নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলার মত তেমন কোনো গুন নেই এমনকি কোনো কিছুতেই সেরা নই কিন্তু সব সময় সেরাদের আশে পাশে থেকে সব সময় শিখতে চাই...\n

মাহদি (এক জন মেরুদণ্ডী প্রাণী)

মাহদি (এক জন মেরুদণ্ডী প্রাণী) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গজব শহরের দিনলিপি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৪


১)
প্রচন্ড শব্দে ট্রান্সফরমার বাস্ট হলো! পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। আমার কি। আমি জামার বোতাম লাগাই। এই জামাটার বোতাম বাম দিকে।
আগের কার পুরুষদের তাদের ডান হাতে ধরতে হতো তলোয়ার। খালি শুধু বাঁ হাত। বাঁ হাতে বোতাম খোলাপরার সুবিধার জন্য,  বের করার সময় তলোয়ার যাতে জামা বা কোটের বোতামের খাঁজে আটকে না যায়, তাই বোতাম বসানো হতো ডান দিকে। আর নারীদের ক্ষেত্রে বাচ্চাকে যেহেতু বাঁদিকে ধরতে হয়, তাই ডান হাত খালি থাকে। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় ডান হাতে বোতাম খুলতে হয়। সেক্ষেত্রে বোতাম ডানদিকে থাকলে খুলতে কষ্ট হতো।তাই বোতাম বাম দিকে।
আমি একটা জামা খুব করে চাচ্ছিলাম । একটা জামা কিনতে সব বড় বড় শপিংমলে ঘুরলাম।
হাহাহা!! কেউ আমাকে একটা জামা দিল না। এমন না যে আমার পকেট ফুটো। আমার পকেট ভর্তি সারা দিনের জমানো বেশকিছু কয়েন। কম দামে আমার কাছে কেউ একটা জামা বিক্রি করলো না। আমার না-কি জামা কেনার যোগ্যতা নেই! পুরোনো জামাটা পড়ে পড়ে কলারের দিকে, বগলের নিচে হলদে হয়ে গেছে। পড়ে ফুটপাতের পুরনো কাপড়ের দোকানের থেকে এই সবুজ' জামাটা নিলাম।
আমি সবুজ জামাটা পড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম।নতুনের মতই দেখতে।
ঠিক সবুজ না কলাপাতা সবুজ।

২)

কতক দূরে একটা জটলা,,একটা ছিন্নভিন্ন লাশ। ট্রান্সফরমার চোর আনারি, নেশাখোর হবে। চুরি করতে এসে বেচারা মরেই গেলো!! গজব শহরের এই পাশে তেমন রাস্তা ভালো না,, বছরের সব সময় রাস্তা কাটাকাটি করে কারা জানি কি কি কাজ করে,, হাটু কাদা রাস্তা,এম্বুলেন্স আসতে দেরি আসে। কয়েকটা ছেলে লাইভ করছে,আমার কি? এই গজব শহরে,এই গোলামদেশে,, ফেইসবুক স্ট্যাটাসের আগুনে শ’য়ে শ’য়ে মানুষের বাড়ি পুড়ে যায়,স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করতে গিয়ে ছেলেধরা' বলে পিটিয়ে মারে
কী করে এরা তখন? অনলাইনে লিখে।
সাদা নীল দেয়ালে টাইপ করে কখনো মানুষের চোখের পানি মোছা যায়? গজব শহরে সব অর্থবদের বসবাস, এখানে তাই বিপ্লবীদের 'লাইভ'ই সম্বল!

৩)

হাটতে হাটতে শহরের ঝিলমতির পাড়ে এসে পড়লাম। আমাদের গজব শহরের টাকশাল এখানেই।রাজার টাকশালের আসে পাশেই গড়ে উঠেছে নানান বাবার দরগা। সব বাবার বড় বাবা 'দরবেশ বাবা'।বাবারা দলে দলে বসে জিকির আসগারে মত্ত আছেন।বাবাদের কানেকশন দরবেশ বাবা। দরবেশ বাবার আবার উপর ওয়ালার সাথে ডাইরেক্ট কানেকশন। সারা রাজ্যের খাজনা এসে টাকশালে পড়ে।কথা ছিলো গজব শহরের কেউ প্রয়োজনে ধার নিতে পারবে টাকশাল থেকে।কিন্তু আদতে শুধু দরবেশ বাবা খুশিমত বুঝে নিতে পারেন,,আর ছোট্টো ছোট্ট বাবারা দরবেশের সিলসিলায় থেকে খানিকটা ভাগ পান।
আমার খানিকটা ধার লাগবে,, একটা ছোট্ট গাজার দোকান দিবো। গজব শহরে গাজার চাহিদা প্রচুর। অনুভূতি গুলো ভোতা না করে এখানে বাচা মুশকিল। গাজা খেয়ে 'কচুরিপানাও' কুড়মুড়িয়ে খেয়ে ফেলা যায়।বড়,ছোট,মাঝারি, যে কোনো সাইজের দুঃখ - ধোয়ায় ওড়ানো যায়। এ এক অব্যার্থ আয়ুর্বেদিক সালসা!!
................ 'যে খায় গাজা,সেই হয় রাজা'

