নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোয়েন্দা গল্প : অদ্ভুত ব্যাংক কেলেঙ্কারি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪২



সকাল প্রায় আটটার মত বাজে, ঘড়ি দেখল আতিক। সূর্যের কিরণ সরল পথ ধরে জানালা দিয়ে কক্ষের ভিতর প্রবেশ করছে। কিছুক্ষণ হলো রেমেজ ঘুম থেকে উঠেছে। হাত মুখ ধুয়ে, পোশাক পাল্টে সবেমাত্র ইজিচেয়ারে শরীর এলিয়ে বসেছে। হাতে চায়ের কাপ। আয়েশ করে দু’চুমুক দিতে না দিতেই কলিং বেলের আওয়াজ শোনা গেল। আতিক দরজা খুলতে না খুলতেই হুড়মুড় করে ভিতরে প্রবেশ করল একজন ভদ্রমহিলা। সে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা হতবাক হলেও মোটেও বিচলিত হল না। কারণ বিপদে পড়ে অহরহ অনেক লোকই এমন অস্থিরচিত্তে ছুটে আসে রেমেজের কাছে। দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে তার। দরজা আটকে একপাশে গিয়ে বসল সে। রেমেজ আর ভদ্রমহিলা সামনা-সামনি বসেছে। ভদ্রমহিলা কিছু বলার আগেই রেমেজ বলল, ‘মিসেস মারিয়া আজাদ এখন তাহলে আপনার সমস্যার কথা শোনা যাক।’
মহিলা তৎক্ষণাৎ চমকে উঠল।
‘আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?’
‘আাশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আপনার হাতব্যাগে ছোট্ট করে ঐ যে লেখা আছে। আপনি বোধহয় স্কুলে মাস্টারী করেন?’
‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন’ মহিলা কিছুটা অপ্রস্তুতভাবে বলল।
‘সমস্যাটা হচ্ছে আমার স্বামীকে নিয়ে। গতকাল সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছে। তারপর আর হদিস মেলে নি। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই আপনার কাছে ছুটে এলাম। কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ’
মিসেস মারিয়া আজাদ যথেষ্ট দুঃশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। রেমেজ জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কিছু সন্দেহ করছেন কি?’
‘আমাদের সাথে কারো সম্পর্ক এত খারাপ ছিল না যে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’
‘আপনার স্বামী কি পেশার সাথে জড়িত?’
‘তিনি ব্যবসায়ী, স্থানীয় মোটর বাইক পরিবেশক’
‘আপনাদের বিয়ে হয়েছে কত বছর যাবৎ?’
‘প্রায় ছয় বছর।’
‘কোন সন্তান আছে কি?’
‘না। ’
সন্তানের কথা উল্লেখ করতেই মারিয়া আজাদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বিষয়টা রেমেজের নজর এড়াল না।
‘আপনার স্বামীর কোন ছবি সঙ্গে এনেছেন কি?’
‘জ্বী, এই নিন । ’
মারিয়া আজাদ হাতব্যাগ থেকে একটা ছবি বের করে রেমেজের হাতে দিল। রেমেজ ছবিটা একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। নিচে নাম লেখা ‘রফিক আজাদ’। বেশ সুদর্শন একজন ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে।
মারিয়া আজাদ বলল, ‘গত কিছুদিন যাবৎ বেশ উদ্বিগ্ন বলেই মনে হচ্ছিল। জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও কিছু বলেনি। হঠাৎ এমন বেপাত্তা হওয়ায় কেউ কেউ গুম হওয়া বা খুনের আশঙ্কাও করেছেন। কারণ বিয়ের পর এমনটা কখনও ঘটেনি। যথাসময়ই বাসায় ফিরত। সমস্যা হলে ফোন করে জানিয়ে দিত। কিন্তু ফোনটাও গতকাল থেকে বন্ধ। কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
কিছুটা শঙ্কিত দৃষ্টি মেলে নিশ্চুপ হয়ে গেল মহিলাটি। মারিয়া আজাদের বিহ্বলতা আঁচ করতে পেরে তাকে মনের সাহস যোগানোর জন্য রেমেজ বলল, ‘দয়া করে শান্ত হোন। এখনই এত মুষড়ে পড়বেন না।’
‘ওর কিছু একটা অঘটন ঘটলে সেই দায়টা আমার উপরও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে কেউ কেউ। বিশেষ করে ওর বড় ভাই। প্রচুর সম্পদের লোভ লোকটার। আমার স্বামীর সাথে একদম বনিবনা হয় না।’
‘তার নামটা বলুন। ’
‘মুনিম আজাদ।’
‘আপনার বাসার ঠিকানাটা দিন। ’
‘এই কার্ডে সব লেখা আছে, নিন।’
