নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস "অরোরা টাউন"১৭(শেষ পর্ব)-নুরুন নাহার লিলিয়ান

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৩




উপন্যাস "অরোরা টাউন"
পর্ব ১৭
নুরুন নাহার লিলিয়ান

বিয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ থেকে মা বাবার অনুমতি পেতে একটু কষ্ট হলো। তারপরও জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন এবং গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তটি নিতে হল নিজ দায়িত্বে। অরুনিমার প্রিয় অরোরা টাউনের রেস্তরাঁর চাকরিটা ছেড়ে মারুয়ামা পাহাড়ের একটি ইংরেজি স্কুলে চাকরি নিলো। সপ্তাহে দুইদিন করে স্কুলে যেতে হবে। সামনের বছরের মার্চ মাস থেকে পিএইচডির কাজ শুরু হবে। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কাজটাও করে ফেললো। অক্টোবরের এক শান্ত আর আনন্দময় রবি বারে বিয়ের দিন ঠিক হলো।

বাংলাদেশ কমিউনিটির সব সিনিয়র ভাই এবং ভাবিদের মতামত নিয়ে সাপ্পোরো মসজিদে বিয়ে পড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো। বাংলাদেশ থেকে লাল জামদানী এবং নাদভির জন্য শেরওয়ানি আনা হলো। দুজনে মিলেই টুকটাক বিয়ের বাজার যা যা লাগে অনলাইনে কেনা কাটা করলো। কিছু কিছু শপিং নাদভি টোকিও থেকে নিয়ে এলো। একটু একটু করে চোখের সামনে জীবনের গল্পটা পাল্টে গেল।টোকিও থেকে আসা নাদভির কিছু বন্ধু আর সাপ্পোরোর বাংলাদেশ কমিউনিটির সবার উপস্থিতিতে বিয়ের সাধারন অানুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হল।

বিয়ের দিন একজন মিসরীয় মুসলিম উপহার হিসেবে সবার মধ্যে খুরমা এবং মিষ্টি বিতরন করলো। নব দম্পতির জন্য মোনাজাত করে দোয়া করা হলো। পুরো প্রোগ্রাম স্কাইপির মাধ্যমে বাংলাদেশের আত্মিয় স্বজন , টোকিওর বন্ধুরা,বাবা মা সহ সবাই সরাসরি উপভোগ করলো। খুব সাধারন একটা বিয়ে। কিন্তু নিশ্চিত ভাবে একটি অসাধারন সিদ্ধান্ত। কমিউনিটির সকল বন্ধু এবং পরিচিতদের আন্তরিক সহযোগীতায় একটি অসাধারন ভালোবাসার গল্প শুরু হলো।

মসজিদে বিয়ের পর সবাই হিগাসিকুতে ময়রিনুমা পাহাড়ের উপরে একটা ইন্ডিয়ান রেস্তরাঁয় হালাল খাবারের আয়োজন করলো।
এই ডিজিটাল যুগে এমন একটি আশ্চর্যজনক বিয়েতে উপস্থিত থেকে সবার মধ্যেই কৌতূহল আর আনন্দ বয়ে যাচেছ । সবাই নিজেদের মতো করে উপভোগ করছে।এদিকে ময়রিনুমা পাহাড়টায় স্নিগ্ধ শরতের রূপে হিল্লোলিত অপরূপ প্রকৃতি। সেই সাথে অরুনিমা আর নাদভির বিয়ে যেন সবার মধ্যে আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে এনেছে।

চার ঋতুর দেশ জাপান। প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি আলাদা আলাদা রূপ নেয়।শান্ত স্নিগ্ধ আর কোমল রূপে নব যৌবন নিয়ে শরৎ আসে হোক্কাইডো আইল্যান্ডে। হোক্কাইডো আইল্যান্ডে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টা শরৎ উৎসব থাকে। সহস্র রঙে গাছের পাতারা সাজে বর্নিল রূপে। হলুদ, খয়েরি, সবুজ আর লালের বিভিন্ন রঙে প্রকৃতি নতুন ভাবে আবির্ভূত হয়। গাছের পাতারা ঝড়ে গিয়ে পথ প্রান্তর রঙিন গালিচা সাজায়।দ্বীপ দেশ জাপানের পাহাড় গুলো প্রকৃতির রঙিন ঘোমটা নিয়ে জেগে উঠে।

শীত কালের কাপুনি, গ্রীষ্মকালের ঝড় বৃষ্টি আর গরমের দাবদাহ ভুলে শরৎ আসে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।বাংলাদেশের শরৎ কালের সৌন্দর্যময়তাও অরুনিমার মনের কোথাও উঁকি দিয়ে যাচেছ। এতো মানুষের মাঝে পাশে বসা জীবন সঙিগ কে ঘিরে জ্যোৎস্না প্লাবিত রাত জাগা স্বপ্নের শিহরণ বয়ে যাচেছ মনে। অরুনিমা বাইরের পৃথিবীতে তাকায়।সোনাঝোরা আকাশে মেঘেদের ভালোবাসার লুকোচুরি। পাহাড় গুলো তৃনপল্লবে নানা রঙের আল্পনা এঁকেছে।

