নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস "অরোরা টাউন" পর্ব ৮-নুরুন নাহার লিলিয়ান।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২




ধারাবাহিক"অরোরা টাউন"
পর্ব ৮
নুরুন নাহার লিলিয়ান

এপ্রিল মাস। নির্মল নিস্তব্ধ আকাশ। প্রানবন্ত একটি কর্মচঞ্চল দিন। চারিদিকে সোনাঝোরা রৌদ্ররশ্মি। অদ্ভুত পরিচ্ছন্ন পরিবেশন।স্নিগ্ধ হীম বাতাস পরিবেশটাকে আরো বেশি রোমাঞ্চিত করেছে। প্রকৃতির প্রেম আর প্রাথর্না যেনো
একাকার হয়ে গিয়েছে।মুসলিম, হিন্দু আর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রাধান্য কম থাকলেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম নিয়ে টেম্পল গুলোতে আয়োজনের কমতি নেই।যদিও নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগ ধর্ম পালনে সময় নেই।
তবুও কেউ কেউ এই পৃথিবীর কিছু নিয়ম আঁকড়ে বেচেঁ থাকে। কারও কারও মনে ধর্মের বিশ্বাস এখনও আছে। ছুঁটে চলা মানুষ গুলোর দিকে তাকালেই মনটা কেমন হয়ে যায়।! রাস্তার দুপাশের বরফ স্তুপ গুলো একটু একটু গলতে শুরু করেছে।
হোক্কাইডোর আকাশে বরফের রংধনু যেনো কোথাও হারিয়ে গিয়েছে।চারপাশের নি:স্তব্ধ সৌন্দর্য মনটাকে কেমন গভীরভাবে বরফ ছোয়াঁ দিয়ে যায়।

হাজারো কথার ভিড়ে নিজেকে খুজঁতে খুজঁতে হঠাৎ কারও মোবাইলের শব্দে মনটা ফিরে এলো।
মোবাইলে চন্দনা জিজ্ঞেস করলো, "আপু কেমন আছেন?"
অরুনিমা উত্তর দিলো," ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো? "
চন্দনা ফের জিজ্ঞেস করলো," কালকে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান কোথায় হবে জানেন?"
অরুনিমা বলল," না। জানা হয়নি। "
চন্দনা ফের জিজ্ঞেস করলো, "আপু সোয়েনের প্রোগ্রাম হল ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আপনি কি ড্রেস পড়বেন? "
অরুনিমা ও জানতে চাইলো," ওহ! আসলেই বলেন তো কি শাড়ি পড়তে পারি? "
চন্দনা বলল," আপু আমরা মেয়েরা সবাই শাড়ি পড়বো। যদিও বাইরে হালকা শীত থাকবে। "
অরুনিমা আন্তরিকতা নিয়ে বলল," আমি যে কি পড়বো। শাড়ি পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু একা একা তো পড়তে পারবো না।"
চন্দনা বলল," আপু ইচ্ছে করলে আপনি অনুষ্ঠানের এক ঘন্টা আগে আমাদের সোয়েনের বাসায় চলে আসতে পারেন। বাইরে শীত থাকবে। অনেক ভাবিরাই সোয়েনে এসে শাড়ি পড়বে।"
কথাটা শুনে অরুনিমা বেশ খুশি হয়ে গেলো। তারপর বলল," তাহলে তো খুব ভালো। আমার একটা লাল শাড়ি আছে।তবে সোয়েন এখনও ভালো করে চিনি না "
চন্দনা বলল," আপু আপনি সোয়েনের কাছাকাছি এসে মোবাইল করলে আমরা আপনাকে বাসায় নিয়ে আসবো।"
অরুনিমা আন্তরিকভাবে বলল,"অনেক ধন্যবাদ। সবকিছু অনেক সহজ করে দিলেন।"

