নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপ্রতীয়মানের ব্লগ

উদ্ভট কথা সমৃদ্ধ লিপি

অপ্রতীয়মান

প্রতীয়মান হাজার কোটি মানুষের ভীরে আমি একজন অপ্রতীয়মান। সেই হাজার কোটি মানুষের কোন একটাই আমার চেহারা, আমার পরিচয়......

অপ্রতীয়মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধ্বংসস্তূপে সব হারিয়ে

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৪





ইব্রাহীম, বয়স ৭ বছর। দুষ্ট দুষ্ট চেহারার চমৎকার মিশুক একটা ছেলে। তার বাবার বাজারে একটা ফলের দোকান আছে। মসজিদের সামনে যে খেলার মাঠটা রয়েছে তার দক্ষিণ দিকে তাদের কলোনি। রোজ বিকেলে আজিজ চাচার ছেলে ফারুকের সাথে ঐ মাঠেই খেলে সে। আজিজ চাচাও তাকে অনেক আদর করে। মাঝে মাঝে বাজার থেকে ফিরে আসার সময় ফারুক আর তাকে চকলেট দেয়।



সকালে মাদ্রাসা শেষ করে সে এখন স্কুলেও যায়। সেখানে কত মজার মজার জিনিষ শেখায়। আর খেলার জন্যে কত ধরনের ব্যবস্থা আছে। সময়টা হুট করেই শেষ হয়ে যায়। ফিরে এসে তার ছোট বোনটার কাছে সারাদিন স্কুলে কি দিয়ে কেমন করে খেলে সেটা নিয়ে গল্প করে। তার বোনটা বড় বড় চোখ করে সেই গল্প শোনে আর আম্মুর কাছে গিয়ে বায়না করে তাকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবার জন্যে। আম্মু ওকে বলে আগামী বছরই ওকে ভর্তি করিয়ে দিবে। তারপর দুই ভাই বোন মিলে একসাথে স্কুলে যাবে।



গত কয়েকদিন ধরে স্কুল যাওয়া বন্ধ, বাড়ি থেকেও বাইরে যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে ইব্রাহীমের বাবা। বাইরে নাকি বেশ ঝামেলা চলছে এখন। ঝামেলার ব্যাপারটা ইব্রাহীম ঘরে থেকেও বুঝতে পারে। প্রায়ই বেশ জোরে জোরে শব্দ হয় দূর কোথাও। শব্দের সাথে অল্প অল্প ভূমিকম্প অনুভব করে সে। তার বাবা আর আজিজ চাচা বাইরে বসে কি সব খারাপ সময়ের কথা আলোচনা করে। ঐ ধুপ ধুপ শব্দের সাথে নাকি অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকে নাকি মারাও যাচ্ছে। হসপিটালে নাকি আহতদের জায়গা দিতে পারছে না ঠিক ভাবে। আশে পাশের অনেকেই নাকি তাদের স্কুলটাতে জায়গা নিয়েছে।



চাচা আরও বলল বাবা যাতে সময় থাকতে সবাইকে নিয়ে আমাদের স্কুলটাতে উঠে আসে। আমাদের কলোনিটা নাকি আর নিরাপদ না। বাবা বলে, সবার যা হবে আমাদেরও তাই হবে। দেখা যাক আর কয়টা দিন। এদিকে নাকি ওরা নাও নজর দিতে পারে। আজিজ চাচা বাবার কথায় তত আশ্বস্ত হতে পারে না। চিন্তিত মুখে বিদায় নিয়ে ফিরে যায়।



আম্মাও আজিজ চাচার কথা গুলি শুনেছে ঘরের ভেতর থেকে। বাবাকে বলল আজিজ চাচার কথা শোনার জন্যে। কয়দিন স্কুলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে আবার ফিরে আসার কথা। বাবা বলে আরও কয়েকদিন দেখে তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিবে। এরপর রাতের খাবার খেয়ে আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম।



প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইব্রাহীমের। তার বাবার সাথে ঘুমায় সে। বাবা তাকে জাপটে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। কলোনির ভেতরে অনেক কোলাহল, সবাই যার যার মত ছুটে বাইরে যাবার চেষ্টা করছে। এরই মাঝে আজিজ চাচা আর তার পরিবারকে দেখে বাবা আমাকে আজিজ চাচার কাছে দিয়ে তাকে বলল, “ওকে নিয়ে এগুতে থাকেন। আমি আপনার ভাবিকে নিয়ে আসছি।” চাচা বাবার কথায় সম্মতি দিয়ে একহাতে ইব্রাহীম আর অন্য হাতে ফারুককে নিয়ে ভীর ঠেলে সামনের দিকে এগুতে থাকে।



