নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের স্বনামধন্য আইনবিদ বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫


ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংগ্রামী ভূমিকা পালন কারী বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ। ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ও ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তাঁর অপরিসীম ভূমিকা ছিল। একজন প্রগতিশীল ইসলামী চিন্তাবিদ বিচারপতি মোর্শেদ কখনো কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলাননি। তিনি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাহসের সঙ্গে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বোপরি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন অন্যতম প্রধান রূপকার। বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদের এ অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ১৯৬৭ সালে যখন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান তার সামরিক শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক 'আগরতলা ষড়যন্ত্র' মামলা দায়ের করে, সে সময় বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জনতার কাতারে এসে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন। It is excellent to have a giant’s strength/but it is tyrannous to use it like a giant. ইংরেজ মহাকবি শেক্সপিয়ারের এই উক্তিটি বিচারপতি মুর্শেদের খুবই প্রিয়। তার একাধিক রায়ে তিনি এই উক্তিটি করেছেন। এই উক্তির শাব্দিক অর্থ হলো যে, দানবের মতো শক্তি থাকাটা খুব ভালো। কিন্তু দানবের মতো সেই শক্তির প্রয়োগকে অত্যাচার বা নিপীড়ন বলা চলে। এর অন্তর্নিহিত মানে খুঁজতে হলে একটু গভীরভাবে ভাবতে হবে। যে কোন ব্যক্তি যদি অসীম ক্ষমতার অধিকারী হন সেটা নিঃসন্দেহে তার জন্য গর্বের এবং গৌরবের। কিন্তু দানবীয় শক্তি প্রয়োগ হলে তা হয় বিবেক এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন। তাই এখানে এই সতর্কবাণী হয়েছে যে, এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে সংযত এবং সংযমের সঙ্গে। ক্ষমতা তাকে যেন অন্ধ এবং বধির না করে। বিচারপতি মুর্শেদের উপরোক্ত উক্তির প্রতি অনুরাগই বুঝিয়ে দিয়েছে তার জীবনের আদর্শ কি? সংযম, বিনয়, উদারতা এবং ক্ষমতার প্রতি অনাগ্রহ এ সবই তার জীবনের দর্শন এবং আদর্শ যা আমরা পরবর্তীতে আলোচনায় দেখতে পাই। ক্ষমতা ওনার কাছে যতটুকু, তিনি তা সংযমের সঙ্গে প্রয়োগ করেছেন। ক্ষমতার পেছনে ছোটেননি। তাই তিনি পুতুল রাষ্ট্রপতি বা উপদেষ্টা/মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেননি বা করতে চাননি। আজ বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের এই দিনে তিনি চলে গেছেন জীবনের ওপারে। বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ ১৯১১ সালের ১১ই জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আমাদের নবী করিম হযরত মোহাম্মদ (স}) এর স্নেহের নাতি হযরত ইমাম হোসেনের বংশধর। মুঘল সম্রাট শাজাহানের আমলে তারা মুর্শিদাবাদ বসবাস শুরু করেন। তার পিতা সৈয়দ আবদুস সালেক বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে বগুড়া এবং দিনাজপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন। তার মাতা আফজালুন্নেসা বেগম শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হকের বোন। উভয়কুল পর্যালোচনা করলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিচারপতি মুর্শেদ অতীব গৌরবময় পারিবারিক ঐতিহ্যের অধিকারী। বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ১৯২৬ সালে মোর্শেদ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করেন প্রথম বিভাগে। রাজশাহী বিভাগের সব সফল ম্যাট্রিক প্রার্থীর মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে তিনি অনার্সসহ বিএ ও এমএ পাস করেন যথাক্রমে ১৯৩০ ও ১৯৩২ সালে। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে আইন পাস করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি লিনকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অংশ নেন। উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে ও ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ণে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে নিম্ন আদালতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