চন্দনা মেয়েটি এমনিতেই মিষ্টি। সহযোগীতামূলক মনোভাব দেখে খুব ভালো লাগলো। পৃথিবীতে একটি জীবন অথবা মানুষকে ভেঙে ফেলার পথ অনেক। কিন্তু সহস্র মানুষের পৃথিবীতে হৃদয়ের আত্ম চিৎকার শোনার মানুষ পাওয়া যায় না। একটি মানুষের সাথে আরেকটি মানুষ যুগ জীবন যাপন করলেও কারও অসহায় হৃদয়টা ছুয়েঁ দেখতে জানে না অনেকে।
মানুষের ভিতরের সৌন্দর্য কিংবা সুন্দর মানুষটাকে সবাই লালন করতে পারে না।কঠিন জীবনের পথে একটু ভালোবাসা আর সহযোগীতা মনকে অনেক বেশি আবেগ আপ্লুত করে তোলে । বিচিত্র পৃথিবীতে সব নতুন একদিন পুরনো হয়। মানুষের মনের ভিতরকার সুখ দু:খের অনু্ভূতি গুলোও নানা রকম রূপ নেয়।বেচেঁ থাকার পথে আর বাস্তবতার কাছে সব আবেগই হয়তো তুচ্ছ। তবুও ব্যক্তিগত কিংবা জাতিগত কিছু আবেগ মানুষ ধরে রাখতে শিখেছে। নিজেদের অস্তিত্ব কে জানতে শিখেছে।

তাই পৃথিবীর সকল দেশেই প্রবাসিরা নিজ দেশের সংস্কৃতি চর্চা এবং প্রধান উৎসব গুলো পালনে পিছিয়ে নেই।
অরুনিমা আজকে ল্যাবের সব কাজ গুলো একটু তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিলো। বাংলাদেশে আজকের এই ১৪ এপ্রিল দিনটি সরকারি ছুটি থাকতো।
কিন্তু নিজস্ব আবেগ অনু্ভূতি থেকে কোন মানুষই পালিয়ে যেতে পারে না। তাই সকল ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা, লোকাচার তুলে ধরা।

সোয়েনে চন্দনার বাসার কাছাকাছি এসেই অরুনিমা মোবাইলে কল দিলো। এখানে গুলো বিল্ডিং এবং অনেক ধরনের বাসা। কিছু আছে ফ্যামিলি বাসা এবং কিছু আছে কাপল বাসা।সব বাসা গুলো বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে নানা রকম ফার্নিচারে সাজানো থাকে। তবে এই ফার্নিচার গুলো ব্যবহার করার অধিকার থাকলেও কেউ এগুলো নিয়ে যেতে পারবে না।

বাসা ছেড়ে যাওয়ার সময় সব ফেলে যেতে হবে। নতুন যারা আসবে তারা ব্যবহার করবে। জাপানিদের এই যে নিয়ম আর ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো রেখেছে পুরো পরিবেশ।
অরুনিমার পুরো ব্যাপারটা ভালো লাগলো। চন্দনার বাসাটাও বেশ গুছানো। দুজনের সংসার একদম নিভৃত সৌন্দর্য ছুয়েঁ ছুয়েঁ যাচেছ। চন্দনা বেশ আন্তরিক।
রুমে ঢুকতেই অরুনিমা কে বেশ আপন মানুষের মতো হাত ধরে সোফায় বসালো ।
তারপর জিজ্ঞেস করলো, " আপু কি রংয়ের শাড়ি এনেছেন? "
অরুনিমা শাড়ি সামনে ধরে বলল," এই দেখো লাল রংয়ের। সাথে হালকা সাদা রং আছে। এটা হবে তো? "
চন্দনা হেসে দিলো। তারপর বললো,"খুব সুন্দর শাড়ি। আপনাকে মানাবে। "
অরুনিমা ফের জিজ্ঞেস করলো,"বাকি সবাই কোথায়?"
চন্দনা উত্তর দিলো, " কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই চলে আসবে।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আবার শেষ ও হবে। তো সবাইকে সসয় মেনে চলতেই হবে। অনেকে আবার শর্মিলা ভাবির বাসায় পড়বে। কেউ কেউ একাও আসতে পারে।"

