নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে আলাদা ভাবে কিছুই বলার নেই। খুব সাধারন মানুষ। অন্য আট, দশজনের মতোই।

রাসেলহাসান

লেখালিখি করতে ভালো লাগে তাই লিখি। নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে সব সময় ভালো লাগে। ফেসবুক লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/rasel.hasan.7

রাসেলহাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"সে ছিল চঞ্চল, দুর্দান্ত, একজন অন্যরকম মানুষ! (একটি ছোট্ট অধ্যায়ের গল্প)

২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

নাম তার "জামাল" ছেলেটা ছিলো শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট টাইপের!
কোন কথার উত্তর দিয়ে জিতে তার সামনে থেকে কেউই যেতে ‪পারতনা‬! সব সময় হাঁসি হাঁসি মুখ। তিল কে "তাল" বানিয়ে দেওয়া তার বাও হাতের খেল" ছিলো! তখন মাদ্রাসাতে পড়তাম। পড়াশুনা খেলাধুলায় জামাল খুবই পারদর্শী ছিলো। আমাদের ভেতর সব সময় রেস" হতো। কে বেশী ভালো? পড়াশুনা কি খেলাধূলা সব কিছুতেই রেস! জামাল ছেলেটার মুখে হাসির আমেজ সব সময় লেগেই থাকতো। ওর মুখটা মলিন হতে আমি কখনো দেখিনি!
সবাইকে হাঁসাতে পছন্দ করতো। কারো মন খারাপ থাকলে তাকে হাঁসানোটা জামালের দুই মিনিটের কাজও ছিলোনা। ওর একটাই বদ অভ্যাস ছিলো সেটা হলো প্রতি সপ্তাহে মাদ্রাসা পালানো!
রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে বিভোর থাকতো, ঠিক সেই মুহূর্তে জামাল বেডিং পত্র গুছিয়ে নিয়ে রাত দেড়টা /দুইটার দিকে চুপচাপ পিছের জানালা দিয়ে নেমে পড়তো! দোতলা বিল্ডিং থেকে সান্সেট বেয়ে নেমে পড়তো! ট্রাঙ্কটা দড়ি দিয়ে আগে নামিয়ে দিতো এরপর নিজে নেমে ট্রাঙ্ক মাথায় নিয়ে ওইভাবে রওনা দিয়ে চলে যেতো নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যে! এভাবে পালানোটা ছিলো জামালের "হোবী"
এটা মাসের মধ্যে দু-তিনবার ঘটবেই!
আর প্রতিবারই আমাদের "হুজুর" নিজে জামালের বাড়িতে গিয়ে জামালকে নিয়ে আসবে। সেধে সেধে জামাল কখনো আসতোনা জোর করে ধরে আনা লাগতো! হুজুর বাড়িতে গেলে জামাল নতুন নাটক করা শুরু করে দিতো। সে তখন আর তাকে চিনবেনা! দজা খুলবে জামাল এরপর হুজুরকে দেখে বলবে, কাকে চান? হুজুর বলবে,
কি বলছিস? আমাকে চিনছিস না! আমি তোর হুজুর! দ্রুত গুছিয়ে নে তোকে নিতে আসছি!
জামাল : আপনি বোধয় কোন ভুল করছেন, এখানে জামাল নামে কেউ থাকেনা!
হুজুর বেয়াকুব হয়ে জামালের মা-বাবাকে ডাকা শুরু করবে আর ওদিক থেকে জামাল গায়েব!

একবারের ঘটনা

হুজুর গেছে জামালের বাড়ি জামালকে আনতে, জামাল বাড়ির উঠানে দোলনাতে দু পাশে দুই রমনীকে বসিয়ে
নিয়ে দোল খাচ্ছে! এমন সময় আমাদের সেই শ্রদ্ধেয় "হুজুর" এসে সেখানে উপস্থিত!
হুজুর : জামাল! জলদি গুছিয়ে নে! মাদ্রাসায় যাওয়া লাগবে।
জামাল : কে ভাই আপনি? দেখছেন না আমি আমার গার্লফ্রন্ডদের সাথে সময়টাকে কত সুন্দর ইঞ্জয় করতেছি!
ও বুঝছি পরের ভালোতো আপনার মোটেও সহ্য হবেনা! রোমান্টিক মুহুর্তে কোথা থেকে যে এসব লোক চলে আসে কে জানে!
এবারো জোর করে ধরে নিয়ে আসা লাগলো হুজুরের!
এর কিছুদিন পর বাসা থেকে জামালের একটা ফোন আসলো। খবর এলো ওর বাবা মারা গিয়েছে! নিউজটা শোনার পর আমাদের সকলের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। জামাল বাড়ি চলে গেলো ফিরলো বেশ দেরীতে! সরি " ফিরতে ছিলোনা বলেই হুজুর এবারো ওকে জোর করে বাড়ি থেকে নিয়ে আসলো। ফেরার পর আমরা অনেকে জামালকে শান্তনা দিতে গেলাম। শান্তনা দেবো কি ওর কথা শুনেই হতভম্ব হয়ে গেলাম!
বলে কি শুনবেন?
যাক বাবা অনেক দিন পর একটু শান্তি পাইলাম! বুড়ো বাপটা মরছে এখন আর আমারে কেউ জালাইতে পারবোনা! দীঘিতে মাছ ধরার যতো টিকিট হইবে এখন সব আমার! এই ভাগ এখন আর কেউ নিতে পারবোনা! বলেই অট্টহাসি! gasp emoticon (কি সাঙ্ঘাতিক!) এরপর ভালো একটা সুতোও পেয়ে গেলো সে। কোন অন্যায় করার পর হুজুর মারতে গেলে কান্নার ভাব করে বলতো, একজন এতিমরে মারবেন? মারেন! এখন তো আমার কেউ নেই! এই কথা শোনার পর হুজুরো ওরে আর মারতে পারতোনা!

