নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেডলি ট্রাভেল লাভিং ওয়ান।

মোরতাজা

আমি সাধারণের একজন। বেড়াতে, বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

মোরতাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প:: প্রেমশূণ্য কামের মুখোশি জীবন

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪



ছবি গুগল করে ধার নেয়া।

বহুক্ষণ বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকার পর নিজেকে আরেকবার জিজ্ঞেস করে মতিন মিয়া, জীবন এমন ক্যান! বেশ্যা সঙ্গম থেকে প্রেমিকা সঙ্গম--- কোনটা সে উপভোগ করে নি! সবই করেছে। তারপরেও মনে হয়, কী যেনো তার পাওয়া হয়নি।

কাম কাতুরে জীবনে বহু কামাতুর রমণীয় শরীর চেখে দেখার দুর্লভ বা সুলভ সুযোগ হবার পরেও; তার মনে হয় জীবনটা পানসে। একজনেই তুষ্ট থাকলে বরং বেশ ভালো ছিল। থাকার চেষ্টা যে সে করেনি; তাও নয়। আট বছর চেষ্টা করেছে। হয়নি। সবার সব হয় না।

তার বাপ চাচারা কি করেছেন! একজন নিয়েই তো সুখে ছিলেন! সুখ অবশ্য আপেক্ষিক । সুখ বাদ দিলেও সংসার-যৌন জীবনে সঙ্কট তো খুব একটা হয় নাই। এটা অবশ্য তার আন্দাজ!

নিজের সাথে কথা বলে মতিন মিয়া। রাত গভীর হয়। বাইরে কিছু রিকশা চলে যাচ্ছে। কিন্তু গাড়ি রাতে হর্ণ না দিয়ে আলো ফেলে সিগনাল দিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। মতিন মিয়া একগ্লাস পানি খায়। পানির পিপাসা তার লাগেনি। তবুও খায় । পানি থেরাপি নাকি শরীর মন শান্ত করে। পেট ভালো রাখে। কিডনি ভালো রাখতেও প্রচুর পানি খেতে হয়। তবে এ সবের চে অভ্যাসবশতই পানি খায় মতিন মিয়া।

বয়স তার খুব বেশি নয়। চল্লিশ পেরুলো বছর দুই হলো। এ বয়সে দেশে বিদেশে বহু নারী সঙ্গ তার চেনা। অনলাইনের বিজ্ঞাপন, রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বহুদেশি নারী কিম্বা বার গার্ল থেকে বেশ্যা বাড়ি কোনটাই তার নখের দর্পনের বাইরে নেই। বাদ নেই প্রেমিকা শরীর-পদ্যপাঠ।

প্রেম, রোমান্চ আর শূণ্যতা ভরে তুলবার অনন্ত চেষ্টা করে মতিন মিয়া । তবুও কোথায় যেনো আটকে থাকে তার কষ্ট। যাকে ভালোবাসার অনল দিয়ে পুড়েছিল, সে নেই তার পাশে। যার সাথে গাটছাড়া বেঁধেছে সেও অদৃশ্য কারণে নিস্পৃহ থাকে। এ নিস্পৃহ জীবন তাকে ডুবিয়ে দেয় নারীর রাজ্যে। দেখতে চায় নারীর জগতে কী আছে।

এই যে এক্সপ্লোর করার দুর্নিবার একটা নেশা মতিন মিয়ার; এটাও বেশ খারাপ। কিন্তু খারাপ কাজটা সে জেনে শুনেই করে আসছে; এক দশক ধরে বা তারো বেশি। নারী শরীর মথিত করেই তার তৃপ্তি।