আমি এক ছোট্ট বাবার ওয়েটিং রুমে, টিভিতে গজব শহরের উন্নয়নের জিংগেল বাজছে। একটু পর খবর শুরু হল।বাইরে,, শহরের মূল সড়কে প্রচুর জটলা! রাজা,বাবাদের বিরোধী কারা যেনো সামাজিক মাধ্যমে লাইভে কি না কি বক্তব্য দিয়েছে,,তাই রাজা আর দরবেশবাবা সমাজের পক্ষে ভাড়াটেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে। যে ভাষা জনসমক্ষে প্রচার করা যায় না, সে রকম ভাষায় বক্তব্য হচ্ছে। ব্যক্তিগত অভিযোগ, বিদ্বেষ, হিংসা প্রচার হচ্ছে, এবং এটাই প্রত্যাশিত।
গজব শহরের রাজার পক্ষের-বিপক্ষে দল, ছাত্রসংগঠন গুলো জনসভা, মিছিল ইত্যাদির নামে গজব শহরে প্রায়ই এমন তুলকালাম যানজট বাধিয়ে বসে। শহরে যে আরও মানুষ থাকে, তাদের নানা জরুরি কাজ থাকতে পারে,তা তারা গ্রাহ্য করেন না।বাইরের কেউ দেখলে ভাববে, এই শহরের মালিক কেবল তারাই।আর এখন এটাই সত্যি।

এমনি সময় বাবা ডাক দিলেন।
"হে বৎস, চেহারা এত মলিন কেনো? তোর কি লাগবে,আমাকে বল। মুশকিল আসান বাবার দরগা থেকে কেউ খালি হাতে ফিরে নাই'' বল..

বললাম, বাবা আমার জরুরি ঋন দরকার। কিন্তু ওনারা দিচ্ছে না।জামানতের মার পেচে আটকে যাচ্ছি..

হোক মাওলা!, দেখি তোর কাগজপত্রগুলো। তারপর মুশকিল আসান বাবা আমার কাগজগুলো নিয়ে ফড়াৎ করে ছিঁড়ে ফেললেন। একদম মাঝ থেকে,,পারফেক্টলি ব্যালেন্সেড! কোনো পাশে এক সেন্টিমিটারো বেশি কম নেই। বাবার তাহলে কাগজ ছেড়ার বেপক অভিজ্ঞতা!!
আচ্ছা,,তারপর বাবা নতুন ফরম দিয়ে বললেন এটা পূরণ কর। বললাম, বাবা আমিতো সত্যায়িত করে এনেছিলাম। এখন আবার রাজকীয় গ্যাজেটেড কর্মকর্তা পাব কোথায়?

বাবা বললেন, আমাদের চেয়ে বড় কর্মকর্তা আর কে আছেরে গজব নগরে। তুই পূরণ করতো। সত্যায়িত আমি করব। ফরম পূরণ করে বাবার হাতে দিলাম। বাবা বললেন, তুই যাগা। ঠিক ১৫ দিন পর তোকে ইয়াদ করব। তোর নামে 'গজবনগর সিদ্ধি কোম্পানি লিঃ' রেজিস্ট্রার হয়ে যাবে। তার পর ব্যাবসার উপর যা ঋণ লাগে নিস।
আমি অবাক হলাম। বাবা আমার তো কোনো ব্যাবসাই নেই। থাকিও সেই গোলামপাড়ায়!! গোলাম পাড়ার কাওকে তো ঋন দেয় না।
বাবা বললেন তুইতো ভারী বোকা লোকরে। তোর ঋণের ভাগ তো টাকশালের টাকলারাও পাবে!! আর অডিট অফিসারের দুই চোখে দুইটা কচি কচি বান্ডিল নিয়ে দিবো একটা ঊপরের কানেকশনোয়ালা ফু' , অমনি তোর বাড়ি ঘর সব স্বপ্নে ভেরীফিকেশন করে ফেলবে। সব উপর ওয়ালার লীলা খেলারে। বুঝলিরে পাগলা!
সত্যি বাবার কুদরতি বড়ই কড়া। আমি বাবার চরনে লুটিয়ে পড়লাম। বাবা আপনিই সেরা। আপনার পদধুলি দেন।আমি বাবার পদধূলি নিয়ে উঠে দাড়ালাম,,বেরিয়ে যাবো,, বাবা আবার ডাকলেন..
আচ্ছা শোন,,পয়সা নিয়ে কি করবি? কই জাবি ঠিক করসিস?
আমি ডানে বায়ে ' মাথা নাড়লাম
শোন,, টাকশালের গেটে ফুড়ুৎ বাবার দরগা, পেকেজে কানাডা,সুইজারল্যান্ডে সেটেল্ড করে দেয়। আমার রেফারেন্স দিলে ডিস্কাউন্টো দিবে।

ঋন পেলে সবাই সেটা মেরে দিয়ে, ভেল্কিবাজি করে গায়েব হয়ে যায়। বাতাবি লেবু টেলিভিশনে যদিও এসবের পিছনে 'সব দোষ, নন্দ ঘোষ' সেই লন্ডনের ভানুমতীকেই দায়ী করত। কিন্তু আজ জানলাম খেলাটা কই হয়। যাই হোক,তাতে আমার কি?

আমি আরেক প্রস্থ পদধূলি নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।

৩*
(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক------
মন্দ নয়। মজা আছে।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনবদ্য পোষ্ট্

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.