নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৭ প্রেমের ডায়েরী

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩



আমার নাম ছলেমান। বয়স ৩৬ বছর। বন্ধুরা আমাকে ক্ষেপিয়ে "গবাই" বলে ডাকে! কোথা থেকে এবং কেন এই "গবাই" শব্দের উৎপত্তি হল, তা আমি জানিনা। তবে আমি খুব প্রেমিক মানুষ ছিলাম! বলতে লজ্জা নেই, মেয়ে মানুষ দেখলেই মনে হত, এরা সব আমার... শুধু আমার ... আমিই হলাম এদের একমাত্র প্রেমিক রাজা !!!

আর আজ এই ৩৬ বছরে মোট ২৭ টা প্রেম সম্পন্ন করে প্রেম বিষয়ক আমার নিজস্ব কিছু মতামত লিপিবদ্ধ করার উদ্যেশ্যেই আজ এই ডায়েরী লিখতে বসেছি। "প্রেমের মরা জলে ডোবেনার" মত করে আমার ২৭ টা প্রেম আজও পানির উপরে ভাসছে। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আজও সিগারেটে ফুৎকার মারি আর চিৎকার করে বলি -ভুল করেছি আমি... অনেক গুলো ভুল করেছি...। কত চড়াই উতরাই পার করে আজ আমি যার স্বামী হিসাবে রেজিট্রি খাতায় সই করেছি সে বেচারি নিতান্তই আমার অপরিচিত একজন ভালো মানুষ। কখোনো ভাবিনি বিধাতা রিপা নামের এই মেয়েটিকে বউ হিসাবে আমার ভাগ্যে লিখে রেখেছে। তাও আবার পারিবারিক পছন্দ মতে। আগে জানলে মিছেই এতগুলো প্রেম করে সময় নষ্ট না করে হন্নে হয়ে এই রিপা কে খুজেঁ বেড়াতাম। তাহলে আর আমার জীবনে এত রুমকি, ঝুমকি, শিউলী, কামিনীর আবির্ভাব ঘটত না। মনে পরে গেল রুমকির কথা! সেই স্কুল জীবনের প্রথম প্রেম। রুমকি আর ঝুমকি ছিল দুই জমজ বোন। রুমকিকে ভালোবাসলেও একদিন অন্ধকারে রুমকি মনে করে ঝুমকিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় প্রেম হয়ে গেল ঝুমকির সাথেও!! অবশ্য বেশিদিন তা দুই বোনের কাছে গোপণ থাকেনি এবং প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার মাঝখানে দুই বোন দুই জোড়া নতুন এপেক্সের স্যান্ডেল দুই হাত দিয়ে দুই গালে চপেটাঘাত করেছিল আমার !! এরপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে দুই গালে মনে হল Apex লেখাও দেখতে পেয়েছিলাম। স্পষ্ট মনে আছে, প্রায় ২ দিন যাবত বিখ্যাত এই ব্রান্ড গালে নিয়ে ঘুরেছি।

এই ছিল আমার প্রেম জীবনের প্রথম এচিভমেন্ট। এতে দমে না গিয়ে বরং উৎসাহিত হলাম এবং এক এক করে নারী হৃদয় হরন করতে থাকলাম। তারপরের সিরিয়ালে ছিল শিউলী নামের একটা মেয়ে। আদনান সামির বোন হওয়ায় ইয়া মোটাতাজা ছিল সে। জোক করছি না! সত্যিই তার ভাইয়ের নাম ছিল আদনান সামি।কিন্তু সামি ছিল ভিষণ রোগাটে আর পাতলা। তাই "পাতলা খান" বলেই ডাকতাম আমি। আমি আবার শিউলী কে রাগানোর জন্য বলতাম, 'তুমি এত মোটা হইলা কেন? আর সামি এত চিকনা হইলো কেন? তুমি কার মত হইছো? বাবার মত, নাকি মার মত?' এই প্রশ্নের কোন উত্তর না পেলেও ওই মোটকুর সাথে প্রেম করার জন্য তার ভাই পাতলা খানের পিছনে যে কত টাকা খরচ হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। ওদের বাবা, মা বাড়ি না থাকলেই পাতলা খানকে এটা সেটা ঘুস দিয়ে শিউলীর সাথে চুটিয়ে প্রেম করতাম। কিন্তু পকেটের অবস্থা একদিন ভাল না থাকায় পাতলা খানকে কিছু না দিয়েই গিয়েছিলাম ওর বোনের সাথে প্রেম করতে, আর ওই দিনই পাতলা খান করল বেঈমানী!! বেঈমান কি গাছে ধরে? আমার দেয়া এতএত গিফট এর কথা ভুলে গিয়ে ব্যাটা বাপ কে ফোন দিয়ে ডেকে হাতেনাতে ধরিয়ে দিল...!! ব্যস ... শিউলীর বাপ এসে শিউলী কে মারলো এক থাপ্পড়, আর আমাকে শুন্যে তুলে মারলো এক আছাড়!! ...আছাড় খাওয়ার পর খেয়াল হল শিউলী ওর বাপের মতই হয়েছে!!

