নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলম

প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)

পাপতাড়ুয়া

আঁধার দুনিয়ার ছবি! ..... ছন্নছাড়ার পেন্সিল......সবার অন্ধকার থাকে না, অথবা অন্ধকার প্রিয় নয়। তাই সবাই কবিতা পড়তে পারে না, কবিতা পড়ার জন্য চোখের ভিতর সমুদ্র এবং বুকের ভিতর আদিগন্ত ধূ ধূ প্রান্তর লাগে। ..... কবি নির্ঝর নৈঃশব্দ্য *************************http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/2

পাপতাড়ুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটা ব্যাগের ভেতর লাইটার রেখে দিতো

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২

শহরের মধ্যখানে গ্রাম্য সরল কিশোরীর সিঁথির মত কালো সড়ক ধরে সোজা চলে যায় সাজিক। পেছনে মানুষদের মুখের ক্যানভাসে তার ছায়া পড়ে পড়ে হলুদ হয়ে যায়। সাজিকের ছায়া আটকে থাকে অফিসফেরত কেরানীর মুখের ভাঙনে, উদাসীন এক বালকের পকেটের পাশে, তার বালিকাপ্রেমিকার কামিজের জমিনে, ভিক্ষুকের থালায়, পথশিশুর কুড়ানিথলের গালে, আর ঘর্মাক্ত পোশাকশ্রমকন্যার ভেজা বুকে।
সাজিক এইসব চিত্র ফিরেও দেখে না। সন্ধ্যার আলো আর হলুদ সোডিয়ামের অদ্ভুত মিশ্রণের ভেতর চপ্পল ফেলে ফেলে হারায়।

সাজিকের হারানো পথের মানচিত্রে যখন সাবিহাও নামে, তখন কেবল হলুদ সোডিয়াম। সে নিজেই অফিসফেরত, অফিসের গাড়ি ছেড়ে উদাসীন ইচ্ছায় ফুটপাত ধরে। সাজিককে চেনে না সে, জানেও না যে ঠিক এক সন্ধ্যার আলোর দূরত্ব কেবল মাঝে। বাকি দৃশ্যাবলি মিলায় না বলেই অফিসফেরত কেরানী নাকের সর্দি টেনে আড়চোখে সাবিহার দিকে তাকায় আর ইচ্ছে করেই কোমল স্পর্শ লাভের অভিপ্রায়ে ধাক্কা খায়। সাবিহা তীব্র চোখে আগুন ফোটালে হেসে বলে, মাগো তোমার বয়সী আমার মেয়ে, ইচ্ছা করে করি নাই!
সাবিহার মুখ ভরে উঠে তেতো জলে, থু করে ফেলতেই টং শব্দ করে ভিক্ষুকের থালা। সেই শব্দে কয়েকটা মানুষ ফিরে চায়। প্রেমিকাওলা বালক চোখের স্কেলে মাপে বৃত্তচাপ আর তার প্রেমিকা আড়চোখে প্রেমিকের চোখের পাঠ দেখে বিষন্ন হয়ে উঠে আর ফিস ফিস করে, আজকে আমার লাল রঙের, তোমাকে দেখাবো চল।
পরের দৃশ্যেই পথশিশু কুড়িয়ে পাওয়া রাজা বেলুনের মত ফোলায় আর পোশাকশ্রমকন্যা ঠাস করে থাপ্পড় মেরে গালি দেয়, শালা কুত্তার বাইচ্চা, তর মাইয়ার পাছা হাতা গা গিয়া বদমাইশের ছাও!
সাবিহার হাসি পায়। কেরানীটার তবে কী এই মেয়ের মত মেয়ে নাই?

সাজিক এইসব দৃশ্যের ওপারে চুপচাপ আর সাবিহা সামনে দিয়ে যাবার সময় বলে, এক্সকিউজ মি! সিগারেট হবে?

