নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভণিতাহীন নিঃশব্দ কথা

আমি কেবল তোমার কষ্টপক্ষ ছুঁয়ে থাকতে চাই

সোহেল আহমেদ পরান

একজন সাধারণ মানুষ। ভালোবাসি সত্য ও সাধারণকে। ভালোবাসি ভালোবাসতে। মনেপ্রাণে পজিটিভ।

সোহেল আহমেদ পরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়-চরিতঃ ভাষার প্রতি ভাসাভাসা ভালোবাসা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮



সময় চলে। চলে। ঘন্টা। দিন। মাস। বছর। সতত আবর্তনশীল সময়। সময় সব সময় একই রকম থাকে না। কখনো মধুর। কখনো অম্ল। আবার কখনো অম্ল-মধুর। সময়ের এই পথচলায় সময় আমাদের সঙ্গী করে নেয়। সময় পাল্টায়ও। সেই প্রাগৈতিহাসিক থেকে আধুনিক বা উত্তরাধুনিক। সময় ইতিহাস হয়ে থেকে যায় তার ধরন-ধারণের মধ্যে। তবে সময়ের সবচেয়ে বড় যে গুণ, তা হলো সময় অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়। এর বিপরীত ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। কিন্তু Time is the best healer – এটা মন থেকে মেনে নিয়েই সময়ের হাতে আমরা অনেক কিছু সঁপে দিয়ে নিশ্চিত বা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সময়ের পরিভ্রমণে সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং স্বাভাবিকভাবেই ভাষাও পরিবর্তিত হয়। ভাষার নির্যাস ও প্রকাশভঙ্গিও পরিবর্তিত রূপ পরিগ্রহ করে। বঙ্কিম-আমলের ভাষা এখন সাহিত্যে আর ব্যবহারিক পরিমণ্ডলে নেই। কিন্তু তার গুরুত্ব কোনো অংশে ফেলনা নয় মোটে।

জাতিহিসেবে ভাষা নিয়ে গর্ব করার স্বীকৃত অধিকার আমাদের আছে। ভাষার জন্য ভালোবাসার যে পরাকাষ্টা আমরা দেখাতে পেরেছি তা এ বিশ্বে অতূল্য। আর সেজন্যই ভাষার সঠিক মূল্যায়ন, তার যথার্থ তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিশ্লেষণ ও ব্যবহার অনেকটা গুরুত্ব বহন করে। তবে দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো এই যে, আমাদের ভাষাকেন্দ্রিক আলোচনা, সমালোচনা, মন্তব্য, অতিমন্তব্য, আতিশায্য – সবই ফেব্রুয়ারি ঘিরে। ফেব্রুয়ারি এলে আমরা বাঙালি হই। চেতনা নবায়ন হয়। দোষের কিছু নেই এতে। তবে ভাষার প্রতি ভালোবাসা সারাবছরজুড়েই থাকা উচিত। লক্ষ্য রাখা উচিত- সারাবছর ভাষার প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক প্রমিতকরণের দিকে

চোখ কান খোলা বা বন্ধ রেখেই বুঝা যায় বেশ – অদ্ভুত এক কালচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। বেড়ে উঠছে আমাদের নতুন প্রজন্ম। আশপাশে একটু একটু খেয়াল করলেই শোনা যায় কিছু ভিন্ন ধারার সংলাপ ও সম্বোধন। এই যেমনঃ হাই মামা, জটিল হইছে মামা, মামা জোস, চরম লাগতাছে, অস্থির, পুরাই পাঙ্খা … ইত্যাদি। শব্দগুলো সমস্যা নয়; বেখাপ্পা লাগে শব্দগুলোর ব্যবহার বা প্রয়োগিক প্রেক্ষিত। একজন বন্ধু অন্যজনকে সম্বোধন করছে “মামা’ বলে। একজন বন্ধু, যার সাথে মায়ের পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই- সে কীভাবে মামা হতে পারে জানি না। আর সেই বন্ধুর মাকে কী সম্বোধন করে তাও বুঝি না। শুধু তাই নয়, রিকশাওয়ালা, বাসের ড্রাইভার, স্টাফ এমনকি অপরিচিত যেকোনো সম্বোধনে মামা শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে অবলীলায়। বয়েসভেদে ভাই, মামা, চাচা, দাদা যেকোনো সম্পর্কই হওয়া উচিত। শুধু মামা’র উপর এই জোর কেনো বুঝা মুশকিল।

আমার অবশ্য জানা নেই, একজন ছেলে তার মেয়েবন্ধুকে কী বলে সম্বোধন করে কিংবা একজন মেয়ে তার ছেলেবন্ধুকে মামা বলে ডাকে কিনা। অথবা, কোনো মেয়ে অন্য মেয়েকে মামা নাকি খালা নাকি অন্যকিছু বলে সম্বোধন করে।