দুইদিন মাজার ব্যথায় হাটতে পর্যন্ত পারিনি। তবুও খুড়িয়ে খুড়িয়েই পরিচয় হল কামিনীর সাথে!! আমাদের বাড়ির নতুন ভাড়াটিয়া হওয়ায় আমার চরিত্র সম্পর্কে একেবারেই অবগত ছিলনা সে। তাই সতি পুরুষ হিসেবে তার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে খুব বেশি বেগ পেতে হলনা। পূর্ব অভিজ্ঞতা আর শিক্ষা কে কাজে লাগিয়ে আস্তে আস্ত কামিনী কেও আমার বশীভূত করে ফেললাম। এবার আর কোন ভুল নয়, খুব সাবধানেই চালিয়ে গেলাম আমার প্রেমলীলা। কিন্তু হায় ... এই মেয়ে তো দেখি বেজায় ইমোশনাল!! একদিন রাতে ফোনের মধ্যে একটুস খানি দুষ্টুমিষ্টি প্রেমময় অভিমান করে কিন্চিৎ রাগারাগি ভাগাভাগি করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। সকালে উঠে শুনি মাইয়া হারপিক খাইছে!!! জীবন মরন সমস্যা!! সাথে সাথে কানাকানি জানাজানি হয়ে গেল চারিদিকে! কামিনীর বাপ আমাকে আছাড় মারার জন্য খুজতে লাগল। আমার বাপ তার আগেই আমাকে মৌখিক ত্যাজ্য ঘোষণা করে বাড়ি থেকেই বের করে দিল। ......
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দিক বেদিক না ভেবে চলে গেলাম আমার সবচে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিথুনের বাড়ি। তবে মিথুনের বাড়ি যাবার পথে ঘটল আরেক এক্সিডেন্ট!! হঠাৎ কোথা থেকে এক স্কুল ড্রেস পরিহিতা সুন্দরী মেয়ে "আমি তো প্রেমে পরিনি, প্রেম আমার উপরে পরেছের" মত করে আমার সামনে এসে হুড়মুড় করে পরল। -
-"ভাইয়া, ভাইয়া ... আমাকে একটা উপকার করবেন প্লিইইইইজ ভাইয়া"
আমি আহ্লাদে গদগদ হয়ে গেলুম!! এবং চোখ মুখ কেলিয়ে চিরবিনিত হয়ে বললুম -
-"জী ভাইয়া বলুন, আপনাকে কিভাবে উপরে তুলতে পারি!! না মানে, উপকার করতে পারি?"

মেয়েটার কথা অনুযায়ী সে দুই সাবজেক্টে ফেল করায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার গার্ডিয়ানকে তলব করেছে সিগনেচার করার জন্য!! আমাকে তার বড় ভাই সেজে গিয়ে গার্ডিয়ানের ভুমিকা পালন করে ওই রেজাল্ট উদ্ধার করতে হবে। আমি একটু ইসবিস করে রাজি হলাম কিন্তু হতাম না যদি কিনা পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে একটুও অবগত হতাম। মেয়েটা আমাকে তার বড় ভাইয়ের নাম আর পরিচয় বলে দিল। আমি সেটা মুখস্থ করার পাশাপশি হাতের তালুতে লিখেও নিলাম। কিন্তু হাতের তালুর দিকে তাকানোর আর সুযোগ পেলাম কই!! প্রধান শিক্ষকের ভয়ঙ্কর মুখের দিকে তাকিয়েই আমার অবস্থা পানিপানি...তিনি শুরুতেই সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে চাইলেন এবং আমার নাম জানতে চাইলে আমি মুখ ফোসকে বলে ফেললাম "গবাই"!!! কি যে হল আমার জানিনা!! কেমন এক অস্থিরতা কাজ করছিল আর সমানে ঘামছিলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা দৌড়ে পালিয়েছে। কি অদ্ভুত দুনিয়া!! উপকার করতে এসে ফেসে গেলাম। ... পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে সব খুলে বলেও পার পেলাম না... গুনে গুনে ১০ বার কান ধরে উঠবস করার পর তবেই আমাকে ছাড়লেন!!...

