নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন একটা কৌতূহলী যাত্রার নাম- স্রষ্টা, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য এবং এই সব কিছুর সত্যতা কে ঘিরে... আর আমি সেই পথের একজন সাধারণ যাত্রী। নিজের জায়গা থেকে সব স্থান, কাল, পাত্রে আপন অস্তিত্বকে কল্পনা করতে ভালোবাসি আর সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটা কাজ করে যাই...

মাহফুজ আলআমিন ( Auspicious Fate )

মাহফুজ আলআমিন ( Auspicious Fate ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য এড়িয়ে যাওয়া আদৌ সম্ভব নয়! তবুও আমরা এড়িয়ে যাওয়ার কতশত মিথ্যে চেষ্টায় ব্যাস্ত!

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৮

ধরুন আজ রাতে আপনি নিয়মিত সময় অনুযায়ী ঘুমালেন। ঘুমাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন, হঠাৎ করেই কার যেনো আচমকা শব্দে আপনি জেগে উঠলেন। অদ্ভুত চেহারার কেউ একজন আপনার সামনে উপস্থিত, জীবনে কখনোই তাকে দেখেননি। তাকে দেখে আপনি ঘাবড়ে গেলেন, ঘামতে শুরু করলেন, কিন্তু চিৎকার দিতে গিয়েও পারলেন না। ধীরে ধীরে আপনি ঘামা শুরু করলেন, আপনার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না, খুব একটা নড়তেও পারছেন না। সেই অদ্ভুত সত্ত্বাটি আপনার দেহ থেকে কি যেনো বের করে আনার চেষ্টা করতে লাগলেন। আপনি বাঁধা দিতে পারছেন না, আপনার শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শরীর ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে, একটা উলের বলে লেগে থাকা কাঁটা টেনে ছিঁড়ে বের করে আনলে যেমন মনে হয়, আপনার ও তেমন ই মনে হচ্ছে, আপনার ভিতরের সত্তাটা কে কেউ যেনো টেনে হিঁচড়ে বের করে আনছে। ঠিক তখন ই সমস্ত পৃথিবীর পিপাসা যেনো আপনার উপর পেয়ে বসলো। আপনি চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছেন। দুনিয়ার প্রতিবিম্ব একদম ই পাল্টে যাচ্ছে, আর আপনি প্রচণ্ড চেষ্টা করেও আর এক ফোঁটা শ্বাস নিতে পারছেন না। আপনার চোখ, মুখ, মস্তিষ্ক, ফুসফুস সব কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। আর কষ্টের তীব্রতায়, যন্ত্রণায় আপনি যখন মরিয়া হয়ে ছটফট করতেও পারছেন না, তখন আপনি বুঝতে পারলেন আপনার জীবনের সমাপ্তি এখানেই ঘটতে যাচ্ছে, আর যে সত্ত্বাটি আপনার জান কবজ করতে আসছেন, তিনি আর কেউ নন স্বয়ং মালাকুল মউত! আপনি প্রচণ্ড কষ্ট,যন্ত্রণার তীব্রতা উপেক্ষা করে সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদ শেষবারের টা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে অতঃপর মালাকুল মউত জান কবজ শেষ করার মাধ্যমেই, আপনি চিরদিনের জন্য ইহকাল ত্যাগ করে পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।

যেহেতু যেই মানুষটির মৃত্যু হয় সে ছাড়া কেউ কখনো জানতে পারেনা মৃত্যুকষ্ট আসলে কেমন সেহেতু শুধুমাত্র একটা ধারনার ভিত্তি করে উপরোক্ত কথাগুলো বলা।
যাই হোক আসল বিষয় হচ্ছে পরের ঘটনা। না আমি এই নিয়ে আলোচনা করবো না, কার সাথে কবরে কি হবে ( আল্লাহু আলাম)। কিন্তু যদি শুধু কবরকে একটা অন্ধকার ঘর হিসেবেও চিন্তা করি এবং মৃত্যু পরবর্তী বিষয়গুলোর সাথে দুনিয়াবি অভ্যাস অনুযায়ী খাপ-খাওয়ানোর কথা শুধু চিন্তা করি তবে আমরা কি পাই সেই বিষয়েই না হয় আলোচনা করা যাক-
মৃত্যুর পর আপনার পরিবার আত্মীয়স্বজন যথারীতি কান্নায় ফেটে পড়বে এবং অতঃপর নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে গোসল দিয়ে জানাজা পড়িয়ে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন সব নিয়মকানুন মেনে আপনাকে কবরে শুইয়ে দিয়ে উপড়ে মাটি চাপা দেয়া হতে থাকবে- ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার কেমন লাগবে ভেবে দেখেছেন? ধীরে ধীরে পৃথিবীর আলো চিরদিনের জন্য হারিয়ে আপনাকে একা নিঃসঙ্গ রেখে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসবে সবাই।

