নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসে মুসলিমদের উত্থান পতনের কারন

২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩১

৭৬১ খ্রিঃ। কির্গিস্তানে মুসলিম ও চীনা সেনাদের মধ্যে মাত্রই ছোট একটি যুদ্ধ হয়ে গেল। ব্যাটেল অফ তাল'আস নামে পরিচিত এই যুদ্ধটিকে ইতিহাস মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি, তাই এক কোণে ফেলে রেখেছে। তবে বিস্মৃতপ্রায় এই ছোট যুদ্ধটাই মুসলিম জাতি ও পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাস বদলে দিয়েছিল।
চীনে অবস্থানকারী বা ব্যবসা করতে যাওয়া মুসলমানরা চীনাদের একটি আবিষ্কারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেটি হচ্ছে কাগজ। এর আগে কোন কিছু লিখে রাখার জন্য তাঁদের নির্ভর করতে হতো পশুর চামড়া, গাছের ছাল, পাতা ইত্যাদির উপর। বিশ্বের প্রথম লিখিত কুরআনের পুরুত্ব তাই ছিল বিশাল, প্রায় ফুট খানেক। এবং ওজন? নিজেই বুঝে নিন।
সেই তুলনায় কাগজ অত্যন্ত হালকা, পাতলা এবং সহজেই বহনযোগ্য।
কিন্তু তখন পর্যন্ত কাগজ ছিল কেবলই চীনাদের আবিষ্কার। এবং চীনের বাইরে তেমন দেখা মিলতো না। অন্য কেউ এর আবিষ্কারের কথা চিন্তাও করতে পারতো না।
পরাজিত চীনা যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে কয়েকজনকে পাওয়া যায় যারা কাগজ নির্মানের কৌশল জানতেন। যুদ্ধে বিজয়ী মুসলিমদের বদরের যুদ্ধের ইতিহাস মনে পড়ে গেল। যখন কুরাইশ যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে দুইজন শিক্ষিত (যারা লিখতে পড়তে পারতেন) ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে নবীজি (সঃ) তাঁদের শর্ত দেন, "তোমরা একেকজন আমাদের দশটা করে বাচ্চাকে লিখতে পড়তে শিখিয়ে দাও, তোমাদের মুক্ত করে দেয়া হবে।"
উল্লেখ্য, একেকজন যুদ্ধবন্দীর মুক্তিপণ ছিল কয়েক হাজার রৌপ্য মুদ্রা। বর্তমান সময়ে যার সমমান হবে কয়েক মিলিয়ন ডলার। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ কেবল দশটি শিশুর শিক্ষার জন্য ছেড়ে দেয়া মানেই হচ্ছে তিনি জ্ঞানের মূল্য বুঝতেন। তারপরেও কিছু মানুষের মাথায় এসব ঢুকেনা।
সাহাবীরাও সেই কয়েকজন কাগজ নির্মাণ কৌশলিকে একই শর্ত দিলেন।
"তোমরা আমাদের কাগজ বানাবার কায়দা শিখিয়ে দাও। তোমাদের মুক্তিপণ লাগবেনা।"
এরপরেই ইসলামের ইতিহাস পাল্টে যেতে থাকে। চীনের সীমানার বাইরে প্রথম কাগজ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় সামারকান্দ ও বাগদাদে। অর্জিত জ্ঞান লিপিবদ্ধ হতে থাকে। কাগজে কাগজে বিতরণ হতে থাকে। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটা শাখায় মুসলমানরা এগিয়ে যেতে থাকে। আল খোয়ারিজমি, ইবনে সিনা প্রমুখরা যখন সভ্যতার ইতিহাস পাল্টে দিচ্ছেন, ইউরোপ তখন অন্ধকারে ডুবে আছে। আর উপমহাদেশের সতিদাহ প্রথাতো এই সেদিনকার ঘটনা।
প্রথম ক্রুসেডের ফলে যখন জেরুসালেমের পতন ঘটে, তখন ইউরোপিয়দের হাতে কাগজ তৈরির কৌশল চলে যায়। এবং কালক্রমে এরা এর আরও উন্নতি ঘটিয়ে "প্রিন্টিং প্রেস" নির্মান করে। ইউরোপ জুড়ে প্রকাশ পেতে থাকে চোখ ধাঁধানো সব বই। যেখানে একটা সময়ে প্রতিটা বই মানুষকে হাতে লিখেই প্রকাশ করতে হতো।
ততদিনে কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে গেছে।
ইসলামের শাসন তখন অটোম্যান সম্রাটদের হাতে। সম্রাটই খলিফা। তাঁর ফতোয়াই আইন। এবং ১৪৮৫ সালে এই মাথামোটা খলিফা ফতোয়া জারি করলেন, "প্রিন্টিং প্রেস হারাম! যে প্রিন্টিং প্রেসের মালিক হবে, এমনকি সেখানে প্রকাশিত কোন বই পড়বে, সে মুরতাদ হয়ে যাবে!"
স্বয়ং খলিফার মুখ থেকে জারি হওয়া ফতোয়া। পড়াশোনা করে জাহান্নামী হবো নাকি?
তাই এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামালো না।
কিন্তু তবুও, মানুষের মন। উশখুশতো করবেই। কাউকে কাউকে পড়াশোনা করতে দেখা গেল।
তাই ১৫১৫ খ্রিঃ সেই খলিফার বংশধর ডিক্রি জারি করলেন, "মুসলিম সাম্রাজ্যে যদি কোন মুসলমান কোন প্রিন্টিং প্রেসের মালিক হন, তবে তাঁকে কোন কথা ছাড়াই মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে।"
সবাই আগেও সাবধান ছিল। এই আইন প্রণয়নের ফলে একদম সিধা হয়ে গেল।
এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, যেখানে কয়েক শতাব্দী আগে এই মুসলমানেরাই বিদেশী জ্ঞানকে স্বাগত জানিয়েছিল। এইবার কেন তাঁরা দরজা বন্ধ করে দিল?
