নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব জীবন ঘোষালের ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮


ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী জীবন ঘোষাল। অখণ্ড বাংলার সম্রাট শশাঙ্কের রাজত্বকাল শেষ হবার পর থেকেই কার্যত পরাধীন হয় । মুঘল কিংবা সুলতানদের শাসনামলে এই অঞ্চল তার আবহমান স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও বিদ্রোহের পূণ্যভূমির সন্তানেরা স্বাধীনতার লড়াই সেই প্রাচীনকাল থেকেই চালিয়ে আসছিল, ইংরেজ উপনিবেশিক আমলে এই লড়াই তীব্র আকার ধারণ করে। কারণ ইংরেজ শাসন-শোষণ এই অঞ্চলের সামাজিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙ্গে দেয়। এই উর্বর ভূমিতেই ইতিহাসের ভয়ঙ্কর দুটো দুর্ভিক্ষের জন্ম দেয় পুঁজিবাদী ইংরেজ বেনিয়ারা। চূড়ান্ত স্বাধীনতার সংগ্রাম এই সময়েই শুরু করে এই অঞ্চলের মানুষ। বীর চট্টগ্রামও এর বাইরে ছিলো না। ইংরেজ আমলে সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে মাস্টারদা সূর্যসেন পর্যন্ত, অসংখ্য বিদ্রোহে ইংরেজ রাজের ভিত কাঁপিয়েছে এই অঞ্চলের সূর্যসন্তানরা। ভারতের মুক্তিকামী মানুষের জন্য উদাহরণ সৃষ্টির জন্যে কিছুদিনের জন্য হলেও চট্টগ্রামকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার নিমিত্তে এক অসম দুঃসাহসী লড়াইয়ের পরিকল্পনা করেন চট্টগ্রামের বিদ্রোহীরা। জীবন ঘোষাল তেমনই এক সূর্যসন্তান, অগ্নিযুগের বিপ্লবী। ছাত্রাবস্থায় ১৯৩০ সালে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পরে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনী রেল স্টেশনে ধরা পড়েন তিনি। কিন্তু পুলিশ হাজত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন চৌকষ এই যোদ্ধা। এরপর তিনি আত্মগোপন করেন। কলকাতার পুলিস কমিশনার চার্লস টেগার্ট সাহেব পরিচালিত পুলিশবাহিনীর সংগে চন্দননগরে এক সশস্ত্র সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই আঘাতেই ১৯৩০ সালের আজকের দিনে মারা যান তিনি। আজ তার ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে বিপ্লবী জীবন ঘোষালকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।

জীবন ঘোষাল, প্রকৃত নাম মাখন লাল ১৯১২ সালের ২৬ জুন চট্রগ্রামের সদর ঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম যশোদা ঘোষাল। সেই সময়কার চাঞ্চল্যকর ঘটনা হল চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রে চট্টগ্রামের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মধ্যদিয়ে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চারদিন কার্যত স্বাধীন থাকে চট্টগ্রাম। মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক বিপ্লবী জীবন ঘোষাল। তাঁদের এই বিদ্রোহ শোষণ-বঞ্চনার আঁধারে ঢাকা ভারতবাসীকে সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলএই দুঃসাহসিক অভিযানের নায়ক ছিলেন সূর্যসেন । তিনি মাস্টারদা নামেও পরিচিত ছিলেন । সূর্যসেন একটি জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন । তিনি অসহযোগ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন । অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, জীবন ঘোষাল, অম্বিকা চক্রবর্তী ও গণেশ ঘোষ ছিলেন তাঁর কতিপয় বিশ্বস্ত ও দক্ষ সহচর । এর সদস্যগণ অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আসাম-বেঙ্গল রেলপথের কার্যালয় থেকে ৭৭,০০০ টাকা লুঠ করেছিল । এরপর সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবী সংস্থার সদস্যগণ অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে মন দেন । মাস্টারদা সূর্যসেনের পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে তিনি ও তাঁর সহকর্মীবৃন্দ সেই অস্ত্র দিয়ে বাংলায় বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটাবেন এবং তার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ সাধন করবেন । এরাতে তাঁরা চট্টগ্রামের পুলিশ অস্ত্রাগার লুন্ঠন করেন । এই সময় সূর্যসেনের অন্যতম সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিংহ, উপেন ভট্টাচার্য, জীবন ঘোষাল, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত প্রমুখ । রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে রেখে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন এবং কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে হামলা চালায় বিপ্লবীরা। পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের জন্য গঠিত দলে ছিলেন জীবন ঘোষাল। তাঁরা সফলভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে সমর্থ হন। এই সময় অতিরিক্ত অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংসের নিমিত্তে আগুন লাগাতে গেলে হিমাংশু সেন আহত হন। তাঁকে নিরাপদে রেখে আসার জন্য গনেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, জীবন ঘোষাল ও আনন্দ গুপ্ত তাকে নিয়ে শহরে গেলে মূল দলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তাঁরা। অস্ত্রাগার দখলের পর সেখানে বিপ্লবীদের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয় এবং ভারতীয় পতাকা উত্তোলন ও ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় সামরিক সরকার। চট্টগ্রাম ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয় বীর চট্টলার গুটিকয় দামাল তরুণের অসীম সাহসী উদ্যোগে।

