নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভণিতাহীন নিঃশব্দ কথা

আমি কেবল তোমার কষ্টপক্ষ ছুঁয়ে থাকতে চাই

সোহেল আহমেদ পরান

একজন সাধারণ মানুষ। ভালোবাসি সত্য ও সাধারণকে। ভালোবাসি ভালোবাসতে। মনেপ্রাণে পজিটিভ।

সোহেল আহমেদ পরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ গন্তব্য

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

বনানী থেকে গাড়িতে ওঠার পর ফ্লাইওভারের উপরেই মিজান সাহেবের দুই হাত বেঁধে ফেলে তারা। মিজান সাহেব টের পান পাতাফাঁদে পা ফেলেছেন তিনি। বুঝতে পারেন যাত্রী বেশে অপেক্ষমাণ লাইন থেকে তাঁর সাথে অন্য যে দুজন উঠেছেন তারা আসলে সাধারণ যাত্রী না। এ চক্রেরই সদস্য ওরা। খুব অসহায়বোধ করেন মিজান সাহেব। একটা প্রাইভেট কোম্পানির সাপ্লাইচেইনে জব করেন তিনি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ভালোই চেনেন তিনি। আর নানা ছলচাতুরী আর প্রতারণা-ফাঁদের কথা তাঁর অজানা নয়।



মিজান সাহেবের বা পাশে বসা লোকটি বললোঃ

– এই মুখটা বেঁধে ফেল।

– প্লিজ ভাই, আমার মুখ বাঁধবেন না। সেটার কোনো প্রয়োজন নেই। সাথে যা আছে সব নিয়ে যান। চিৎকার চেঁচামেচি করবো না আমি। দয়া করুন ভাই। অনুনয় করে বললেন মিজান সাহেব।

ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটি এবার কথা বললোঃ

-এই রাখ। মুখ বাঁধতে হবে না। হি ইজ এ জেন্টলম্যান।

বেশ ভরাট কণ্ঠ। উচ্চারণও সুন্দর। মিজান সাহেব বুঝতে পারলেন- এই লোকটি এদের লীডার। এতো চাপের মধ্যেও মনেমনে ম্লান হাসলেন মিজান সাহেব। লীডার শব্দটি এখানেও প্রযোজ্য হচ্ছে! সত্যি আমাদের জীবনযাত্রা বড়ো অদ্ভুত।



ডানপাশে বসা লোকটি মিজান সাহেবের পকেটসহ সারা শরীর সার্চ করে যাচ্ছে। এ লোকটি গাট্টাগোট্টা টাইপের। একটু নির্দয়ভাবেই মিজান সাহেবকে এদিক সেদিক ধাক্কা দিয়ে, তার সুবিধামতো সব বের করে নিচ্ছে।

-লীডার, নগদ টাকা আট হাজার তিনশ’ পঞ্চাশ, দুইটা এটিএম কার্ড, দুটা মোবাইল…

গাট্টাগোট্টা লোকটা জানালো ড্রাইভিং-এর লীডারকে। টয়োটা করলা গাড়িটি তখন ফ্লাইওভার পেরিয়ে মিরপুরের দিকে ইসিবি চত্বর ক্রস করছে।

– কার্ডের পাসওয়ার্ডগুলো তাড়াতাড়ি নে বেটা।

চাপা চেঁচানো কন্ঠ লীডারের।

ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডের পাসওয়ার্ড মনে ছিলো মিজান সাহেবের। দিয়ে দিলো তা। কিন্তু ব্যাংক এশিয়ার কার্ডের পাসটা মনে নেই তাঁর। খেঁকিয়ে উঠলো ডানপাশে বসা লালচোখা লোকটিঃ

– ভাওতাভাজি করার চেষ্টা করবা না মিয়া। সাইজ করার অনেক মাল-মশলা আছে আমাদের কাছে। বলেই প্যান্টের পকেটে হাত দেয় সে।

