নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামুলি গল্প : "একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার্থী "

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১০

এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। ফলাও করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ফারহানও একটা কোচিং সেন্টারে  ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছে। আজিমপুরে একটা মেসে উঠেছে সে। একেবারে নতুন পরিবেশ, কোনকিছুই তার চেনা নয়। রুমের মধ্যে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। তাই সন্ধ্যায় বাইরে বেরুলো একটু হাটাহাটি করার জন্য। গলিতে নেমে নাক বরাবর হাটতে শুরু করল। আরেকটু সামনে গিয়ে হাতের বামে তারপর ডানে গেলেই একটা ফাঁকা স্থানে পৌঁছাবে সে। জায়গাটা মোটেও ফাঁকা নয়, লোকজনে গিজগিজ করে সবসময়। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে, তরুণ -তরুণীদেরও আড্ডা দিতে দেখা যায়।


মাঠের এককোণে এসে বসল সে। সামনে গরম গরম সিঙ্গারা, সমুচা বিক্রি করছে এক লোক। লোকটাকে বলল, 'মামা দুটো সিঙ্গারা আর দুটো সমুচা দিন। '


সে জানে বাইরের এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবুও লোভ সামলাতে পারলো না। একটা সিঙ্গারা শেষ করে আরেকটা হাতে নিয়েছে তখনই একটা কোমল কন্ঠস্বর বলল, 'ভায়া একটু সাহায্য করেন। সারাদিন কিছুই খাই নি। '


তার সামনে দন্ডায়মান ছোট একটি মেয়ে। উস্কো -খুস্কো চুল, গায়ে ছেঁড়াফাঁড়া নোংরা একটি পোশাক। সিঙ্গারা, সমুচার প্লেটটা মেয়েটার হাতে দিয়ে মানিব্যাগ থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে তার হাতে গুজে দিল। বিল পরিশোধ করে দেখলো আর মাত্র বিশ টাকা আছে তার মানিব্যাগে। সে জানে তার এই পঞ্চাশ টাকা দিয়ে তাদের দারিদ্র্যতা দূর হবে না। তার এত টাকাও নেই যা দিয়ে সে তাদের জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থা করবে। এসব ভেবে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো তার। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে হয়তো এদের জন্য ভালো কিছু করা যেত। 


অপরিচিত জায়গা, পরিচিত লোকজনও নেই আশেপাশে। তাই আবার ফিরতি পথ ধরল সে। গলিতে ঢুকে খানিকটা এগুতেই অন্ধকারের মধ্য থেকে দুজন লোক এসে হাজির হল সামনে। নির্জন গলিপথ, কাউকে দেখা যাচ্ছে না চারপাশে। সামনের লোকটার হাতে একটা সিগারেট জ্বলছে। একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, 'ভালো চাইলে যা আছে দিয়া দে। '

ফারহান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মানিব্যাগটা পকেট থেকে বের করল সে।  লোকটা ছোঁ মেরে তার হাত থেকে মানিব্যাগটা ছিনিয়ে নিলো। একটা বিশ টাকার নোট ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেল না নেওয়ার মতো। হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠল, 'ওই ব্যাটা বিশ টেকা নিয়া ঘুরস ক্যান? 'অপর লোকটিকে বলল, 'ওর পকেট চেক করে দ্যাখ তো। '

'বস খালি পকেট, কিছুই নাই। '

'ধুরো ব্যাটা, দুইজনের সিগারেটের টাকাও তো হইবো না। ওই তুই ভাগ, যা দৌঁড়া। '


ছাড়া পেয়েই ফারহান দ্রুত বাসায় ফিরে এল। ভুলে ভুলে ফোনটা বাসায় রেখে গিয়েছিল, না হলে সেটাও যেত। তার আফসোস হলো ওই বিশ টাকার জন্য! টাকাটা মেয়েটিকে দিয়ে দিলেও কাজে লাগতো। 


পরদিন ফারহানকে কোচিংয়ে ভর্তি করে দেওয়ার জন্য মেসের এক বড় ভাই তাকে সঙ্গে নিয়ে গেল। উনি স্বনামধন্য একটা কোচিং সেন্টারে পার্টটাইম ক্লাস নেন। সেখানেই ফারহানকে ভর্তি করে দেবে। ভর্তিবাবদ তাকে 18 হাজার টাকা জমা দিতে হল। ভর্তি শেষে মেস বড় ভাই শফিউল বলল, 'তুমি একটু দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়াও। '

ফারহান দরজার বাইরে এসে দাঁড়ালো। ভেতরের কথোপকথনের শব্দ তার কানে এল। 

'এইটা সহ মোট আটজনকে ম্যানেজ করে দিলাম। এবার আমার কমিশনটা দিন। '

'তা তো দেবই। এত ব্যস্ত হওয়ার কি আছে। '

'টাকাটা খুবই দরকার। '


ফারহান বুঝতে পারলো এখানেও সে একটু ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু সে নিরুপায়! এই শহরে তার চেনাজানা তেমন কেউ নেই। গ্রাম থেকে এসেছে কয়েকদিন হল। গ্রামে ভালো ছাত্র হিসেবে সবাই তাকে চিনতো। কিন্তু এখানে কেউ তাকে চেনে না। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। নতুন হিসেবে অনেক কিছুই তার জানার বাকি আছে।


