নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-৪ )

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৯


সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-১ )

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-২ )

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-৩ )
১১। কবিতা অলক্ষ্যে
আমার মৃত্যুর পর কেটে গেল বৎসর বৎসর
ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতির ব্যর্থ প্রচেষ্টাও আজ অগভীর
এখন পৃথিবী নয় অতিক্রান্ত প্রায়ান্ধ স্থবির
নিভেছে প্রদূম্রজ্বালা, নিরঙ্কুশ সূর্য অনশ্বর
স্তব্ধতা নেমেছে রাত্রে থেমেছে নির্ভীক তীক্ষ্ণস্বর
অথবা নিরন্ন দিন, পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা
উদ্ধত বজ্রের ভয়ে নিঃশব্দে মৃত্যুর আনাগোনা
অনন্য মানবসত্তা ক্রমান্বয়ে স্বল্পপরিসর ।

গলিত স্মৃতির বাস্প সেদিনের পল্লব শাখায়
বারম্বার প্রতারিত অস্ফুট কুয়াশা রচনায়
বিলুপ্ত বজ্রের ঢেউ নিশ্চিত মৃত্যুতে প্রতিহত।
আমার অজ্ঞাত দিন নগণ্য উদার উপেক্ষাতে
অগ্রগামী শূন্যতাকে লাঞ্চিত করেছে অবিরত
তথাপি তা প্রস্ফুটিত মৃত্যুর অদৃশ্য দুই হাতে। ।


১২। কবিতা মহাত্মাজীর প্রতি
চল্লিশ কোটি জনতার জানি আমিও যে একজন
হাঠাৎ ঘোষণা শুনেছি; আমার জীবনে শুভক্ষণ
এসেছে, তখনি মুছে গেছে ভীরু চিন্তার হিজিবিজি ।
রক্তে বেজেছে উৎসব, আজ হাত ধরো গান্ধীজী ।।
এখানে আমরা লড়েছি, মরেছি, করেছি অঙ্গীকার
এ মৃতদেহের বাধা ঠেলে হব অজেয় রাজ্য পার ।
এসেছে বন্যা, এসেছে মৃত্যু, পরে যুদ্ধের ঝড়
মন্বন্তর রেখে গেছে তার পথে পথে স্বাক্ষর ।
প্রতি মুহূর্তে বুঝেছি এবার মুছে নেবে ইতিহাস
তবু উদ্দাম, মৃত্যু-আহত ফেলি নি দীর্ঘশ্বাস ।
নগর গ্রামের শ্মশানে শ্মশানে নিহিত অভিজ্ঞান
বহু মৃত্যুর মুখোমুখি দৃঢ় করেছি জয়ের ধ্যান ।
তাইতো এখানে আজ ঘনিষ্ঠ স্বপ্নের কাছাকাছি
মনে হয় শুদু তোমারই মধ্যে আমরা যে বেঁচে আছি ।
তোমাকে পেয়েছি অনেক মৃত্যু উত্তরণের শেষে
তোমাকে গড়ব প্রাচীর, ধ্বংস বিকীর্ণ এই দেশে ।
দিক্‌দিগন্তে প্রসারিত হাতে তুমি যে পাঠালে ডাক
তাইতো আজকে গ্রামে ও নগরে স্পন্দিত লাখে লাখ । ।

১৩। কবিতা পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে
আমার প্রার্থনা শোনো পঁচিশে বৈশাখ
আর একবার তুমি জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের ।
হাতাশায় স্তব্ধ বাক্য; ভাষা চাই আমরা নির্বাক
পাঠাব মৈত্রীর বাণী সারা পৃথিবীকে জানি ফের ।
রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে আমাদের ভাষা যাবে শোনা
ভেঙে যাবে রুদ্ধশ্বাস নিরুদ্যম সুদীর্ঘ মৌনতা
আমাদের দুঃখসুখে ব্যক্ত হবে প্রত্যেক রচনা ।।
পীড়নের প্রতিবাদে উচ্চারিত হবে সব কথা ।

আমি দিব্যচক্ষে দেখি অনাগত সে রবীন্দ্রনাথ
দস্যুতায় দৃপ্তকণ্ঠ বিগত দিনের
ধৈর্যের বাঁধন যার ভাঙে দুঃশাসনের আঘাত
যন্ত্রণায় রুদ্ধবাক, যে যন্ত্রণা সহায়হীনের ।
বিগত দুর্ভিক্ষে যার উত্তেজিত তিক্ত তীব্র ভাষা
মৃত্যুতে ব্যথিত আর লোভের বিরুদ্ধে খরদার
ধ্বংসের প্রান্তরে বসে আনে দৃঢ় অনাহত আশা
তাঁর জন্ম অনিবার্য, তাঁকে ফিরে পাবই আবার ।
রবীন্দ্রনাথের সেই ভুলে যাওয়া বাণী
অকস্মাৎ করে কানাকানি
'দামামা ঐ বাজে, দিন বদলের পালা
এ ঝড়ো যুগের মাঝে

