নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ। আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনা চিৎকার, বুকের ব্যাথা বুকে চাপিয়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। এক মুঠো সুখের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই অবিরত…

এম আর তালুকদার

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যতীত যে কোন প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, ছড়া, ছবি পোস্ট করা হতে বিরত থাকবেন।

এম আর তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসে বঙ্গদেশ, পাল সাম্রাজ্য (পর্ব ০৩)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬



ইতিহাসে বঙ্গদেশ (পর্ব ০১)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, মৌর্য্য সাম্রাজ্য (পর্ব ০২)


শশাঙ্কের রাজ্যের পতনের পর বাংলা অঞ্চলে নৈরাজ্য দেখা দেয়। এই সময় এই অঞ্চলে কোনও কেন্দ্রীয় শাসক ছিলেন না। ক্ষুদ্র গোষ্ঠীপতিরা নিরন্তর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সমসাময়িক গ্রন্থে এই অবস্থাটিকে ‘মাৎস্যন্যায়’ (অর্থাৎ বড়ো মাছ যেমন ছোটো মাছকে খেয়ে ফেলে, সেই রকম অবস্থা) বলে বর্ণনা করা হয়েছে।এই সময়েই গোপাল প্রথম পাল রাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
খালিমপুর তাম্রপত্র

খালিমপুর তাম্রলিপি থেকে অনুমিত হয়, বাংলা অঞ্চলের ‘প্রকৃতি’ (জনসাধারণ) তাঁকে রাজা নির্বাচিত করেছিল। প্রায় ৮০০ বছর পরে তারানাথও লিখেছেন যে, বাংলার জনসাধারণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁকে নির্বাচিত করেছিল। যদিও এই ঘটনাটি কিংবদন্তির আকারে প্রচলিত এবং ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরযোগ্য তথ্য নয়। এই কিংবদন্তি অনুসারে, নৈরাজ্যের এক যুগের পর জনসাধারণ পরপর একাধিক রাজাকে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সকলকেই নির্বাচনের পরের রাতেই এক নাগ রানি ভক্ষণ করেন। গোপাল সেই নাগ রানিকে হত্যা করতে সমর্থ হন এবং সিংহাসনে আসীন থাকতে সমর্থ হন। ঐতিহাসিক প্রমাণ নির্দেশ করে যে, গোপাল প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হননি। একদল সামন্ত গোষ্ঠীপতি তাঁকে নির্বাচিত করেন। এই ধরনের নির্বাচন বাংলা অঞ্চলের সমসাময়িক সমাজে খুবই সাধারণ ঘটনা ছিল।

গোপালের সিংহাসনারোহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা ছিল। কারণ একাধিক স্বাধীন গোষ্ঠীপতি কোনও প্রকার বিরোধ ছাড়াই তাঁর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।খালিমপুর তাম্রলিপি অনুসারে, প্রথম পাল রাজা গোপাল ছিলেন বাপ্যত নামে এক যোদ্ধার পুত্র। রামচরিতম্‌ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, পাল রাজাদের পিতৃভূমি (‘জনকভূ’) ছিল বরেন্দ্র (উত্তরবঙ্গ)। এই রাজবংশের জাতিগত উৎস অজ্ঞার। পরবর্তীকালের নথিপথ দাবি করে যে, গোপাল ছিলেন কিংবদন্তি সূর্যবংশের এক ক্ষত্রিয়। বল্লালচরিত গ্রন্থেও বলা হয়েছে যে, পাল সম্রাটেরা ছিলেন ক্ষত্রিয়। তারানাথের ভারতে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস ও ঘনারাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্যেও (উভয় গ্রন্থই খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে রচিত) একই দাবি করা হয়েছে। রামচরিতম্‌ গ্রন্থে পঞ্চদশ পাল সম্রাট রামপালকে ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে। পাল রাজবংশকে পৌরাণিক সূর্যবংশের উত্তরসূরি বলে যে দাবি করা হয়, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সম্ভবত এই রাজবংশের উৎসটি খুবই সাধারণ এবং তাকে আবৃত করার জন্যই এমন দাবি করা হয়েছিল। মঞ্জুশ্রীমূলকল্প প্রভৃতি গ্রন্থে পাল রাজবংশকে শূদ্র বলা হয়েছে। সম্ভবত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ার জন্য এই দাবি করা হয়। আবুল-ফজল ইবন মুবারকের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে পালদের কায়স্থ বলা হয়েছে। কোনও কোনও উপাখ্যানে এমন দাবিও করা হয়েছে যে, গোপাল সম্ভবত ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান ছিলেন।

