নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোরসন্ধানে

পুষ্পজিৎ

বাংঙ্গালী

পুষ্পজিৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চরিত্র গঠনে ঠাকুর শ্রী অনুকূল চন্দ্র

১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:২৯


হিমাইতপুর ছোট্ট গ্রামে পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা মনমোহিনী দেবীর গর্ভে বিশ্বমানবের পরম কল্যাণস্বরূপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। তিনি মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেই শুরু করে দেন নতুন কাজ, নতুন জীবন। তিনি নবউদ্যম নিয়ে উৎফুল্ল মনে উঠেপড়ে লেগে যান মানুষের চরিত্র গঠনের কাজে। তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কলূষমুক্ত করার জন্য এতো অপমান, এতো গঞ্জনা সহ্য করে চলেছিলেন তাঁর আপন গতিপথে। যেথায়ই দেখেছেন অসৎ প্রকৃতির লোকেরা শাসন পীড়নের মাধ্যমে সঠিক পথে আনা যাচ্ছে না, তখনই তিনি দেবদূত হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর প্রেম ভালবাসা নিয়ে। তাঁরই অংশ বিশেষ সংলাপ আকারে তুলে ধরছি :
১.
অনুকূলচন্দ্র : মানুষের দেহের রোগ সাময়িক, অল্প দিনেই সেরে যায়। কিন্তু দেহের ভিতরের রোগটা কীভাবে সারিয়ে তোলা যায় তাঁর একটা উপায় করতে হবে মা।
মনমোহিনী দেবী : খোকা তুই কি বলছিস! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না রে বাপ।
অনুকূলচন্দ্র : তুমি না বুঝলে কে বুঝতে পারবে মা, তুমি যে বিশ্বজননী। জগতের ভাল মন্দের চিন্তা করা তোমার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছি।
মনমোহিনী : এবার বলতো বুড়ো বাপ আমার, তুমি কি করতে চাও?
অনুকূলচন্দ্র : মা-মানুষের দেহের ভিতরে অবস্থিত মন-মন্দিরই সর্বসিদ্ধ আত্মিক তথা আধ্যাত্মিক জীবনের মূল আধার। মানুষ আজীবন কষ্ট পায় মনের এই রোগ নিয়েই এবং অপরকেও কষ্ট দেয়। তাই আমি ভেবে দেখছি আমার সর্বশক্তি, প্রেম ভালবাসা দিয়ে মানুষের মনের সুস্থতা ফিরিয়ে আনবো।
মনমোহিনী : বাবা-অনুকূল, ঐ অঞ্চলে মূঢ় নীতিজ্ঞানহীন অসৎ লোকের অভাব নেই। সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ। তাঁরা না পারে এমন কোনো হীন কাজ নেই। অবলীলাক্রমে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা, অগ্নিকান্ড, লুটতরাজ, নারীদের ওপর অত্যাচার চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি করে চলছে। যারা তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেছে তাদেরকেই প্রাণে বাঁচতে দেয়নি।
অনুকূল চন্দ্র : তাই বলে আমিও হাল ছেড়ে বসে থাকতে পারিনা। তুমি শুধু আশীর্বাদ করো তাতেই সফল হতে পারবো। আর এই কাজটা ভেবে চিন্তেই করবো। তা নিয়ে কোনো চিন্তা করো না মা।
(ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মনে মনে ভাবলেন হুট করেই তাদেরকে বাধা দিতে যাওয়া ঠিক হবে না। তাদের আসুরিক মনোবৃত্তি যাতে ক্ষুন্ন হয় সেদিক বিবেচনা করে ধীরে ধীরে কাজ করে যেতে হবে)
২.
অনুকূলচন্দ্র : বন্ধুগণ তোমাদের জন্য মিষ্টি এনেছি। নাও তোমরা সবাই মিলে আনন্দ করে খাও।
দুর্বৃত্তগণ : সেকি ডাক্তার! তুমি আমাদের এতো খাতির করছ যে বড়। কোনো সভ্য ঘরের সন্তান আমাদের বন্ধু হতে পারে? তাতে যে তোমার দুর্নাম হবে গো। নাকি কোনো ছল করছো?
অনুকূল চন্দ্র : আরে বন্ধুগণ-আমি দুর্নামকে ভয় পাই না। কোনো ছলও করছি না। শুধু আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই, বন্ধু হতে চাই। তোমাদের আলোচনায় থাকতে চাই। এবার বিশ্বাস হলো তো?