একবার ভাবুন তো, আপনার সাথে কি থাকবে তখন? না মোবাইল, না ল্যাপটপ, না টাকাপয়সা, গাড়ি বাড়ি, স্বামী/স্ত্রী, না আপনার প্রিয় কেউ, না কোন সহযোগী, কেউ না, কিচ্ছু না! একদম কিচ্ছু না! এই যে আপনার মৃত্যু থেকে শুরু করে কেয়ামত এর সময় পর্যন্ত, আপনাকে যদি আজাব নাও দেয়া হয়, তবে দীর্ঘ এই সময় সেই অন্ধকার কবরে কিভাবে কাটাবেন? কিভাবে সময় পার করবেন? ভেবে দেখেছেন? কেউ নেই, যার কাছে সাহায্য চাইতে যাবেন! আপনি যদি সৃষ্টিকর্তার দেয়া নিয়ম কানুন জেনে মেনে তার রহমতের উপর ভরসা রেখে মৃত্যুবরণ করেন, তবে না হয় শান্তিপূর্ণ সুসংবাদ আশা করা যায়। কিন্তু, যদি আপনি আপনার সারাজীবন দুনিয়ার দেখানো পথে, সমাজের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী চলতে চলতে, সৃষ্টিকর্তা কে ভুলে গিয়ে, আপনাকে সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্য কে ভুলে গিয়ে মনের খুশিমত যা ইচ্ছা তাই করে বেরান, তবে মৃত্যুর পর ঐ কবরে আপনি কি পার পেয়ে যাবেন ভেবেছেন? কিভাবে পার পাবেন, যেখানে আপনার সারাজীবনে সৃষ্টিকর্তা কে খোঁজার বিন্দুমাত্র চেষ্টা ছিল না, সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে যা জেনেছেন বুঝেছেন সমাজের কাছ থেকে তা যাচাই বাছাই এর কোন রকম ইচ্ছাও পোষণ করেন নি। কিভাবে পার পাবেন, যদি সারাজীবন নিজের জীবনের উদ্দেশ্যই উপলব্ধি করতে না পারেন? লোকমুখে যা শুনলাম জানলাম ঐরকম দুর্বল বিশ্বাসের ভিত্তি আপনাকে পার করতে পারবে? পৃথিবীর এতো ব্যস্ততা তখন কোথায় যাবে?

এবার কিছু উপলব্ধির প্রসঙ্গে আসা যাক- জীবন এমন কোন এক খেলনার বিষয় নয়- যা দিয়ে আপনি যাচ্ছেতাই খেলবেন! জীবন একটা কৌতূহলী যাত্রার নাম- স্রষ্টা, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য এবং এর সত্যতা কে ঘিরে। আপনি যেখানে, যে প্রান্তে যেভাবেই আসুন না কেনো আপনার জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি তা যাচাই করা সবচেয়ে বড় বিষয়। এই উদ্দেশ্য কি আপনার কাছে ভিন্ন মনে হয়? নাকি সকলের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে একই হওয়া উচিত? যদি আপনি সারাজীবন সমাজ, মানুষের দেখানো পথে চলেই পার করে দেন, এই পৃথিবীতে আপনি যতই সফল হন না কেনো, পরকালে পার পাওয়া যাবে না। মৃত্যুর পর থেকেই আপনি সম্পূর্ণ অসহায়! যেই সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সৃষ্টি করলো- এতো নিয়ামত, প্রাচুর্যতা দিলো, সেই সৃষ্টিকর্তা যে আসলে কে, তিনি কি চান, তার হক আপনার কাছে কি, আপনাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যই যদি না ধরতে পারলেন, তবে কাল কবরে গিয়ে আপনি কার কাছে আশ্রয় চাইবেন? যে ব্যাক্তি সারাজীবন এক সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে তার উদ্দেশ্য পালনে সচেষ্ট থেকেছে, আর যেই ব্যাক্তি আসলে চিনতেই পারলো না আসলে তিনি কে, তাদের উভয়ের কি একই পরিণতি হবে ভেবেছেন? মানুষ কত বছর বাঁচে দুনিয়ায়? ৫০/৬০ অথবা ১০০! কিন্তু সেই কবরে যে আপনার কত হাজার/লক্ষ বছর পার করতে হবে তার কি প্রস্তুতি প্রয়োজন নয়? নিজেকে শয়তানের দেখানো পথের দাস বানিয়ে কতদিন আর এই দুনিয়ায় পার করবেন! বেশিদিন না, খুব ই অল্প সময়!

এবার আপনার মনের কিছু উদিত অনুভূতি বা প্রশ্নের দিকে আলোকপাত করা যাক-
*নাহ, কালকে থেকেই ভালো হয়ে যাবো, সেই কাল কখনোই আসেনা!
*আমি আর এমন কি পাপ করেছি জীবনে, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেবেন, বিশ্বাস তো করি!