তারপর, কিছু শব্দের ব্যবহার ঠিক বিপরীত বলে মনে হয়। তারা বলে “মামা জটিলহইছে“। আমার বুঝতে দেরি হয়েছে যে, জটিল বলতে আসলে ভালো, দারুণ বা সুন্দর কিছু বুঝিয়েছে। অর্থ দাড়ালো- জটিল মানে Complex নয়। অথচ, অভিধানে জটিলশব্দের অর্থ করা আছে – “সমাধান করা বা উত্তর দেওয়া শক্ত এমন, কঠিন, গোলমেলে।” ঠিক একই রকম অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে চরম, অস্থির ইত্যাদি শব্দের। সব আমার জানা নেই।

উত্তরাধুনিক এসময়ে, টেকনোলোজির ব্যাপক উন্নতির এ লগ্নে ভাষার অন্য এক ধরনের ব্যবহারও লক্ষ্যণীয়। অনেক উদাহরণে না গিয়ে শুধু উল্লেখ করছিঃ “মন চায়“– একে লেখা হচ্ছে “মুঞ্চায়”। ভেবে দেখুন! এখানে কী ব্যবহারিক সুবিধা পাওয়া গেলো জানিনা। এমন অনেক শব্দ আছে। যেমনঃ – আওয়ামী লীগ কে বলা হচ্ছে – আম্লীগ আর বিএনপি কে বলা হচ্ছে বিম্পি। আমাকে মেরে ফেলো একে বলছে “আম্রে মাইরালা” ইত্যাদি ।

প্রিয় বাংলা ভাষার এমন রূপান্তর প্রয়োজন আছে কি? থাকলে তা কী — জানতে মন চায় (মুঞ্চায় নয়)। আমাদেরসকলের জানা আছে, ভাষার একটি প্রমিত রূপ আছে । আমাদের লেখায়, আনুষ্ঠানিককথায় প্রমিত রূপটি ব্যবহারই কাঙ্ক্ষিত।

কিন্তু সময়-তাল মেলাতে কী দেখতে পাচ্ছি? কথোপোকথন বা নাটকের সংলাপে শিক্ষিত চরিত্রেঅভিনেতাও প্রমিত বাংলা ব্যবহার করছেন না। আমরা জানি, কাহিনীর প্রয়োজনে কোনোকোনো চরিত্র ভাষার আঞ্চলিক বা কথ্য রূপ অবশ্যই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যখন একজন শিক্ষিত চরিত্রের মুখে “ভালো হইছে/ আমি দ্যাখতাছি/ কী করতাছছ ” টাইপের সংলাপ শুনি, তখন ভাষার প্রমিত রূপের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ হয় বৈকি।

আর এফএম কালচারের কথা না বলাই ভালো। কারণ, তাদের কথার স্টাইল লিখে প্রকাশ করা দায়। সব ভাষার প্রতি সম্মান রেখেই বলতে হয়, বাংলা ভাষাকে তারা কোথায় নামাতে চান, তা বোধগম্য নয় মোটেও।

বাংলাবানান নিয়ে অল্পশিক্ষিতজনের ভুল মেনে নিয়ে শুদ্ধ করার প্রয়াস নেয়া যায়। যেমনঃ কদিন আগে, আমার অফিসের ক্লিনার সুমি তার ছেলের নবম শ্রেণিতে ভর্তিরজন্য সাহায্য চেয়ে আবেদনে লিখলোঃ “আমার বর ছেলের ভর্তির জন্য টাকা দরকার।” আসলে সে বুঝাতে চেয়েছিলো- বড় ছেলে। কিন্তু শিক্ষিত ডিগ্রিধারীগণ যখন বাংলাবানানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন, তখন লজ্জা পাই কিঞ্চিৎ। আর ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষা নিয়ে, ভাষা সৈনিক নিয়ে মাত্রাতিরক্ততা যাচিত কি? ভাষাকে ভালোবেসে প্রতিক্ষণই আমাদের ভালোবাসতে হবে একে। ভাষার প্রতিভালোবাসা ভাসাভাসা বা লোক দেখানো হলে তা হবে আত্মঘাতের সমান।

শেষ করছি একটি লিমেরিক দিয়েঃ

ভাষার প্রতি ভালোবাসা উথলে পড়ে একুশ এলে,
বাংলা নামের হৃদ্য-পাখি রূপ ও রঙিন পাখনা মেলে।
বর্ণমালার গান গেয়ে যায় ‘দৈনিক’
বর্ষ-কদরে (!) সিক্ত ভাষা-সৈনিক ,
ধন্য হতাম বছর জুড়ে এমন ভালোবাসা পেলে।


বলতে মন চায়ঃ

ভাষার প্রতি ভালোবাসা
শুধু ফেব্রুয়ারিতে নয়,
প্রাত-সাঁঝে, মন ও মননে
বছর জুড়ে যেনো রয় ।

পাদটীকাঃ অনেক আগের একটা লেখার পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত রূপ। মূলত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-কে সামনে রেখে

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ পরান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.