নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনটা বড়ো বর্ণচোরা। সে নানা রকম বর্ণ ধারণ করতে খুব পটু। এই রঙ হলুদ,নীল, বেগুনী কিংবা আকাশী নয়, অদৃশ্য কিছু হাজার রকম রঙের ছুড়োছুড়ি এ মনে।।ফেসবুকের: অদ্ভুত মানুষ

মধ্যবিত্তের ছেলে

একজন অদ্ভুত মানুষ

মধ্যবিত্তের ছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৬

ছোট সময়টা আমার গ্রামেই কেটেছে। সাধারণ গ্রামের ছেলের মতই। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলাম। ব্যতিক্রমের মধ্যে, স্কুল পাগল ছিলাম খুব। পড়া লেখা করার খুব শখ ছিল। আব্বার স্বপ্ন আমি বড় হয়ে অনেক টাকার বেতনের চাকরি করব। এরপর আব্বার স্বপ্ন পুরণই যেন আমার স্বপ্ন ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় স্কুলে ভাল রেসাল্ট করে কলেজে ভর্তি হই। কলেজের ২টা বছর চোখের পলকে চলে গেলো। কলেজের রেসাল্ট দিয়েছে যেদিন সেদিন আম্মা রোজা ছিলেন। আমি পরীক্ষা চলাকালীন আম্মাকে বারবার বলতাম যেন, বেশি বেশি করে দোয়া করেন। আম্মা বাহিরের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন বুঝমান ছিলেন না বলে আমাকে বলতেন:
-- বাপ, পরীক্ষাত রেসাল্ট বালা ওইলে তুই চাকরি করবি এহনি ওতো ছুডু বয়সে??
-- আম্মা, ভাল রেসাল্ট করতে পারলে তোমার ছেলে একটা ভালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইতে পারব।
-- বিশ্ববি... কি কইসস??
-- বিশ্ববিদ্যালয়।
-- এইনো গেলে চাকরি দেয় রে বাপ??
-- না আম্মা, এইনে গেলে পড়ালেখা শেষ করতে পারমু। আর এইন থাইক্কা যদি একটা ভালা রেসাল্ট নিয়া বাইর হইতে পারি তাইলে একটা না একটা চাকরি নিশ্চিত হইব। তুমি খালি আমার লাইজ্ঞা দোয়া করবা। আমি যাতে বালা একটা রেসাল্ট করতে পারি।
-- আইচ্ছা, বাপ। তুই ওহন, খাইয়া পড়তে ব। আমি ভাত বাড়তাসি। যাক, বাবা মার দোয়ায় আমি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ভর্তির আগে আমাকে একজন শিক্ষক ভাইভাবোর্ডে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কেন এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাচ্ছি? আমি বলেছিলাম,
-- এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকগণ আমাকে খুব আদর করতেন। আমি গরিব ঘরের সন্তান বলে না, বরাবরই সাধারন মানুষের মত ব্যবহার কিংবা চলাফেরা ছিল আমার। সেই সঙ্গে তাদের শ্রদ্ধা করতাম। পরিশেষে ভাল রেসাল্ট করতাম। বিগত টানা ৩ বছর ডিপার্টমেন্টে ১ম কিংবা ২য় হয়েছি। শিহাব স্যার সব সময়ই ছিলেন আমার পথ প্রদর্শক। উনার দেওয়া রাস্তা অনুসরণ করা আমার প্রিয় ছিল। আমাকে মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখাতেন। বলতেন, আনিস তুই একদিন দেশের অনেক বড় সম্মানিত ব্যক্তি হবি।
[পড়াশুনা ছাড়া অন্যদিকগুলোর মধ্যে আরেকটা বিষয়টা ছিল]
পড়াশুনাতে যতটুকু মনোযোগী ছিলাম তার চার ভাগের ২ ভাগও আমি শায়লার প্রতি মনোযোগী ছিলাম না। নাজিরা হক শায়লা। ও আমার ২ বছর জুনিয়র। একই ডিপার্টমেন্ট। ভার্সিটিতে ডিবেট প্রতিযোগিতায় সে আমার সহযোগী ছিল। এর পর থেকেই সে আমাকে বলত:
-- আপনি এত স্পষ্টভাষী কিভাবে হলেন??(শ)
-- কি বললা? আমি ঠিক বুঝলাম না। (আ)
-- আহহা, এই যে আপনি কত সুন্দর করে ডিবেটে লেকচার দিন, তার কথা বলছি।