বিশ্বাস ই যদি করতেন তবে আল্লাহ’র সম্পর্কে সারাদিনে একটা বার মনে করার সময় কিভাবে হয়না? তার দেখানো পথ সম্পর্কেই আপনার জানা না থাকলে মানবেন কি করে? শয়তানের পথে চলে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসী দাবি করলে আদৌ কি কোন লাভ হবে?
*সমাজের মানুষ এভাবে চলছে, আমি কি তবে ভিন্নভাবে চলবো! এতে দোষের কি আছে! একেক দেশে, একেক সমাজে অন্যায়ের হিসেব একেকরকম। কোনটা দোষ/পাপ, আর কোনটা পুণ্য এটা কি তবে মানুষ নির্ণয় করবে নাকি আপনার সৃষ্টিকর্তা?
* বয়স তো মাত্র এতো! এখনো অনেক বছর বাঁচবো হয়তো। বুড়ো বয়সে মাফ চেয়ে নেবো। আজ রাতেই যদি মারা যান, অথবা কাল, অথবা পরশু, কোন গ্যারান্টি তো নেই, তখন আফসোস এর সীমা থাকবে?

আসলে কথা হলো- জীবনটা খুব ই সংক্ষিপ্ত, দেখতে দেখতেই কেটে যায় চোখের পলকে!
তাই শেষ সেই নিশ্বাস ত্যাগের আগে অন্তত ভাবুন, চিন্তা করুন, জানার চেষ্টা করুন, খোঁজার চেষ্টা করুন- জীবন কি? আপনি কি উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে এসেছেন? কাল কবরে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি হিসেবে কি প্রয়োজন? সৃষ্টিকর্তাকে চিনুন। তিনি ছাড়া আর কেউ আপনার প্রকৃত আপন নয়। সবাই ক্ষণিকের, এই পৃথিবী, এই জীবন, এই সমাজ, এই সব কিছুই আপনার কাছে অতি স্বল্প সময়ের জন্য! এরপর অনন্তকাল পড়ে রয়েছে, আপনার প্রতিটা কাজ অনুযায়ী আপনার প্রাপ্তি বুঝে নেবার জন্য! একটা বাচ্চার মাথায় আদরে হাত বুলানো থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ মানুষ খুন, আপনি যাই করুন না কেনো, সৃষ্টিকর্তার ইবাদত থেকে শুরু করে অজ্ঞতাবশত শয়তানের পুজা সবকিছুর ই হিসেব হবে। কিছুই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

মৃত্যু অনিবার্য চিরন্তন সত্য। একে এড়িয়ে যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়! কিন্তু শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব! যদি সৃষ্টিকর্তাকে আপন চেষ্টায় চিনে থাকেন, আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য বুঝে থাকেন, সৃষ্টিকর্তার দেয়া নিয়ম নিজে খুঁজে বুঝে পালন করার চেষ্টা করে থাকেন, সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসতে পেরে থাকেন। তবেই কাল কবরে গিয়েও শান্তি লাভ করতে পারবেন, কারণ আল্লাহ তাআলা কে আপনি সবসময় স্মরণ করেছেন, ইবাদত করেছেন, সমাজ, প্রচলিত সব কিছুর উরধে গিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসতে পেরেছেন। কেউ থাকুক আর নাই বা থাকুক, আপনার সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা তো অবশ্যই আছে, সবসময় থাকবে। তথাকথিত প্রেম, আপন মানুষ, এমনকি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী কিছুই নয়, শুধুই সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনার বিশ্বাস, কর্ম আর ভালোবাসাই একমাত্র অবলম্বন।
আজ সৃষ্টিকর্তার আলোচনায় মানুষ যতটা না আগ্রহ বোধ করে তার চেয়ে বেশি আগ্রহ বোধ করে অন্য যে কোন বিষয়ে। আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে মানুষের লজ্জা হয়, অথচ চরম লজ্জাজনক বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ সারাজীবন মেতে থাকতে ভালোবাসে! কখনো কি ভেবেছেন এর কারণ কি? এই যদি হয় বিশ্বাসের নমুনা, তবে তা আপনাকে কিভাবে পার করবে?

আর যদি অন্য যে কোন কিছু আজ আপনাকে সেই প্রকৃত ভালোবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে, চিনতেই না দেয় আপনার সৃষ্টিকর্তাকে, আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কে, ব্যস্ত করে রাখে দুনিয়াবি চাওয়া পাওয়ায়, তবে ভাবুন এই সংক্ষিপ্ত জীবন শেষে কাল মৃত্যুর পর উপায় কি?
উপায় খুঁজুন, উদ্দেশ্য খুঁজুন, সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজুন, তার দেয়া নিয়ম পালন করুন সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই। আপনার সাথে কাল কেউ যাবে না কবরে। যদি সাথে কিছু যায়, তবে তা আপনার বিশ্বাস, আমল এবং সেই মহান স্বত্বার প্রতি ভালোবাসা।

( শুধু একটি রিমাইন্ডার, নিজের জন্য, আপনার জন্য, আমাদের সকলের জন্য, মৃত্যু চরম সত্য! এই সত্য কে উপেক্ষা করে এড়িয়ে যেতে যেতে কোনদিন না জানি জীবনটাই আপনাকে এড়িয়ে ছেড়ে চিরতরে চলে যায়!)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.