নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর পরিচালক,অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার আবদুল জব্বার খাঁনের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬


২৮ ডিসেম্বর, বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস আজ। ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর আধুনিক বিশ্ব-ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দিন। চলচ্চিত্রের আর্বিভাব নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। উনিশ শতকের শেষার্ধের এই আবিস্কার আধুনিক মানব-সংস্কৃতিকে যতো প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে আর কোনো শিল্প বা গণমাধ্যম তা পেরেছে কিনা সন্দেহ। মানুষের যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা, তাঁর চিন্তার ঐশ্বর্য, তাঁর সংস্কৃতির বৈভব, তাঁর ধ্বংস ও সৃষ্ঠি চলচ্চিত্রে যেভাবে অবিনশ্বরতা পেয়েছে তা অন্যকোনো মাধ্যমে দিতে পেরেছে বলে আমাদের জানা নেই। কতভাবেই না আমরা এই চলচ্চিত্রকে পেয়েছি। কখনো এই চলচ্চিত্রের পর্দায় আমরা পর্যবেক্ষন করেছি, আমাদের চারপাশের ঘটমান বাস্তবতা, পৃথিবী-দেশ-সমাজ-ব্যক্তি, মানুষের কর্মচঞ্চলতা, সাধারন ঘটমান বাস্তবতার কাব্য, মোড় ফেরানোর রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক ঘটনার উপস্থাপনা, ইতিহাসের অমরত্ব দান, মানুষের উন্মত্ততার শিহরণ জাগানো যজ্ঞ, সংগ্রামের উদ্দীপ্ত ইতিহাস, ব্যক্তি মানুষের ভালোবাসা-স্নেহ আর নৈকট্যের আবেগ জড়ানো অনুভব, নির্মল বিনোদন আর আনন্দ। ১৯৫৬ সালে এদেশে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির নাম ছিলো ‘মুখ ও মুখোশ’। সেই চলচ্চিত্র থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত- এদেশে দুই হাজার আটশ ২৯টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। ২০০৬ সালের দিকে চলচ্চিত্রশিল্প মুখ থুবরে পড়লেও ডিজিটাল চলচ্চিত্র নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে চলচ্চিত্র সংশ্লিস্ট সবাইকে শুভেচ্ছা।

আজ বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল জব্বার খাঁনকে। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পর দেখা গেল মুসলমানরা বাদে বেশীরভাগ কবি সাহিত্যিক কলকাতায় রয়ে গেছেন। ফলে শিল্প সাহিত্যে পশ্চাতপদ হয়ে না থাকার শপথে ঢাকা কেন্দ্রিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে যে সকল নাট্যনির্দেশক মঞ্চে নাটক নিয়ে উপস্থিত হতেন আবদুল জব্বার খান ছিলেন তাদের অন্যতম। সে সময়ে সারাদেশে সিনেমাহলের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৩টি এবং এ সকল প্রেক্ষাগৃহে হিন্দী, উর্দু ও কলকাতার বাংলা ছবি প্রদর্শিত হত। মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রের জন্য সবার প্রথমে যে মানুষটির অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করতে হবে তিনি আবদুল জব্বার খান, মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রের পরিচালক। তাঁর চিত্রনাট্য, অভিনয় এবং পরিচালনায় "মুখ ও মুখোশ" চলচ্চিত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত। আজ এই গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতার ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৩ সালের আজকের দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নিজের বাসায় মৃতুবরণ করেন আবদুল জব্বার। বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে ধ্রুবতারা, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার আবদুল জব্বার খানের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

আব্দুল জব্বার খাঁন বাংলা ১৩২২ সালের ৭ ই বৈশাখ (১৯১৬ ইং সঠিক তারিখ জানা যায়নি) তারিখে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার উত্তর মসদ গাঁও নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী মোহাম্মদ জমশের খান। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। আসামের ধুবড়ী এলাকায় তার বাবা পাটের ব্যবসা করতেন। সেখানেই শৈশবে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। পাঠ্য অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন নাটকের সঙ্গে। তিনি অভিনয় করেন "বেহুলা", "সোহরাব রোস্তম" নাটকে। প্রমথেশ বড়ুয়ার সাথে পরিচয়ের সূত্রে তিনি কলকাতায় গিয়ে তাঁর বাসায় থেকে নাটক দেখতেন। প্রমথেশ বড়ুয়ার "মুক্তি" চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে তিনি তা করতে পারেননি। পরে তিনি প্রমথেশ বড়ুয়ার "শাপ মুক্তি" চলচ্চিত্রের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু পিতার কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়াতে তিনি সে চলচ্চিত্রটিও করতে পারেননি। তবে তিনি নিয়মিত মঞ্চনাটক করেছেন। প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত "সিন্ধু বিজয়" নাটকে তিনি অভিনয় করেন আবদুল জব্বার। নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। গৌহাটিতে পরিচালনা করেন "টিপু সুলতান"। তিনি "সমাজপতি ও মাটির ঘর" নাটকে অভিনয় করে স্বর্ণপদক পান।