দুর্বৃত্তদের প্রধান : ডাক্তার অনুকূলচন্দ্র, আমাদের একজন পরম হিতাকাক্সক্ষী আমার মনে হচ্ছে। তোরা ভুল বুঝিস না। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি সঙ্গে থাকলে ভালই হয়।
দুর্বৃত্তগণ : ওস্তাদ আপনার কথাই মেনে নিলাম। কিন্তু ডাক্তারকেও বলে রাখবেন সে যেন আমাদের সঙ্গে কোনো প্রতারণা না করে।
অনুকূলচন্দ্র : কি বলছ বন্ধুগণ! প্রকৃত বন্ধু যে, সে কি তাঁর বন্ধুদের ক্ষতি চায়, নাকি করতে পারে?
৩.
গ্রামের মুরব্বি লোকেরা : কি যুগ পড়ছে রে বাবা-লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়ে শিবচন্দ্রের ছেলে অনুকূল একেবারে গোল্লায় গেছে। ডাক্তারি করতেছিল ভালই ছিল। কিন্তু সেসব ছেড়ে দুর্বৃত্তদের সঙ্গ নিচ্ছে। সবাই চলো তো, তাঁর বাবা মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ করি।
(ডাক্তার অনুকূলচন্দ্র তথাকথিত মান-সম্মানের ভয় না করে বিষাক্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে সুস্থ ও রোগমুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন কেন, কেউ বুঝবার চেষ্টাও করে নি। হয়তো এটাকেই বলে মোহ-মায়াজালে অন্ধ)
মুরব্বিগণ : শিবচন্দ্র বাড়ী আছ?
শিবচন্দ্র : আপনারা! কি সৌভাগ্য আমার। আসুন, আসুন, বসুন।
মুরব্বিগণ : আমরা বসতে আসিনি বাপু। জানতাম ভদ্রলোকের ঘরে ভদ্র সন্তান হয়। কিন্তু-
শিবচন্দ্র : কিন্তু কি?
মুরব্বিগণ : দেখ শিবচন্দ্র, তোমার ছেলে যে দুর্বৃত্তদের সাথে মিশে আড্ডা দেয় তা কি তোমার চোখে পড়েনি? এবার তোমাকে জানিয়ে গেলাম যা ভাল বুঝ তাই করবে।
শিবচন্দ্র : হায় ভগবান! এই ছেলেকে নিয়ে আর পারছিনা। মনো, ওরা কি বলে গেল তা তো তুমি নিজের কানেই শুনলে।
মনমোহিনী : ওরা ওদের কথা বলে গেছে তাতে কি হয়েছে? আমরা তো জানি, আমাদের ছেলে কেমন। অনুকূল এমন কোনো কাজ করতেই পারে না যাতে করে সমাজের অকল্যাণ হয়। তাছাড়া সে তো বাড়ি ফিরবে।
অনুকূলচন্দ্র : মা-আমাকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে গো?
মনমোহিনী : আর কি হবে? তুমি দুর্বৃত্তদের পাল্লায় পড়ে দুর্বৃত্ত হয়ে গেছ এই এই …..
অনুকূলচন্দ্র : জান মা পারিপার্শ্বিক অবস্থা দূষিত হলে সবার গায়েই তাঁর আঁচ লাগবে। তাই পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে তা নেভানোই সর্বপ্রথম কর্তব্য। তাঁর নীতিবাক্যই বলে দেয় সমাজে প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। কারণ পাপকে ঘৃণা করলেও পাপীকে ঘৃণা করা উচিত নয়।
এবার হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক বা বৌদ্ধই হোক, সবাই একই পিতার সন্তান। এখন তুমি বলো, কেন ওদের সঙ্গ নিচ্ছি?
মনমোহিনী : তাই বুঝি নীলকণ্ঠের মতো গরল পান করে প্রত্যেককে পথ দেখাতে চাইছিস?
অনুকূলচন্দ্র : হ্যাঁ, মা। তাঁরা আমার অকৃত্রিম সেবা-ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে অকপটে তাঁদের মনের গোপন কথা বলছে। আর যদি আমি তাঁদের সাথে মেলামেশা না করতাম তাহলে কি তাঁরা বলতে চাইতো?
মনমোহিনী : সত্যি তোর এই কৌশল দেখে আমিও মুগ্ধ হচ্ছি। তুইই পারবে বাবা, ওদেরকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে।
৪.
দুর্বৃত্ত প্রধান : তোরা ভাল করে কান পেতে শোন-আজই ঐ গৃহস্থ বাড়ির মেয়ে-ছেলেকে অপহরণ করবো। সে কি ডাক্তার! এই সময়ে তুমি?