কারন একটাই, ক্ষমতা এদের অন্ধ করে দিয়েছিল।
"বই প্রকাশ পেতে থাকলে ফজলু, মজলু, বজলুও শিক্ষিত হয়ে যাবে। তাহলে আমরা যারা স্কলার আছি, তাঁদের কী মূল্য থাকবে?"
এবং আরেকটি কারন ছিল, "এটি হচ্ছে কাফিরদের আবিষ্কার। তাই অবশ্যই এটি হারাম।"
এর আগ পর্যন্ত মুসলমানরাই সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তাই তাঁরা যখন দেখলেন, "কাফিররা" তাঁদের চেয়ে ভাল কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে, তাঁরা মেনে নিতে পারলেন না। সেই হীনমন্যতা, সেই ক্ষোভ থেকেই প্রিন্টিং প্রেসকে নিজেদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ইসলাম কি আসলেই এই শিক্ষায় দেয়? সেটার উত্তরও ইতিহাসই দেয়।
বদরের যুদ্ধে নবীজির (সঃ) উদাহরণ আগে দিয়েছি।
যখন উমার(রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবীদের নেতৃত্বে বিদেশী সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে শুরু করেছিল, তখন রাজকার্য্য পরিচালনা করতে সেই দেশেরই ভাষা, সেই দেশেরই প্রচলিত আইন অ্যাডপ্ট করা হয়েছিল। রোমানদের মতন ইসলাম তখন পর্যন্ত বলেনি "আরবিই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, এবং তোমাদের চলতে হবে খাঁটি আরব তরিকাতে।"
সাহাবীরা জানতেন, এত বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান তাঁদের নেই। তাই তাঁদের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হতো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ইসলামের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
অটোম্যান সম্রাটদের এই মূর্খামির পরিণতি আমরা দেখতে পাই তাঁদের পতনের মাধ্যমে। এমনকি ইংরেজ আমলেও, যখন ব্রিটিশরা ফার্সি বদলে ইংরেজিকে অফিসের ভাষা নির্বাচন করে, মুসলমানরা একগুঁয়েমি করেই ইংরেজি শিক্ষা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে। এটিও কাফিরদের ভাষা, এটিও হারাম ও কুফর! ফলে, সমাজে পিছিয়ে যায়।
এবং এখনও এদের মধ্যে এই গোড়ামি স্বভাবটা দূর হয়নি। প্রমাণ পাই প্রতি জুম্মাবারে। যখন আমরা মসজিদে গিয়ে ঈমামকে বই খুলে আরবিতে খুৎবা পাঠ করতে দেখি। বিশ তিরিশ মিনিট সময় নিয়ে তিনি কী বলে যান, কেউই বুঝতে পারেনা, এবং এ নিয়ে কারোরই মাথাব্যথা নেই। বাপ দাদার আমল থেকে এটা ঘটে আসছে। তাই এটাই সহিহ তরিকা! বাংলায় খুৎবা বললে হায় হায় রব উঠে যাবে। আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে পাওয়ার পয়েন্ট বা প্রজেক্টর ব্যবহার করলেতো কথাই নাই।
অথচ এটা সম্পুর্নরূপে হালাল। ইসলামের সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতির কোনই বিরোধ নেই। নির্ভর করে কিভাবে এর ব্যবহার হচ্ছে।
যাই হোক, আজকের লেখাটা লেখার প্রধাণ উদ্দেশ্যই হচ্ছে, যেসব আহাম্মক বলে পৃথিবীতে কেবল ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, আর কোন কিছু নিয়ে পড়াশোনার প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য ইতিহাস একটি শিক্ষা। ইসলাম কখনই জ্ঞানর্জনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়নি। বরং বলেছে, পড়তে।
কুরআনের প্রথম নাজেল হওয়া আয়াতগুলোতে দুইবার পাঠ (ইকরা) করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রথমবার বলা হয়েছে সেই জ্ঞান অর্জন করতে যা আল্লাহর তরফ থেকে নাজেল হবে। এবং দ্বিতীয়টায় বলা হয়েছে পার্থিব জ্ঞান অর্জন করতে, যা কলমের মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বর্তমানে নিজের ধর্ম নিয়ে খোদ মুসলমানেরাই কনফিউজড। কারন যারা স্কলার, তাঁদের বেশিরভাগই স্বচ্ছভাবে চিন্তা করেননা। এবং যারা স্বচ্ছভাবে চিন্তা করেন, তাঁরা স্কলার না।
একজন দাড়িওয়ালা "হুজুর" যিনি আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ছাড়া কথা বলেননা, তিনি স্কাই ডাইভিং করছেন, কিংবা সুমুদ্রের গভীরে গিয়ে সেলফি তুলছেন, কিংবা কথায় কথায় রসিকতা করে খুৎবা জমিয়ে ফেলছেন, অথবা অবসরে বাচ্চাদের সাথে বাস্কেটবল/ফুটবল খেলছেন - এই দৃশ্য আমাদের দেশে কেউ কল্পনা করতে পারেন? এমন কাজ করলে হায় হায় রব উঠবে না? আপনার নিজেরও কী মনে খটকা জাগবে না? যতদিন পর্যন্ত মনে "খটকা" জাগবে, ততদিন পর্যন্ত কিছুই বদলাবে না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