-- ও! এটা ত পুরোটাই ওই বিষয়ের প্রতি সম্পুর্ণ জ্ঞান থাকার উপর নির্ভর করে। তুমি যতটা জানো ততটা কিভাবে উপস্থাপন করবে তা সম্পূর্ণ তোমার উপর।
-- হ্যা, বুঝেছি। চলেন, এবার ট্রিট দিবেন আমাকে।
-- কি উদ্দেশ্যে?
-- ওমা! আপনার জন্য আজকে আমাদের টিম ভার্সিটিতে ১ম হয়েছে সেই উদ্দেশ্যে!!
-- শুধু কি আমার জন্যই?? তোমরা সাথে সাপোর্ট না দিলে কি পারতাম!!?
-- আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে আজকে আপনি ট্রিট দিচ্ছেন আর আমি আগামীকাল।
-- হা হা হা হা। আচ্ছা, এখন ঠিক আছে। চলো তাহলে।
আমি জানতাম শায়লা আমাকে পছন্দ করে। আমি দেখতে পয়সা ওয়ালা হ্যান্ডসাম ছেলেদের মত না। এই একটা কথাই আমার মাথায় ঢুকত না, কি আছে আমার যে, মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে!! আমার নেই কোনো বড় লোক ছেলেদের মত পার্সোনালিটি। না আছে কোনো বাড়ি-গাড়ি। তারপরেও কেন? আমি উত্তর খুঁজে পাই না। বিকেলে কখনো কখনো হলের পুকুরে বসে থাকতাম। ভাবতাম যে, পরিবারটাকে কিভাবে চালিয়ে নিয়ে যাব। কিভাবে বাবার স্বপ্নটাকে দ্রুত বাস্তবে পরিণত করব। কখন এই বাবা-মায়ের কষ্টগুলো আমি মুছে দিতে পারব। কিভাবে ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ যোগাব! আর কিভাবেই বা শায়লাকে আমার এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করতে পারব। আমি সমাধান খুঁজে পেতাম না মাঝে মাঝে। উপরওয়ালার কাছে তখন ধৈর্যের সামর্থ্য ভিক্ষা চাইতে থাকি।
৪৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানটা ছিল আমার সেশনের। খুব কষ্ট করে যেমন পড়াশুনা করেছি এই সুবাদে খুব ভাল একটা ফলাফল পেয়েছি। বাবা-মার মুখে সেদিন গর্বের আনন্দ দেখতে পেয়েছি। এও বুঝতে পেরেছি, বাবা বাড়িতে গিয়ে বুক ভরা গর্বে বলবে, "আমার ছেলে রাষ্ট্রপতির কাছ থাইক্কা মেডেল পাইসে"। কালো গাউন আর কালো টুপিটা ছিল সেদিন আমার শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। এই কালো গাউনটা পড়ে শায়লার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার আনন্দের কান্নাটা তার চোখে। আনন্দটা জল হয়ে গাল বেয়ে ঝড়ছে। এইদিনটাতেই কেন যেন আমার শায়লাকে বলতে মন চাচ্ছিল, "আমার আর তোমার স্টেটাস এক নয়, তারপরেও চলো জীবনটা নতুন করে শুরু করি"। -- কিছু বলবা? নাকি এভাবেই ড্যাব ড্যাব করে চোখের পানি ফেলতে থাকবা? (আমি)
[ আগে চোখ কাঁদছিল, আর এখন আমার কথার কারনে ঠোঁটগুলোও কেঁদে উঠল ]
-- না, কিছু বলব না। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে দেখব তোমাকে। সমস্যা আছে কোনো তোমার? (শায়লা)
-- নাহ। তারপরেও, একটু ইতস্ততবোধ লাগছে। এত গুলা মানুষের মাঝে তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো!
-- ঠিক আছে। আর তাকাব না।
-- আহহা, রাগ করছ কেন? ঠিক আছে তাকিয়ে থাকার বদলে দুজন একসাথে রিক্সা দিয়ে ঘুরে আসি। তার আগে আব্বা-আম্মাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসতে হবে। তুমি বরং এই ফাঁকে শাড়ি পরে আসো। আমি তোমার বাসার নিচে এসে ফোন দিব। ঠিক আছে? [ কপাল কুঁচ করে ঠোঁট বাকিয়ে একটা হাসি দিচ্ছে। আর এই হাসিটাই তাকে আমার ভিতর ভাল লাগার কাজটা করিয়ে দেয়।] চোখ টিপ দিয়ে বলল,
-- ঠিক আছে। আমি রেডি হয়ে বসে থাকব তোমার জন্য।(শায়লা)

