নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মামুনুর রশিদ

মোঃ মামুনুর রশিদ

আমি নিজেই

মোঃ মামুনুর রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যা চেয়েছি, যা পাবো না ----- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা

২২ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:০৫

কী চাও আমার কাছে ?

কিছু তো চাইনি আমি !

চাওনি তা ঠিক ।

তবু কেন এমন ঝড়ের মতো ডাক দাও ?

জানি না । ওদিকে দ্যাখো ...

রোদ্দুরে রুপোর মতো জল

তোমার চোখের মতো দূরবর্তী নৌকো

চর্তুদিকে তোমাকেই দেখা।

সত্যি করে বলো, কবি, কী চাও আমার কাছে ?

মনে হয় তুমি দেবী

আমি দেবী নই ।

তুমি তো জানো না তুমি কে !

কে আমি !

তুমি সরস্বতী

শব্দটির মূল অর্থে যদিও মানবী

তাই কাছাকাছি পাওয়া

মাঝে মাঝে নারী নামে ডাকি

হাসি পায় শুনে

যখন যা মনে আসে তাই বলো, ঠিক নয় ?

অনেকটা ঠিক । যখন যা মনে আসে...

কেন মনে আসে ?

কী চাও, বলো তো সত্যি ? কথা ঘুরিয়ো না

আশীর্বাদ !

আশীর্বাদ ! আমার, না সত্যি যিনি দেবী

তুমিই তো সেই !

টেবিলের ঐ পাশে ফিকে লাল শাড়ি

আঙ্গুলে ছোঁয়ানো থুতনি,

উঠে এসো

আশীর্বাদ দাও, মাথার ওপরে রাখো হাত

আশীর্বাদে আশীর্বাদে আমাকে পাগল করে তোলো

খিমচে ধরো চুল, আমার কপাল নখ দিয়ে চিরে দাও

যথেষ্ট পাগল আছো ! আরও হতে চাও বুঝি ?

তোমাকে দেখলেই শুধু এরকম,

নয়তো কেমন শান্তশিষ্ট

না দেখাই ভালো তবে ! তাই নয় ?

ভালো মন্দ জেনে শুনে যদি এ-জীবন কাটাতুম

তবে সে-জীবন ছিল শালিকের, দোয়েলের

বনবিড়ালের কিংবা মহাত্মা গান্ধীর

ইরি ধানে, ধানের পোকার যে-জীবন

যে জীবন মানুষের ?

আমি কি মানুষ নাকি ? ছিলাম মানুষ বটে

তোমাকে দেখার আগে

তুমি সোজাসুজি তাকাও চোখের দিকে

অনেকক্ষণ চেয়ে থাকো

পলক পড়ে না

কী দেখো অমন করে ?

তোমার ভিতরে তুমি,

শাড়ি-সজ্জা খুলে ফেললে তুমি

তারা আড়ালে যে তুমি

সে কি সত্যি আমি ? না তোমার নিজের কল্পনা ?

শোন্ খুকী

এই মাত্র দেবী বললে...

একই কথা ! কল্পনা আধার যিনি, তিনি দেবী-

তুই সেই নীরা

তোর কাছে আশীর্বাদ চাই

সে আর এমন কি শক্ত ? এক্ষুনি তা দিতে পারি

তোমার অনেক আছে, কণা মাত্র দাও

কী আছে আমার ? জানি না তো

তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই

সিঁড়ির ওপরে সেই দেখা

তখন তো বলোনি কিছু ?

আমার নিঃসঙ্গ দিন, আমার অবেলা

আমারই নিজস্ব, শৈশবের হাওয়া শুধু জানে

দেবে কি দুঃখের অংশভাগ ?

আমি ধনী হবো

আমার তো দুঃখ নেই !

দুঃখের চেয়েও কোনো সুমহান আবিষ্টতা

আমাকে রয়েছে ঘিরে

তার কোনো ভাগ হয় না

আমার কী আছে আর, কী দেবো তোমাকে ?

তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই !

তুমি দেবী, ইচ্ছে হয় হাঁটু গেড়ে বসি

মাথায় তোমার করতল, আশীর্বাদ...

তবু সেখানেও শেষ নেই

কবি নয়, মুহূর্তে পুরুষ হয়ে উঠি

অস্থির দু'হাত

দশ আঙুলে আঁকড়ে ধরতে চায়

সিংহিনীর মতো ঐ যে তোমার কোমর

অবোধ শিশুর মতো মুখ ঘষে তোমার শরীরে

যেন কোনো গুপ্ত সংবাদের জন্য ছটফটানি

পুরুষ দূরত্বে যাও, কবি কাছে এসো

তোমায় কী দিতে পারি ?

কিছু নয় !

অভিমান ?

নাম দাও অভিমান !

এটা কিন্তু বেশ ! যদি

অসুখের নাম দিই নির্বাসন

না-দেখার নাম দিই অনস্তিত্ব

দূরত্বের নাম দিই অভিমান ?

কতটুকু দূরত্ব ? কী, মনে পড়ে ?

কী করে ভাবলে যে ভুলবো ?

তুমি এই যে বসে আছো, আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনি

কপালে পড়েছে চূর্ণ চুল

পাড়ের নক্সায় ঢাকা পা

ওষ্ঠাগ্রে আসন্ন হাসি

এই দৃশ্যে অমরত্ব

তুমি তো জানো না, নীরা,

আমার মৃত্যুর পরও এই ছবি থেকে যাবে ।

সময় কি থেমে থাকবে ? কী চাও আমার কাছে ?

মৃত্যু ?

-ছিঃ , বলতে নেই

তবে স্নেহ ? আমি বড় স্নেহের কাঙাল

পাওনি কি ?

বুঝতে পারি না ঠিক । বয়স্ক পুরুষ যদি স্নেহ চায়

শরীরও সে চায়

তার গালে গাল চেপে দিতে পারো মধুর উত্তাপ ?

ফের পাগলামি ?

দেখা দাও ।

আমিও তোমায় দেখতে চাই ।

না !

কেন ?

বোলো না । কক্ষনো বোলো না আর ঐ কথা

আমি ভয় পাবো ।

এ শুধুই এক দিকের

আমি কে ? সামান্য, অতি নগণ্য, কেউ না

তবু এত স্পর্ধা করে তোমার রূপের কাছে...

তুমি কবি ?

তা কি মনে থাকে ? বারবার ভুলে যাই

অবুঝ পুরুষ হয়ে কৃপাপ্রার্থী

কী চাও আমার কাছে ?

কিছু নয় । আমার দু'চোখে যদি ধুলো পড়ে

আঁচলের ভাপ দিয়ে মুছে দেবে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.