মীর মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন: খুতবা...আরবী...বাংলা...প্রজেক্টর...পাওয়ার পয়েন্ট.... কিছুদিন পর বলবেন না তো যে নামাজটা ও বাংলায় হোক!!!!
যা-ই হোক ইসলামের চর্চা অনেক বেশী প্রয়োজন... তাহলে অনেক প্রশ্নের জবাব এমনিতেই চলে আসে.. আর কিছু প্রশ্ন নিতান্তই অনর্থক ঠেকে।

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৫২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: এই জন্যই বলছি, স্বচ্ছ চিন্তার মানুষের বড়ই অভাব দেশে। খুৎবা বাংলায় বা ইংরেজিতে দিলে, এবং পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করলে ইসলামে কোনই বাঁধা নেই, কিন্তু নামাজ আরবিতে পড়াই নিয়ম। দুইটাকে এক করে খিচুরি বানাবেন না।

২| ২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:১৪

নতুন বলেছেন: সময়ের সাথে পরিবতন না হলে তা ব্যাকডেটেড হয়ে যায়।

কিছু লোক এখনো প্রসাব করার পরে ঢিলা কুলুক নিয়ে কয় কদম হাটা দরকার নিয়ে চিন্তা করে। সেই সময়ে বিশ্বে নতুন নতুন প্রযক্তির আবিস্কারে মতে থাকে।

প্রযুক্তি, বিজ্ঞান থেকে দুরে সরে গেলে দুনিয়াতে মাথা নত করে থাকতে হবে। নিজেরা কিছু না বানাতে পারলে অন্যের কাছথেকে প্রযুক্তি কিনতে হবে। এবং এখনই মুসলিম বিশ্ব তাই করছে। শতবছর পরে কি হবে?

সময়ের সাথে চিন্তাধারা না পাল্টালে কি হয় তা দেখার জন্য " আমিশের " সম্পকে গুগুলে দেখতে পারেন।

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:৫৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিশ জাতি সম্পর্কে ভালই জানি। আমাদের এলাকার(অ্যামেরিকা) লোকতো। :)

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:২৪

নতুন বলেছেন: আমিশ গুগুলে দেখার জন্য মন্তব্য আপনার জন্য না, যারা এসে বিভিন্ন ভাবে পুরানো ধারনাকে ধরে রাখার জন্য যুক্তি দেখাবে তাদের জন্য বলেছি আমিশের কথা। :)

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:৩৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৪| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১২

সুলতানা রহমান বলেছেন: ইসলামে নিষেধ নেই এধরনের নতুনকে গ্রহণ করতে হবে। তাইতো? অনেক কিছু জানলাম। ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।

৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২২

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে পাওয়ার পয়েন্ট বা প্রজেক্টর ব্যবহার করলেতো কথাই নাই।

ঢাকা সেনানিবাসে সিএমএইচ-এর মসজিদে পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে জুময়ার সময় বয়ান করতে দেখেছি। আমার ভাল লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.