আব্বা-আম্মাকে বাসে তুলে দিতে যাচ্ছি। ঢাকায় থাকতে মানা করেছি, তার প্রথম কারণ, ঢাকায় আমাদের আত্মীয় নেই যে একটা রাত তাদের বাসায় থাকবে। দ্বিতীয়ত, ছোট বোনটা বাড়িতে একা। তাই চলেই যেতে বলেছি। বাসে উঠার আগে, আব্বা জিজ্ঞেস করছিলেন,
-- মাইয়াটা কেডা রে বাপ?? (আব্বা)
-- আব্বা, ওই মেয়ে আমার ডিপার্টমেন্টের। আমার জুনিয়র। (আমি)
-- ওহ। নাহ, মাইয়াটা দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দর আছে। কি কও আনিসের মা?
[ আমি কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। আব্বা-আম্মার চোখা-চোখি আর কথার ভাব নমুনা দেখে বিশ্লেষণ করতে থাকলাম, শায়লার সাথে কথা বলার সময় ইনারা দুজন আমাকে আর শায়লাকে কিভাবে দেখছিলেন ]
-- হ। আপনে ঠিকই কইসেন। দেখতে সুন্দরী কম না। আমার আনিসের লাইজ্ঞা ভালা মানাইব। (আম্মা)
{ ২/১ টা জোর গলায় কাশি দিয়ে একটু স্বাভাবিক হলাম}
যাক, তাদের কথার স্পষ্টতা এবার আম্মা খুলে বলেই দিলেন। আম্মার এই কথা শুনে আব্বা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থেকে বলল যে, মেয়ের বাসার ঠিকানা আর তার বাবার মোবাইল নম্বরটা দিতে। আমি আব্বার চোখের চাহনি দেখে ভয়ে ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি। আব্বা-আম্মাকে গাড়িতে তুলে দিয়েই শায়লাকে নিয়ে ঘুরেছি সেদিন। ওর যা যা প্রিয় খাবার ছিল সবই খাইয়েছি। আমি ছাড়া তার এই খুশি আর দেখে কে!! হা হা... কয়েক মাস বাদে আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। একটা বাইরের দেশের নামী-দামী কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ। মেসেজটা দেখার পর থেকে আমি সারাদিনই এই মেসেজটা পড়েছি কিছুক্ষন পর পর। চাকরিটা যেদিন confirm করেছি ওইদিনই সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছি। এর আগে তাদের কিছুই জানাইনি। আমার চাকরির খবরটা শুনে যে ক'জন খুব কাছের ছিল তাদের ছাড়াও আরেকজন খুশি হয়েছিলেন। উনি হলেন শায়লার মা। উনার সাথে প্রায়ই দেখা হতো। মাঝে মাঝে শায়লার বাসায়ও গিয়েছি। শায়লার মাও জানতেন আমার আর তার মেয়ের সম্পর্কটা। প্রথম প্রথম তিনি আমাকে warning দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে কিভাবে যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেল টের পাইনি। হয়ত এই কাজটা শায়লা খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে দিয়েছে।