আসলেই কি তৃপ্ত মতিন মিয়া। মনে হয় না। তৃপ্ত হলে নি:শ্বাস আকাশে উড়ে যেতো না। হা হুতাশ করে নিজেকে বলতনা, জীবন মানে কি! কাম সঙ্গ। সন্তান-জীবন। চাকুরি-ব্যবসা। নাকি কিছু আনন্দময় সময়। হ্যাঁ! কিছু সময় যে উপভোগ করে না তাও কিন্তু নয়। করে। সন্তানসঙ্গ তার প্রিয়। তারপরেও দিনের কোন এক ফাঁকে তাঁর মনে হয়, একতটা প্রেমময় হাতছানি তার লাগবে। কেন এমন হয়, সে জানে না। মতিন মিয়া কি খুব কাম কাতুরে? নাকি ভালোবাসার জন্য অস্থির মানুষ। ব্যাখ্যা করাটা মুশকিল।

তবে একটা কাম রাত তার বেশ মনে আছে। পাহাড়ি এক রিসোর্টে প্রেমিকার সাথে কাটিয়েছে আনন্দময় সময়। প্রথম সে এক্সপ্লোর করেছে রমণীরাও তাকে বেশ পছন্দ করে। সঙ্গ সুধায়, জোছনা জলে, কামের কুন্জে ভেসে যেতে চায়। কী অদ্ভূত সেই কাম। ফুলের ঘ্রাণ, দুধ জোছনায় ডুবে থাকা পাহাড়েও দরজার খিল এঁটে জানালার পর্দা টেনে শরীরে ডুবে থাকে মতিন মিয়া।

শরীর-গল্প শুনলে অনেক দুষ্টু লোকের মত মতিন মিয়াও চুপসে থাকতো, শরীর নিয়ে আলোচনা নাজায়েজ কবুল করা মতিন মিয়া; শরীর কারবারির সন্ধান পায় তার এক বন্ধুর মাধ্যমে। প্রেম করে সংসার পাতা সেই বন্ধু স্ত্রী-সঙ্গ আর কলহ নিয়ে বিপর্যস্ত থাকার অজুহাতে বেশ্যাবাড়ি মুখি হয়। সেই-ই মতিন মিয়াকে বলে, জীবন তো একটাই এনজয় করো!

মতিন মিয়ার এখানো মনে আছে প্রথম যেবার বেশ্যা বাড়ি গেছিলো, সেবার বালিকা মেয়েটি হেসে দরজা খিল দেয়। মতিন মিয়া চড়ে বসার আগেই কাপড় ভিজিয়ে ফেলে। এক অদ্ভূত ভয়। টাকাটা গুঁজে দিয়ে ফিরে আসে বাসায়। না, বেশ্যাবাড়ি মুখি হবে না সে! নিজের সঙ্গে লড়াই করে। মতিন মিয়া হেরে যায়।

শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। আবার গিয়েছে! আবার... বহুবার। নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু সেটি যেনো সরকারি টাকায় বানানো রাস্তার মত, কয়দিন পর পরই খোঁড়া হয়। আবার বাঁধানো। পণ করেছিল বেশ্যার শরীর হাতড়াবে না আর। এখন অবশ্য সে বেশ্যা বাড়ি যায় না। উঠতি মডেল, নায়িকাদের শরীর হাতড়ায়। এটার বেপারিরা এর নাম দিয়েছে ওয়াইফ এক্সপেরিয়েন্স, গার্লফ্রেন্ড এক্সপেরিয়েন্স।

নগরে আসার আগে মতিন মিয়ার মনে হতো পৃথিবীটা সুন্দর। ক'টা টাকা কামাতে পারলে আরো বেশি সুন্দর হতো। সে জন্যই নগরমুখি হলো মতিন মিয়া। কিন্তু এ নগরে যে কত কিছুর জোগান দেয়, সেটির ভেতর খেই হারিয়ে ফেলে মতিন মিয়া। গ্রামমুখি মতিন মিয়ার স্ত্রী শহরমুখি। শহর ভালোবাসে। ভালোবাসে শহরের মুখোশি জীবন। তার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ মতিন মিয়া নিজেকে বদলাতে গিয়ে নিজের আসলটাই ভুলে যায়। জড়িয়ে যায় নানা কু-যজ্ঞে।