সাবিহা ক্লান্ত পা স্থির করে। ব্যাগ খুলে বের করে আনে নতুন প্যাকেট।

-আমার কাছে কিন্তু লাইটার নাই।

সাবিহা আবার ব্যাগ খুলে লাইটার বের করে।


সোডিয়াম আলো হলুদ হয়। দ্রুতগামী যানের হেডলাইট ভেঙেচুরে যায়। নিয়ম ভেঙে উড়ে যায় বেওয়ারিশ কাক। কাকদের পাড়া থেকে রিকশা চলে। রিকশায় বসে সাজিক সিগারেট টানে। সাবিহা মোবাইলে খোলে সাপখেলা। একটার পর একটা পোকা খেয়ে খেয়ে এক সময় সাপটা নিজের লেজে কামড় দেয়।

এইসময় রিকশাচালক ফিরে তাকালে তার চোখের ভেতর ভাসে সাপের চোখ। সাবিহা চিৎকার করে আর সারা শহর ভরে উঠে অজস্র সাপে। সাজিক পাশে বসে কড়া একটা টান দিয়ে হাসে, পাগলি আছিস তুই!

হাসিতে সাবিহার ভ্রান্তি হয়। এইসব ভ্রান্তির ভেতর সে অনিচ্ছাকৃত ঘরে ফেরে। এই ফেরার কোনো রঙ নেই। সাবিহার খুব ইচ্ছে, এই রঙহীন ঘরে ফেরার ভেতর একদিন সে আর ফিরবে না। ডুব দেবে। বাবার দায়গ্রস্থ চোখ আর মায়ের পাত্রজরীপের ফলাফলের ভেতর থেকে ডুব দেবে। শহরের সব সাপচোখের কামাব্ধ চোখের বিচ্ছিরি গন্ধের ভেতর থেকে ডুব দেবে। তারপর অন্য কোনো দেশে অন্য সকালে জেগে উঠবে।

- সাজিক, আমি একদিন ঠিক চলে যাব। আর আসবো না।
- চলে যা। আর আসিস না।



সাবিহার বুকের ভেতর শালপাতার ঘ্রাণ, চোখের ভেতর লুকিয়ে থাকা কান্নার এক্সিবিশান। এইসময়ে হারিয়ে যেতে হয়। আর ফিরতে হয় না। প্রাগৈতিহাসিক হিসাবের খাতা ডিঙিয়ে নিজের খসড়া করে নিতে হয়।

দীর্ঘক্ষণ সাবিহা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে অন্ধকারে। অথবা অন্ধকার সাবিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই অন্ধকারের চোখে প্রেম। এই অন্ধকারের চোখে কাম নেই। ওর বয়সী কোনো মেয়েও নেই।

তারপর সে চোখ বন্ধ করে। কিছু দৃশ্যপট, কিছু কথা আর কিছু মানুষ, একটানে কুচিকুচি করে ছড়িয়ে দেয় অন্ধকারের গহীনে। এইবার উড়ে যাওয়া যায়। ডুব দেয়া যায়। ভেসে উঠা যায় অন্য কোথাও, অন্য দৃশ্যপটে।



সাজিক চুপচাপ চলে ফুটপাত ধরে। মুখস্ত কেরানী, ভিখারীর থালা, প্রেমজুটি, পোশাকশ্রমকন্যারা পার হয়ে যায়। তারপর সে থামে। আকাশে তাকায়। সেখানে অন্ধকার। সেই অন্ধকার ভেঙে ক্লান্ত পাখির মত ভেসে যাচ্ছে হাওয়ার জাহাজ।

সাজিক পকেট হাতড়িয়ে বের করে ন্যাতানো সিগারেট। টেনেটুনে সোজা করে ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখে। ধরায় না। এই শহরে আর কোনো মেয়ে ব্যাগের ভেতর লাইটার রাখে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৩২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার ++++++++++

ভালো থাকবেন :)

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪৫

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:১১

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: খুব ভালো লাগল লেখাটা।

পোস্টে তৃতীয় ভালো লাগা রইল।

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার লেখা । পড়ে ভাল লাগলো । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.