পাল প্রশাসন ছিল রাজতান্ত্রিক। রাজাই ছিলেন সকল ক্ষমতার কেন্দ্র। পাল রাজারা ‘পরমেশ্বর’, ‘পরমভট্টারক’, ‘মহারাজাধিরাজ’ ইত্যাদি সম্রাটসুলভ উপাধি গ্রহণ করতেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীদের নিয়োগ করতেন। পাল সাম্রাজ্যে ‘গর্গের পরম্পরা’ ১০০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন:

* গর্গ
* দর্ভপাণি
* সোমেশ্বর
* কেদারমিশ্র
* ভট্ট গৌরবমিশ্র

পাল সাম্রাজ্য পৃথক পৃথক ‘ভুক্তি’তে (প্রদেশ) বিভক্ত ছিল। ভুক্তিগুলি ‘বিষয়’ (বিভাগ) ও ‘মণ্ডলে’ (জেলা) বিভক্ত ছিল। ছোটো ছোটো প্রশাসনিক ক্ষেত্রগুলিকে ছিল ‘খণ্ডল’, ‘ভাগ’, ‘আবৃত্তি’, ‘চতুরক’ ও ‘পট্টক’। তৃণমূল স্তর থেকে সম্রাজ্য সভা পর্যন্ত প্রশাসনের পরিধি বিস্তৃত ছিল।

পাল তাম্রলিপিতে নিম্নোক্ত প্রশাসনিক পদগুলির কথা উল্লিখিত হয়েছে:


খালিমপুর তাম্রলেখ, ১-৩৩ পংক্তি খালিমপুর তাম্রলেখ, ৩৪-৬২ পংক্তি

রাজা
রাজন্যক
রণক (সম্ভবত অধীনস্থ গোষ্ঠীপতি)
সামন্ত ও মহাসামন্ত (সামন্ত রাজা)
মহাসন্ধি-বিগ্রহিক (পররাষ্ট্র মন্ত্রী)
দূত (প্রধান রাষ্ট্রদূত)
রাজস্থানীয় (উপপ্রধান)
অগ্‌গরক্‌সা (প্রধান রক্ষী)
ষষ্ঠাধিকর্তৃ (কর সংগ্রাহক)
চৌরোদ্ধারণিক (আরক্ষা কর)
শৌলকক (বাণিজ্য কর)
দশপারাধিক (জরিমানা আদায়কারী)
তরিক (নদী পারাপারের উপর আরোপিত করের সংগ্রাহক)
মহাক্ষপতালিক (কোষাদ্ধক্ষ)
জ্যেষ্ঠকায়স্থ (নথি প্রবন্ধক)
ক্ষেত্রপ (ভূমি ব্যবহার বিভাগের প্রধান) ও প্রমাতৃ (ভূমি জরিপ বিভাগের প্রধান)
মহাদণ্ডনায়ক বা ধর্মাধিকার (প্রধান বিচারপতি)
মহাপ্রতিহার
দণ্ডিক
দণ্ডপাশিক
দণ্ডশক্তি (পুলিশ বাহিনী)
'খোল (গোপন বাহিনী)
গবাধক্ষ (গো-খামারের প্রধান)
ছাগাধ্যক্ষ (ছাগ-খামারের প্রধান)
মেষাধ্যক্ষ (মেষ-খামারের প্রধান)
মহিষাধ্যক্ষ (মহিষ-খামারের প্রধান)
বোগপতি
বিষয়পতি
ষষ্ঠাধিকৃত
দৌঃশশধানিক
নকাধ্যক্ষ

রামপাল ছিলেন পাল রাজবংশের সর্বশেষ শক্তিশালী শাসক। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কুমারপালের রাজত্বকালে অসমে একটি বিদ্রোহ মাথাচাড়া দেয়। বৈদ্যদেব এই বিদ্রোহ দমন করেন। কিন্তু কুমারপালের মৃত্যুর পর বৈদ্যদেব কার্যত একটি পৃথক রাজ্য স্থাপন করেন। রামচরিতম্‌ অনুসারে, কুমারপালের পুত্র তৃতীয় গোপালকে তাঁর কাকা মদনপাল খুন করেন। মদনপালের শাসনকালে পূর্ব বাংলার বর্মণরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ওড়িশায় পূর্ব গঙ্গদের সঙ্গে সংঘাত পুনরায় ঘনীভূত হয়। মন্দপাল গহদবলদের কাথ থেকে মুঙ্গের অধিকার করেছিলেন। কিন্তু বিজয়সেন তাঁকে পরাজিত করে দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। ১১৬২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গোবিন্দপাল নামে এক রাজা অধুনা গয়া জেলার ভূখণ্ডে রাজত্ব করতেন। কিন্তু পাল সম্রাটদের সনেগ তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল বলে সুদৃঢ় প্রমাণ পাওয়া যায় না। পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর "সেন রাজবংশ" বাংলা শাসন করতে শুরু করে...





চলবে.....




(তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৩

প্রামানিক বলেছেন: পোষ্ট পড়ে অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭

এম আর তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.