নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যে ও সুন্দরের পক্ষে সব সময়

রাসেল উদ্দীন

জীবনের সবকিছু মহান স্রষ্টার জন্য নিবেদিত

রাসেল উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালী সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৯

বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দেয়া অধিকাংশ সংস্কৃতি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এসেছে। বাঙালি জাতির সাথে ইংরেজ জাতির যে পার্থক্য তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা তার ভাষা, পোশাক, খাবার, আতিথ্য ইত্যাদি দেখে বুঝতে পারব। ওরা ইংরেজি বলে; আমরা বাংলা বলি, ওরা কোর্ট-টাই বা স্কার্ট-সর্টস পরে, আমরা লুঙ্গি-পাঞ্জাবি-পায়জামা-ধুতি বা শাড়ি পরি। মদ্যপান ইংরেজদের প্রাত্যহিক বিনোদন এবং যে কোন উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বাঙালিরা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মদ্যপান পরিহার করে। বাঙালির অতিথিসেবা পানশুপারি কিংবা চা বিস্কুট দিয়ে শুরু হয়; কিন্তু ইংরেজদের আতিথ্য মদের পেয়ালায় শুরু হয়।

বাঙালি সংস্কৃতিতে ঘটা করে জন্ম দিন বা বিবাহ বার্ষিকী পালনের পুরাতন নজির নেই। কিন্তু ইংরেজি সংস্কৃতির প্রভাবে এটা এখানে প্রচলনের বেশ প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। কিন্তু এ সংস্কৃতির ধারাটি গ্রামাঞ্চলে এখনও শেকড় গাড়তে সক্ষম হয়নি। অতি আধুনিককালে শুরু হয়েছে ভালবাসা দিব। কিন্তু এটাও হালে পানি পাচ্ছে না। অন্যদিকে বাঙালির আবহকালের পোশাক লুঙ্গি, ধুতি, পাঞ্জাবি অফিস আদালতেই শুধু নয়, শহরেও এক প্রকারে নিষিদ্ধ হয়েছে। ইংরেজদের পোশাক প্যান্ট, শার্ট, কোর্ট, টাই এখন লুঙ্গি-পাঞ্জাবিকে পরাস্ত করতে বসেছে।

বর্তমানে যে রকম ঢাকঢোল পিটিয়ে, বাদ্যবাজনা বাজিয়ে বা শোভাযাত্রা করে বৈশাখের প্রথম দিনকে আমন্ত্রন জানানো হয়, পেছনে ফিরে তাকালে আমরা এসব কোন কিছুই দেখতে পাবো না। বস্তুত: আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। যে বছর প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ আর পূজার ব্যবস্থা করা হয়। আর, পহেলা বৈশাখকে সমস্ত বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব বা হিন্দু-মুসলিমের সার্বজনীন উৎসব বলে চালানোর ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলেও, এ উৎসব কখনই এ অঞ্চলে সার্বজনীন কোন উৎসব ছিল না। বস্তুত: আমাদের দেশে মাত্র কয়েক দশক যাবত ঘটা করে নববর্ষ উৎযাপন করা হচ্ছে। অতীতে পহেলা বৈশাখে প্রধান কাজ ছিল সারা বছরের দেনা-পাওনার হিসাব নিকাশ, খাজনা আদায়, শুল্ক পরিশোধ করা ইত্যাদি। এদিনে হিন্দু জমিদাররা নিজ নিজ প্রজাদের মিষ্টি খাইয়ে আপ্যায়ণ করতো এবং এ অনুষ্ঠানকে বলা হতো পূণ্যাহ খাজনা আদায়ের পুরনো হিসাব-নিকাশের পাট চুকিয়ে বৈশাখের প্রথম দিন থেকে নতুন খাতা খোলা হত, যাকে বলা হত “হালখাতা। পুরনো ঢাকার হিন্দু স্বর্ণকারদের মধ্যে হালখাতা অনুষ্ঠানের বেশী প্রচলন ছিল।

পহেলা বৈশাখের আগের দিন অর্থাৎ, চৈত্রের শেষ দিনে, বাঙ্গালী হিন্দুরা চৈত্রসংক্রান্তির উৎসব পালন করতো। এটি তাদের একটি ধর্মীয় উৎসব। এদিন তারা ঘরদুয়ার ধুয়েমুছে পরিস্কার করে সারা বছরের আবর্জনা দূর করতো। এখনও পুরনো ঢাকার হিন্দুরা এদিন ঝাড়ু হাতে ওঝা সেজে ভূতপ্রেত, অমঙ্গল বা অনিষ্টকে দূর করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই পহেলা বৈশাখে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা হতো, যা এখনও হয়। এছাড়া, পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার ধারণাও পুরোপুরি মূর্তিপূজারীদের কুসংস্কারাচ্ছ বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। কারণ, এ শোভাযাত্রায় অশুভ বা অমঙ্গল সাধনকারী শক্তি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য হিন্দুদের বিভিন্ন দেবদেবীর বাহনের মূর্তি যেমন: কার্তিকের বাহন ময়ূর, স্বরস্বতীর বাহন হাঁস, লক্ষীর বাহন পেঁচা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন রাক্ষস-খোক্ষস ও জীবজন্তুর বিশাল মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়।

এছাড়া, দিনের প্রথম প্রত্যুষে নতুন সূর্যকে যেভাবে সুরের মূর্ছনায় বরণ করে নেয়া হয়, সেটাও হাজার বছরে পূর্বের সূর্যপূজারী বা প্রকৃতিপূজারী সম্প্রদায়ের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আধুনিকতা ও সূর্যবন্দনার নামে শয়তান মানুষের কাছে শোভনীয় করেছে। বৈশাখের প্রথম দিনে নতুন সূর্যের কাছে প্রকৃতিপূজারীদের মতোই নিজেদের অমঙ্গল থেকে রক্ষার জন্য সূর্যের নিকট প্রার্থনা করা হয়। সুতরাং, এটা সুস্পষ্ট যে, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা সূর্যবন্দনা এ প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতা পুরোপুরি মুর্তিপূজারীদের বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সুতরাং, এ অনুষ্ঠান কোনভাবেই অসাম্প্রদায়িক নয়, বরং সর্বাংশে সাম্প্রদায়িক। তাহলে প্রশ্ন আসে, নব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এদেশে হিন্দু সম্প্রদায় বা মুশরিক জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস বা আচার আচরণের সাথে সরাসরি সর্ম্পকিত উৎসব কিভাবে এদেশের মানুষের সংস্কৃতি হতে পারে? তাই পহেলা বৈশাখের দিন যেভাবে ঢাকার রাজথে ময়ূর, হাঁস, পেঁচা, রাক্ষস, খোক্ষস কিংবা জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, কিংবা নতুন বছরের শুভসূচনা করতে প্রকৃতিপূজারীদের অনুকরণে সূর্যবন্দনা করা হয়, তা ইসলামের দৃষ্টিতে একেবারেই নিষিদ্ধ। কারণ, এইসকল নিষ্প্রাণ মূর্তি কিংবা সূর্যের অকল্যাণ দূর করার যেমন কোন ক্ষমতা নেই, তেমনি তাদের দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনারও কোন ক্ষমতা নেই।

বস্তুত: ইসলামে এ সমস্ত কার্যকলাপ আল্লাহর সাথে শিরক করার সমতূল্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়।


সংকলিত ও পরিমার্জিত:

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: "শয়তানের প্রার্থনায় বৃষ্টি নামে না, ঝড় আসে; তাতে অসংখ্য সৎ মানুষের মৃত্যু ঘটে।"
- হুমায়ুন আজাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.