– আমি সত্যি বলছি ভাই, আমার মনে নেই। তবে আমার অফিসের ড্রয়ারে একটা নোটে লেখা আছে।

কাঁদোকাঁদো তখন মিজান সাহেব।

-ফোন করো। ফোনে জেনে আমাদের জানাও।

ভাবনায় পড়ে যায় মিজান সাহেব। অফিস এখন বন্ধ । এডমিনের অনুমতি ছাড়া এখন অফিস খোলা যাবে না। এডমিন হেডকে ফোন করেন তিনি। হাত বাঁধা অবস্থাতেই। ভাগ্যিস হাতদুটি পেছনে বাঁধেনি তাঁর। ফোনে তিনি জানান, তাঁর ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে । টাকার জরুরি প্রয়োজন। কার্ডের পাসওয়ার্ড পেতে তিনি এডমিনের হেল্প চান। এডমিন প্রধান বিপদের কথা জানতে পেরে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। পাসওয়ার্ড মোবাইল ফোনে জানানো হয় তাঁকে এক ঘণ্টার মধ্যে ।



গাড়ি ততক্ষণে মিরপুর ঘুরে উত্তরা এলাকা চক্কর দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসে মিজান সাহেবের। অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি সাড়ে ছটায়। গ্রীন টি খেয়ে বেরিয়েছিলেন তখন। অফিসের পিক-ড্রপের গাড়িটি ব্রেকের সমস্যা হওয়ায় আজ বিকেলে গাড়ি ছিলো না। বনানীর কাকলী বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। উত্তরাতে বাসা তাঁর। জানতেন তিনি, এসব প্রাইভেট গাড়িতে উঠা রিস্কি। কিন্তু লাইনে তাঁর পাশে থাকা আরো দুজন উঠায় তিনি সাহস পান। বুঝতে পারেননি – এ লোকগুলোর ছক। এদের বয়স সবার ত্রিশের নিচে হবে- ঠাউর করেন মিজান সাহেব।

উত্তরায় দুটি বুথ থেকে তারা একাঊন্টের সব টাকা তুলে নেয়। তারপর, গাড়ি চলে আশুলিয়ার দিকে। মিজান সাহেকে তিনশ’ টাকা ফেরত দেয় তারা। সাথে পুরাতন মোবাইলটিও। এটিএম কার্ড দুটিও দিয়ে দেয়।



আশুলিয়া হাইওয়ের পাশে গাড়ি থামে। মিজান সাহেবকে নামিয়ে দিয়ে হাইস্পীডে গাড়ি নিমিষে মিলিয়ে যায়। হয়তো তাদের গন্তব্যে।

মিজান সাহেব ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ভাবতে থাকেন- কোথায় যাচ্ছি আমরা? কোথায় যাচ্ছে আমাদের সমাজ? আমাদের যুব সমাজ? কোথায় নিরাপত্তা জীবনের? আমাদের গন্তব্য কি আঁধারে?



একটা ট্রাকের হাইড্রলিক হর্নের শব্দে তিনি সম্বিত ফিরে পান। বাসায় ফিরতে হবে তাঁকে।

- --

সো আ প

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: মিজান সাহেব ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ভাবতে থাকেন- কোথায় যাচ্ছি আমরা? কোথায় যাচ্ছে আমাদের সমাজ? আমাদের যুব সমাজ? কোথায় নিরাপত্তা জীবনের? আমাদের গন্তব্য কি আঁধারে? ’’---------ঠিক তাই, কোথায় মোদের ঠিকানা !!!!!!!! ----------দারুন

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: আপনার মন্তব্যে অনেক অনুপ্রাণিত হলাম আপা।
হৃদ্য ধন্যবাদ সবসময় লেখার পাশে থাকার জন্য।

শুভকামনা

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: +

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপানার "+"টুকুই মূল্যবান আমার কাছে।

ভালো কাটুক সময়

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০৪

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: আমরা এখন এ রকম অবস্থায় ই আছি ।ভাল থাকুন ।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা সতত

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৩০

হিল্লো্ল বলেছেন: ভাই কাকুলির কাছেই আমার বাসা, এই রুট টা অনেক আগে থেকেই এরকম, তাও ভাল টাকা পয়সার উপর দিয়া গেসে, আসা করি আর এই ভুল করবেন না, আশা করি ভাল থাকবেন।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন।
আমার গল্পটা একদম সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা।

অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন

৫| ০১ লা মে, ২০১৫ রাত ৩:৪৮

ছায়েদ শাহ বলেছেন: কিছু করার নেই, কার কাছে অভিযোগ করবেন? পুলিশের কাছে? মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য বিপদ পড়েছিলেন। অভিযোগ করলে কয়েক মাসের জন্য বিপদে পড়ে থাকতে হবে।

০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ৮:৩৬

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: সত্যিই যেনো আমাদের অসহায় অবস্থা .।
হৃদ্য ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.