নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশ চায় শান্তিপূর্ণ সমাধান

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে দেশের অভ্যন্ত্মরে প্রচার মাধ্যমে বিস্ত্মার আলাপআলোচনা চলছে। প্রায় আড়াই ডজন টিভিপর্দায় আলোচনায় সবচেয়ে বড় ইসু্য হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা। হবেই না কেন? একটা দেশের অভ্যন্ত্মরীণ সংকটের কারণে আরেকটা দেশের ওপর ১০ লাখ বিতাড়িত মানুষের যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যেভাবে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, যে মর্মান্ত্মিক করম্নন বিপন্ন মানবতা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েপুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সবকিছু লুটপাট করা হয়েছে, প্রায় ৩ হাজার নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হয়েছে, ছোট শিশুরাও বাদ পড়েনি, নারী ধর্ষণ করা হয়েছে, নির্যাতনের সেই নিষ্ঠুর কাহিনী নিয়ে আলোচনা তো অত্যন্ত্ম স্বাভাবিক। বিগত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী এই বিশ্বের একটা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নিধনে মিয়ানমার সরকার বিশেষ করে সামরিক বাহিনী যে বর্বরতার ঘটনা ঘটিয়েছে তাই প্রচার মাধ্যমে সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বর্বরতা বিশ্ব বিবেক এমনভাবে আলোড়িত হয়েছে, যে পৃথিবীর হাতেগোনা কয়েকটি রাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সবাই গণহত্যা (জেনোসাইড) বলে অভিহিত করেছে। একটা দেশে দশকের পর দশক গণতন্ত্র না থাকলে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার যে কত নিষ্ঠুর ও বর্বর হতে পারে, বার্মায় সামরিক বাহিনীর এর প্রমাণ দিয়েছে।
অবশ্য হঠাৎ করে এই ঘটনা ঘটেনি। মিয়ানমার সরকার ধর্মীয় আবরণে যারা বুড্ডিস্ট, অহিংসতা যে ধর্মের প্রাণ শক্তি, জগতের সব প্রাণী সুখী হোক, এই যাদের প্রার্থনা, তারা যে কি করে এই জগন্যতম ঘটনা ঘটাতে পারল, তা ভাবতে অবাক লাগে। একটা দেশ সুদীর্ঘ সময় ধরে সামরিক শাসনের আওতায় থাকলে সেই দেশের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে বিপর্যয় ঘটে মানবতা যেখানে কেমনভাবে পদ দলিত হয়, মানুষের বাঁচার অধিকার তো তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়। এথনিক ক্লিনজিংয়ের মতো সিদ্ধান্ত্ম কার্যকর করার প্রয়াসে যে জঘন্য ধরনের অপরাধ করা হয়, তারই প্রমাণ মেলে মিয়ানমার সেনাদের বর্বরতায়। শুধু ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, ভিন্ন ধর্মে দীক্ষিত বলে, একটা দেশে ৫০০ বছর ধরে বসবাসকারী একটা জনগোষ্ঠীকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চরম দুর্দশাগ্রস্ত করে একটা পর্যায়ে তাদের সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে তাদের বিতাড়িত করে, তাদের জায়গা, ঘরবাড়ি সরকারিভাবে দখল করার প্রয়াস বার্মায় সেনারা চালিয়েছে, তা বিশ্বে সত্যিই নজিরবিহীন। এই সেনাশক্তিকে এতটুকু চিন্ত্মা থেকে বঞ্চিত যে প্রায় সর্বমোট ৩০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করে তাদের ভিটামাটি দখল করে সামরিক শাসকদের গভীর ষড়যন্ত্র সফল করা সম্ভব, এরূপ একটা ঘটনা ঘটানোর পর বিশ্ববাপী যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, সে সম্পর্কে কি তারা একটুও চিন্ত্মা করতে পারেনি। তাদের নেত্রী নোবেল লরেট সু চি কি একবারও চিন্ত্মা করল না, যে যাদের কারণে তিনি নোবেল বিজয়ী হলেন, তাদের ধ্বংস করে তিনি তার নোবেল বিজয়ের গৌরব ও মর্যাদা ধরে রাখতে সমর্থ হবে না। সু চির অবস্থাটা আজ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। পাশ্চাত্য দেশ তার সম্মাননা প্রদান বন্ধ রেখেছে। প্রথম কয়েকদিন তাকে দেখা গেল নির্বাক অবস্থায়। তারপর সবাক হয়ে যা বললেন, যে কি কারণে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগ করছে তা তার জানা নেই। তদন্ত্ম করে দেখবেন। এত বড় ডাহা মিথ্যাচার, অতি প্রবঞ্চনার কি কোনো জবাব আছে। গোটা বিশ্ব বলছে কি কারণে, কীভাবে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিশ্বে প্রতিনিয়ত শতশত প্রচার মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। এর প্রতি কি সু চির দৃষ্টি আকর্ষণ হয়নি। এত দ্রম্নত সময়ে এত বেশি সংখ্যক মানব সন্ত্মানের ওপর এ ধরনের নিষ্ঠুর নির্যাতন বর্তমান সময়ে আর কোথাও ঘটেনি। কি অপরাধ রোহিঙ্গাদের। তারা মুসলমান, বাংলা ভাষায় কথা বলে, ৫০০ বছর যে দেশে বসবাস করছে, সেই দেশের পূর্ণ নাগরিকত্ব চায়, নিরাপদে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চায়। মানবাধিকারের সব কিছুর নিশ্চয়তা চাই, এটায় কি তাদের অপরাধ? মিয়ানমারে ১৩৫টি প্রায় উপজাতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কারও সৎভাব নেই। প্রায় সবার সঙ্গেই মিয়নমার সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ন্যায়সঙ্গত আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যকোনো উপজাতি এগিয়ে যেতে পারেনি। আরাকানের লেবারেশন আর্মি মিয়ানমার পুলিশ ও সেনা সদস্যকে আক্রমণ করেছে বলে প্রতিবাদস্বরূপ এ ধরনের বর্বরতা চালিয়েছে। মিয়ানমার সরকার শত চেষ্টা চালিয়েও তা প্রমাণ করতে পারেনি। করেকশ হিন্দু নাগরিকদের হত্যা করে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে, তার দায়ভার রোহিঙ্গাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। হিন্দু ও মুসলিম জনগণ একসঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে এবং বাংলাদেশে যে বক্তব্য তারা দিয়েছে, তার সঙ্গে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর বক্তব্যের কোনো মিল নেই। এই সংকটের শুরম্ন থেকে বাংলাদেশ সরকার অসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। কূটনীতির ক্ষেত্রেও বিন্দুমাত্র সীমা লঙ্ঘন করা হয়নি। ৩০ বার আকাশে মিয়ানমার বিমান সীমা লঙ্ঘন করলেও বাংলাদেশ একটা গুলিও করেনি।
