নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ৯ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:২৩


গোপনে সে আমায় ভালোবাসে ৮ -নুরুন নাহার লিলিয়ান
গোপনে সে আমায় ভালোবাসে-নুরুন নাহার লিলিয়ান
পর্ব -৯
সে সব দিনগুলোতে ফিরে গেলে ক্লান্ত হয়ে যাই।
সে সব দিন গুলো আমাকে ভয়ংকর ভাবে টেনে নিয়ে যায় অন্য কোন এক জগতে।আমার কোন কাজেই মন বসে না। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। বুকের ভেতরটা অসাড় হয়ে থাকে। এই জীবনটা অর্থহীন মনেহয়৷ যখন নুশমা আর নিশো আমাকে জড়িয়ে ধরে মনেহয় কেন এই জীবন অর্থহীন হবে।
আমি একজন মা। একজন মায়ের একটা গোপন প্রেম থাকতে পারে। একজন মায়ের ভাল লাগা মন্দ লাগা থাকতে পারে। একজন মা কোন বাবার সহধর্মিণী হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সে ইচ্ছে করলেই সন্তানদের জীবন অনিরাপদ করে তুলতে পারে না।
একজন প্রকৃত মা সন্তানের মুখের হাসির জন্য সব ভুলে যেতে পারে।
আমার প্রায়ই কষ্ট ছাপিয়ে উঠে। নুশমাকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে করতে কেঁদে ফেলি।
আমার মেয়েটা আমার কান্না শেষ না হওয়া অবধি চুপচাপ আমাকে জড়িয়ে থাকে। একদম নিশ্চুপ আমার কান্না শোনে।
তারপর আমার কান্না শেষ হলে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে, " আম্মু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি কখনওই তোমাকে কষ্ট দিব না। তুমি কান্না করোনা। "
আমি ওর মুখে ভালোবাসার কথা শুনে আবারও কেঁদে ফেলি।
ক্লাসে নাইনে পড়ার বয়সটাও ভীষণ আবেগে আপ্লুত হওয়ার। এই বয়সকে ঘিরে থাকে নানা অজানা আশংকা! ভালোবাসা পাওয়ার আর না পাওয়ার স্বপ্ন বিলাশ। থাকে আত্মমর্যাদা আর নিজস্ব অনুভূতির স্বীকৃতি পাওয়ার তীব্রতা!
তাই আমার ভেতরে যতো কিছুই ঘটুক আমি আমার বাচ্চা দুটোর কোন কিছু অপূর্ণ রাখিনা।
লৌহজং থাকাকালীন নুশমা পেটে থাকতে যখন আমি অসুস্থ হতাম পাশের ফ্ল্যাটের টাকিয়া ভাবি আমার খোঁজ খবর রাখতেন।
নামটা তাঁর অদ্ভুত আর অপ্রচলিত হলেও তিনি মানুষটা ছিলেন একদম সাদাসিধে। ভদ্র মহিলা আমাকে ভীষণ মায়া করতেন। কোয়াটারের প্রথম জীবনে আমার দিকে দেখতাম অবাক কৌতুহলে তাকিয়ে থাকতো। ভীষণ রকম কৌতুহল ছিল তাঁর চাহনিতে। ছাঁদে কাপড় শুকাতে গেলে তিনি আমার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতেন।
সহজ অঙ্গ ভঙ্গিতে সরল অভিব্যক্তি প্রকাশ পেতো। আমাকে নানা রকম ভাল মন্দ কুশলাদি জিজ্ঞেস করতো।
আমিও খুব সহজ ব্যবহার করতাম। কোন রকম জটিলতা করতাম না।যেন তিনি আমার সাথে সহজেই নিজের মনের কথা গুলো বলতে পারেন।
কাপড় শুকাতে দিয়ে আমরা দু'জনেই পদ্মা নদী আর নদীর অপর পাড়ের চরের লোকজন দেখতাম।
নদীর মধ্যে মাছ বেচাকেনা, জুয়াখেলা সহ কত কিছু হয় তা নিয়ে গল্প করতাম।
টাকিয়া ভাবির তখন তিনটি মেয়ে কোন ছেলে হয়নি। তাঁর ছেলে হয় না বলে তাঁর সংসারে খুব কষ্ট! স্বামী কিছু না বললেও সমাজ ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলে।