এমন আলোকোজ্জ্বল ঝলমলে শরৎ রহস্যময় জ্যোৎস্না পুলকিত রাত্রিকে ডাকছে কেবল অরুনিমার জন্য।সে জ্যোৎস্নাময় রাতের টানে অরুনিমার মন মাতোয়ারা হয়ে উঠে।পেছনে ফেলে আসা ধূসর অতীতে এমনই প্রকৃতির উদারতা আর প্রকৃতি প্রেমিক কবিদের সৃষ্টি শীল অনু্ভূতিতে নতুন জীবন খুজেঁছে। নিভৃত প্রকৃতি কাউকে নিরাশ করে না।

যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা শরৎ কালকে অনুভব আর প্রকাশ করেছেন নানা ভাবে। পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছেন "বিরহী নারী"
,মহাকবি কালিদাস বলেছেন "নব বধু" আর প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাস বলেছেন শরৎ কাল প্রকৃতির নতুন যৌবন বিকশিত করে। উপরে আকাশ, নিচে মাটি আর চোখের সামনে ফুল। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যময়তায় নিজের মন হারিয়ে গেলো। নিজের জীবনের ধূসর অতীতটাও অস্পষ্ট হয়ে এলো।

একদিন জীবনের নিয়মে সব মানুষকেই বাধাঁ পড়তে হয়। আর এভাবেই পাল্টে যায় জীবনের গল্প। অরুনিমা একদম বিশ্বাস করতে পারছিলো না। এতো সহজে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোকে। জীবনের কঠিনতম সত্যের মধ্যে থেকেও বড় বেশি দ্বন্দ্ব মনের কোথাও উথাল পাথাল করছে।
অরুনিমার বুকের ভিতরকার অন্ধকার নদীটা স্পন্দিত হচ্ছিল। তবুও চোখের কোনায় পরম আদরে জমে থাকা বিশ্বাস আর ভালোবাসার বরফটা গলতে শুরু করলো।

গতবছর এই সময়টাতে অরুনিমা এই শহরে কতোটা নিঃসঙগতায় ডুবে ছিলো। প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবনটাও পাল্টে গেছে।
অরুনিমা আর নাদভির নতুন জীবন নিয়ে অনেক পরিকল্পনা। টোকিও ফিরে পুনরায় পরিবারের সাথে বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা। তারপর বাংলাদেশে ফিরে আরও একবার আত্মিয় স্বজনদের সাথে নতুন জীবনের আনন্দ উপভোগ করা।
অরুনিমার ভীষন অদ্ভূত লাগলো নিজের জীবনের গল্পটা। প্রথম সোয়েনে বাংলাদেশি পরিবার ওয়াহিদ এবং শর্মিলা দম্পতির বাসায় বাসর হলো। বাংলাদেশিদের চিরন্তন সুন্দর রূপ হলো সকল ভালো মন্দের মধ্যে দলবেঁধে একত্র থাকা।একজন আরেক জনের পাশে থাকা। মানুষের প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষন হলো সুন্দর একটা সম্পর্ক। পারস্পারিক ভালবাসা আর সহযোগীতা সমাজ, দেশ এবং রাষ্ট্র কে সুন্দর রাখে।মানুষের ভিতরের ভালোবাসা মানুষকে বাচিঁয়ে রাখে। নাদভির ভালোবাসায় অরুনিমার জীবনটা রঙিন হয়ে উঠলো বদলে যাওয়া সময়ের নিয়মে।

এদিকে অরুনিমা নিজের সব কিছু গুছিয়ে নিলো। আজ নাদভির সাথে প্রথমবারের মতো টোকিও যাবে।সোজা সাপ্পোরো শহর থেকে ছিঁতোশ এয়ারপোর্ট। তারপর আরও আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।এয়ারপোর্টে পৌছে দিতে ওয়াহিদ ভাই আর সাজিদ ভাই ও এলো।

সবকিছু এতো সুন্দর হবে অরুনিমা ভাবতেও পারেনি। চারদিকে ফুরফুরে বাতাস। একটা গোপন ভালোবাসার ঘ্রান বিমোহিত করে রেখেছে।

এয়ার এশিয়া প্লেনের জানালার কাছেই অরুনিমা এবং ডান পাশে নাদভি।মেঘের উপর মেঘ ভেসে যাচেছ। নাদভি আর অরুনিমা মেঘ ছুয়েঁ ছুয়েঁ উড়ে যাচেছ আকাশের খুব কাছে। অনেকক্ষন দুজন শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর প্রানভরে নিশ্বাস ছেড়ে নাদভি খুব গভীর ভাবে অরুনিমার দিকে তাকালো। ওর বাম হাতটা নিজের বুকের কাছে পরম যত্নে রাখলো। তারপর আকাশ জুড়ে ভেসে যাওয়া মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কবি শেলির কবিতা বলতে লাগলো -

True love differs in this from gold and clasy
That to divide is not to take away.

অরুনিমা কবিতার শব্দে ভালোবাসায় সিক্ত হলো। তারপর নাদভির বুকে মাথা রাখলো পরম আদরে আর ভালোবাসায়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
এবারও পরে ভালো লেগেছে আপা।

ভালো থাকুন।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

আহা রুবন বলেছেন: বেশ! পড়া শুরু করলে আগ্রহ জন্মে। পাঠককে ধরে রাখতে জানেন।

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৭

শাব্দিক হিমু বলেছেন: ভালো লিখেছেন। চলতে থাক। শুভ কামনা।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: এটা আপাতত এখানেই শেষ।বই মেলায় এর চেয়ে বড় করলে কেউ বই কিনবে না। ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৯

শাব্দিক হিমু বলেছেন: কোন প্রকাশণী?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: শিখা প্রকাশনি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.