অরুনিমা জিজ্ঞেস করলো, " শর্মিলা ভাবির বাসাটা কোন বিল্ডিংয়ে? "
চন্দনা বারান্দার দরজাটা খুলে সামনের বিল্ডিংটা দেখিয়ে দিয়ে বলল," ঐ বিল্ডিংয়ের দুতলায় থাকে। ওনারা ফ্যামিলি বাসায় থাকে। ওনাদের বাচ্চা আছে তাই। "
অরুনিমা আর চন্দনা কথা বলতে বলতে আরো কয়েকজন চলে এলো। এদের মধ্যে সোনালী, আহিলিয়া, ছন্দা। সবাই বেশ চঞ্চল আর প্রানখোলা।

আহেলিয়া আন্তরিকতা নিয়ে কাছে এসে জানতে চাইলো, " এই আমাদের নতুন পরিচয়।আপনি কি আপু নাকি ভাবি?"
অরুনিমা হেসে দিয়ে বলল," বুঝলাম না। "
সোনালি বলল," এখানে যারা বিবাহিত তাদের সবাইকে ভাবি বলেে।আর যারা সিঙ্গেল এসেছে তাদের সবাই আপু বলে। আমি যেমন ম্যারিড সিঙ্গেল। হা হা হা। "
অরুনিমা মুখে মুচকি হাসি নিয়ে কপাল কুচকালো। তারপর কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলো, " আসলে মানেে কী?"

সোনালি মজা করতে করতে বলল," যেসব মহিলারা বিবাহিতা। কিন্তু বররা দেশে আছে।। তারা একা একা এখানে পড়াশুনা করছে তাদেরকে অনেকে দুষ্টামি করে ম্যারিড সিঙ্গেল কিংবা ম্যারিড ব্যাচেলর বলে। "
আহিলিয়া সুর মিলিয়ে বলে, " শুধু মহিলাই নয়। অনেক পুৃরুষ ও ম্যারিড ব্যাচেলর আছে। যাদের ওয়াইফরা বাংলাদেশে।"
সোনালি বলল," দুই পক্ষের দীর্ঘ শিক্ষা জীবন। খুব কষ্টে কাটে। "
চন্দনা বলল," এই অরুনিমা আপু কিন্তু পারফেক্ট সিঙ্গেল।"
আহিলিয়া উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো, " আপনি কবে এসেছেন? আপনাকে এই প্রথম দেখলাম। "
অরুনিমা বলল," কয়েক মাস তো হবে। বাংলাদেশি কমিউনিটি সম্পর্কে জানা ছিলো না।"
সোনালি জানতে চাইলো, " আপুর পুরো নাম কি?"
অরুনিমা আন্তরিকতা নিয়েই বলল,"অরুনিমা আযাদ।পুরো অর্থ হলো গোলাপি আভা এবং স্বাধীন। একজন মানুষের দুটি ভিন্ন নাম। তবে আযাদ আমার বাবার নামের অংশ। "
সোনালি বলল," দুটি অর্থই সুন্দর। ভিন্ন দুই শব্দ নিয়ে এজন মানুষের নাম। ভালো লাগলো। "
সবার কথাবার্তার মাঝেই চন্দনা চা নিয়ে এলো। আহিলিয়া সামনে গিয়ে চায়ের কাপ নিতে নিতে ছন্দা কে বলল," তুমি আজকে এতো চুপচাপ কেনো?"
ছন্দা বলল," তেমন কিছুনা। ভাবছি শাড়ি পড়বো। নাকি সালোয়ার কামিজ পড়বো। "
আহিলিয়া জানতে চাইলো, " কেন কি সমস্যা?"
ছন্দা একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলল," কমিউনিটিতে একজন আরেকজন কে নিয়ে অনেক সমালোচনায় মত্ত থাকে।আমি মোটা মানুষ।তাই একটু ভয়ে থাকি। কেনো না সবার চোখই কম বেশি মারাত্মক। "
সোনালি বলল," আরে এসব ছাড়ো তো। সমালোচনা ছাড়া মানুষ আছে!! সবাই সবার নামেই একটু আধটু কথা বলে। তুমি তোমার ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলবে। "
আহিলিয়া একটু মজা করে বলল," সমালোচনা ছাড়া জীবন জমে উঠে না। কখনও কখনও সমালোচনা ছাড়া জীবনে সমৃদ্ধি ও আসে না। "
অরুনিমা হঠাৎ বলল," আমারও একটু অস্বস্তি লাগছে। এই প্রথম বাংলাদেশি প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করতে যাচিছ। "
চন্দনা বলল," আপু বাংলাদেশি সবাই অনেক মিশুক। ধীরে ধীরে সবার সাথে মিশে গেলে ভালো লাগবে। "
খুব অল্প সময়ের মধ্যে সবাই শাড়ি পড়লো। তারপর চন্দনার বাসা থেকে নিচে এলো। পুরো সোয়েনের সব গুলো বিল্ডিংই খুব সুন্দর ডিজাইনের। সব কয়টাই বিদেশি শিক্ষার্থী, রিসার্চার এবং প্রফেসরদের জন্য আলাদা ভাবে বরাদ্দকৃত।ছিমছাম সুন্দর পরিবেশ। খুব নিয়মশৃঙ্খল ভাবে সব বিল্ডিংয়ের তদারকি চলে। প্রায় বিকেলে বাংলাদেশি ভাবিরা একেক জনের বাসায় চা পার্টি করে। নিজেদের সুখ দু:খ আনন্দ কান্না ভাগাভাগি করে নেয়।

