নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে জীবনে নেই কোন অনুভব, যে জীবন মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ - জল নেই পাথর (বুক রিভিউ)

২০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০২



আমার কোন অনুভূতি নেই,
দু:খ সুখের ভেদাভেদ আমি করতে পারি না
আমার কোন ইচ্ছে জাগে না,
হয়ত আমি নির্জীব
- নির্জীব


আমার ভেতর আমি নেই, হারিয়ে গিয়েছি, নয়ত মরে গিয়েছে সেই আমি যাকে সবাই জানত। তবে কি আমার মৃত্যু ঘটছে, নাকি আমি বেচে আছি। প্রশ্নটি অবান্তর নয়, আবার প্রশ্নটি একেবারে অযৌক্তিক নয়। মানুষের মৃত্যু কি শুধু মাত্র দৈহিক, নাকি মানসিক ভাবেও মানুষ মৃত হতে পারে। বেচে থাকা ও মৃত্যুর ভেতর কতটুকু পার্থক্য রয়েছে। সেটাও মানুষ নিজে কিভাবে পরিমাপ করতে পারে। আদৌ কি পরিমাপ করা সম্ভব হবে। জীবন আর মৃত্যু তো পাশাপাশি।

মানুষ বেচে থাকে তার অনুভূতিতে। যদি কোন অনুভূতি না থাকে। যদি সে কোন কিছুই অনুভব না করে। তাকে আপনি বেচে থাকা বলতে পারেন, নাকি জীবন্ত মৃত্যু আখ্যা দেয়া সম্ভব। কারণ মানুষের অনুভূতি সব সময় জাগ্রত থাকে। এই পৃথিবীতে বেচে থাকার জন্য তার অনুভূতি সব সময় তাকে তাগিদ দিতে থাকে। সে এই পৃথিবীতে বেচে থাকার জন্য তার অনুভূতিকে বাচিয়ে রাখে। আর সেটাই দিন দিন তাকে বেচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগায়।

যদি মানুষের এই অনুভূতি না থাকে, তাকে তখন আমরা কি আখ্যা দিতে পারি। যদিও এটা প্রায় অসম্ভব তবুও বলা যায় অনুভূতি না থাকা আর মৃত্যু মানুষ কাছাকাছি পর্যায়ের। যেখানে তারা ভেতর কোন কিছুই আর নাড়া দেয় না। তার ভেতরে থাকা মানুষটি হয়ত আর বেচে নেই। বাইরের মানুষটি শুধু বাহ্যিক ভাবে বেচে আছে। সব কিছুই সে দেখে জানে কিন্তু সে সেই বিষয়ে কিছু করতে বা বলতে পারে না। কারণ সে সেই অনুভব তার ভেতর আর বেচে নেই।

“অনুভূতিহীন জীবন মৃত্যুর চেয়ে ভয়ানক, অথবা বেচে থাকার অন্য রকম সুখ”

ধরুন আপনার কোন দুঃখ বা সুখ অথবা কোন কিছুই অনুভব হচ্ছে না। তখন আপনি কি করবেন। আপনার কাছে সেটা কেমন লাগবে। এটাও এক প্রকার অনুভূতি কিন্তু তার কোন নাম নেই। নেই উপলব্ধি। আপনি কি একে এড়িয়ে যেতে পারবেন না। আপনি তখন কতটা অসহায় হয়ে যাবেন। নাকি নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এই পৃথিবীর প্রকৃতির সাথে নিজেকে বিলীন করে দেবেন।

“জল নেই পাথর” ওয়াবেদ হকের নতুন উপন্যাস। উপন্যাসে বর্নিত হয়েছে যাকে ঘিরে বা উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র পলাশ সাহেবের দুঃখবোধ লোপ পেয়েছে। তিনি দুঃখবোধের উপরে চলে গিয়েছেন। সেই সাথে তার ভেতর এক অন্যরকম শক্তি কাজ করেছে যা তিনি একবার দেখে শোনেন তিনি সেটা ভুলে যান না। এটা নিয়ে তিনি বেশ অসহায়বোধ করলেও সময়ে সাথে সাথে মানিয়ে নিয়েছেন।

তিনি ডাক্তারের শরনাপন্ন হলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। বরং তাকে পাগল বা মানসিক রোগী বলে আখ্যায়িত হতে হয়েছে। তবুও তিনি ভেবে ছিলেন এটা সাময়িক কিন্তু দিন দিন এটা বেড়েই চলেছে। অবশেষ জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। প্রকৃতি যেভাবে মানুষ কে বেচে থাকা শিখিয়ে দেয় সেভাবেই পলাশ সাহেবও শিখে যান কিভাবে বেচে থাকতে হবে। শুধু তার ভেতরে অনুভূতি গুলো চলে যায় বা মরে যায়।