আরেকটি ঘটনা

শুক্রবার ছিলো জামাল ডাক্তার দেখানোর অজুহাত করে ছুটি নিয়ে ছিনেমা দেখতে চলে গেলো। দুপুরের "শো " শেষ করে সন্ধ্যার দিকে হল থেকে বের হলো। হুজুরের মসজিদও ছিলো ওই হলের পাশে। সন্ধ্যার দিকে নামাজ পড়ানোর জন্য হুজুরও যাচ্ছে মসজিদের উদ্দেশ্যে। জামালো বের হলো হল থেকে আর হুজুরো হলের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে এক্কেবারে সামনাসামনি দুজনের দেখা! হুজুর কিছু না বলে জামালকে সাইকেলের পিছে উঠতে বললো। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর জামালকে নিয়ে মাদ্রাসায় আসলো। হুজুর জোড়া বেত সামনে নিয়ে বসে আছে! আজকে জামালের রক্ষা নেই! হুজুর জিজ্ঞেস করছে,
তুই মিথ্যা বলে ছুটি নিয়ে হলে গেছিলি কেন?
জামাল : না হুজুর মিথ্যা না সত্যিই আমি ডাক্তার দেখাতে গেছিলাম! পকেট থেকে প্রেস্কিপশন বেরিয়ে জামাল হুজুরের হাতে দিলো। এরপর বলল, ডাক্তার দেখানোর পর হাতে অনেক সময় ছিলো তাই ভাবলাম সময় নষ্ট না করে একটা ছবি দেখে আসি! emoticon
জামালের কথা শুনে আমরা সবাই অবাক! শালা বলে কি? ওর কথা শুনে হুজুর ওকে না মেরে হেসে ফেললো।
তা কি ছবি দেখতে গেছিলি?
হুজুরের কথা শুনে ‪জামাল‬ এবার সাহস ফিরে পেয়ে বলতে শুরু করলো সিনেমার সব ইতিহাস!
সিনেমায় কে নায়ক, কে নায়িকা, প্রথমে কি দেখিয়ে শুরু হয়, শেষে কেমন করে ফিনিশিং হয় সব কিছু হুজুরকে বলছে জামাল! ওর কথা শুনে উপস্থিত আমাদের কারোরই জানে পানি নেই! কি সাহস শালার! আমি চিন্তা করছিলাম আজকে ওকে বোধহয় একটা রাম ধোলাই দেবে হুজুর! কিন্তু না শেষমেষ এর উল্টো হলো! ওকে মারলোনা হুজুর হাঁসতে হাঁসতে গড়াগড়ি খাবার উপক্রম হয়ে জামালকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিলো।

