নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা বলি..... বর্তমানের- কথা বলি ভবিষ্যতের.......

মাই নেম ইজ রেজাউল ইসলাম। এন্ড আই অ্যাম নট এ রাজাকার !!!

মোঃ রেজাউল ইসলাম

আমি নতুন সর্বদা----

মোঃ রেজাউল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়া এক সরকারী কর্মকর্তা

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫১

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যেন রামরাজত্ব কায়েম করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) বিএম এনামুল হক। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী এক ঘুষ বাণিজ্য সিন্ডিকেট। আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনে যোগ দেয়ার দেড় বছরের মধ্যে তিনি বিপুল পরিমাণ সহায়সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। যার সঙ্গে তার বাস্তব আয়ের কোনো মিল নেই। রাতারাতি ব্যক্তিগত দামি গাড়ি ও অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি। ছোট ভাই ও স্ত্রীকে নামিয়েছেন নিয়োগ আর টেন্ডার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে। সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য চালক ও জ্বালানিসহ তাদের দেয়া হয়েছে ডিএনসিসির ভিআইপি ডিউটির পাজেরো জিপ। যুগান্তরের এক মাসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ কর্মকর্তার সদর অন্দরের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সূত্র জানায়, সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ থেকেই অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিএম এনামুল হকের পরিবার। শুধু তাই নয়, বর্জ্য পরিবহনের তেল চুরি থেকে শুরু করে নিয়োগ, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ ফাঁকফোকর সবই নিয়ন্ত্রণ করেন বিএম এনামুল হক। তার আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়নের মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করে রেখেছেন। তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের শেল্টার দিচ্ছেন। যে কারণে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছেন সৎ কর্মকর্তারা। এসবই এখানে ওপেন সিক্রেট। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা পরিচয়ে সব দুর্নীতি আর অনিয়ম তিনি জায়েজ করে ফেলেছেন।

দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সিন্ডিকেট : সূত্র জানায়, দুর্নীতির টাকার ভাগ পুরোপুরি আদায় করতে ঘাটে ঘাটে বিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন। এই সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ, বর্জ্য বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেজবাউল করিম, নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম, সহকারী সচিব মজিবুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) আহম্মদ আলী শাহ এবং পরিবহন শাখার ম্যানেজার আবদুল বাসেত। সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত এই কর্মকর্তারা বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেজবাউল করিম স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনে আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাবস্থায় সূত্রাপুরে সুইপার কলোনি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনার পর কিছু দিন এই কর্মকর্তা নিজেকে আড়াল করে রাখেন। এরপর তৎকালীন সময়ে অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের সচিব বিএম এনামুল হক তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন। এরপর তার আশীর্বাদে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান মেজবাউল করিম। বর্তমানে তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পদায়ন করা হয়। অর্থাৎ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড। এই সেক্টরে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা। প্রতি বছর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে অতিরিক্ত ওজন দেখিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করেন মেজবাউল করিম। ডিএনসিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনার চেয়ে বেসরকারিভাবে বর্জ্য অপসারণে প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ বেশি হয়। তারপরও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে বর্জ্য অপসারণে আগ্রহী বেশি। কারণ বেসরকারিভাবে বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব দিয়ে এ খাত থেকে কমিশন আদায়ের কৌশল নেয়া হয়েছে। বিএম এনামুল হক নিজেও এই দুর্নীতির কথা এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকারও করেন। গত ২৮ মে বর্জ্য অপসারণে লুটপাটের বিষয়ে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে ডিএনসিসির এক প্রকৌশলী যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যিনি ব্যবস্থা নেবেন তিনিই তো সেই সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা। তাহলে ব্যবস্থাটা নেবে কে?

এদিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে টেন্ডার দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকেশলী আহম্মদ আলী শাহ। এই সেক্টর থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করেন বিএম এনামুল হকের আপন ছোট ভাই এমদাদুল হক। সম্প্রতি মিরপুরের যে ২৭ দরপত্রের নথির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘষামাঝা করে সর্বনিু দরদাতাকে কৌশলে বাদ দেয়া হয় তার নেপথ্য নায়কও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কেননা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গত ২৭ জুন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। কারণ এই সেক্টর থেকেও নিয়মিত কমিশন পান বিএম এনামুল হক।