নিষ্কম্প গাছের পাতা রুদ্ধশ্বাস অগ্নিগর্ভ দিন
বিষ্ফারিত দৃষ্টি মেলে এ আকাশ গতিরুদ্ধ রায়ু
আবিশ্ব জিজ্ঞাসা এক চোখে মুখে ছড়ায় রঙিন
সংশয় স্পন্দিত স্বপ্ন ভীত আশা উচ্চারণহীন
মেলে না উত্তর কোনো সমস্যায় উত্তেজিত স্নায়ু ।
ইতিহাস মোড় ফেরে পদতলে বিধ্বস্ত বার্লিন
পশ্চিম সীমান্তে শান্তি দীর্ঘ হয় পৃথিবীর আয়ু
দিকে দিকে জয়ধ্বনি কাঁপে দিন রক্তাক্ত আভায় ।
রামরাবণের যুদ্ধে বিক্ষত এ ভারতজটায়ু
মৃতপ্রায়, যুদ্ধাহত, পীড়নে-দুর্ভিক্ষে মৌনমূক ।
পূর্বাঞ্চল দীপ্ত ক'রে বিশ্বজন-সমৃদ্ধ সভায়
রবীন্দ্রনাথের বাণী তার দাবি ঘোষণা করুক ।
এবারে নতুন রূপে দেখা দিক রবীন্দ্রঠাকুর
বিপ্লবের স্বপ্ন চোখে কণ্ঠে গণ-সংগীতের সুর ।
জনতার পাশে পাশে উজ্জ্বল পতাকা নিয়ে হাতে
চলুক নিন্দাকে ঠেলে গ্লানি মুছে আঘাতে আঘাতে ।

যদিও সে অনাগত, তবু যেন শুনি তার ডাক
আমাদেরই মাঝে তাকে জন্ম দাও পঁচিশে বৈশাখ ।


১৪। কবিতা পরিশিষ্ট
অনেক উল্কার স্রোত বয়েছিল হঠাৎ প্রত্যুষে
বিনিদ্র তারার বে পল্লবিত মেঘ
ছুঁয়েছিল রশ্মিটুকু প্রথম আবেগে ।
অকস্মাৎ কম্পমান অশরীরী দিন
রক্তের বাসরঘরে বিবর্ণ মৃত্যুর বীজ
ছড়াল আসন্ন রাজপথে ।
তবু স্বপ্ন নয়
গোদূলীর প্রত্যহ ছায়ায়
গোপন স্বার সৃষ্টি কচ্যুত গ্রহ উপবনে
দিগন্তের নিশ্চল আভাস ।
ভস্মীভূত শ্মশানক্রন্দনে ।
রক্তিম আকাশচিহ্ন সবেগে প্রস্থান করে
যূথ ব্যঞ্জনায় ।

নিষিদ্ধ কল্পনাগুলি বন্ধ্যা তবু
অলক্ষ্যে প্রসব করে অব্যক্ত যন্ত্রণা
প্রথম যৌবন তার রক্তময় রিক্ত জয়টীকা
স্তম্ভিত জীবন হতে নিঃশেষে নিশ্চিহ্ন ক'রে দিল ।
তারপর
প্রান্তিক যাত্রায়
অতৃপ্ত রাত্রির স্বাদ
বাসর শয্যায়
অসম্বৃত দীর্ঘশ্বাস
বিস্মরণী সুরাপানে নিত্য নিমজ্জিত
স্বগত জাহ্নবীজলে ।
তৃষ্ণার্ত কঙ্কাল
অতীত অমৃত পানে দৃষ্টি হানে কত
সর্বগ্রাসী প্রলুব্ধ চিতার অপবাদে
সভয়ে সন্ধান করে ইতিবৃত্ত দগ্ধপ্রায় মনে ।
প্রেতাত্মার প্রতিবিম্ব বার্ধক্যের প্রকম্পনে লীন
অনুর্বর জীবনের সূর্যোদয়
ভস্মশেষ চিতা ।
কুজ্ঝটিকা মূর্ছা গেল আলোক সম্পাতে
বাসনা উদ্গ্রীব চিন্তা
উন্মুখ ধ্বংসের আর্তনাদে ।