১৯৪১ সালে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন আবদুল জব্বার খান। ১৯৪৯ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন। ঢাকায় এসে সংগঠিত করেন 'কমলাপুর ড্রামাটিক এসোসিয়েশন'। এ সংগঠনের উদ্যোগে তিনি "টিপু সুলতান" ও "আলীবর্দী খান" নাটক মঞ্চায়ন করেন। পরে তিনি "ঈসা খাঁ" (১৯৫০), "প্রতিজ্ঞা" (১৯৫১), "ডাকাত" (১৯৫৩),"জগোদেশ" (১৯৫৯) রচনা করেন। ১৯৫৪ সালে ইকবাল ফিল্মসের ব্যানারে তার রচিত নাটক "ডাকাত" (পরবর্তীতে উপন্যাস হিসেবে প্রকাশিত) অবলম্বনে এই ভূখণ্ডের প্রথম চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর কাজ শুরু করেন আবদুল জব্বার খান। ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ মুক্তি পায়। ছবির প্রথম প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনার সাথে সাথে এর মূল চরিত্রেও অভিনয় করেন আবদুল জব্বার। আর এ চলচ্চিত্রে তার ছেলেবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন তার ছেলে মাস্টার জুলু। নায়িকা চরিত্রে ছিলেন চট্টগ্রামের পূর্ণিমা সেন। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন ইনাম আহমেদ, নাজমা (পিয়ারী), জহরত আরা, আলী মনসুর, রফিক, নুরুল আনাম খান, সাইফুদ্দীন, বিলকিস বারী প্রমুখ। চিত্রগ্রাহক কিউ.এম জামান, সুরকার সমর দাস, কণ্ঠশিল্পী আবদুল আলীম ও মাহবুবা হাসানাত এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি পরিচালনা করেন "জোয়ার এলো" (১৯৬২), উর্দূতে "নাচ ঘর" (১৯৬৩), "বনসারি" (১৯৬৮), "কাচঁ কাটা হীরা" (১৯৭০), "খেলারাম" (১৯৭৩) চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার খান মজিব নগর সরকারের চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড,অনুদান কমিটি, সেন্সর বোর্ড,ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ষাট দশকের প্রথম ভাগে গঠিত পাকিস্তান পরিচালক সমিতির অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

দূর্ভাগ্য এই যে, বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্র মুক্তির পর আবদুল জব্বার তেমন কোন স্বীকৃতি পাননি। কেবলমাত্র এফডিসিতে তাঁর নামে একটি পাঠাগার রয়েছে। তবে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করায় ঢাকার সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ারা থেকে এফডিসি ছাড়িয়ে টঙ্গী ডাইভারশন রোড পর্যন্ত সড়টি 'আবদুল জব্বার খান সড়ক'নামে পরিচিত হয়। এই গুনী চলচ্চিত্র পরিচালক ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর ২৮ তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নিজের বাসায় মৃতুবরণ করেন। বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস এবং চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল জব্বার খানের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল জব্বার খাঁনের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

সম্পাদনাঃ
নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেবার জন্য।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
লেখাটি পড়ার জন্য
শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫২

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল জব্বার খাঁনের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়







ধন্যবাদ লেখার জন্য

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ তারেক ভাই ,
বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে ধ্রুবতারা আবদুল জব্বার খাঁনের
মৃত্যুদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ মহান চলচ্চিত্র নির্মাতা আবদুল জব্বার খানের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আবুহেনা ভাই ,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র পরিচালক
আবদুল জব্বার খাঁনের মৃত্যুদিনে তাঁকে
শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.