রেমেজ হাত বাড়িয়ে কার্ডটি নিল। আরো কিছুক্ষণ কথোপকথনের পর মহিলা চলে গেলেন। মহিলাটি যে পতিভক্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই। এতক্ষণ আতিক মনোযোগের সহিত প্রতিটি শব্দ শ্রবণ করছিল। সে ভাবছে ব্যাপারটা নিয়ে। রেমেজকে বলল, ‘আমার ধারণা লোকটি খুন হয়েছে। সফল ব্যবসায়ীদের অনেক শত্রুু থাকে। মানব সমাজে আজকাল একের সাফল্য অপরের হিংসার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।’
‘তোমার যুক্তি মন্দ নয়। তবে আমার ওরকমটা মনে হচ্ছে না।’
‘হাতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় বিষয়টা বেশ জটিল হয়ে উঠেছে তাতে সন্দেহ নেই।’
‘জটিল বিষয়কে সহজ দৃষ্টিতে দেখলে কাজটাও সহজ হয়ে যায়।’
ইতিমধ্যে ডঃ ইমরুল ও বসবার কক্ষে উপস্থিত হয়েছে। সংবাদ শোনার জন্য টিভির সুইচ অন করল সে। দু’মিনিট যেতে না যেতেই তিনজনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে আছে টিভির পর্দার উপর। ব্রেকিং নিউজ “ধানমÐিতে রহস্যময় ব্যাংক ডাকাতি।” ঘটনার বিবরণ শুনে আতিক আর ডঃ ইমরুলের মুখ হা হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে রেমেজের ফুরফুরে মেজাজের পরিবর্তন ঘটল। রীতিমত গম্ভীরতা ফুটে উঠেছে তার চোখে মুখে।
ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা উধাও হয়েছে অথচ চুরির কোন তথ্যই দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। চোর কিভাবে ঢুকল বা বেরুল কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। এমনকি ভিডিও ফুটেজ গুলোতেও কিছু ধরা পড়ে নি। অবশ্য কয়েকটি সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে। আজকের দৈনিক পত্রিকাটি হাতে নিল রেমেজ। খবরটা প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে। সঙ্গে ব্যাংকের সম্মুখ অংশের একটি ফটোও আছে। রেমেজ খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিটা দেখছে। হেডিংটা এরকম “ব্যাংক হতে রহস্যময় অর্থ আত্মসাৎ।”
ঘটনার বিবরণ অনেকটা এরকম-
“প্রতিদিনের মত গতকালও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের চিরায়ত রূটিনমাফিক কার্য সম্পাদন করে বাসায় ফিরেছেন। পরিবেশ পরিস্থিতি সবই আর দশদিনের মতই ছিল। কিন্তু কিভাবে রাতারাতি এতগুলো টাকা উধাও হয়ে গেল কোনভাবেই কেউ হদিস মিলাতে পারছে না। ব্যাপারটা যেমন অদ্ভুত ঠিক তেমনই রহস্যময়। ইস্ট-ওয়েস্ট ব্যাংকের ইতিহাসে এরকম ঘটনা আগে কখনই ঘটেনি। কখন টাকাগুলো গায়েব হয়েছে সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। ডিউটিরত দু’জন গার্ড উপস্থিত ছিল সারারাত গেটে।”
ব্যাপারটা প্রথমে তারাই লক্ষ্য করে। রাত দুটোর দিকে হঠাৎ অদ্ভুত শব্দে টনক নড়ে তাদের। একজন ভিতরে এসে সার্চ করেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আবিস্কার করেন রিজার্ভের লকারগুলো ভাঙ্গা। শাখা অফিসটির রিজার্ভে যত টাকা ছিল সবই উধাও! গার্ড দুজনই ব্যাপারটা প্রথম লক্ষ্য করে। সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তারা। পুলিশসহ সরকারী গোয়েন্দারাও যথারীতি উঠে পড়ে লেগেছে রহস্য উন্মোচনের কাজে। কিন্তু ব্যাপারটা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেছে। অপরাধী সম্পর্কে কেউ এখনও নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছে না। এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডঃ ইমরুল বলল, ‘সরকারী গোয়েন্দাদের কষ্টের আর শেষ নেই! আর এই অঘটন কাল আবার আরেকটা বা তারও বেশী। আর ওপরওয়ালাদের চাপ তো আছেই।’
‘ওসব সহ্য হয়না বলেই তো সরকারী গোয়েন্দা অফিসার হওয়ার সুযোগ পেয়েও সুযোগটা কাজে লাগালাম না। স্বাধীনভাবে নিজের মতো করে কাজ করতে ভালবাসি আমি, সেটা তুমিও জানো।’
‘হ্যাঁ, তা জানি বটে। তোমার তো গোয়েন্দাগিরি করার সরকারী অনুমোদনপত্রও আছে।’
‘হুমম।’
‘তাহলে এখন কোন কেসটা নিয়ে মাথা ঘামাবে?’