এছাড়া একটা সময় তিনি খুনের চিন্তা মাথায় করে ঘুরে বেড়ান। আসলেই কি তিনি খুন করতে পারবেন। নাকি খুন করা খুব সহজ যা অনেকটা ডাল ভাতের মত। তিনি পেশাদার খুনী নন। তবুও তাকে খুন করতে হবে। কারণ তার দুঃখবোধ ফিরে আসুক তিনি চান। তবে কি এটা শেষ, নাকি অন্য কোন ভাবে তিনি বেচে থাকবেন। তার অনুভূতি গুলো বেচে থাকবে।

এই উপন্যাসটি পড়ার সময় আমি বার বার একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি যে বইটি লেখার সময় লেখক তার অনুভূতিকে কতটা জাগ্রত রাখতে পেরেছেন। নাকি তিনিও পলাশ সাহেবের সাথে একত্রিত হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে ওবায়েদ হক বেশ এগিয়ে রয়েছেন। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে তার লেখার বাস্তবশৈলী।

আপনি যখন “জল নেই পাথর” পড়বেন তখন বুঝতে পারবেন লেখক কতটা পর্যবেক্ষণ করেছেন এই সমাজকে। সমাজ ব্যবস্থাকে ও সমাজে থাকা মানুষ গুলোকে। আপনার কাছে মনে হবে এই ঘটনা আপনিও কখনও না কখনও দেখছেন। আপনার সামনে অহরহ এসব ঘটনা ঘটে থাকে।

সমাজ, সমাজে থাকা মানুষ ও সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। যদিও সাহিত্য সত্যের জায়গাকে আমরা কাল্পনিক ধরে এগিয়ে চলি। তবুও আপনি বাস্তবতা কে এড়িয়ে যেতে পারবেন না। যেটা আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থানকে বর্ণনা করে থাকে।

উপন্যাসটির সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে এই শেষ। আপনি ভেবে পাবেন না আসলে শেষ কি, আসলেই কি শেষ হয়েছে নাকি গল্পের আরও বাকি আছে। আমার মনে হয় লেখকের সার্থকতা ঠিক এই জায়গাতে। তিনি পাঠকের ভাবনার খোরাক জোগাতে সক্ষম হয়েছেন। উপন্যাসটি শেষ হয়েও যেন শেষ নয়।

জীবনের নিয়ম হয়ত এটাই। কোন কিছুই শেষ নয়, আবার নতুন করে শুরু নয়। সব কিছু একটি চক্রের ভেতর আবব্ধ হয়ে আছে। যেই চক্রের ভেতর আমরা সবাই বসবাস করছি। হয়ত একদিন আমরা আমাদের খুজে পাবো। গন্তব্যের শেষ হবে।

“Life is too short, Don’t waste it in thinking”

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৪২

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আসলে বই লিখতে হলে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ভালো থাকতে হয়।
বুক রিভিও ভালো হয়েছে।

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:


বর্তমানে বাংলাদেশে লেখকদের মধ্যে আন্ডাররেটেড ওবায়েদ হক। ওনার লেখনী বেশ মজবুত।

ধন্যবাদ।

২| ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১০

অপু তানভীর বলেছেন: ওয়াবেদ হকের কয়েকটা বই আমি পড়েছি । তার ভেতরে জলেশ্বরি পড়ে খুবই পুলকিত হয়েছিলাম । এই বইটা লিস্টে তুলে রাখলাম।

এখন তো সামুতে রিভিউ পোস্ট আসে না বললেই চলে । আপনার রিভিউ পোস্ট ভাল হয়েছে । বই পড়ে আরও রিভিউ দেওয়ার অনুরোধ রইলো ।

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:


ধন্যবাদ ভাই।

আমি চেষ্টা করছি বই পড়ার ও সেটা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করার। মুল সমস্যা হচ্ছে যান্ত্রিকতা ও ব্যস্ততা। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ওনার তেইল্যা চোরা, নীল পাহাড় পড়ে দেখতে পারেন।

৩| ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

কামাল১৮ বলেছেন: আমি এক রাত এক দিন অনুভূতিহীন ছিলাম।যখন আমার বাইপাস অপারেশন হয়।গভীর ঘুমে কি আমারা অনুভূতিহীন হয়ে পড়ি?মৃত্যুর পরে মানুষ ঝড় পদার্থে পরিণত হয়।

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:


হয়ত তাই।

তবে আমিও অনুভূতিহীন ছিলাম যখন আমাকে আইসিইউ তে রাখা হয়েছিল সাপে কাটার পর।

তখন সব দেখা যায় শোনা যায় কিন্তু কেন যেন অনুভব করা যায় না।

৪| ২১ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার পর্যবেক্ষণ...

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



ধন্যবাদ দাদা।

৫| ২১ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর রিভিউ।
রিভিউ পড়েই বইটি পড়তে ইচ্ছা করছে।

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



অনেক দিন মনে হল বেশ দারূণ একটি বই পড়েছি। এই বইটি আসলেই পড়ার মতো একটি বই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.