জামালের শয়তানী

প্রচণ্ড শখ প্রিয় মানুষ ছিল জামাল! ওর একটা খারাপ নেশা ছিল "ভিডিও গেম" খেলা! আজব সব কাণ্ড কারখানা ছিল ওর মধ্যে।
কখন কি করতো নিজেও জানতোনা। এই ধরেন সকালে ফজরের পর সবাই পড়তে বসেছে এমন সময় জামালের মাথায় আসলো আমার
এখন ভিডিও গেম খেলতে যাওয়া দরকার! যেই ভাবা সেই কাজ। ওই মুহূর্তে বাজারে কোন দোকান পাট খোলেনি তবু ও ঠিকই হাঁটতে হাঁটতে পড়া ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ভিডিও গেম খেলার উদ্দেশ্য! এই ঘটনার সাথে আরো কিছু জিনিস আছে যেটা না বললে কিছু একটা মিস করবেন। :) আমাদের ছাত্রদের জন্য মাদ্রাসাতে একটা সিস্টেম ছিল সেটা হচ্ছে, কেউ যদি টয়লেটে যায় তবে হুজুরের ডেস্কের সামনে
২ টা কাঠের টুকরা রাখা থাকতো সেখান থেকে ১ টা কাঠের টুকরা হাতে করে নিয়ে বের হয়ে যেতে হতো। আবার অন্য কেউ যেতে চাইলে সেও একই ভাবে যাবে। তবে কাঠের টুকরা না নিয়ে কেউ বাথরুমে যেতে পারবেনা! সে তোমার যতো বেগই আসুক! এখন জামাল যখন বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠতো তখন বাকী ছাত্রদের (যাদের একটু আধটু বেগ পায়) ঘাম ঝরা শুরু হয়ে যেতো। শালা কখনো একটা কাঠের টুকরা নিয়ে বের হতোনা! ২ টায় ওর পকেটে যাবে। বরাবরের মতো দুইটা কাঠের টুকরা পকেটে নিয়ে জামাল দাড়িয়ে আছে গেমের দোকানের সামনে। এতো সকালে গেমের দোকান বন্ধ থাকাটায় স্বাভাবিক! জামাল দাড়িয়ে কিছুক্ষন দোকান গোতালো কাজ না হওয়ায় এরপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে রওনা দিলো আরো ৩/৪ কিলো পথ! একটু দূরে সদরে। সেখান থেকে গেম খেলে আর ফিরে আসেনি আবারো বাড়ী! একদিন ধরে সবার বাথরুম করা অফ!

কিছু রহস্য

জামালের ভেতরে অনেক ‪‎সাস্পেন্স‬ ছিলো। ও সব কিছু সবাইকে শেয়ার করতোনা! যেমন, হাঁসি খুশী থাকতো সব সময় কিন্ত কখনো ওকে দুখী হতে দেখিনি ওর দুঃখটা কাউকে শেয়ার করতোনা। সবাইকে হাঁসাতে পছন্দ করতো, সবার হাসিঁ মুখটা দেখতে ও পছন্দ করতো। কবে যে ও আবার পালাবে এটাও কাউকে বলতোনা। আরেকটা জিনিস সেটা হলো জামাল কাউকে ওর বাসার ‪এড্রেস‬ দিতোনা!
একমাত্র হুজুর আর আমার আরেকটা ফ্রেন্ড ছিলো "মইন" (মইন মারা গেছে গত বছর ওর স্ত্রী সন্তান সহ! একটা রোড এক্সিডেন্টে "আল্লাহ " ওদের জান্নাত বাসী করুক) এই দুজন ব্যাক্তি ছাড়া আর কেউ ওর অর্জিনাল ঠিকানা জানতোনা। বারবার যাওয়ার আগে মইনকে একটা কথায় বলে যেতো, "রাসেল যেন আমার ঠিকানা না জানে! একটা রহস্য রেখেই হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গেলো জামাল আর কোনদিন ফিরে এলোনা!
মইনও মারা গেলো! আমার আর ওর ঠিকানাটা জানা হলোনা!
তবে কিছুদিন আগে এক ক্লাসমেট ছিল নাম হাফিজ যার বাসা ছিল জামালদের পাশের গ্রামে। ওর কাছ থেকে যেটা শুনলাম! তাঁর বর্ণনা,
জামাল বিয়ে করেছে! হ্যাঁ শুনুন পরের ঘটনা,
হাফিজ কি একটা কাজে ওদের এলাকার দিকে গেছিলো হঠাৎ রাস্তায় জামালের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়! জামাল হাফিজকে দেখে জোর করে নাকি ওর বাড়িতে নিয়ে যায়! (তাজ্জব হয়ে গেছিলাম শুনে, জামাল জোর করে ওর বাড়িতে নিয়ে গেছে!) হাফিজ জামালের সঙ্গে বাড়ির বারান্দায় বসে আছে। জামাল হাঁকিয়ে বলল ওর বউকে চা নাস্তা নিয়ে জলদী বাইরে এসো! কিছুক্ষন পর জামালের বউ মাথায় ঘোমটা দিয়ে চা নাস্তা নিয়ে জামালের সামনে আসলো। জামাল ওর বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "কিরে মাথায় এক বিঘেত ঘোমটা দিলি ক্যান! আমার বন্ধুরে দেখতে কি তোর শরম লাগে? ক্যান রাত্রে মনে হয় তুই আমার বন্ধুর লগে থাকবি!! ওর সামনে ঘোমটা দিয়া তুই তো আমার মাথা নষ্ট কইরা দিলি!

এই হইলো কাহিনী! পরে আমি হাফিজ রে জিগাইলাম এরপর তুই কি করলি? ও কইলো আমি জলদী নাস্তা শেষ করে ওইখান দিয়া কাইটা পড়লাম! বেশীক্ষণ থাকলে কেসটা ভালো ঘটতো না! তাই জলদী চইলা আইছি।

আরে ধুর ব্যাস্ততার কারনে ওইবারো হাফিজের কাছে শোনা হলোনা জামালের "এড্রেসটা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.