প্রোগ্রাম হলে যেতে অরুনিমা চারপাশের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলো।
তারপর বলল,"এখানকার পরিবেশটা খুব পরিচ্ছন্ন। সবাই কি সুন্দর নিয়ম মেনে চলে।"
আহিলিয়া বলল," আপু আমরা বাংলাদেশিরা নিজ দেশে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলি। থুথু কফ কোন বাছ বিচার করি না। কিন্তু এখানকার কঠিন নিয়ম বাংলাদেশিরাও মানতে বাধ্য।"
ছন্দা বলল," আমাদের দেশে কঠিন নিয়ম প্রয়োগ হলে বাংলাদেশিরা মেনে নিতে বাধ্য হতো। আইনের কঠিন প্রয়োগ জাপান দেশটাকে কতো সুন্দর রেখেছে। "
সবার সাথে সোনালি ও বলল," প্রোগ্রামটা দেখবেন সঠিক সময়ে শুরু হবে। আবার সঠিক সময়ে শেষ ও হবে।পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জাপানিরা কোন সমঝোতা করে না। "
অরুনিমা বলল," ভালো কোন কিছুর ব্যাপারে সমঝোতা না করাই উচিত। দেশ,জাতি ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে কঠিন আইনে প্রয়োগ ও যথাযথ ব্যবহার দরকার।"
ছন্দা বলল," নিয়ম এবং দেশপ্রেম আছে বলেই কেমন সুশৃঙ্খল ভাবে দেশটা এগিয়ে যাচেছ। "

প্রশান্ত মহাসাগর আর জাপান সাগরের গর্ভে জেগে উঠা হোক্কাইডো দ্বীপ। আজ সেখানে বাংলা ভাষাভাষীরা নিজেদের অস্তিত্বের ধ্বনি তুলেছেচ।বঙ্গ ললনারা স্বাধীন চিত্তে দেশিয় ঢংঙে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। অরুনিমা খুব মনোযোগ সহকারে পুরো পরিস্থিতি লক্ষ্য করতে লাগলো।

সবাই ধীর পায়ে প্রোগ্রাম হলের দিকে গেলো। তখন বাইরে হীম হাওয়া।জাপানের বিলাসি সূর্য অনেক আগেই অস্তমিত হয়েছে।
প্রোগ্রাম হলে ঢুকেই অরুনিমা বিস্মিত হলো। ভেতরে প্রচুর বাংলাদেশি। প্রায় ষাট সত্তরটা ফ্যামিলি। ছোট ছোট কাগজে শুখ নববর্ষ লেখা পোষ্টার দিয়ে সাজানো।প্রোগ্রাম হলের ভেতরের এক কোনায় অনেক রকম বাংলাদেশি খাবার দিয়ে বুফে স্টাইলে সাজানো। ইলিশ মাছ,পোলাও, সাদা ভাত,পায়েস,মুরগির রোষ্ট , গরু ভুনা, খাসির মাংসের কিমা, কই মাছ,রুই মাছ দু পেঁয়াজো, আইসক্রিম,দুধের তৈরি ডেসার্ট, বাহারি রকমের ভর্তা, নানা জাতের ফল আর পানীয়।খাবার গুলো দেখে মনে হচেছ বাসা থেকে রান্নাকরা। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। পরিচিতি পর্বের পর বিভিন্ন রকমের মজার মজার আয়োজন হলো। কোন কোন ভাবি গান গাইলো। কেউ কেউ ছড়া অথবা কবিতা আবৃত্তি করলো। আবার কেউ জাপান জীবনের প্রথম মজার অভিজ্ঞতা বনর্না করলো। এরপর বাঙালিয়ানায় খাওয়াপর্ব।

