নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলার মত তেমন কোনো গুন নেই এমনকি কোনো কিছুতেই সেরা নই কিন্তু সব সময় সেরাদের আশে পাশে থেকে সব সময় শিখতে চাই...\n

মাহদি (এক জন মেরুদণ্ডী প্রাণী)

মাহদি (এক জন মেরুদণ্ডী প্রাণী) › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইকেলের লাঙ্গল

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:১২

একবার আমেরিকাতে লাঙ্গল আবিষ্কার হলো। আবিষ্কারকের নাম মাইকেল উইলিয়াম মাইকেল, লোকে ডাকতো ডাবল মাইকেল। তখন প্রেসিডেন্ট জেফারসন ক্ষমতায়।

পত্রিকাগুলো লাঙ্গলের নাম দিলো মাইকেল সাহেবের লাঙ্গল। দ্য ডাবল মাইকেল প্লাও।

মার্কিনিরা ট্রাক্টর দিয়েই হালচাষ করতো। লোহার বড় বড় ধাতব ফলা। স্টার্ট দিলেই ভটভটভটভটভট। তবে দাম ছিলো বেশি। কিন্তু ব্যাংকগুলো লোন দিতো। লোনের নাম আমেরিকান ট্রাক্টর লোন। মাইকেল সাহেবের লাঙ্গলের খবর কৃষকদের কানে পৌছলে তারা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। মাত্র ৫ ডলারে কেনা যাবে দ্য ডাবল মাইকেল প্লাও। চাইলে নিজেও বানানো যাবে। মাইকেল সাহেব লাঙ্গল বানানোর ফর্মূলা উন্মুক্ত করেছেন। মাইকেল সাহেব নিজেও কৃষক, তিনি কৃষকের ঋণের ব্যাথা বোঝেন।

আমেরিকায় তখন ভয়াবহ হারিক্যান হয়েছে। ফসল নষ্ট হয়ে গেছে এককোটি হেক্টর জমির। নতুন ট্রাক্টর আমদানীও কমে গেছে। মেক্সিকো থেকে তারা ট্রাক্টর আমদানী করতো। শুধু ট্রাক্টর নয়, আমেরিকার একটা সুইও মেক্সিকো থেকে আসতো। কিন্তু হারিক্যান মেক্সিকোতেও আঘাত হেনেছে।

ভয়াবহ ট্রাক্টর সংকটে পড়লো আমেরিকা। দ্রুত ফসল ফলাতে না পারলে দুর্ভিক্ষে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমস শিরোনাম করলো- "ম্যাজিক প্লাও, অ্যা ডাবল মাইকেল ইনোভশন", সারা আমেরিকায় মাইকেলের প্রশংসা। অনেকের সহযোগীতায় মাইকেল সাহেব একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করলেন।

এ পর্যায়ে একটি ঘটনা ঘটলো। আমেরিকার ফেডারেল সরকারের কৃষিমন্ত্রী মিস্টার বুসোম টিভিতে ঘোষণা দিলেন- মাইকেল সাহেবের লাঙ্গল আবিষ্কারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেয়া হয় নি। অনুমোদনহীন লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করা যাবে না।

মাইকেল সাহেব দৌড়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে গেলেন। অনেক তদবিরের পর মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি গার্ল্যান্ড উইলসনের দেখা পেলেন। উইলসন সব শুনে বললেন- আপনি তো কৃষক, আপনি বিজ্ঞানী নন, আপনার কি লাঙ্গল আবিষ্কারের লাইসেন্স আছে?

- না, নেই, তবে আমার স্ত্রী কৃষিবিজ্ঞানী। সে ও আমি মিলে এই লাঙ্গল তৈরি করেছি।

আপনার স্ত্রী বিজ্ঞানী হলেও তার লাইসেন্স লাগবে। তবে তার আগে তিনি যে বিজ্ঞানী তা প্রমাণ করতে আরেকটি আলাদা লাইসেন্স দেখাতে হবে। আপনি এক কাজ করুন, কীটনাশক অধিদপ্তরে যান। তারা সব বলে দেবে।

- কিন্তু আমি তো কীটনাশক আবিষ্কার করি নি। আমি লাঙ্গল আবিষ্কার করেছি। লাঙ্গল তো কীটনাশক নয়।

লাঙ্গল কীটনাশক কি না তা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না। লাঙ্গলেরও কীটনাশকের গুণাবলি থাকতে পারে। আপনি কীটনাশক অধিদপ্তরে যান। আমি ফোন করে দিচ্ছি।

মাইকেল সাহেব কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে রওয়ানা দিলেন ফেডারেল পেস্ট কন্ট্রোল বোর্ডের দিকে। পেস্ট কন্ট্রোল বোর্ডই কীটনাশক অধিদপ্তর।

দুই ঘন্টা বসার পর তিনি দেখা পান ডিরেক্টর জেনারেল রোনাল্ড পলম্যানের। পলম্যান সব শুনে বললেন- আপনি মন্ত্রী স্যারের সাথে কথা বলুন। ওনার অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারবো না।

মাইকেল সাহেব বেরিয়ে এলেন। স্থানীয় কংগ্রেসম্যানকে ফোন করে মন্ত্রী সাহেবের এপয়ন্টমেন্ট চাইলেন। কংগ্রেসমেন তাকে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মিস্টার বুসোমের বাসায় গেলেন। সাথে একটি লাঙ্গল নিয়ে গেলেন।