নিজেকে তার অসহায় মনে হয়। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়ায়। বাইরে কাম জোছনায় ভেসে যাচ্ছে রাত। সে জোছনার আলোটা নগরের আলোর ভেদ করে ঢুকতে পারছে না। যেমনটা গ্রামের এক সহজিয়া প্রাণ নগরে মিশতে পারেনি। মিশে পঙ্কিল প্রাণ। নিজেকে শুধরে নেবার প্রয়োজন বোধ করে মতিন মিয়া।

আসমানের দিকে তাকায়। আসমান দেখা যায় না বারান্দা থেকে। ছাদ আর গলির ভেতর থেকে কিছু অংশ তার চোখে পড়ে। মধ্যরাতে ঘুমঘোরে ডুবে যেতে থাকে ব্যস্ত মানুষের গল্পগুলো। নিজেকে নতুন করে আব্ষ্কিার করে মতিন মিয়া। আচ্ছা-- তাহাজ্জুদ নমাজ পড়লে কেমন হয়? অস্থিরতা কেটে যাবে। চেষ্টা করে দেখে।

বাইরে তখন মোয়জ্জিনের আজান 'ঘুম থেকে নামাজ উত্তম' । উত্তম কাজটা গ্রামে নিয়মিত করতো। নগরে তা করা হয়না ঠিকমত। এটা নগরের দোষ নয়, মতিন মিয়ার নিজের দোষ। এ নগরে এসে খেই হারানো এক পুরষের ভ্রম। হারানো পথে ফেরার উপায় খুঁজে নিতে হবে। পারে না, মতিন মিয়া। বহু রকমের বাঁধন জড়িয়ে গেছে তার। সকাল হলেই কেউ একজন নক করে--- আজকে ফ্রি আছি। হবে নাকি! মতিন মিয়ার রাতের সব ভুলে যায়। ফিরতি পথে নামে । আবার সেই একই চক্র। নিজে শোধরানোর জন্য প্রার্থনা বিফল!

কেবল তার একজন ভালো সঙ্গী দরকার। ভালো মানুষ। সে মানুষটি কে হবে? তার স্ত্রী, পুরনো প্রেমিকা নাকি বেশ্যা বাড়ির শরীর এলিয়ে দেওয়া কোন নারী।

উত্তর নেই মতিন মিয়ার কাছে। জীবন এমন কেনো? মতিন মিয়া নিজেকে প্রশ্ন করে। উত্তর তার জানা। শুধু জানে তাকে ফিরতে হবে নিজের কাছে। এ কাম, পয়সা খরচা করে কেনা শরীর থেকে; অবৈধ যৌনতা থেকে অতৃপ্ত আত্মাকে তার রক্ষা করতে হবে।

.... চোখের সামনে বদলে যাওয়া নিজেকে দেখে। আহা জীবন!!!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪

কালো যাদুকর বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা। ভাল লাগলো।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

আমি সাজিদ বলেছেন: নগরে এসে খেই হারানো অস্থির চিত্তের এক পুরুষের ভ্রম। মতিন মিয়া মনে হয় না এই চক্র থেকে আর বের হতে পারবে। মানুষ কিছু সময় নিজেই নিজের ভাগ্য রচনা করে ফেলে। স্রষ্টার দেওয়া অপশন এ অথবা অপশন বি

অনেকদিন পর এমন গল্প পড়লাম। বেশ। সত্য সুন্দর।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: মতিন মিঞার জন্য শুভ কামনা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৮

মোরতাজা বলেছেন: :)

৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৮

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রামের মানুষ শহরে এসে বদলে যায়।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৯

মোরতাজা বলেছেন: আংশিক সত্য। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৬| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভাল লাগলো।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৯

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.