নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তগদ্য : বৃষ্টির আড়াল

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩৭


ওই যে বৃষ্টির আড়াল, খানিকটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে নদীর দিকে—ওখানে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। তোমার পরনে আকাশের শাড়ি। তোমার চুল ধরে আছে আষাঢ়ের মেঘ, সন্ধ্যার দীঘল দিগন্ত, প্রাচ্যের সকল নদীর সংহতি। তোমার চুলের দীঘলতা ম্লান করে দিচ্ছিলো অদূরে দাঁড়ানো দুইটা দেবদারু আর একটা দীর্ঘদেহি গাছের আকাশছোঁয়া অহম। একটা দাঁড়কাক এসে বসে তোমার হাতের পিঠে। তোমার ঘাড়ে গুঁজে রাখে মুখ। তোমাকে আদর করে শেখায় ডানার উষ্ণতা।

তোমার চোখের ভিতর ধীর লয়ে দুলছে গভীর বনাঞ্চল। দেখলাম, তোমার হাতের পিঠে একটা রক্তিম জোনাক বসে আছে। জাহাজ ডুবে গেলে যাকিছু সবুজরঙের ছায়ার সঙ্গে দেখা হয়—তারা ভালো, কণ্যাণময় সূর্যের চুম্বন নিয়ে শ্যাওয়া হয়ে আছে। থাকা না থাকার দিনে ঘুরছে টারবাইন। বিদ্যুতের রেখা ধরে ধসে পড়ে আকরিক লোহা ও রোদ। আর হেকেটি হেসে যায়, হেকেটি কেঁদে যায়। দূরে তালগাছের মাথায় ভর দুপুরে একটা বাজ পড়ে। মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে পোড়া সকাল তাল তাল। কোন তালে বাজে এই ললিত পতন? আর তোমার কান্না শুনে বাদল গুমরে মরে। তোমার বুকের মধ্যে কঙ্কপাখি উড়ে।

দুইটা কদমগাছ পরস্পর তাকিয়ে আছে। ওরা অথৈ নীপবন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার ধারে। বৃষ্টিতে গলে গলে পড়ে কদমের ঘ্রাণ। এ কেমন বেদনা দিলে তুমি পথের পায়ে? এই পথে আমরা হাত ধরে হেঁটে যাই সন্ধ্যার পরে। তোমার হাতভর্তি কাচের নীল চুড়ি। একটা চুড়ি তার ভেঙে পড়ে ভাঙা আঙুলের পাশে। তোমার পরনে আকাশের শাড়ি। আমার হাতের পিঠে চুম্বনের দাগ নীল হতে হতে ধারণ করে পৃথিবীর সকল বেদনা।

এ কেমন বাদল দিলে, প্রিয়তম দুঃখের বন? আমার ঘুম নেই। আমার ঘুমের ভিতর কান্নার উৎসারণ পৃথিবীতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কেবল আমি জেগে থাকি। আমার রাতগুলি আর ভোর হয় না, ভোর হয় না। সত্যিই কি ঘটে প্রভাত? এই দুচোখে অনন্ত রাত। জলের পরে জলের প্রপাত। এখানে রোজ ঘনে মৌতাত। এই পৃথিবী ধসে যায়, হয়ে যায় রামগিরি। এই পৃথিবী কাঁদে ঝিরঝির চিরদিন। উজ্জয়িনী সাক্ষি হয়ে আছে, ক্ষত নিয়ে জেগে আছে কবেকার অলকা। সে থাকে পোড়ামাটির গায়ে। একদিন আমরাও পোড়ামাটির পাথর হয়ে জেগে থাকবো পৃথিবীর সবচে’ প্রাচীন দেয়ালগুলিতে।