মিস্টার বুসোম লাঙ্গল নাড়াচাড়া করে কিছুক্ষণ দেখলেন, এবং বললেন- আপনার লাঙ্গলের কথা আমি শুনেছি। এ লাঙ্গল কেমন ফল দেবে তা আপনাকে আগে দেখাতে হবে। এক কাজ করুন, ৫ বছর এ লাঙ্গল দিয়ে আপনি নিজে চাষ করুন। একবছর ভুট্টা, পরের বছর গম, এভাবে ৫ বছর। তারপর কীটনাশক অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত করুন। আর আমরা ইতোমধ্যে ১ লাখ ট্রাক্টর অস্ট্রেলিয়া থেকে আনাচ্ছি। এ বছর আগের চেয়ে আরও বেশি ব্যাংক ট্রাক্টর লোনে সংযুক্ত হবে।

মাইকেল সাহেব বললেন- মিস্টার মিনিস্টার, আপনারা আমার লাঙ্গল একজন এগ্রিকালচারালিস্টকে দেখান, যদি মনে করেন এ লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা যাবে তখন না হয় অনুমোদন দেন? ৫ বছর তো অনেক সময়। আর তাছাড়া দরিদ্র কৃষকরা তো এতো টাকা লোন নিয়ে ট্রাক্টর কিনতে হিমশিম খাবেন।

মন্ত্রী বললেন- তিনি প্রটোকলের বাইরে যেতে পারবেন না। সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া আছে। সবাইকে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। এই যে দেখেন আমি মন্ত্রী হয়েছি, একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়েছি।

মাইকেল সাহেব মন খারাপ করে চলে এলেন। তার হতাশার কথা গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলো। কৃষকরা মিস্টার বুসোম, সেক্রেটারি উইলসন, ও ডিজি পলম্যানকে গালাগালি করতে লাগলেন।

নিউইয়র্ক টাইমস আবার শিরোনাম ছাপলো- ডাবল মাইকেল প্লাও ইন জিওপার্ডি। মানুষ আরও ক্ষেপে উঠলো।

মন্ত্রীকে রক্ষায় এগিয়ে এলেন কৃষি ও কীটনাশক ও কৃষিযন্ত্র ও কৃষকবিজ্ঞানী ডক্টর কোহেন। প্রতিটি বিষয়ে তার হার্ভার্ডের পিএইচডি আছে। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখে সরকারকে ধন্যবাদ দিলেন সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য, এবং কীভাবে লাঙ্গল আবিষ্কার করতে হয় তার একটি বিশদ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করলেন।

প্রক্রিয়া পড়ে সবাই আবার উল্টে গেলো, তারা বললো- ঠিকই তো আছে, মাইকেল সাহেব তো নিয়ম না মেনেই লাঙ্গল আবিষ্কার করেছেন। আইন সবার জন্য সমান, ল ইজ ব্লাইন্ড, মাইকেল সাহেবকেও আইন অনুযায়ী লাঙ্গল আবিষ্কারের দরখাস্ত করতে হবে। কেউ কেউ আইন লঙ্গনের দায়ে মাইকেল সাহেবের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করার কথা বললো। এবং একদিন মামলা হয়ে গেলো।

মাইকেল সাহেব চিঠি লিখলেন প্রেসিডেন্ট জেফারসনের কাছে-

"মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি মাইকেল উইলিয়াম মাইকেল, ডাকনাম ডাবল মাইকেল, সংবিধানের দুই নাম্বার অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনার কাছে কৃতকর্ম মার্জনার আবেদন করছি। আমার নামে মামলা হয়েছে। আপনি আমাকে প্রেসিডেনশিয়াল পার্ডনের আওতায় ক্ষমাপ্রাপ্ত আসামী হিশেবে দন্ডমুক্তি প্রদান করুন। আমার অপরাধ নিম্নরুপ-

আমি বিনা অনুমতিতে একটি লাঙ্গল আবিষ্কার করেছিলাম।"

তিন মাস পর মাইকেল সাহেব হোয়াইট হাউস থেকে একটি চিঠি পেলেন। চিঠিতে লেখা-

"আপনার আবেদন বিবেচনা করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও ফেডারেল কীটনাশক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী ছাড়পত্র সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হলো।"

- মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
(মাইকেলের লাঙ্গল আবিষ্কার)
২৮/০৪/২০২০

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২১

কৃষিজীবী বলেছেন: যা বুঝলাম, কীটনাশক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নেওয়ার অপরাধে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমলাতন্ত্র, মূর্খতন্ত্র, স্বার্থতন্ত্র, কমিশনতন্ত্রের এক চোরাবলি লুপ...... X((

গণস্বাস্থ্য দেখতেছে, হাইকোর্ট কাহাকে বলে ও কোথায় অবস্থিত!!! :((

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নাঙ্গল হলো মোর এরশাদ চাচার। জাফরুল্লা অনেক হামলা মামলার স্বিকার হবে ।

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: নোঙর তোল তোল সময় যে হোল হোল।

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: কোথাও যেন একটু মিল খুঁজে পেলাম বলে মনে হল, নাকি আমারই ভুল, কে জানে B:-)

৬| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৯

শের শায়রী বলেছেন: মুগ্ধ পাঠ। বাস্তবতার নিরিখে এত দারুন পোষ্ট খুব কমই পড়ছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ০৫ ই মে, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চমৎকার রম্য রচনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.