‘দেখো ব্যাংক কলেঙ্কোরির ব্যাপারে আমাকে এখনও ডাকা হয়নি। হবে বলেও মনে হচ্ছে না। কাজেই এ ব্যাপারে বৃথা সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। মারিয়া আজাদের কেসটার দিকেই মনোযোগ দিতে হচ্ছে।’
আতিক বলল, ‘স্যার, আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি?’
‘আপাতত দরকার নেই। প্রয়োজন হলে বলব। অফিস নাম্বারে ফোন এলে বলবে আমি ঘুমাচ্ছি। আর তোমাকে একটা কাজ দিয়ে যাই। ইন্টারনেটে রফিক আজাদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকো। এক ঘন্টা পর সমস্ত তথ্য নোট করে আমাকে ইমেইল করবে।’
‘জ্বী স্যার।’
রেমেজ বেরিয়ে পড়ল। বেরুনোর পূর্বমুর্হুতে প্রিয় রিভালবারটা আর রফিক আজাদের ছবিটা একবার নেড়েচেড়ে দেখল। কিছুক্ষণের মধ্যে কর্মব্যস্ত শহরের লোকের ভিড়ে মিলিয়ে গেল সে। গা ঢাকা দেওয়ার সুবিধার্থে বাইরে বেরুনোর ক্ষেত্রে প্রায়ই তাকে ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়।
রেমেজের কথামত আতিকও ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি শুরুকরে দিল। ডঃ ইমরুল বসবার কক্ষে গবেষণার কোন একটা বিষয়বস্ত ু নিয়ে ভাবতে ভাবতে পায়চারী করছিলেন। আনমনে সোফার উপর বসা মাত্র লাফিয়ে উঠলেন। ওখানে যে গরম কফির কাপটা রেখেছিলেন, তা হয়ত ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু যা হবার তা তো হয়ে গেল। পরনের সাদা পাঞ্জাবিটা নষ্ট হল এই আর কি! গরম ছ্যাকার কথা আর কী বলব!
আতিক কাজে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। কিছুটা বিরক্ত বোধ করলেও ফোনটা রিসিভ করল সে। অপর পাশ থেকে সুকণ্ঠী এক মহিলা বলল, 'মিঃ রেমেজ বলছেন?