(১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের সঙ্গে ঐতিহাসিক গোলটেবিল বৈঠকে বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ 'এক ব্যক্তি এক ভোট' নীতি গ্রহণের প্রস্তাব দেন। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন)
কর্মজীবনে ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন। একই বছর ঢাকা হাইকোর্টের বিচারক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের কৌঁসুলি স্যার টম উইলিয়ামস ঢাকায় এলেন, তখন বিচারপতি মোর্শেদ টম উইলিয়ামসের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর ও উপদেষ্টা হলেন। যেদিন তাদের দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়- বিচারপতি মোর্শেদ উইলিয়ামসকে উদ্দেশ করে বিনয়ের সাথে বলেছিলেন, এ মামলায় আমি আপনার সহকারী হিসেবে কাজ করে যাব। উইলিয়ামস উত্তর দিয়েছিলেন একজন প্রধান বিচারপতি সবসময়ের জন্যই প্রধান বিচারপতি থাকেন। সুতরাং সে হিসেবে আপনি আমার উপদেষ্টা হিসেবেই কাজ করবেন। যতদিন উইলিয়ামস ঢাকায় ছিলেন, ততদিন তার সাথে বিচারপতি মোর্শেদের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে অনেকবার বৈঠক হয় এবং সবসময়ই বিচারপতি মোর্শেদকে উইলিয়ামস প্রধান বিচারপতি বলেই সম্বোধন করতেন। বিচারপতি মোর্শেদের জ্ঞান ও আইনের শাসনের প্রতি অনুরাগ দেখে উইলিয়ামস বহুবার প্রশংসা করেছেন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও তিনি রাজনীতিবিদদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।পরবর্তী সময়ে অবশ্য ভগ্ন স্বাস্থ্যজনিত কারণে এবং সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দরুণ তিনি নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কঠিন পর্যায়ে বিচারপতি মোর্শেদ এগিয়ে এসেছিলেন একজন নির্ভীক সৈনিকের মতো। আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯৬৯) পুরো পাকিস্তানের যে ৩৫ নেতা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এই বৈঠকের সময় বিচারপতি মোর্শেদ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তা আমাদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারাসনে বসে তিনি স্বৈরাচারী সরকার এবং সামরিক আমলে যে সিদ্ধান্ত ও রায় দিয়েছেন। শুধু যুক্তিতর্কই নয়, বলিষ্ঠ ভাষা ও তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের আইনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিচারপতি মোর্শেদ আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করতেন।

সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদের কর্মক্ষেত্র ছিল অনেক প্রসারিত। এ কারণে একপর্যায়ে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হন। বিচারপতি হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঐতিহাসিক ও সময়োপযোগী রায় দিয়ে স্বৈরশাসনের মধ্যেও আইনের শাসন সমুন্নত রাখেন তিনি। কিন্তু সত্তরের দশকের দমকা হাওয়ার সঙ্গে কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। যে মর্যাদাবোধের কারণে ৬৭ সালে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেই একই কারণে জীবনসায়াহ্নে আপনগৃহে নিজেকে তিনি গুটিয়ে রেখেছিলেন। বিবেকের যন্ত্রণায় কতখানি ক্লিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন তিনি তার নীরব সাক্ষী তার জীবনের শেষ দিনগুলো। ১৯৭৯ সালে ৩ এপ্রিল সবার অলক্ষ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এই মনীষী পুরুষ। বিচারপতি মোর্শেদ আজ জীবিত নেই। কিন্তু তিনি যে বিশাল প্রত্যয় মূল্যবোধ এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংগ্রামী অবদান রেখে গেছেন, তা আমাদের সামনে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেশের মানুষকে যুগ যুগ ধরে অনুপ্রাণিত করবে। শুধু বিচারক হিসেবেই নন, দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তিনি যে ভূমিকা পালন করে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ এই মনীষীর ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী। উপমহাদেশের স্বনামধন্য আইনবিদ বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: উপমহাদেশের স্বনাম ধন্য ব্যাক্তিকে আজই প্রথম চিনলাম।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

বাচ্চা আদমি তালিয়া বাজাও !!
বোধ হয় আজপর্যন্ত তার নামও
শুনেন নাই। কেয়া বাত হ্যায় !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.