আজ। প্রিয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস মুজাহিদ নগরে। আমি যখন ৩য় সেমিস্টারে ছিলাম তখন কাজ শুরু হয়েছিল। তবে আমরা পাই নি এ ক্যাম্পাস। আজ জগন্নাথের ২০ টি ডিজিটাল হল হয়েছে, বিশাল বড় ৩ টি মিলনায়তন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ টিএসসি, সুইমিং পুল, ক্রিকেট ফুটবল নানা ধরনের খেলার মাঠ, অনেকগুলো লাইব্রেরীসহ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নমুনানুসারে সব ইন্সট্রুমেন্টে ভরপুর। শুধু আমাদের ছাত্রত্ব নেই, আফসোস!

গালিব ভাই বেশ কিছু চকলেট চিপস আর শুকনো খাবার ধরিয়ে দিল বাচ্চা দুটোর হাতে। অতঃপর স্বভাবসূলভ হাসি দিয়ে ওহানকে জিঙ্গেস করলো, "আপনাদের দু' জনের কথা বার্তা বলেন কিছু?"

ও হ্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি, ওহান তুর্কি বংশোভূত আমেরিকান। আমাদের পরিণয়ের পূর্বে ইংলিশ ও তুর্কি ভাষা জানতো। কিন্তু বিয়ের পর ও আমার কাছে বাংলা শিখেছে। বর্তমান নামেমাত্র বাঙালিদের চেয়ে চমৎকার বাংলা বলে ও। কেননা এ যুগের কিছু বৈরাগি বাংলাদেশি অতি স্মার্ট হতে গিয়ে বাংলা ইংরেজির মিশ্রণে জগাখিচুড়ি ভাষার আবাদ করে ফেলে হরহামেশা।

_ ওহান বলা শুরু করলো, 'আমাদের বিয়ের ১ বছর আগে তুরস্কে দুজনের পরিচয়। আমি সবেমাত্র হার্ভার্ডে জয়েন করেছি আর ও হাই কমিশনে। আমি মা-বাবার সাথে দেশে গিয়েছিলাম সামার ভ্যাকাশনে আর ও একটা কাজে গিয়েছিল তুরস্কে। রেস্টুরেন্টে আমাদের পাশের টেবিলে আপনার ছোট ভাই একাই বসে ছিল। ও টেবিলে মানিব্যাগ রেখে বিল দিয়ে বেরিয়ে যায়। আম্মু পরে মানিব্যাগটা দেখতে পায়। পরদিন অবশ্য ও আমাদের বাসায় এসে নিয়ে যায়। ভাগ্যিস মানিব্যাগ কার্ডে ছিল ই-মেইল আইডি। ও আমাদের বাসায় আসলে জানতে পারি ওটাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিরকুট ছিল। বেচারা সেদিন এত বিনয়ী হয়েছিল সেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না ভাই।

গালিব ভাই: সুলতান ব্যক্তি জীবনে সত্যিই বিনয়ী।শুধু সেদিন ছিল না সবসময়ই ওমন-ই ও বোন।আবার ভেব না আমার বয়সে অনুজ সতীর্থ বলে বলছি।

ওহান ফের বলা শুরু করলো, "আব্বু ওকে ওর নাম জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে ফাজলামির ছলে বলেছিল সুলতান সুলেমান। আমাদের দেশে সুলতান সুলেমান নামটা কত বিখ্যাত জানেনি তো। তাছাড়া আব্বু এই নামটাকে খুবই পছন্দ করেন। এমনকি আমার নাম সুলতান সুলেমানের নাতনিদের নামে রেখেছিলেন। সুলতানের পুত্র শাহজাদা মুস্তফা'র মেয়ে শাহজাদি নেগ্রিসাস ও শাহজাদি ওরহানের নাম এবং অপর পুত্র শাহজাদা সেলিমের কন্যা শাহজাদি গেভারহান সহ তিনবোনের নামানুসারে আমার নাম রাখেন নেগ্রিসাস গেভারহান ওহান। বুজতেই পারছেন একজন মানুষ কত বড় ভক্ত হলে তার গুরুকে জীবনে চলার পথে লালন করে। তো যাই হোক, আব্বু ওকে আমাদের বাসায় ওঠার অনুরোধ করলো রিসোর্ট ছেড়ে।
সেবার জরুরি কাজের গোঁজামিল দিয়ে ছাড়া পেয়েছিল ও। তবে ওর কাছে কথা নিয়েছিল আমেরিকায় ফিরে আমাদের ম্যাসাচুসেটসের বাসায় দাওয়াত নিতে হবে। তখন থেকেই আমাদের পরিবারের সাথে ওর ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি এবং বিয়ে পর্যন্ত সম্পর্ক গড়ায়। সবচেয়ে বড় কথা ও বাংলাদেশের মানুষ। এদেশের মানুষগুলো সম্প্রীতিপূর্ণ ও আস্থাশীল।

আমাদের কথা শেষ না হতেই এক মহিলা আসলেন। মুখশ্রি হালকা পরিচিত লাগছে। আমাকে প্রশ্ন করলেন, কেমন আছেন ভাইয়া? দেশে কবে আসলেন?