তিন মেয়ের পর তার একটি ছেলে হয়েছিল। কিন্তু ফুসফুসে সমস্যা থাকার কারনে এক সপ্তাহের মধ্যে ছেলেটি মারা যায়।।তারপর থেকে টাকিয়া ভাবি ডিপ্রেশনে থাকে। তাঁর স্বামীর সাথে ভালোবাসার বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর জীবন যন্ত্রনার কারনে স্বামীকে আগের মতো পায় না কাছে এসব নিয়েও কষ্টে থাকতেন।
আমি টাকিয়া ভাবির কথা শুনে মুগ্ধ হতাম। কি অগাধ ভালোবাসা তাঁর স্বামীর জন্য।
তাঁর বেশিরভাগ কথাই থাকতো ভালোবাসার! স্বামীর সাথে প্রেম করার সুন্দর সময় গুলো নিয়ে। কেন জানি আমরা দু'জনেই ছাদে এলে আবেগপ্রবণ হয়ে যেতাম।।পুরো আবাসিক এরিয়াটা এতো সুন্দর করে গুছানো। চারিদিকে এতো সবুজ গাছপালা,ফুলের বাগান, সারি সারি সুপরিকল্পিত বিল্ডিং, স্কুল, মসজিদ, মাঝখানে পুকুর, পদ্মার অপার সৌন্দর্য! গ্রামীণ জনপদের সহজ সরল মানুষজন।একটা নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমার মন ছুঁয়ে যেত।
টাকিয়া ভাবির সাথে কথা বললে মন ভাল হয়ে যেত। স্বামীর সাথে তাঁর ভালোবাসা, বোঝাপড়া আর সম্মানবোধের গল্প যেকোন মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। পৃথিবীতে যে স্বামী স্ত্রীর সত্যিকারের সুন্দর সসম্পর্ক হয় তা তাদের দেখলে বোঝা যেত।
ভাবিকে ও তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন কম বেশি দোষ ধরতো, মানসিক নির্যাতন করতো, দমিয়ে রাখতো। কিন্তু ভাইয়া সব সময় তাঁর পাশে থাকেন।
কোন বিবাহিতা নারীর জীবনে যদি তাঁর স্বামীর ভালোবাসা থাকে তাহলে তার জীবনে আর কিছুর প্রয়োজন হয়না।
পৃথিবীতে অনেক ভাল মানুষ, সুখী মানুষ আর সুন্দর মনের মানুষ আছে বলেই পৃথিবী তাঁর ভৌগোলিক পরিমণ্ডলে ঠিক আছে।
যদি মানব সমাজ থেকে মানুষের প্রতি মানুষের সামান্য ভালোবাসাটুকু ফুরিয়ে যেত তাহলে পৃথিবীটা ও ধ্বংস হয়ে যেত। পৃথিবী কক্ষপথ আবর্তনের প্রয়োজন অনুভব করতো না।
অনেক সুন্দর কিছু পৃথিবীতে আছে।অনেক ভাল মানুষ ও আছে।
অনেক মাস আমরা একটা ভাড়া করা ছোট্ট বাসায় থাকি।
নদীর গর্ভ শান্ত হতে শুরু করে।পদ্মার বুকে স্রোতের গতি স্বাভাবিক হতে থাকে। নদী তীরে মানুষের চলাচল বাড়তে থাকে।
আসাদের অফিসের কাজকর্ম শুরু হয়। নিয়মিত অফিসে যায়। আরও কয়েক মাস পর যে চারটা বিল্ডিং টিকে গিয়েছিল কিছু শর্তাবলীর পূরণের মাধ্যমে পুনরায় মানুষ বসবাস করতে শুরু করে।
আমরা ও ফিরে এলাম।
সময় গড়াতে থাকে। ধীরে ধীরে আবার আমরা পুরোনো বাসায় থাকতে শুরু। আমাদের বাসা থেকে আব্বু ও শ্বশুর দুজনেই এই বাসায় থাকতে বারণ করেন।
কিন্তু আসাদ কেন জানি এই বাসায়ই ফের উঠল। কারন অনেকেই আমাদের মতো ফিরতে চাচ্ছিল। হঠাৎ করে অফিসের কাছাকাছি ভাল একটা বাসা সব সময় পাওয়া যায় না।আর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও
সবাইকে ভাবতে হয়।
নদীর তীর ঘেঁষে থাকা ঘৌড় দৌড় নামক গ্রামটা কয়েক মাসের মধ্যে কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।
যে পদ্মার অথৈজল ঘিরে মানুষের জীবনের আয়োজন সেই পদ্মাই তাঁদের সবার কাছে অভিশপ্ত হয়ে উঠল।যে দিকে দু-চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।