(চট্টগ্রাম বিদ্রোহের তরুন জীবন ঘোষাল ওরফে মাখনলাল শহীদ হন চন্দননগরে। বোড়াইচন্ডীতলা ঘাটে তার স্মৃতিফলক)
অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী বিপ্লবীদের সন্ধানে তত্পর হয় । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২২ শে এপ্রিল সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৬৪ জন ব্রিটিশ সৈন্য ও কয়েকজন বিপ্লবী প্রাণ হারান । এটি 'জালালবাদের মুক্তিযুদ্ধ' নামে পরিচিত । শাসক শ্রেণির কড়া নজর ও অত্যাচার সত্ত্বেও সূর্যসেনের বিপ্লবী দল তাঁদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছিলেন । সূর্যসেন সহ কিছু সংখ্যক বিপ্লবী জালালবাদ পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন । এমনই একটি ছয় জনের সশস্ত্র বিপ্লবী দল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৬ ই মে কর্ণফুলী নদীর তীরে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধায় । এটি 'কর্ণফুলীর যুদ্ধ' নামে পরিচিত । এই যুদ্ধে চারজন বিপ্লবী মারা যান এবং দু জন আত্মসমর্পণ করেন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ ই জুন ধলঘাটের পাতিয়া গ্রামে সূর্যসেন সহ তাঁর ছোট্ট বাহিনীকে পুলিশ ঘিরে ফেললে সংঘর্ষে দুজন বিপ্লবী নিহত হন । এই সময় সূর্যসেন এবং কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পালিয়ে যান । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ২৪ শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলির একটি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার নেতৃত্ব দেন । এই সময় একজন সাহেবকে হত্যা ও ১৩ জনকে গুরুতর আহত করে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার নিজেই পুলিশের গুলিতে আহত হয় ও পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভায় মেধাবী ছাত্রী বিণা দাস বাংলার গভর্নর স্যার আন্ডারসন জ্যাকসনের প্রাণনাশের ব্যর্থ চেষ্টা করে ধরা পড়েন ও বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সঙ্গে জড়িত বিপ্লবীদের বিচার সমাপ্ত হয় ও বিপ্লবীদের মধ্যে চোদ্দজন আন্দামানে নির্বাসিত হন । ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি সূর্যসেন চট্টগ্রামের গেরিলা গ্রামে ব্রিটিশ পুলিশের গোর্খা বাহিনীর বিরুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে গ্রেপ্তার হন । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জেলেই বিচারে তাঁর ফাঁসি হয় । সূর্যসেনের বিপ্লবী জীবন ঘোষালও দেশের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রাণিত করেছিল । আজ এই বিপ্লবীর ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে বিপ্লবী জীবন ঘোষালকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৫

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম তার সম্পর্কে ধন্যবাদ

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আজই তার বিষয়ে প্রথম জানলাম।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬

মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: শ্রদ্ধা :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.