নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকাল বেলা জব এ যাবার সময় শুধু তাকিয়ে দেখলাম আর চোখ বড় করে দেখে ভাবতে থাকলাম মানে কি ?
কিভাবে সম্ভব ?
আর কেন-ই বা এটা এরকম হল অথচ আমাদের ওখানে (বাংলাদেশে) বা আমরা কেন করি না ?
এক বৃদ্ধ যুগল মার্কেট থেকে বাজার করে নিয়ে যাবার সময় একটা ব্যাগ খালি করে নিলো আর সেই মার্কেটের পাশ দিয়ে যাবার সময় পাশে যে বড় বড় ময়লা গুলো পরে ছিল তারা দুইজন হাঁটতে হাঁটতে তুলে নিচ্ছে,মানে পরিষ্কার করছে আর নিয়ে গিয়ে সামনের বিনে ফেলবে।
আসলে ভাবনা টা তখন-ই আসলো।আমরা কত পিছনে পরে আছি,আমাদের উদাহরণ হওয়ার মত কোন দৃষ্টান্ত নেই।আমরা ইতিহাস দিয়ে উদাহরণ দেই,ছাল নেই কিন্তু চউধ্রি বংশের অহংকার দেখাই।আমরা কাজ করি না,করিয়ে নিতে চাই।
বদভ্যাসের শুরু টা আসলে কোথা থেকে ?
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা,আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আর আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তদুপুরি সরকার এর না দেখে চলার নীতি আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
ছোটবেলার একটি কাহিনী মনে পরে,মা অসুস্থ থাকায় আমি যখন ঘর পরিষ্কার করছিলাম তখন বাসায় এক ফ্রেন্ড এসেছিল,সে এসে আমাকে ঘর পরিষ্কার করতে দেখে টিটকারি করে বলছিল কাজের ছেলে,লজ্জা পেয়েছিলাম কিন্তু সম্ভবত এই উত্তরও দিয়েছিলাম যে হ্যাঁ কাজ করলেই তো কাজের ছেলে।
এই যে মানসিকতা এটাই আমাদেরকে পিছিয়ে রেখেছে বহুদূর।সারাদিন মা কাজ করে জান দিয়ে ফেলে অথচ বাবা এক গ্লাস পানি নিয়ে খাবে না,কারণ ছোটবেলায় বাবা শিখেছে ঘরের কাজ মানে মেয়েদের কাজ,এটা করলে মেয়েলী স্বভাবের হয়ে যাবে।
সন্তানদেরও শিখানো হয় সেই ভাষা,ছিঃ তুই ঘরের কাজ করবি !
ছিঃ মশারী টাঙাবি ?ছিঃ রান্না করবি?ছেলে হয়ে রান্না ?বা বাজার করতে যাবি ?বা তুই কাজ করবি ?
কাজের মেয়ে দরকার !
মেয়ে যদি শিক্ষিত হয় তাহলে বাবা মায়ের কথা শিক্ষিত মেয়ে আমার সে কেন ঘরের কাজ করবে ?
অথচ এটা কেমন মানসিকতা !
সবাই যদি সবার কাজটা ছোটবেলা থেকে করে ফেলে তবে কাজকে যেমন সম্মান করা শিখে মানুষ তেমনি মা নামক ফ্রি কাজের মহিলাটি জীবনের জন্য একটু সময় বের করতে পারে।
নারী অধিকারের জন্য যারা গলা ফাটিয়ে ফেলে তাদের আন্দোলন তখন আর দরকার পড়ে না আর মেয়েরা ও তাদের জীবনের জন্য একটুকু মলিন সময় পায়,শুধু তাই নয় একটা আত্মনির্ভরশীল পরিবার গড়ে উঠতে পারে।অথচ কাজকেই আমাদের দেশে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
তদুপুরি স্কুল কলেজ গুলোতে গিলানো হয় পুঁথিগত বিদ্যা,যার ফলে নানান পরিকল্পনায় আমাদের অফিস ভরে যায়,মানুষের বিবেক আর জাগে না,যেমনটি দেখেছি সেই ব্রিটিশ বৃদ্ধ দম্পতিদের মধ্যে।
কি সুন্দর এদের শিক্ষা,ছোটবেলায় বাবা মা সন্তানদেরকে সরি বলা শিখায়,ধন্যবাদ বলা শিখায়,নিজের কাজ নিজে করতে শিখায়,দায়িত্ববান হতে শিখায়,স্কুল কলেজে শিখায় প্র্যক্তিক্যলি জীবন চালনার ভাষা।রাস্তায় টিচাররা ছাত্রদের নিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে নিয়ে গিয়ে শিখায় আমাদের দায়িত্ব কি?রাস্তায় গিয়ে সরাসরি রাস্তা চলাচল শিখায়।মানুষের সাথে মানুষ গরীব হউক ধনী হউক কিভাবে চলবে বা সবাইকে কিভাবে বুকে আঁকড়ে নিবে সেই ধারণার অবসান ঘটিয়ে মনুষ্যত্বের শিক্ষা দেয় এসব দেশ।
আর আমরা ছোটবেলা থেকেই আমাদের সন্তানদেরকে শিখাই,তুমি খাবে আর খেলবে,কাজের মেয়ে কাজ করবে।খবরদার ওই কাঁদায় পা দিবে না ওটা ছোটলোকদের জায়গা,কাজের মহিলা কে বুয়া বলবে,কারণ সে মানুষ না,সে গরীব।রিকশাওয়ালাকে মারবে কারণ সে অজাতের,তুমি শুধু অফিসিয়াল কাজ করবে বাকী কাজ ছোটলোকেরা করবে,ঘরের কাজ শুধু মেয়েরা করবে,কারণ ছেলেরা করলে তারা মেয়ে হয়ে যাবে।
অশিক্ষাই যখন আমাদের শিক্ষা তখন উন্নত দেশ থেকে শিখার মত অনেক কিছু থাকলেও আমরা শিখি নোংরা কাজ গুলো,ভালো গুলোকে মুখেও আনি না।
অথচ আমরা যদি আমাদের জায়গাগুলো পরিষ্কার করে ফেলি কাল তো বাংলাদেশ চকচক করবে,ঘরে যদি আমরা আমাদের কাজগুলো করে ফেলি তখন মা নামক মানুষটি একটু নিস্তার পায়,সব কাজকে যদি আমরা মানুষের কাজ ভাবি তবে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার পথে কে পারে আমাদের ঠেকাতে ?
©somewhere in net ltd.