'না, আতিক বলছি। উনি ঘুমাচ্ছেন।'
'আমি মারিয়া আজাদ বলছি। উনাকে বলবেন, আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার স্বামী বাসায় ফিরেছেন। কাজেই উনাকে বৃথা কষ্ট করতে হবে না।'
'আচ্ছা, ঠিক আছে।'
ফোনটা রাখার পর মনে মনে মহিলার উপর রাগ হল তার। অযথা সে তাদের সময় নষ্ট করালো। আতিক ভাবল, যিনি এই মাত্র কথা বললেন তিনি কী আসলেই মারিয়া আজাদ! হ্যাঁ, কণ্ঠ তো অনেকটা সেরকমই মনে হল। এতক্ষণ কষ্ট করে তথ্য নোট করেছে সে। এখন দোটানায় পড়ে গেল, রেমেজকে মেইল করবে কিনা! যাহোক কথোপকথোনের বিষয়টা উল্লেখ করে সে মেইল পাঠাল।

দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলো। বিকেলের পর সন্ধা। তবুও রেমেজের দেখা নেই। রেমেজ যখন বাসায় ফিরলো রাত প্রায় দশটা বাজে। চোখে মুখে চকচকে ভাব। যদিও শরীরের উপর বেশ ধকল গেছে সেটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। তবুও তাকে যেন বেশ উৎফুল্ল বলেই মনে হচ্ছে। ড. ইমরুলও ঘন্টা খানেক আগে বাসায় ফিরেছে অফিস থেকে। আতিক আর ইমরুল কে তাঁর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এল। ঠিক যেমনটা ভেবেছিলাম।’
তাদের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। আতিক বলে উঠলো, ‘স্যার কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছি না।’
‘সবই বলব, বড্ড খিদে পেয়েছে। আগে খাবার রেডি কর আমি গোসলটা সেরে আসি।’
রাতের খাবার শেষ করে তিনজন বসবার কক্ষে একত্রে বসল। আজকের অভিযানের বিবরণ শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো তারা।
রেমেজ বলল ‘আতিক তোমার সাথে ফোনে যে কথা বলেছিল সে আসলে মারিয়া আজাদ নয়।’
‘কি বলছেন আপনি!’
‘আমাদেরকে ধোকা দেওয়ার জন্য মারিয়া আজাদের কন্ঠ নকল করা হয়েছিল।’
ড. ইমরুল জিজ্ঞেস করল ‘তারপর কতদুর কি হলো?’
‘এখান থেকে বেরুনোর পর সোজা চলে গেলাম রফিক আজাদের মোটর বাইকের শো-রুমে। শো-রুম ভবনটি আর ইষ্ট-ওয়েষ্ট ব্যাংক শাখাটির অবস্থান পাশাপাশি, শুধুমাত্র মাঝ খানে রাস্তাটির ব্যবধান।’
‘শো-রুম এখন বন্ধ নাকি খোলা?’
‘মারিয়া আজাদের নিদের্শে প্রতিদিনের মতো আজ ও কর্মচারীরা অফিস চালু রেখেছে। ভেতরে বা বাহিরে উপরে বা নিচে আমার যা কিছু দেখার প্রয়োজন দেখে নিলাম। কর্মচারীদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলাম কিছুক্ষণ।’
‘সন্দেহজনক কি পেলে তাতে?’
‘কিছুতো অবশ্যই পেয়েছি।’
‘ব্যাংকের দিকে নজর দাও নি?’
‘পুরো ভবনটা পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। আর সরকারী গোয়েন্দারা মাছির মতো ঘুরঘুর করছে। মাথার ঘাম পায়ে পড়তে শুরু করেছে তাঁদের। নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র খুঁজে পাচ্ছে না হয়তো। যদি একবার তাদের কারো মুখখানি দেখতে তুমি তাহলে বুঝতে।’
‘মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের বেশ চাপেই থাকতে হয় সবসময়, তাই নয় কি?’
‘হুমম, যাহোক যখন বাইরে বেরুলাম রাস্তায় আগের মত আর কর্ম চঞ্চলতা নেই। সরকারী নির্দেশে পুলিশ পাবলিক গাড়ি গুলোকে চলতে দিচ্ছে না এই রাস্তায়। ফুটপাতের উপর দিয়ে হাঁটছি আর চিন্তা করছিলাম কিছু ব্যাপার মিলিয়ে নিতে। হঠাৎ পেছন থেকে কাঁধের উপর হাত রাখল কেউ। ফিরে তাকাতেই দেখি গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার মামুন। বেশ কিছু দিন পর দেখা হওয়ায় দুজনেই বেশ উৎফুল্ল হলাম। তদন্তের ব্যাপারে কথা হল। বেশ ধোঁয়াশার মধ্যে আছে তারা।’
‘কি আশ্চর্য এতোগুলো লোক মিলেও কিছু করতে পারছে না।’