খাবার তৈরিতে অনেক ভাবিই অংশগ্রহণ করেছেন। তারাও খাবার তৈরি করতে গিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা তা বিনোদন সহকারে প্রকাশ করলো।
তারপর কমিউনিটি থেকে নানা রকম স্বাদের খাবার তৈরি করার জন্য সব ভাবি আর আপু কে ধন্যবাদ জানানো হলো।

সবাই বেশ আন্তরিকতা নিয়েই আনন্দ উপভোগ করছিলো। অরুনিমার পুরো প্রোগ্রামটা বৈচিত্র্যময় লাগছিলো। একটা ভালো লাগা ভিতরে কাজ করলেও কিছু কিছু ব্যাপার বেশ চোখে পড়লো।
কেউ কেউ খুব ছোট বিষয় এবং মানুষকে নিয়ে সমালোচনায় মত্ত।
অরুনিমার পাশেই বসা এক ভাবি ছন্দা কে জিজ্ঞেস করছিলো, " আজকে পিংকি কে দেখলাম না? "
ছন্দা স্বাভাবিক ভাবে বল," আজকে পিংকির মনেহয় রেস্তরাঁয় পার্টটাইম কাজ আছে।তাই হয়তো আসতে পারেনি "
শর্মিলা ভাবি এই কথা শুনে চোখ কপালে তুললো।তারপর বাকাঁ ভাবে বলল,"যাক বাবা সবাই তো আর হোটেল রেস্তরাঁয় কাজ করতে পারে না। তবে অনেক জাপানি ইয়েন বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে। "

তার এমন তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলাটা অরুনিমার কানের কোথায় গিয়ে যেনো বিধঁলো। অরুনিমা ও ঠিক এমনই পার্টটাইম খুজঁছে। মনের ভেতরটা কেমন সংকুচিত হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো সবাই তাহলে এখানে পার্টটাইম কাজ করাটাকে ভালো ভাবে দেখে না। কেউ কেউ শর্মিলা ভাবির মতোই বাজে মন্তব্য করে। এই রকম নানা চিন্তা মনটাকে বিমর্ষ করে দিলো। এরপর অরুনিমা ভদ্রমহিলার কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বসলো। ছন্দা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। চুপচাপ অরুনিমার কাছে এসে বসলো।
তারপর শান্তভাবে বলল," এখানে অনেক ভাবি এবং ভাইরা ল্যাবের পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে। অনেকে হিংসা করে তাদেরকে ছোট করার জন্য সমালোচনায় মেতে থাকে।"
অরুনিমা সিরিয়াস ভঙ্গি তে বলল," অবসরে অন্যকে নিয়ে সমালোচনা না করে পার্টটাইম কাজ করে দুটো পয়সা রোজগার খারাপ কিছু নয়। বরং কাজকে সম্মান আর পরিশ্রমের মানসিকতা মানুষকে সফল করে। "

দুজনের কথার মাঝেই প্রোগ্রাম সমাপ্ত হয়ে গেলো। শিক্ষিত সমাজের মানুষ গুলো যখন এমন হীন মানসিকতা হয় তখন সমাজ গঠনের ভিত্তিটা একটু নড়বড়েই থেকে যায়। অরুনিমা আর বেশি কথায় না গিয়ে সাধারনভাবে সবার কাছে বিদায় নিলো।। মনে মনে এক ঝাঁক বিরক্তি আর ঘৃনাকে সঙ্গী করলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.