বাড়িতে এসেছি প্রায় ৬/৭ মাস পর। মানে ছুটি নিয়ে এসেছি। আব্বার শরীরটা তেমন ভাল ছিল না বলে। রাত ১১টা বাজবে হয়ত, আব্বা আমাকে ডাকলেন।
-- ঢাকাত থাকস, কুনো সমস্যা হয় না ত? (আব্বা)
-- না, আব্বা। কোনো সমস্যা হয় না। (আমি)
-- তুই জানি কতদিন ধইরা চাকরি করতাসস?
-- এইত আব্বা, ৮ মাস হবে।
-- আচ্ছা। আমার একটা দায়িত্ব রইয়া গেছে রে।
-- কিসের দায়িত্ব আব্বা?
-- আমি তর বিয়ার ব্যপারে আলাপ করসি শায়লার আব্বার সাথে। আমি ভাবসিলাম, তর সম্পর্কে উনি কিচ্ছুই জানে না হয়ত। কথা বার্তা কইয়া বুঝলাম, তারা মোটামোটি ভালই তর সম্পর্কে জানে।
-- ওহ। [ আমার মুখ থেকে এই শব্দটা ছাড়া আর কোনো শব্দ বের হয়নি ]
-- তর ত এতে কুনো আপত্তি নাই, নাকি?
-- আব্বা, আমার আপত্তি থাকুক আর না থাকুক এটাতে কিছু যায় আসে না। আমি তোমাদের অমতে কিংবা নিজের ভাল বুঝে ভবিষ্যৎ-এ কেটে পরব এমন কিছু করব না। তোমাদের দোয়া আর আশির্বাদে আমি সব সময় থাকব। আমার বিয়েটা যেমন তোমাদের দায়িত্ব তেমনি আমার ছোট বোনটার ভবিষ্যৎও এখন আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে গেছে।
-- ঠিক আছে। আমি আর তর আম্মা ২/১ মাসের মধ্যে শায়লার আব্বার সাথে দেখা করতে যামু। উনার সাথে সামনা সামনি কথা কইতে হইব।
-- জ্বী আব্বা। তুমি এখন ঘুমাও।
ছোট বোনটাকে বললাম, আব্বার খেয়াল রাখতে আর মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে।

বাড়ি থেকে চলে এসেছি ৩দিন পরেই। ঢাকার পরিপাটি জীবনটা একসময় খুব উপভোগ্য আবার এই উপভোগ্য মানসিকতাটা ভেঙে যায় যান্ত্রিকতার মাঝে পড়ে গেলে। এই ধরুন পরিপাটি জীবনটাতে সুন্দর একটা সকাল দেখা যায়, নিজের রান্না করা খাবার নিজেই খাচ্ছি। খারাপ হলেও সুস্বাদু, ভাল হলে ত কথাই নেই। অফিসে চলে গেলে সেখানকার কলিগদের সাথে মেলামেশা, আলাপচারীতা করা, ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার এর পর শুরু হয় আরেকটা চাকরি। শায়লাকে সময় দেওয়া। বিনা বেতনের চাকরি অথচ ক্লান্তি দূর করে দেওয়ার মত চাকরি। যার কোনো নির্দিষ্ট অফিস নেই, নেই কোনো নির্দিষ্ট সময়। এখানে দুজনই চাকরিজীবী আবার দুজনই অফিসের বস। আবার ওইদিকে যান্ত্রিকতার জীবনটাও অন্যরকম উপভোগ্য; অফিসে চলে যেতে হয় বেঁধে দেওয়া সময় আর নিয়মের মাঝে। আবার বেঁধে দেওয়া সময়ের ভিতরেই বাড়ি ফিরতে হয়। তার মধ্যে রাস্তার চরম দুর্ভোগের যানজট। কেমন বিরক্তিকর তা অনেকেই জানেন।

মাস তিনেক বাদ আব্বা আমাকে ফোন দিয়ে বললেন তাকে শায়লাদের বাড়ি নিয়ে যেতে। আমাকে আগে থেকে জানিয়ে আসল না কেন এই প্রশ্নটা ছাড়া তেমন কোনো বাড়তি প্রশ্ন করি নি। আর তাছাড়া আমি বুঝেও গিয়েছি শায়লার বাবা যখন আমাকে ফোন দিয়ে সকালে বলেছিলেন তার বাসায় আজ যেতে। আব্বার সঙ্গে আম্মা আর আমার ছোট বোনটাও ছিল। শায়লার পরিবার আর আমার আব্বা আম্মা সবাই একমত হয়ে আমাদের আংটি বদল হয়। যদিও আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না তারপরেও আব্বার কথার অমতে যাইনি। এর প্রায় ২ মাসের ভিতর বিয়েটাও সম্পন্ন হয়।