‘আগে পরিবেশ পরিস্থিতির ব্যাপারটা চিন্তা কর। ভেতরের কয়েকটি তালা ভাঙ্গা, বাইরের সবগুলো আগের মতোই ঠিকঠাক। ভেতরের কয়েকটি সি.সি ক্যামেরা অকেজো এছাড়া বাাঁকি গুলো ঠিক আছে। ভিডিও ফুটেজ গুলোতেও সন্দেহজনক কিছুর সন্ধান মিলছে না। গার্ডদের চোখেও সন্দেহ হওয়ার মতো কিছু পড়ে নি। অপরাধী কিভাবে ভেতরে ঢুকলো বা কিভাবে বেরুল কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সন্দেহজনক আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না। সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার।’
‘তারপর ওখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে এলাম। নিজের কেসের দিকে মনোযোগী হলাম। তোমার তথ্যবহুল মেসেজটাও বেশ কাজে লেগেছে আমার। রফিক আজাদের বিভিন্ন পরিচিত মহলে খোজ খবর নেওয়া শুরু করলাম। কিন্তু আশানুরুপ ফলাফল পেলাম না। বিকেলে রফিক আজাদের বাসায় গেলাম। মারিয়া আজাদ আমাকে দেখে যারপরনাই সন্তুষ্ট হলো বলেই মনে হলো। আগ্রহের সহিত জিজ্ঞেস করলো কোন সন্ধান পেলাম কিনা। বাসাটাও একটু ঘুরেফিরে দেখছিলাম কোন ইঙ্গিত বা আভাস পাওয়া যায় কিনা এই আশায়। যখন বাসা থেকে বের হব ভাবছিলাম ঠিক তখনই আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে রফিক আজাদ বাসায় ফিরলেন! কি আশ্চর্য! আমার সমস্ত পরিশ্রমই কি বৃথা যাবে তাহলে! কোথায় ছিলেন, কোন সমস্যা হয়েছিলো কিনা এসব প্রশ্নের উত্তরে কিছুই বললেন না। এমনকি মুখ ফসকেও কিছু বেরুল না।’
‘আচ্ছা লোক তো!’
‘লোকটির ভাব দেখে মনে হল আমি কেটে পড়লেই যেন তিনি বাঁচেন। যাহোক, আমাকে বিদায় নিয়ে চলে আসতে হল। পুরো দিনটা এর পিছনে অযথা নষ্ট করেছি। তাই জানতে ইচ্ছা হল হঠাৎ অদৃশ্য হওয়ার রহস্যটা কি আসলে।’

একটু নিরিবিলি জায়গা খুঁজতে খুঁজতে চলে এলাম ধানমÐি লেকে। এক কোণায় বসে রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছি। আমার পাশ দিয়ে একজোড়া তরুণ-তরুণী গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছিল। আনমনে তাদের কথা শুনছিলাম। তরুণটি বলল ‘তুমি দেখছি সন্ত্রাসী বিছলুর কথা এখনো ভুলতে পারছ না। সে তো তিন মাস আগেই র‍্যাবের হাতে ক্রসফয়ারে মারা গেছে।’
‘শয়তানটা কি আমাকে কম জ্বালাতন করেছে? তুমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলে।’
‘ও কি এখন মাটি খুড়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসবে নাকি!’
‘ব্যাস মাটি খোঁড়া শব্দটি শুনতেই আমার পিলে চমকে উঠল। তখনই সকল সমস্যার সমাধান করে ফেললাম।’
আতিক বলে উঠল, ‘তারমানে মাটি খুড়ে ব্যাংক ডাকাতি করা হয়েছে।’
‘ঠিক তাই।’
‘রফিক আজাদই কি তাহলে এই হীন কাজটি করেছে।’
‘না রফিক আজাদ নয় তবে তারই প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়।’
‘তাহলে কে এই অর্থলুট করল? বিমল সুর নামের একজন বড়মাপের ঠিকাদার। তিনিই ওই ব্যাংক ভবনটির নির্মাণ কাজ করেছিলেন। ভবনটির পুরো কাঠামোর তথ্য তার নখদর্পনে ছিল।’
‘কাজটা তো তাহলে পূর্বপরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে।’
‘হুমম ঠিক বলছ। শোরুম ভবনের পাতাল ঘর থেকে ব্যাংক ভবনের পাতাল ঘরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। শুধুমাত্র মাঝ খানের রাস্তার দূরত্ব। মাটির নিচে সুড়ঙ্গ তৈরি করে খুব সহজেই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
ড. ইমরুল বলে উঠল, ‘ বেশ অভিনব পদ্ধতি তো! এই ডিজিটাল যুগেও যে এমন খোঁড়া খুড়ি করে চুরি ডাকাতি করবে সেটা তো ভাবতেই পারিনি। রফিক আজাদ তাকে সহযোগিতা করল কেন?’
