নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক তথাকথিত মুক্তমনারা প্রায়ই একটা কথা বলে থাকেন- "পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই"। তাদের এই কথার যৌক্তিকতা নিয়েই আজকের এই পোস্ট!
কয়েকদিন আগের ঘটনা- একদিন বিকেলে ভার্সিটির লাইব্রেরিতে আমরা কয়েকজন বন্ধুরা মিলে কথা বলছিলাম, কথা প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল- জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম এইসকল বিষয় নিয়ে! আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের খাতিরে অনেক কিছু নিয়েই কথা হচ্ছিল- যেখানে একটা কথা উঠে আসে- “পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই”! (আমার এক বন্ধুর মুখ থেকে, যে কিনা নিজেকে মুক্তমনা দাবি করে)
আচ্ছা এবার তাহলে এই কথাটির ব্যাখ্যায় চলে আসি- কথাটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে দর্শনের সাথে অনেকটা সম্পর্কিত, এবং বিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত। বলতে গেলে কারো নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি! এখন যদি এই উক্ত কথাটি আমরা গভীর ভাবে লক্ষ্য করি তবে যেই ব্যাপারটা প্রথমেই চলে আসে তা হচ্ছে, কথাটা নিজেই স্ববিরোধী, সাংঘর্ষিক, নিজেই নিজেকে মিথ্যা প্রমাণ করে, অনেকটা প্যারাডক্স এর মত।
আচ্ছা এবার আসি ব্যাখ্যায়, যখন কেউ বলছে, “পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই”- এই কথাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই বলে যারা বিজ্ঞানের ভিত্তিতে অবিনশ্বর কোন একজন সত্তা যে আছেন তার উপর বিশ্বাস করেন না! এখন কথা হলো- যিনি এই কথাটি বলছেন, তিনি বিজ্ঞানের কিছু থিউরির উপর বিশ্বাস করেই কথাটি বলছেন। তার মানে, তার কাছে ঐ থিউরিগুলো সত্য, তিনি ঐ সকল থিউরির উপর বিশ্বাস রাখেন বলেই “পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই” এই কথাটি বলছেন। যেখানে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই সেখানে কেনো তিনি কিছু থিউরিকে সত্য বিবেচনা করে তাকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যাবহার করছেন, তা সত্যি ই যুক্তিহীন! তাহলে কি দাঁড়ালো? তার কথাটি নিজের বিশ্বাসের সাথেই সাংঘর্ষিক ! যেখানে তিনি কোন কিছুকেই সত্য বলে বিশ্বাস করার কথা না, সেখানে কেনো তিনি কিছু থিউরির উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যাবহার করছেন তার বিশ্বাসের প্রমানের পরিপ্রেক্ষিতে?!
আচ্ছা, এবার আসি ফিলোসফিকাল ব্যাখ্যায়। ফিলোসফিতে একটা ধারণা অনেক প্রচলিত যে- আমার যে অস্তিত্ব আছে, তার প্রমাণ কি? এখন ঠিক সেই একই প্রশ্ন যদি “পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই” বলা মানুষটিকে করা হয়? তাহলে তিনি কি বলবেন? সে যেহেতু কোন সত্য কে বিশ্বাস করে না, সেহেতু তার যে অস্তিত্ব আসলেই আছে, তার প্রমাণ কি? আর তিনি মানদণ্ড হিসেবে কোন প্রমাণিত সত্য কে গ্রহণ করবেন? তিনি যদি তার আপন অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে অন্য কোন সত্য কে মানদণ্ড হিসেবে ব্যাবহার করেন, তবে তার কথাটি নিজের সাথেই স্ববিরোধী! যার কোন অস্তিত্ব ই প্রমাণ করা যাচ্ছে না, তার কথার ই বা অস্তিত্ব থাকে কি করে!!
এবার আসি প্যারাডক্স হিসেবে- যেখানে “পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই” সেখানে এই উক্ত কথাটির ই বা সত্যতা থাকে কোথায়? হা হা! নিজেকেই নিজে মিথ্যা প্রমাণ করা!
দিন শেষে আপনি বলতেই পারেন, কথাটা সম্পূর্ণ আমার দৃষ্টিভঙ্গি! কিন্তু ভাই, যেই কথাটা নিজেই নিজের স্ববিরোধী, সাংঘর্ষিক এবং মিথ্যা প্রমাণ করে, সেখানে আপনার কথার কোন অস্তিত্ব ই গ্রহণ করার যোগ্য না!
শাশ্বত সত্য বলতে অবশ্যই পৃথিবীতে কিছু থাকতে হবে। আমাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলেই আপনি শাশ্বত সত্যের পরিষ্কার আইডিয়া পেয়ে যাবেন, যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করেন। কেনোনা, ইসলাম কখনো প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের বিপক্ষে যায়নি আজ পর্যন্ত সেখানে বিজ্ঞানের ভক্ত হয়ে কি করে বলেন “পৃথিবীতে শাশ্বত সত্য বলতে কিছু নেই”??? তাহলে বলতে হয়, আপনি নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করেন না! আর যে নিজেকে বিশ্বাস করেনা, তার কথা বিশ্বাস করার যৌক্তিকতা কোথায়??
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০৯
মাহফুজ আলআমিন ( Auspicious Fate ) বলেছেন: আধুনিক শব্দটা আমার কাছে বড় বেখাপ্পা! আজ থেকে ১০০ বছর আগে কি মানুষেরা তাদের নিজেদের আধুনিক ভাবতো না? ১০০ বছর পরে, বা ১০০০ বছর পরেও কি তাই হবেনা? সবাই সব কালে নিজেদের আধুনিক ভাবতে ভালোবাসে এবং প্রচলিত মতবাদ নিয়ে লাফালাফি করে! এই সব কিছুই আপেক্ষিক! কিন্তু সব সময়, সব কালে, এমন কিছু তো অবশ্যই থাকবে বা আছে যা আপেক্ষিক নয়। যাদের চোখ, মন, মস্তিস্ক খোলা আছে, যারা প্রকৃত মুক্তমন নিয়ে চিন্তা করে তারা নিজেদের নির্দিষ্ট স্থান, কাল পাত্রে আবদ্ধ না রেখে "Absolute truth" এর অনুসন্ধান করে এবং তারা সফল ও হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৯
দরবেশমুসাফির বলেছেন: আধুনিক সমাজ চলে রিলেটিভিজম আর সফিস্তিক মতবাদের দ্বারা গঠিত দৃষ্টিভঙ্গির উপর। খেয়াল করলে দেখা যাবে সবখানেই এই দুই মত আমাদেরকে পরিচালনা করছে।