কোনোদিন বৃষ্টির দিনে তোমাকে ডাকি ঝড়। গভীর রাতে বাজপড়ার শব্দে তোমার ঘুম ভেঙে যায়, ভয়ে কেঁপে ওঠো যখন, বিজলির আগুন দেখে চমকে ওঠো যখন—তখন মনে মনে তোমাকে বুকের ভিতর রেখে দিই একটা জলপাইয়ের পাতার মতো, পাতাটির রং লাল। পাতাটি কোনোদিন দূর পাহাড়ে প্রাচীন কোনো বৌদ্ধমন্দিরের ধারে চুম্বনরত জোড়া কাকপাখির দিকে তাকিয়ে ছিলো নির্লজ্জ। তোমার পরনে আকাশের শাড়ি। ভস্ম তার পাড়। পাড় ঘেঁষে অলক্তরাগ চরণ। শূন্যতার পরিমাপে সাজানো জীবন। মেঘের পরতে ভাসে রোদের অবাধ্যভূমি। কারো অধর ছুঁয়ে চোখের উড্ডীনতা মেপে ফেলা, নির্ঘুমরাতগুলি বুকপকেটে লেখা আছে। আমাদের পড়ে ফেলা বইগুলির পাতায় কালো অক্ষরগুলি যন্ত্রণা হয়ে আছে। বিদ্যাপতি বলে, ...কান্ত পাহুন/কাম দারুণ/সঘন খরশর হন্তিয়া...

কোনোদিন রাতে গভীর রাতে জেগে থাকি। জেগে থাকি গভীর বৃষ্টির শব্দে। ছাতের শীতল চর এই শব্দাঘাত ধরে। এই বৃষ্টি সর্বনাশ আনে। তারপরও কোথাও ভিতরে জাগি। জেগে জেগে দাঁড়িয়ে থাকি কম্পমান। দাঁড়িয়ে থাকি সর্বনাশের আরতিতে। আরতিতে রত রতি-রক্ত-মদ। কারো সৌন্দর্য হরণ করে সুন্দর হই। নখরে মাখি আকাশের নীল। সকলি কালো। আজ রাতে গভীর রাতে বৃষ্টির প্রণয়। প্রতিটি ফোঁটায় সাজানো সর্বনাশ। আমাকে উন্মাতাল করে। হাওয়ার উরুমঙ্গলে জুড়ে দেয় সূর্য। জেগে থাকি গভীর শব্দে। রাত্রি আর বৃষ্টি অথৈ। বৃষ্টি ছিঁড়ে আমি সুন্দর হই। যেনো বা তুমি আমাকে ছুঁয়ে আছো, অন্তহীন ছুঁয়ে আছো, ছুঁয়ে আছো চুম্বনে। রক্তচুম্বনে যে মৃত্যু আছে—তাইই অমরতা হোক। বিদ্যাপতি বলে, ...কুলিশ শত শত/পাত মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া/ মত্ত দাদুরি ডাকে ডাহুকী/ফাটি যাওত ছাতিয়া...

মেঘদূত ফুরিয়ে যায়। ফুরিয়ে যায় কালীদাসের পরমায়ু। যক্ষের বিরহ ফুরোয় না। রামগিরি থেকে অলকার দূরত্ব বাড়ে। গজমেঘ গলে হয় বৃষ্টির হরিণ। জীবনদাশের কবিতারা ক্যাম্পের ভিতর প্রলম্বিত হতে হতে গ্রাস করে প্রাচ্যের সকল বনাঞ্চল। গুলির শব্দ শোনা যায়। বৃষ্টির অনলে যক্ষ পুড়ে যায়, কিন্তু ছাই হয় না। যক্ষ আমার সঙ্গে জীবন বদল করে। আমি একটি নৌকো কেনার স্বপ্নে শীর্ণকায়। নুহের কিস্তি নয়, ধীবরের একফালি নৌকো। আমার রক্তের ভিতর ব্যাপ্ত হয়ে আছে ধীবরের রক্তের যন্ত্রণা। আমার রক্ত ছিঁড়ে যায় চিরদিন, আমার রক্ত ছিঁড়ে যায়। বিদ্যাপতি বলে, এ ভরা বাদর/মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর...

--------
ছবি : আমার আঁকা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:০০

আহমেদ জী এস বলেছেন: নির্ঝর নৈঃশব্দ্য




নৈঃশব্দ্য নিয়ে নির্ঝরের মতো ঝরঝর ঝরে গেছে কিছু কথা ।

ভালো লাগলো ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৩

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০৯

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: সুন্দর লেখা । জীবন্ত অনুভূতি । ভাল লেগেছে ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৪

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.