নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অামি অতি সাধারণ, সাধারণ থাকতে চাই ।

পার্থ তালুকদার

আমি ভাই সাধারণ, সাধারণ থাকতে চাই।

পার্থ তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

চৈত্রের দাবদাহ এবং কিছু স্মৃতি

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪



ফাগুন যেমন বাঙ্গালীর মনন-মানসে এক নতুন প্রাণের জন্ম দেয়, নতুন কিছু পাওয়ার বাসনা জাগায়, ঠিক বিপরীত ভাবে চৈত্রের দাবদাহে গ্রামের মানুষের হৃদয়ে চাপা কষ্ট, হাহাকার, না পাওয়ার ব্যাথা লক্ষ করা যায়। কবিগুরু লিখেছেন-

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।

গ্রামে জন্মতো তাই গ্রামীন কিছু বৈশিষ্ট্য, রীতিনীতি আজ এই দালান কোঠায় বাস করা মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে। এই চৈত্রে রোদের যেমন প্রকটতা, সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করার মতো অবস্থা তেমনি গ্রামীন মানুষের মনের মধ্যেও আছে না পাওয়ার আকাঙ্খা, বাসনা আর না বলা হাহাকার যন্ত্রনা। তবে শত অভাব আর টানা-পোঁড়নের মধ্যে রাখালের উদার কন্ঠে উদাসি গান মন কেড়ে নেয়।

চৈত্র বছরের শেষ মাস হওয়ায় বাজারে চালের দাম গরীবের নাগালের বাইরে চলে যায়। মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনে কখন আসবে বৈশাখের নতুন ধান। মনেপড়ে, এই চৈত্র মাসে ঠাকুরমার কাছ থেকে চলে আসতো কিছু কঠোর নিয়ম। এই চৈত্রে ভাত নষ্ট করা যাবে না, দুপুরে বের হওয়া যাবে না, রোগে আক্রান্ত কোন বাড়িতে যাওয়া যাবে না, এই না, সেই না। শুধু না এর বাহার। তবে সবার ছোখ ফাঁকি দিয়ে দুপুর বেলা অসাধারণ কিছু খেলায় মেতে উঠতাম আমরা। শুকনো শীমের বীজ আর সিগারেট অথবা দিয়াশলাই বক্সের খেলার কথা এখনও মনে আনন্দ যোগায়। সিগারেট বক্স জমানো একটা শখের পর্যায়ে ছিল। এমনও হয়েছে টাকা দিয়ে কিনে অনেক কার্ড জমা করেছি। খেলায় জিতলে বুক ফুলিয়ে আর হারলে মনে কষ্টের পাথর নিয়ে ঘরে ফিরতাম।

খেলায় জেতা সিগারেট বক্সগুলো আমার এক দিদিমার কাছে গচ্ছিত থাকতো। উনি এগুলো খুবই আদরের সহিত, যতœ সহকারে আগলে রাখতেন। খেলার প্রয়োজনে কার্ডগুলো উনার কাছ থেকে আনা-নেওয়া করতাম। এ যেন বর্তমান ব্যাংকিং সিস্টেমের মতই। তবে সুদহীন। আমার এই দিদিমা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরের ঘটনা। তখন আমি ভার্সিটিতে পড়ি। বাড়িতে কিছু একটা খুজতে গিয়ে আমার প্রিয় এই দিদিমার একটি পুতলিতে ছোট্ট বেলার জমানো অনেকগুলো সিগারেট বক্স আবিষ্কার করলাম। আমার কাছে মনেহল এ যেন-প্রাচীন আমলের মহামূল্যবান কোন গুপ্তধন! মনের মাঝে তখন প্রশান্তির বাতাস বইয়ে গেল, আর চোখের কোনে আবিষ্কার করলাম ক’ফোঁটা শীতল জল!

বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যৌবনা বিবিয়ানা নদীটি এই চৈত্রের খরতাপে ভাবলেশহীন এক বৃদ্ধার রূপ ধারন করত। যে নদীকে বর্ষায় কুল কিনারাহীন দেখতাম সেই নদীর তলার বড় বড় ফাটল জানিয়ে দিত এটা চৈত্র মাস । এই মাস নদীর পানি শুকানোর মতো মানুষের মনের রসবোধ বড় অবিবেচকের মত চুষে নেয়।

তবে বর্তমানে এই করুন অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। গ্রামের মানুষ এখন আর বেকার না থেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে এই চৈত্র মাসেও দেশের নানা প্রান্তে কর্মে যোগ দিচ্ছে। মানুষ এই চৈত্রের কাছে ঢাল তলোয়ার হীন কোন সৈনিকের মত হার মানছে না। এটাই তো- যুদ্ধের জন্য বাঁচা নয়, বাঁচার জন্যই যুদ্ধ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.