১৬ মাস পর।
আমি আর শায়লা দুজনেই চাকরি করছি। উত্তরাতে থাকি। আব্বা আম্মা মাঝে মাঝে আসেন। কিন্তু পুরোপুরি থাকতে চান না। বলে গ্রামের আমেজ শহরে পাই না। আব্বা আম্মার এসব সুখ কিংবা আনন্দের কথায় আমি কোনোদিন বাধা দেই না। শায়লাকে বলেছি অফিস থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে। এর পর তাকে তার বাসায় দিয়ে আসব বলেছিলাম। কারন ডাক্তার দেখিয়েছি, উনি বললেন এখন থেকে কোনো ধরনের ভাড়ি কাজ করা নিষেধ। দুঃশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। ভাল ভাল পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। আর সব থেকে বেশি আমাকে শায়লার যত্ন নিতে বলেছেন। আমি ভালমত যত্নটা নিতে পারব না বলেই শায়লাকে বলেছি..
-- তুমি বাসায় থাকো এই কয়টা দিন।
-- না, আমার কোনো সমস্যা হবে না। আমি এখানেই থাকব।
-- নেকামি করো না। আমি এখন শুধু তোমার চিন্তাই করছি না, করছি তোমার আর ওর। যে আর কিছুদিন পর পৃথিবীটা দেখবে।
-- কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। আমার যে তোমাকে নিয়ে চিন্তা হয়।
-- আচ্ছা, আমি ২/৩ দিন পর পর অফিস শেষ করে তোমাদের বাসায় যাব। কেমন??
-- আমি যাচ্ছি না। উঠে চলে গেল কথাটা বলেই।
পরদিন আমি শাশুড়িকে বললাম উনি যেন আমার বাসায় এসে তাকে নিয়ে যায়। আমি সামনে থাকলে হয়ত যেতে চাইবে না। আসলে এদিকে আমি একজন চাকুরীজীবী আবার স্বামী হিসেবে আমাকে এখন হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুড়তে হয়। এইত সেদিন শায়লা সকাল সকাল ফোন দিয়ে বলল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অফিসে সেদিন না গিয়ে যতটা সম্ভব শীঘ্রই তাকে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার কতগুলো পরীক্ষা দিয়েছে। সবগুলোর রিপোর্ট দেখে বলল আগামী মাসের ২য় সপ্তাহে মেয়ের বাবা হচ্ছি। আনন্দের কান্না নিয়ে শায়লাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি। রিক্সা করে বাসায় যাচ্ছি আর আঙুলে গুনছি আর কতদিন বাকি আছে। একবার বলি ২৩ দিন আবার কিছুক্ষন পর বলছি ২১ দিন। এভাবে গুনগুন করে দিন গুনছিলাম কখন যে বাসা পার হয়ে আরোও ৪/৫ টা বাসা পার হয়ে গেছি টেরই পাই নি।
২০১৭ নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমার মেয়ে পৃথিবীর আলো প্রথম দেখতে পায়। পৃথিবীতে মনে হয় এই একটাই মুহুর্ত যে, জন্ম নেওয়ার পর সন্তান কাঁদলে পরিবারের সবাই আনন্দ পায়।
আমার মেয়েটা জন্ম নেওয়ার পরই আব্বা-আম্মা স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। শায়লাকে ধন্যবাদ, দিত্বীয় শায়লাকে জন্ম দেওয়ার জন্য। দেখতে ঠিক তার মতই অসাধারন সুন্দর। শুকরিয়া মহান আল্লাহর কাছে এত সুন্দর উপহার দেওয়ার জন্য।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এবং শায়লার জন্য শুভ কামনা।

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১১

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে। বোকার মতো প্রশ্ন করছি একটা 'এটা কি আপনার জীবনের গল্প '
ধন্যবাদ । শুভরাত্রি।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২২

মধ্যবিত্তের ছেলে বলেছেন: কেউ প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলে আমি ভেবেছিলাম উত্তরটা দিব "অর্ধেকটা"।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৫৭

ইসিয়াক বলেছেন: লেখক বলেছেন: কেউ প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলে আমি ভেবেছিলাম উত্তরটা দিব "অর্ধেকটা"।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভসকাল

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৭

মধ্যবিত্তের ছেলে বলেছেন: ☺☺ শুভসকাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.