সবচেয়ে বড় কথা প্রায় ৫ লাখের ওপর রোহিঙ্গা যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু, বৃদ্ধ তাদের শুধু বাংলাদেশে আশ্রয়ই দেয়নি, সাময়িকভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই স্রোতের শেষ নেই। শুধু আসছেই। মিয়ানমার সেনাবাহিনী অত্যাচার যে অঞ্চলে যখন বেশি তখন রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা বাংলাদেশ সরকার ও এনজিওগুলো হিমশিম খাচ্ছে, তাদের পুনর্বাসন করতে। হঠাৎ করে এত লোকের আহার, আশ্রয়, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রদান, চিকিৎসাবিশেষ করে আহতদের নূ্যনতম আশ্রয় স্থল প্রদান এত সহজ নয়। জাতিংঘের উচিত মিয়নমার সরকারকে এর ব্যয়ভার বহনের জন্য আবেদন জানানো। যাদের কারণে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তারা তাদের দেশের নাগরিকদের এভাবে বিতাড়িত করবে আর বাংলাদেশ তার নিজস্ব বার্ষিক বাজেট থেকে অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে তাদের কেন ভরণপোষণ দেবে?
বাংলাদেশের মানবতাবাদী প্রধানমন্ত্রী ও জনগণ সম্মিলিতভাবে এই বিপর্যয় থেকে প্রায় ১০ লাখ মানব সন্ত্মানকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব আজ সোচ্চার। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিশ্বব্যাপী যার কিছু বদনাম আছে, তিনিও কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত্ম মতে সঠিক কাজ করেছেন। গ্রেট ব্রিটেন প্রমাণ করেছে তারা একটা সভ্য সমাজে বসবাস করে। ফ্রান্স, জার্মানি ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ এমনকি কাজাকিস্ত্মান পর্যন্ত্ম ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এসেছে। ভারতচীনমিয়ানমার সরকারকে প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা না করলেও বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের এই সংকটকালে দ্রম্নত ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ করছে এবং আলাপআলোচনার মাধ্যমে এই সংকট দূর করার কথা বলেছেন। বিশ্বের কোথাও কেউ এমন কথা বলেননি যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার দরকার নেই। বরং কীভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিরসন করা যায় তার উপায় খুঁজছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে যে ৫ দফা পেশ করেছেন ওটা যে সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ বিশ্ব নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে, ওই মতো জাতিসংঘ কাজ করছে। দেরিতে হলেও নিরাপত্তা পরিষদের আবেদনে মিয়ানমার সরকার সাড়া দিয়েছে। সু চির একজন নিকট মন্ত্রিসভার সদস্যকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে আলোচনার জন্য। তিনি আলোচনার পর রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ ও ৯২ সালের সিদ্ধান্ত্ম কার্যকর করতে চেয়েছেন। প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াও দিয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। সরকারি পর্যায়ে দুই দেশের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও শর্তাবলি কিরূপ হবে এর জন্য যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়েছে। কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ নয়। আর বর্তমান সংকট তো মিয়ানমারের অভ্যন্ত্মরীণ বিষয়। মিয়ানমার সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশের ঘাড়ে যে বোঝা চেপেছে এর থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে চায়। সংকট তো বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভিতর। সদিচ্ছা থাকলে এই দুই দেশই সমাধান করতে পারে। যেহেতু অতীতে ভুল বোঝাবুঝি ছিল এবং বর্তমানে তার মাত্রা আরও বেড়েছে তাই বাংলাদেশ সরকার এর শান্ত্মিপূর্ণ সমাধান চায়। এইরূপ একটা বিরূপ পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের সরকার চাল আমদানি করছে। অনেকে অনেক কিছু বললেও সরকার কিন্তু ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। বেশকিছু উসকানির মুখে সরকার ধীরস্থিরভাবে শান্ত্মিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী যিনি বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত, তিনি ভালো করে জানেন এ অঞ্চলের সঙ্ঘাত দীর্ঘায়িত হলে যে আগুন জ্বলে উঠবে, তা শুধু এক বা দুই দেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
আইএসের মতো আরেকটা ঘাঁটি এখানে সৃষ্টি হবে না তার নিশ্চয়তা কে বিধান করবে? যারা বিশ্বের মহাশক্তিধর, যারা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক তারা অবশ্যই প্রত্যাশা করবেন এই সংকটের দ্রম্নত সমাধান হোক। এই ব্যাপারে জাতিসংঘকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.