‘প্রথমত রফিক আজাদ হয়তবা করতে চাননি। পরে বিমল সুরের ফাঁদে পড়ে রাজি হয়েছে।’
‘কি এমন ফাঁদ পেতেছিল সে।’
‘মারিয়া আজাদের সাথে ছয় বৎসরের সংসার জীবনে কোন সন্তানের মুখ না দেখে তিনি আরেক জন মহিলাকে বিয়ে করেন। কিন্তু মারিয়া আজাদ জানতে পারলে সমস্যা হতে পারে ভেবে দ্বিতীয় স্ত্রীর ব্যাপারটা গোপন রাখতে সচেষ্ট হন। কিন্তু ব্যাপারটা কোন গোপন সূত্রে জানতে পারেন বিমল সুর। তার এই দূর্বলতাকেই কাজে লাগালেন তিনি।’
‘দারুণ চতুর লোক বটে।’
‘শোরুম ভবনের পাতাল কক্ষের কিছু ঠিকাদারী কাজ হাতে নিয়েছিল বিমল সুর। ঠিক তখনই এই কুমতলবটি তার মাথাই আসে। শেষ পর্যন্ত হাঁড়ির খবর ফাঁস করে দেবার ভয় দেখিয়ে বশে আনে তাকে।’
‘এসব কি তোমার আনুমান নাকি সত্যতা যাচাই করে দেখেছো?’
‘প্রথমে আনুমান করছেলিাম পরে যাচাই করে দেখলাম যা ভেবেছি তার অধকিাংশই হুবহু মিলে গেছে।’
‘সুড়ঙ্গটা পরির্দশন করেছ নাকি?’
‘অবশ্যই ছদ্মবেশে বিমল সুরের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে শোরুম ভবনের পাতাল কক্ষ দিয়ে অনায়াসে ঢুকে পড়লাম। কেউ বিন্দুমাত্র সন্দেহও করল না। কারণ রফিক আজাদ ছাড়া কর্মচারীরাও সুড়ঙ্গের ব্যাপার খানা জানত না। অনেক রাতে কেউ কেউ মাঝে মাঝে দেখতে পেয়েছে কাভার্ড ভ্যান গাড়িতে বস্তাবন্দী মালামাল উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আসলে ওগুলো ছিল মাটি ভর্তি বস্তা।
‘সুড়ঙ্গের ভিতর কি দেখলে?’
‘সুড়ঙ্গটা খুব চওড়া না হলেও তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য বেশ একটা রহস্যময় ভৌতিক পরিবেশ। সুড়ঙ্গের একেবারে সম্মুখ অংশে গিয়ে থেমে যেতে হল আমাকে। সুড়ঙ্গের মুখটা খুব যতœ সহকারে বন্ধ করা হয়েছে, যেন বাইরে থেকে বোঝার উপায় না থাকে।’
‘তারপর কি করলে?’
‘আনুমানিক সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্যের একটা হিসাব কষলাম, মুখটা কোথায় গিয়ে উঠতে পারে। যাহোক কিছু দেখার প্রয়োজন মনে করলাম না। বাহিরে বেরিয়ে কয়কেজন সরকারী গোয়েন্দাকে ব্যাপারটা সুন্দরভাবে জানিয়ে ও বুঝিয়ে দিলাম। এরপর সোজা বাসায় চলে এলাম।’
‘তাহলে কাজ তো পুরোপুরি শষে হয়নি।’
‘তা বটে। দেখো ব্যাংকে অর্থচুিরর কেসটা আমার নয়। তাই ও ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না। ওরা যেন সহজে বিমল সুরকে ধরতে পারে সেই ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছি।’
‘ভালই করেছ দেখছি। ঁেকচো খুঁড়তে সাপই বটে।’
‘হুমম। শোরুম ভবনের সামনের ভিডিও ফুটেজগুলো দেখলে গাড়ির নাম্বার পাওয়া যাবে। কাজেই গাড়ি আঁটকাতে অসুবধিা হবে না। আর পালের গোঁদা বিমল সুর মহাসমারোহে পার্টি আয়োজনে ব্যস্ত আছেন। এই ব্যাপারেও জানিয়েছি। এখন বাকিটা তাঁদের কাজ।’
রাত বারোটা বেজে গেছে প্রায়। হঠাৎ রেমেজের ফোন বেজে উঠল। রেমেজ বলল, ‘এইতো গোয়েন্দা অফিস থেকে ফোন এল বলে মনে হচ্ছে।’
ঠিক তাই। ফোন রিসিভ করতেই একটা পুরুষ কন্ঠ বলে উঠল, ‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যা বলেছেন খাপে খাপ মিলে গেছে। ব্যাংক ভবনের পাতাল ঘরের একটা পরিত্যক্ত জঞ্জালর্পূণ কক্ষে সুড়ঙ্গের মুখটা বন্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। অবশ্য সাধারণভাবে দেখে বোঝার উপায় ছিল না। গাড়িও আটক করা হয়েছে। আর পালের গোঁদাকে কিছুক্ষণ আগে পার্টি থেকে আটক করা হয়েছে। প্রচুর ধূর্ত লোক বটে। বুঝতে পেরে মেয়ে মানুষের ওড়না মাথায় জড়িয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ধরা পড়তেই হল। আমি ঝাঁপিয়ে পড়ায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা গড়ে তুলতে পারে নি। এবার বাছাধন বুঝতে পারবে। ..........’
রেমেজকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একটানা এভাবে বকে গেল লোকটা। যাহোক, আলাপ শেষ হলে রেমেজের ঠোঁটের কোনে মৃদু হাঁসির রেখা ফুঁটে উঠল। রেমেজ বলল, দেখো মিডিয়াতে সরাসরি কী রকম জয়গান গাওয়া হয়!’
‘তুমি সহায়তা না করলে তো তারা সহজে সমাধান করতে পারত না।’

পরদিন সকালে পত্রিকা হাতে নিয়ে লেখাগুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলেন ড. ইমরুল। ‘ব্যাংকের অর্থ চুরি রহস্যের সমাধান’ শিরোনামে অজস্র লেখা ছাপা হয়েছে। তাতে ঘটনার বিবরণ বা গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কে কি মন্তব্য করেছেন কোন কিছুই উল্লেখ করার বাকি নেই। তবে লেখাগুলোর মূলকথা এরকম “সরকারি গোয়েন্দাদের কঠোর পরিশ্রম ও তীক্ষ্ণ বুিদ্ধমত্তার জোরে সহজেই ব্যাংকের অর্থ চুরির রহস্য উন্মোচিত হল। তবে এক্ষেত্রে রাফিন রেমেজ নামক একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভও বেশ সহায়তা করেছেন।”


লেখক
মোঃ রাকিব খান
এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৯

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা দুর্বল গোয়েন্দা গল্প হিসাবে। দুইটা জিনিষ বেমানান এই গল্পে- (১) কেউ নিখোজ হলে পরেরদিনই কেউ প্রাইভেট গোয়েন্দার কাছে যায় না, প্রথমে যায় পুলিশের কাছে; পুলিশ কয়েকদিন ঘোরানোর পর প্রাইভেট আইয়ের পাত্তা লাগায় লোকজন আর (২) ব্যাংকে অদ্ভুত শব্দ শুনলে গার্ড কখনই লকার রুমে ঢুকে দেখবে না লকার ভাঙা হয়েছে কিনা, লকারের গেট ভাঙা দেখলেই সাথে সাথে ব্যাংকের ম্যানেজার আর কাছের পুলিশ স্টেশনে ফোন করে। ভেতরে ঢুকলে সেটা ক্রাইম সিনে নাক গলানো হয় এবং সাসপেক্ট লিস্টে নাম ওঠাও কমন ঘটনা। এবং এতটাই কাকতালীয়ভাবে রেমেজ ক্রাইমটা কিভাবে হয়েছে জেনে ফেলেছে (ধানমন্ডি লেকে দুজনের কথাপোকথন থেকে) যে এতে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের চেয়ে ভাগ্যই বড় ফ্যাক্ট হয়ে খানিকটা অগোছাল একটা ফিনিশিং-এর দিকে গল্পটাকে মুভ করিয়েছে।

বাইদ্যাওয়ে, আপনি সম্ভবত নতুন লেখক। ব্যাপার না, প্রথম প্রথম দুচার জায়গায় ভুল হবেই। আরও পড়ুন এবং চর্চা চালিয়ে যান। গুডলাক :)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪

মোঃ রাকিব খান বলেছেন: আপনি ঠিকই ধরেছেন আমি নতুন। ধন্যবাদ আপনার সুপরামর্শের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.