গালিব ভাই শুধু মাটিপানে তাকিয়ে রইল।

আমি বললাম ভাল আছি, আপনি?

আমার কথা শুনে বেচারী ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, বুঝতে পেরেছি আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি, আমি থার্টিন ব্যাচের বৃষ্টি।

-ওও! তুই এত মুটিয়ে গেছিস, আমার চিনতে বারোটা তো বাজবেই।এখন কী করছিস?

-আমি তো জগন্নাথে আছি এখনো। গত বছর সহযোগী অধ্যাপক হয়েছি।
-বিয়ে সাদি বাচ্চা কাচ্চা এসব তো বললি না?

আমার প্রশ্ন শুনে বেচারি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তুমি তো জানতেই ভাইয়া, গালিব ভাই আমাকে নিয়ে কি পাগলামোটাই না করেছে। আমাকে ইনডিকেট করে নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট করতো।

(এখন না, রাত তিনটেয় এসো বৃষ্টি
ঘুম থেকে ডেকে তুলে একটু পানির ছিটা দিও
চোখের নীচে জমে থাকা রাত্রির অন্তর্বাস, নিজ ঠোঁটে নামিয়ে দিও তোমার বসনে,
জোর করে তুলে দিও অনিচ্ছার হাত
আমি ইচ্ছায় ফিরিয়ে নিবো বর্ষার ফোঁটা,,
রাত তিনটেয় এসো, বৃষ্টি)


(আজ একটুখানি বৃষ্টি হলেই পারতো)

(আর কতদিন বাঁচতে হবে? এভাবে?
বৃষ্টি নেই, বৃষ্টি ছাড়া যায় কি বাঁচা
যায় কি বাঁচা? শুষ্কহৃদয়, শুষ্কপ্রায় জীবন জরা
আর কতদিন থাকতে হবে বৃষ্টি ছাড়া?


(ভেবে নেই বৃষ্টি খুব, বইছে ঝড়
রাতের আকাশ যাচ্ছে ভিজে তোমায় নিয়ে
মন ফড়িঙের অবাক ঘোরে বৃষ্টি নামাই। বৃষ্টি নামে।)


( হোক গুজব, বৃষ্টি আজ হবেই, হ-বে
গুজব পূর্ববর্তী এই কার্বলিক গরমে তোমার মন গলে গলে বাদল ঝরবে
কি করবা?)


আরো ও কত আকার ইঙ্গিতেই না বুঝাতো।
কিন্তু আমার বোঝার কোন উপায় ছিল না। কেননা ১৩ ব্যাচে তো আর আমি একাই বৃষ্টি ছিলাম না। তবে ১৩ ব্যাচ আসার আগে তিনি এসব পোস্ট দিতেনও না। সেই গালিব ভাই যখন আমাকে প্রোপোজ করলো তাকে কি অপমানটাই না করেছি! আসলে এই ঘটনার ৭-৮ বছরের মধ্যে আমার কোন অনুশোচনা হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করার পর যখন বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো, অনুশোচনা জাগলো তখন। কিন্তু ততক্ষণে গালিব ভাই বিখ্যাত বনেছে। যদি তার সামনে দাঁড়াই তিনি হয়তো ভাববেন, আমি লোভী। বড্ড দেরি হয়েছে। তাই লজ্জায় ক্ষোভে দুঃখে এখনো বিয়ে করিনি। বলতে পারেন অপেক্ষারত...। যদি কখনো মেনে নেয় তো ভিন্ন কথা।

পাশে তাকিয়ে দেখি গালিব ভাইসহ আমার পিচ্ছি দুইটা নাই। হয়তোবা বৃষ্টিকে সহ্য হচ্ছিল না বলে দূরের বকুল গাছ ও কৃষ্ণচূড়ার মাঝে পাতানো টঙ্গে বসে আছে। আমি ওহানকে বললাম, বৃষ্টিকে ভাইয়ের সাথে বসিয়ে দিয়ে মাজ ও তৃষ্টিকে নিয়ে আসো।
আর গালিব ভাইয়ের বিখ্যাত কবিতাখানি একবার আবৃতি করিও
"জানি একদিন ফিরবে,
তবে কেন করলে এত দেরি
একবার মুখ ফুটিয়ে বলতে
ভেঙ্গে যেত আমারি সব লোক দেখানো আড়ি....."

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০১

মাআইপা বলেছেন: খুব ভাল লাগলো। দেখা যখন হয়েই গেছে............... এবার সেরে ফেলুন...............

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৩

গালিব আফসারৗ বলেছেন: সেটা করতে গেলে গল্পের দ্বিতীয় পার্ট লিখতে হবে। বাস্ত তো বহত দূর হ্যায় :)

২| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৬

ডায়োজেনিস বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর লিখেছে আপনার ছোটভাই। ভালো লাগলো।

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৮

গালিব আফসারৗ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.