খুব বেশি দূর এগুতে পারলো না তারা। তার আগেই প্রচণ্ড শব্দের সাথে একটা ধাক্কা অনুভব করে ইব্রাহীম। চাচার হাতটা খুব জোরে ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু কেমন করে জানি ছুটে যায়। এর পরপরই আরও একটা শব্দ, সেটা আগের টা থেকেও খুব জোরে। তারপর শুধু উল্টে পড়ে যাওয়ার কথাই মনে আছে তার।



চোখ মেলে দেখে ফারুকের আম্মু তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে। মাথার বাম পাশে যন্ত্রণা হচ্ছে অনেক। ঝি ঝি একটা শব্দ এখনো কানে লেগে আছে। চোখ মেলতেই আন্টি জোরে চিৎকার দিয়ে বললও “জ্ঞান ফিরেছে!” আজিজ চাচা আন্টির চিৎকার শুনে এক কোন থেকে ছুটে আসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখল, বলল আরও কিচ্ছুক্ষণ শুয়ে থাকতে।



চোখ ঘুরিয়ে চেয়ে দেখল তাদের স্কুলের দোতালার সিঁড়ির পাশে যে বড় রুমটা ছিল, ওটাতে আছে তারা। তারা একা নয়, কলোনির অনেকেই আছে। সবাই কেন জানি কান্না করেই চলেছে। গুমোট একটা পরিবেশ এখানে। তার পাশেই আন্টিকে জড়িয়ে ধরে ফারুকও ভয় পাওয়া চোখে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। ফারুকের গালে কালো একটা দাগ দেখতে পেলো সে। তারপর হুট করেই আবার কেমন যেন সব অন্ধকার হয়ে আসলো চারপাশে।



এরপর আবার চোখ মেলে দেখে দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। সে এখনো আন্টির কোলেই শুয়ে আছে। আর আন্টি দেয়ালে ঘেঁষে ফারুককে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আস্তে করে উঠে বসলো, আশে পাশে যারা ছিল তাদের প্রায় সবাই ঘুমাচ্ছে। বাইরে কয়েকজন আছে, তাদের ফিসফিসে আওয়াজের কথা শোনা যাচ্ছে। উঠে দিয়ে দরজার সামনে দাড়ায় ইব্রাহিম। তাকে দেখেই আজিজ চাচা ছুটে এসে সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো। জিজ্ঞাস করলো খারাপ লাগছে কিনা। উত্তরে বলল “এখন আর মাথায় যন্ত্রণাটা হচ্ছে না”। এদিক সেদিক তাকিয়ে চাচাকে জিজ্ঞাস করল “আব্বু আম্মু ওনারা কোথায়?” আজিজ চাচা ইব্রাহীমকে জাপটে ধরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল শুধু…..



মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩

একজন আবীর বলেছেন: নিঠুর বাস্তব!

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

অপ্রতীয়মান বলেছেন: হ্যাঁ, বাস্তবতার নিষ্ঠুর রূপ।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

আরজু মুন জারিন বলেছেন: গল্প টি এখানে শেষ হয়ে গেল ? কোথাকার ধ্বংসস্তুপের কথা বলা হল এখানে ? গাজার ?

সহজ সরল বর্ণনায় গল্পটি হৃদয় স্পর্শ করেছে। লেখককে অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭

অপ্রতীয়মান বলেছেন: জীবনের গল্পের কোন শেষ থাকে না, এটা চলমান। আর ধ্বংসের গল্পে কোন সময়, স্থান, কাল থাকে না। ধ্বংস সবসময়ই পরিচিত ভুবন নষ্টের একটা স্তূপ রেখে যায়।

ধন্যবাদ কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্যে।

শুভ কামনা থাকলো :)

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৭

বোকামানুষ বলেছেন: :( :(

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৯

অপ্রতীয়মান বলেছেন: :| :(

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:২৬

বালক১৯৭২২০০০ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।গল্পটি হৃদয় স্পর্শী।

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮

অপ্রতীয়মান বলেছেন: সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ :)

৫| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধ্বংস, মৃত্যু পৃথিবীর সবখানে একই রকম। একইভাবে পোড়ায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.