নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন একটা কৌতূহলী যাত্রার নাম- স্রষ্টা, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য এবং এই সব কিছুর সত্যতা কে ঘিরে... আর আমি সেই পথের একজন সাধারণ যাত্রী। নিজের জায়গা থেকে সব স্থান, কাল, পাত্রে আপন অস্তিত্বকে কল্পনা করতে ভালোবাসি আর সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটা কাজ করে যাই...

মাহফুজ আলআমিন ( Auspicious Fate )

মাহফুজ আলআমিন ( Auspicious Fate ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

#মাতৃভাষা দিবস, #বাঙালি, #শোক না বিনোদন, #ফুলের নামে হাস্যকর শ্রদ্ধা পদ্ধতি, #বিবেক, #উপলব্ধি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩১

আজ নাকি ২১ শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । বছর ঘুরে এমন কিছু জাতীয় দিবস আসে, আর আমরা তথাকথিত বাঙালিরা সেই দিবস এর কারণ, মহাত্ম্য, উদ্দেশ্য এর কোনটাই উপলব্ধি দূরে থাক, না বুঝেই অধিকাংশ জনগণ উৎসবে মেতে উঠি। সেই উৎসব আমাদের বিনোদন এর, আমাদের আপন অভ্যাসের তাড়নার মনঃপূর্তি করার এক বিশেষ আয়োজন এর। যেই ভাষার জন্য কিছু মানুষ জীবন দিয়েছে, সেই মানুষ গুলো কে আমাদের যতখানি মুল্যায়ন করার দরকার ছিল, তাদের ত্যাগ কে যতটুকু গুরুত্তের সহিত বিবেচনা করার দরকার ছিল তার ধারে কাছেও আমরা কখনো যাইনি। শুধু তাদের নাম ই মুখে আওড়ে গেছি, এমনকি তাদের সমাহিত লাশ গুলো পর্যন্ত ঠিক ভাবে শনাক্ত করতে পারিনি।

কিন্তু, দিন শেষে আমরা প্রতি বছর এই দিনটি ঠিক ই পালন করি অতি গুরুত্ত সহকারে। ভিনদেশি গান বাজিয়ে, সাদা কালো কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়িয়ে, প্রেম করার জন্য দিনটিকে ব্যাবহার করে, রংতুলি দিয়ে গালে হাতে শহিদ মিনার আকিয়ে, ঈদ এর মত করে আনন্দ ফুর্তি করে, প্রভাত ফেরি করে, আর সবচেয়ে প্রচলিত যেই ব্যাপারটি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সেই সকল অধমদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করে।
যারা আমাদের ভাষার জন্য প্রান দিয়েছেন, তাদের কে আমি অধম বলছি কেনো? সেই প্রশ্ন মনে উদিত হতেই পারে ! তারা কি এমন একটি লোক দেখানো আনন্দ উৎসবের দিন পালনের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন? আমাদের ভাব এমন যেনো, “বেটা তোরা তো মিছিল করতে গিয়ে গুলি খেয়ে মরছিস! তোরা যদি জানতি যে তোদের কে গুলি করা হবে, তাইলে জীবনেও মিছিলে যাইতি না! আর ভালোই হইসে তোরা মরসস, তোদের উসিলায় এট লিস্ট একটা আনন্দ উৎসবের দিন তো পাইসি আমরা ! থাঙ্কস এ লট গাইস ফর দেট! ডোন্ট অরি, আমরা না হয় তোদের এই ত্যাগের জন্য সারা দেশে তোদের নামে স্মৃতি স্তম্ভ গড়ে তুলবো, বছরে একবার মনে করবো, অইসব স্তম্ভ মানে শহীদ মিনারে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করবো, ইস নট ইট এনাফ ফর ইউ গাইস?”

এই হচ্ছে আমাদের বাঙ্গালির অবস্থা, আরে আমি তো এটাই বুঝিনা, কিছু মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দিসে, আমি আজ বাংলায় তাদেরকে নিয়ে লিখতে পারতেসি,কথা বলতে পারতেসি, সেই মানুষগুলো কে তাদের পরিবারকে আমরা কি দিতে পারলাম? আমি তো বুঝিনা, এভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে, কোটি কোটি টাকার ফুল ওইসব মিনারে দিয়ে ভাষা শহীদ দের জন্য কি এমন ভালো কিছু করতে পারলাম আমরা? ছোট কাল থেকে এইসব আমাদের পারিপার্শ্বিক সমাজ আমাদের এভাবে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদ দের সম্মান জানানোর আজব এক নিয়ম শিখে আসছি, কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনা এর আসলে ফলাফল কি? এর চেয়ে কি এইটুকু আমরা করতে পারিনা, তাদের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দু রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করা, ওহ ফরজ ই পড়া হয়না, আবার নফল! মন থেকেও যদি অন্তত দোয়া করতাম! পরবর্তী জেনারেশন কে এইটুকু বোধদয় জাগ্রত করার চেষ্টা করতে পারিনা? শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুধু তথাকথিত কালচার ফলো করা যায়, কোটি কোটি টাকা অপচয় করা যায়, কোটি ফুলের তোরা অযথাই নষ্ট করা যায়, ভাষার প্রতি, শহীদ দের প্রতি, দেশের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা দেখানো যায়না ! আমরা না হয়, অভ্যাসের দোষে শুধরাতে না পারি, অন্তত পরবর্তী প্রজন্ম কে সঠিক বুঝ টা যেনো পায় সেদিকে তো একটু খেয়াল করতেই পারি? কি পারিনা? আর বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি, তা নিয়ে নতুন করে আর কি বলবো, সেই অবস্থা না হয় কবির ভাষায় প্রকাশ করা যাক,

বাংলাটা ঠিক আসে না!
– ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’
বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা যেন কেমন-কেমন, খুউব দুর্বল প্যানপ্যানে
শুনলে বেশি গা জ্ব’লে যায়, একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।
কীসের গরব? কীসের আশা?
আর চলে না বাংলা ভাষা
কবে যেন হয় ‘বেঙ্গলি ডে’, ফেব্রুয়ারি মাসে না?
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
ইংলিশ বেশ বোমবাস্টিং শব্দে ঠাসা দারুণ ভাষা
বেঙ্গলি ইজ ডিসগাস্টিং, ডিসগাস্টিং সর্বনাশা।
এই ভাষাতে দিবানিশি
হয় শুধু ভাই ‘পি.এন.পি.সি’
এই ভাষা তাই হলেও দিশি, সবাই ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
বাংলা ভাষা নিয়েই নাকি এংলা-প্যাংলা সবাই মুগ্ধ
বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধের বড়ই অভাব
কৌটোর দুধ খাওয়াই স্বভাব
ওই দুধে তেজ-তাকত হয় না, বাংলাও তাই হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
বিদেশে কী বাংলা চলে? কেউ বোঝে না বাংলা কথা
বাংলা নিয়ে বড়াই করার চেয়েও ভালো নিরবতা।
আজ ইংলিশ বিশ্বভাষা
বাংলা ফিনিশ, নিঃস্ব আশা
বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।

( নিজের ব্যক্তিগত মতামত আলোচনা করেছি, পক্ষে বিপক্ষে বলার অনেক কিছুই থাকতে পারে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.