সরীসৃপ বন্যা যেন জড়তার স্থির প্রতিবাদ
মানবিক অভিযানে নিশ্চিন্ত উষ্ণীষ ।
প্রচ্ছন্ন অগ্ন্যুৎপাতে সংজ্ঞাহীন মেরুদণ্ড দিন
নিতান্ত ভঙ্গুর তাই উদ্যত সৃষ্টির ত্রাসে কাঁপে
পণভারে জর্জরিত পাথেয় সংগ্রাম
চকিত হরিণদৃষ্টি অভুক্ত মনের পুষ্টিকর
অনাসক্ত চৈতন্যের অস্থায়ী প্রয়াণ ।
অথবা দৈবাৎ কোন নৈর্ব্যক্তিক আশার নিঃশ্বাস
নগণ্য অঙ্গারতলে খুঁজেছে অন্তিম ।
রুদ্ধশ্বাস বসন্তের আদিম প্রকাশ
বিপ্রলব্ধ জনতার কুটিল বিষাক্ত প্রতিবাদে
প্রত্যহ লাঞ্ছিত স্বপ্ন
স্পর্ধিত আঘাত ।
সুষুপ্ত প্রকোষ্ঠতলে তন্দ্রাহীন দ্বৈতাচারী নর
নিজেরে বিনষ্ট করে উৎসারিত ধূমে
অদ্ভুত ব্যাধির হিমছায়া
দীর্ণ করে নির্যাতিত শুদ্ধ কল্পনাকে ।
সদ্যমৃত-পৃথিবীর মানুষের মতো
প্রত্যেক মানবমনে একই উত্তাপ অবসাদে ।
তবুও শার্দূল-মন অন্ধকারে সন্ধ্যার মিছিলে
প্রথম বিস্ময়দৃষ্টি মেলে ধরে বিষাক্ত বিশ্বাসে ।

বহ্নিমান তপ্তশিখা উন্মেষিত প্রথম স্পর্ধায়
বিষকন্যা পৃথিবীর চক্রান্তে বিহ্বল
উপস্থিত প্রহরী সভ্যতা ।
ধূসর অগ্নির পিণ্ড উত্তাপবিহীন
স্তিমিত মত্ততাগুলি স্তব্ধ নীহারিকা
মৃত্তিকার দাত্রী অবশেষে ।


১৫। কবিতা মীমাংসা
আজকে হঠাৎ সাতসমুদ্র তেরনদী
পার হতে সাধ জাগে মনে হায় তবু যদি
পক্ষপাতের বালাই না নিয়ে পক্ষীরাজ
প্রস্রবণের মতো এসে যেত হঠাৎ আজ
তাহলে না হয় আকাশ বিহার হত সফল
টুকরো মেঘেরা যেতে যেতে ছুঁয়ে যেত কপোল ।

আর আমি বুঝি দৈত্যদলনে সাগর পার
হতাম; যেখানে দানবের দায়ে সব আঁধার ।
মত্ত যেখানে দৈত্যে দৈত্যে বিবাদ ভারি
হানাহানি নিয়ে সুন্দরী এক রাজকুমারী ।
রাজকন্যার লোভ নেই লোভ অলঙ্কারে
দৈত্যেরা শুধু বিবস্ত্রা ক'রে চায় তাহারে ।

আমি একজন লুপ্তগর্ব রাজার তনয়
এত অন্যায় সহ্য করব কোনোমতে নয়
তাই আমি যেতে চাই সেখানেই যেখানে পীড়ন
যেখানে ঝল্‌সে উঠবে আমার অসির কিরণ ।
ভাঙাচোরা এক তলোয়ার আছে নয় দু'ধারী
তাও হ'ত তবে পক্ষীরাজেরই অভাব ভারি ।
তাই ভাবি আজ তবে আমি খুঁজে নেব কৌপীন
নেব কয়েকটা বেছে জানা জানা বুলি সৌখিন ।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫০

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল পোষ্ট। ধন্যবাদ

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩১

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই । শুভেচ্ছা নিবেন ।

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

আমি মিন্টু বলেছেন: দারুন কালেকশন । :)

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩১

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মিন্টু ভাইয়া ।

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:২১

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: প্রিয় কবির কবিতা সংকলন
অনেক ধন্যবাদ

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩৩

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: উনি আমার কাছেও একজন প্রিয় কবি । আপনাকেও সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

খেয়ালি দুপুর বলেছেন: আমার ভিষণ প্রিয় একজন কবি। অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর কবিতাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবার জন্য।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩৫

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: আমারো অনেক প্রিয় । আপনাকেও ধন্যবদ ।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০৯

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার কাজ । ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪০

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই ।

৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ারের জন্যে।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মাহবুব ভাই ।

৭| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এক অনন্তনক্ষত্র বীথি যেন সুকান্ত!!!

এত অল্প সময়ে এত এত অসাধারন কাব্য! অচিন্তনীয়!!!

শেয়ারের জণ্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪১

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: কবিতা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । শুভেচ্ছা নিবেন ।

৮| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:১৩

বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: শেয়ারের জণ্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪২

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.