অনুকূলচন্দ্র : তোমরা কোথাও যাচ্ছ বুঝি? আমিও তোমাদের সঙ্গে যাবো।
দুর্বৃত্তগণ : না-না। এটা কিছুতেই সম্ভব না। তোমার দ্বারা এসব কাজ হবে না।
অনুকূলচন্দ্র : তোমাদেরকে বুঝিয়ে বলছি-আমি সঙ্গে থাকলে তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং তোমাদের লাভই হবে।
দুর্বৃত্তগণ : কি নাছোর বান্দা রে বাবা। কি আর করা যাবে। ডাক্তার চল। কিন্তু মাথায় রেখো তোমার দ্বারা যেন কোন অনর্থ না ঘটে।
(তাদের সঙ্গে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রও গেলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা গৃহস্ত বাড়ির আস্তাকুড়ের পাশেই লুকিয়ে রইল। কখন এই গৃহস্ত বাড়ির মেয়েরা বাইরে আসবে আর সঙ্গে সঙ্গে অপহরণ করবে। কিন্তু ঠাকুর ঐ আস্তাকুড়ের দুর্গন্ধ ও সাথে প্রচন্ড মশার কামড় সহ্য করতে পারেননি। তাই জোরে জোরে ইচ্ছে করেই চাপড় মেরে মশা মারতে লাগলেন)।
দুর্বৃত্তগণ : ঐ যে ডাক্তার, আগেই বলেছিলাম না তুমি এসব কাজ পারবে না। আবারও সাবধান করে দিচ্ছি শব্দ যেন না করো।
অনুকূলচন্দ্র : দূর হো শালার মশা-
দুর্বৃত্তগণ : সে কি! ডাক্তার জোরে চপেটাঘাত করতে করতে মাঠের উদ্দেশ্যে ভীমবেগে দৌড়াতে লাগল কেন? নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। চলতো আমরাও তাঁর পিছু পিছু যাই ……
অনুকূলচন্দ্র : আর পারছি না বাপু, একটু জিরিয়ে নিই।
দুর্বৃত্তগণ : ডাক্তার তুমি এমনভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠে এলে কেন?
অনুকূলচন্দ্র : কি আর করবো-শালার মশার কামড় খেয়ে মরতে গিয়েছিলাম এই ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে আমার কি প্রাণের মমতা নেই? জীবনটা কি এতই তুচ্ছ।
দুর্বৃত্তগণ : ডাক্তার তুমি বজ্রকণ্ঠে কিসব বলছ?
অনুকূলচন্দ্র : কেন তোমরা বুঝতে পারনি? তুচ্ছ মেয়ে মানুষের পাছে ছুটে লাভ কি? আমরা কি পুরুষ নই যে পরস্ত্রী হরণের চেষ্টা করবো? আমাদের কি লজ্জা বলতে কিছুই নেই? আমরা কি এতই নিচ যে আত্ম মর্যাদা বিসর্জন দেব?
আমাদের শৌর্য-বীর্য, রূপ-গুণ দেখে নারীরাই ছুটে আসবে আমাদের পেছনে তবেই তো …..
দুর্বৃত্তগণ : হে ডাক্তার, হে প্রাণের ঠাকুর! আমরা সৃষ্টিকর্তাকে চোখে দেখিনি কিন্তু তুমি আমাদের নতুন জীবন সৃষ্টি করেছো, তাই তুমি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তোমার এই বজ্র-গম্ভীর বাণী আমাদের আত্মসম্মানে প্রচন্ডভাবে ঘা দিয়েছে। আমাদের অন্তর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তুমি দয়া করে তোমার পদতলে স্থান দিয়ে আশীর্বাদের হাত আমাদের মাথায় রেখ।
অনুকূলচন্দ্র : বন্ধুগণ! আমার পা ছাড়। আর কেঁদো না। তোমরা কাঁদলে আমার প্রাণেও ব্যথা লাগে। তাই আল্লাহই বলো, ভগবানই বলো, গডই বলো যে যাই বলো না কেন তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করো। দেখবে দুঃখ ক্লেশ সব দূর হয়ে গেছে। তোমরা তোমাদের ভুল বুঝতে পারছ তাতেই আমি প্রীত হয়েছি আর আমি কিছু চাই না।




সুত্রঃ http://sylheterdak.com.bd/details.php?id=6772

শুক্রবার, ১৮ আগষ্ট ২০১৭ খ্রীষ্টাব্দ | ৩ ভাদ্র ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৫২

আলআমিন১২৩ বলেছেন: কিছুদিন আগে আমার ছেলে সহ পাবনা গিয়েছিলম।ছেলে খুব শীঘ্রই ডাত্তার হবে। ওদের মেডিকেল কলেজে যা শিখায়না ঠাকুরের মঠে একবার গেলে তার অনেক কিছু শিখতে পারেন হবু ডাত্তারেরা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.