এরপরেও প্রেম দরিয়ায় ডুব মারার সখ আমাকে না ছাড়াতে একের পর এক প্রেম করেই চললাম। জুথি, বীথি, সাথী, পাখি, আখিঁ, কত নামের বাহার!! একটা ব্রেকআপ হতে না হতেই আরো একটা!! একবার এক মেয়ে হঠাৎ ফোন দিয়ে বলল -
-"শোন, লুইচ্চা তোরে যে গিফট গুলো এতদিন দিসি সব ফেরত দিবি!!!"
সত্যি কথা বলতে মেয়েটাকেই আমি ঠিকমতো চিনতে পারলাম না যে এটা কত নাম্বার? তাহলে সে কোন গিফট দিয়েছিল বুঝবো কেমনে!! তাই এ যাবৎ যতগুলো মেয়ের কাছ থেকে গিফট নিয়েছি সবগুলো গিফট এক জায়গায় করে মেয়েটাকে ফোন দিয়ে ডেকে বললাম, তার গিফট গুলো সে যেন এর ভিতর থেকে খুজেঁ বের করে নিয়ে যায়।

এই হল আপাতত ২৭ প্রেমের গল্প!!! কি ভাবছেন? ২৭ প্রেমের কথা বলে কয়েকটা ঘটনা বলেই বিদায় হচ্ছি? আরে যে কয়টা বলেছি সেগুলো এতটাই সংক্ষেপে বলেছি যে আপনি এত দ্রুত পড়ে শেষ করতে পারলেন, নাহলে খাওয়া দাওয়া চুলোয় উঠতো!! আর ২৭ টা কাহিনী বলতে গেলে আমাকে ২৭ বার জন্ম নিতে হবে। তাই দুঃখ প্রকাশ করে এবার আসছি আমার বউ রিপার প্রসঙ্গে। যদিও জানি পরবর্তী কথা গুলো পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে না ... কেননা সেখানে মোজ মাস্তি নেই ...প্রেম কাহিনী নেই.. আছে কিছু বস্তা পঁচা নীতি কথা... তারপরেও বলছি সব লেখাই যে ভালো লাগতে হবে এমনতো কোন কথা নেই ... আপনাদের ভালো লাগুক আর নাই লাগুক আমার লিখতে ভালো লাগছে ... এটাই বড় ...

যাইহোক, কষ্ট আমার একটাই... মেয়েটার কাছে আমি ফেরেশতার মত ...!!খুব অপরাধ বোধে পুড়ি যখন শুনি আমাকে পেয়ে নাকি তার জীবন ধন্য হয়েছে... বিশ্বাস করুন ওকে বুকের জড়িয়ে ধরতেও খুব অসস্তি লাগে ...!! ঘেন্না লাগে নিজের প্রতি ... কষ্টে বুকটা ফেটে যায় যখন ও নামাজ পড়ে এসে আমার বুকে ফু দিয়ে আমার জন্য দোয়া করে ... খুব ইচ্ছা করে এই ডায়েরী টা ওর হাতে তুলে দেই ... ওকে সব সত্যি খুলে বলি ... হঠাৎ মাঝরাতে আমার পাপ আমাকে ডেকে তুলে বলে -"পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটার দিকে একবার তাকা"
আমি ডুকরে উঠে রিপার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবি... "ইসসসস..... একবার যদি জানতাম এই মেয়েটিই হবে আমার স্ত্রী ... ... আমি কি আদৌ এই মেয়েটির স্বামী হওয়ার যোগ্য?"

অবাক হয় প্রকৃতির আচরণে ... ভালোর সাথে খারাপ, আর খারাপের সাথে ভালোর জোড় দেখে...

যাইহোক, এই ডায়রীটা আমার স্ত্রীকে পড়তে দিয়েছিলাম কিনা সে প্রশ্ন করবেন না প্লিজ, তবে আপনারা যারা পড়লেন তাদের উদ্যেশ্যে বলছি -
"অস্থির না হয়ে অপেক্ষা করুন, আপনার স্বপ্নের নায়ক বা নায়িকা ঠিক সময় মত আপনার কাছে এসে ধরা দিবে ... কেননা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক তা নির্ধারিত। আর যদি আপনি নিজেই নিজের পছন্দের মানুষটিকে বেছে নেন তাতে সমস্যা নেই, অনুরোধ শুধু একটাই, ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে কোন মেয়েকে বিছানায় টানবেন না, নাহলে মাঝ রাতে আমার মত আপনার ঘুমও একদিন ভাঙবে। আসুন বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ককে "না" বলি"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.