প্রায় একমাস পার হয়েছে।নিজেকে মোটামুটি গুছিয়ে নিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে সে। কোচিংয়ের পরিক্ষাগুলোর ফলাফলও ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের একসাথে ক্লাস করানো হয়। একটা মেয়েকে তার খুব ভালো লাগে। নাম মিমি। মেয়েটির সাথে কখনও কথাও হয় নি তার। দু 'একবার চোখাচোখি হয়েছে মাত্র। তার চাহনী, দুধে আলতা গায়ের রং, অঙ্গভঙ্গি সবকিছুই যেন বিমোহিত করে ফারহানকে। সে কিভাবে তার ভালো লাগার কথা জানাবে মিমিকে? এই লাইনে সে একেবারেই নতুন। কারো সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা বা পরামর্শ করারও উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। কোনো কাজেই মনোযোগ আসছে না তার। মনের আয়নায় বারবার মেয়েটির মুখের অবয়ব ফুটে উঠছে। 

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। কিভাবে কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। শরীফ নামের এক বন্ধুর কাছে একদিন মনের অব্যক্ত কথাগুলো বলে ফেলল সে। শরীফ তাকে অভয় দিয়ে বলল, 'এ তো কোনো ব্যাপারই না। তুই একদম চিন্তা করিস না। আমিই সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।  এ ব্যাপারে আমাকে গুরু মানতে পারিস। '

'তা না হয় মানলাম। কিন্তু তোমার মতো আমি সকালে একজনের সাথে বিকেলে আরেকজনের সাথে পার্কে, রেস্টুরেন্টে, রাস্তায় ঘুরতে পারব না। '

'তোকে তো তা করতে বলছি না। তিনদিনের মধ্যে আমি একটা উপায় বের করবই। তুই একদম ভাবিস না। '


সত্যি সত্যি ঠিক তিনদিন পর হাজির হল শরীফ।ফারহানকে একটা ফোন নাম্বার দিয়ে বলল, 'এটা মিমির নাম্বার। বহু কষ্টে জোগাড় করেছি। ট্রিট দিচ্ছিস কবে? '

শরীফকে ভিআইপি রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর আশ্বাস দিয়ে ফিরে এল সে। শরীফ তাকে তালিম দিয়েছে কিভাবে মেয়েদেরকে তাড়াতাড়ি পটিয়ে মন জয় করা যায়! এই সময় শরীফকে তার পরম উপকারী বন্ধু বলে মনে হলো। তার এই উপকারের জন্য চিরকৃতজ্ঞ থাকবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল ফারহান।


মুঠোফোনে দুদিন চেষ্টা করেও সোনা ফলাতে পারলো না সে। আবার বিমর্ষ মনে গুরুর শরণাপন্ন হল! গুরু ভক্তকে অভয়বাণী দিয়ে বলল, 'এত অল্পতেই ভেঙে পড়লে চলবে না। তোমাকে ধৈর্য্য ধরে সাধনা করতে হবে। হয়তো সে তোমার পরিক্ষা নিচ্ছে। তোমাকে অবশ্যই এ পরিক্ষায় পাশ করতে হবে। মেয়ে মানুষের মন গলাতে আর কতক্ষণ লাগে। আমি হলে দেখতি এতক্ষণে.....।'


আশার আলো দেখতে পেল সে। তাকে যেভাবেই হোক পরিক্ষায় পাশ করতে হবে। এদিকে পড়াশোনার বারটা বেজে যাচ্ছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই। তার একমাত্র ধ্যান -জ্ঞান এখন মিমি নামের মেয়েটি।


সপ্তাহ খানিক পর সোনা ফলাতে সক্ষম হল ফারহান। চেষ্টার অসাধ্য কিছু নাই। নিজের সাফল্যে নিজেই হতবাক হয়ে গেল! পাখি ধরা দিয়েছে তার জালে। ঘোড়া হলে হয়তো পাগলা ঘোড়ার মতো দিগ্বিদিক মনের আনন্দে খানিকক্ষণ দৌড়াতো সে।

এদিকে সম্পর্ক ক্রমেই গভীর হতে গভীরতর হচ্ছে। আড্ডাবাজিও চলছে সমান তালে। নিজেকে এখন মহাসূখী ও সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে তার। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা শুরু হয়েছে।


একের পর এক সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল। কোথাও চান্স হয় নি তার। বাড়ি থেকে যখন বাবা -মা বা অন্য কোনো আত্নীয়স্বজন বুকভরা আশা নিয়ে জানতে চায় "কোথায় চান্স হল "তখন মনটা তার বিষিয়ে ওঠে। কত আর মিথ্যা বলবে তাদের কাছে? জানুপাখিও এখন আর আগের মত সাড়া দেয় না তার ডাকে। ফোন দিলেই দু 'এক কথা বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে লাইন কেটে দেয়। 


 একদিন দুঃখভারাক্রান্ত মনে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিলো সে।হঠাৎ কিছু একটা চোখে পড়ল তার। নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে! দেখতে পেল তার জানুপাখি মিমি আরেকটা ছেলের হাত ধরে সানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছেলেটা নামিদামী একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ফারহানের মাথায় যেন হঠাৎ আকাশ ভেঙে পড়ল। নিজেকে খুবই অসহায় বোধ করল সে। পায়ের তলা থেকে যেন মাটিও সরে যাচ্ছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬

প্রামানিক বলেছেন: জীবন এমনই

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

মোঃ রাকিব খান বলেছেন: হুমম

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অকালপক্ক...

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫১

মোঃ রাকিব খান বলেছেন: অভিযোগ সত্য

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৪

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা খুব ভাল লাগেনি। কমন টপিকের উপর লেখা, আরও সাসপেন্স আনতে পারতেন ;)

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫২

মোঃ রাকিব খান বলেছেন: হুমম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.