কোয়াটারে অনেক বিচিত্র ধরনের মানুষ,জীবনের গল্প, আর সেই সময়কার আমিকে খুবই মনেপড়ে।
আজকের আমি তো অনেকটা পরিপূর্ণ। আমার ছেলে মেয়ে দুটো বড় হয়ে গেছে। বলা যায় এখন আসাদ আমার সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার করলে ওরা আমায় শক্তি আর সাহস দেয়।
সামনে এগিয়ে চলতে ভরসা দেয়। একটা সময় ছিল যখন আমি আমার কোন আগামীকাল চিন্তা করতে পারতাম না। মনে হতো জীবন যেকোন মুহুর্তে থেমে যেতে পারে।আজকের দিনটাই আমার জন্য বরাদ্দ। অথচ কিভাবে যেন বিশটি বছর চলে গেছে জীবন থেকে।
একটা জীবনের কতো অর্থহীন অপচয়! ভালোবাসাহীন, অনুভূতিহীন, সম্মান আর আত্ম মর্যাদাহীন একটা অসহায় নারী কি অদ্ভুত ভাবে জীবন চালিয়ে নিয়েছে।
আমার মা বাবা প্রায়ই জানতে চাইতেন আমি কেমন আছি। কিন্তু আমার কেমন আছি বলতে গেলে তাঁদের কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হতো না। তাই কখনও মুখ ফুটে বলিনি।
আসাদের রাগ, অহংকার আর স্বেচ্ছাচারিতা সব সয়ে গেছে।
যখন এসব সইতে কষ্ট হতো তখনও মা বাকে বলিনি। আর এখনও তাঁরা এসব শুনলে সহ্যই করতে পারবে না।
একটি বিয়ে আমাকে অনেক পরিপক্ব করে তুলেছিল। বাস্তবতা দেখেছি নিজের জীবন দিয়ে।
আবার নতুন করে পুরোনো বাসায় বসবাস। নুশমা পেটে বড় হতে থাকে। সমস্ত কাজ এক হাতে করা৷ অনেক দিন কাজের লোকও পাওয়া যায়নি।
কারন লোকজন ভয়ে আর আতংকে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নানা জায়গায় চলে গেছে।
ধীরে ধীরে ঘৌড় দৌড় বাজার আবার ও জমে উঠে।
অভিনন্দন ও চেষ্টা করছিল ঢাকায় বদলি হয়ে যেতে।
নানা রকম প্রশাসনিক সমস্যার কারনে সেটা হচ্ছিল না।
আমি জানি আমাকে দেখার পর অভিনন্দন ও ভালো নেই। এখনকার সময়ের মতো সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে হয়তো আমাদের সম্পর্কটা এভাবে হঠাৎ শেষ হয়ে যেতো না।
এখনকার ডিজিটাল সময়ে আমরা মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে কতো রকম জায়গা পাই। কিন্তু সে সময়টায় ভাবনার খাতায়ই আমাদের মনের কথা গুলো লেখা বা জমা করা হতো। ভয়ে নিজের ডায়েরিতে লিখতেও সাহস হতো না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:৪১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

আমি এক সময় লৌহজং কলেজের মাস্টার ছিলাম।
জায়গাটার নাম ঘোড়া দৌড়।
দীঘলী নেই।
লৌহজং নামে প্রকৃতপক্ষে এখন আর কোন জায়গাই নেই্
কেবল উপজেলাটা লৌহজং নামে পরিচিত।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৫৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: উপন্যাসটা একটা কাল্পনিক উপন্যাস । এখানে বাস্তবতার সাথে মিল খোঁজা সময় ব্যয় । আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: আমার বাড়ি বিক্রমপুর। শ্রী নগর থানা।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জেনে ভাল লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.