অপর বিতর্কিত সহকারী সচিব মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগে দুর্নীতি করার অভিযোগ ছিল। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিল স্বয়ং দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগপত্রও আদালতে উপস্থাপন করে। ওই সময়ে একদিনের মধ্যে ডিসিসির ১৮৭টি বিভিন্ন পদে আবেদনকারীর মৌখিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষাসহ নিয়োগও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালতে রিট করলে এই মামলা স্থগিত হয়। এরপর সিটি কর্পোরেশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও আর আপিল করা হয়নি। এবার বিএম এনামুল হকের বিশ্বস্ত হিসেবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনেও নিয়োগ সংক্রান্ত এই ফাইল দেখাশোনা করছেন তিনি। বিএম এনামুল হকের ইচ্ছানুযায়ী তাকে এই পদে রাখা হয়েছে।

ডিএনসিসির পরিবহন সেক্টরে চলছে তেল চুরির হিড়িক। প্রশাসক থেকে শুরু করে অফিস সহকারী পর্যন্ত সবাই তেল চুরির ঘটনা সম্পর্কে অবগত। কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পরিবহনে বরাদ্দের নামে প্রতি বছর চার কোটি টাকার তেল চুরি হচ্ছে। এই তেল চুরির টাকার ভাগ নিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরিবহন বিভাগের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন কমকর্তা আবদুল বাছেতকে। যিনি জাতীয় বেতন স্কেলের ১৬ গ্রেডের কর্মকর্তা। অথচ জাতীয় বেতন স্কেলের ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা পরিবহনের ম্যানেজার হওয়ার কথা। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের মতো করে এসব বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দিয়ে তার চতুর্দিক সাজিয়েছেন।

ঘুষ লেনদেনের কক্ষ : সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্টাফ অফিসারের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। স্টাফ অফিসারের কক্ষটি ব্যবহার করা হচ্ছে ঘুষ লেনদেনের কক্ষ হিসেবে। এ কক্ষটিতে নিয়মিত বসেন বিএম এনামুল হকের ছোট ভাই এমদাদুল হক। দালালিসহ টাকা লেনদেনের কাজগুলো তিনি এই কক্ষে বসে সেরে ফেলেন।

স্ত্রী ও ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে জিপ : ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) বিএম এনামুল হকের একটি জিপ গাড়ি পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি নিয়েছেন দুটি জিপ। এর মধ্যে পাজেরো স্পোর্ট মডেলের (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬০৩২) গাড়িটি তিনি নিজে ব্যবহার করেন। এছাড়া উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভিআইপি প্রটোকলের সাদা ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৮০০৭) জিপটি তার বাসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক এ গাড়িটি তার স্ত্রী, ছোট ভাই এমদাদুল হক, মেয়ে ও তার মেয়ের জামাই ব্যবহার করেন। প্রতিদিন এই গাড়িতেই উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে দেখা গেছে ছোট ভাই এমদাদুল হককে। চালকসহ এই গাড়িটির জ্বালানিও দেয়া হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন থেকে। প্রতিদিন জিপটিতে ৩০ ঘনমিটার গ্যাস বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩০ টাকা ঘনমিটার হিসাবে এই গাড়ির পেছনে প্রতিদিন ৯০০ টাকা, মাসে ২৭ হাজার টাকা এবং বছরে জ্বালানি বাবদ রাষ্ট্রের খরচ হচ্ছে ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এছাড়া পেট্রল, মবিল এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ কম হলেও ৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

তিন দিনের চিত্র : গত ১৩ জুলাই এই গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যেতে দেখা গেছে তার একমাত্র মেয়েকে। তার স্বামী রূপগঞ্জে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। প্রায় সময় গাড়িটি রূপগঞ্জেও যাতায়াত করে। এছাড়া তার স্ত্রী যখন তখন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (বিউটি পার্লার) দেখভাল করতে এই গাড়ি নিয়েই উত্তরায় গিয়ে থাকেন। ১৪ জুলাই বিএম এনামুল হকের স্ত্রীকে নিয়ে একই জিপ উত্তরায় যেতে দেখা যায়। ১৫ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার ছোট ভাই এমদাদুল হককে এই গাড়িতে সিটি কর্পোরেশনের বনানী কমিউনিটি সেন্টার কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়।

ডিএনসিসির একজন চালক জানান, ‘প্রধান নির্বাহী স্যার ৫০০ টাকাও ঘুষ খান। চাকরি জীবনে এমন কর্মকর্তা দেখিনি।’ বাসায় মাছ, মাংস থেকে শুরু করে তরকারি সবই আসে ঘুষ হিসেবে। সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত কাঁচাবাজার থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকরা। পরে গাড়ি ভর্তি করে এলেনবাড়ির বাসায় পাঠানো হয়। ওই চালক আরও বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের দুটি গাড়ি ব্যবহার করেও স্যারের মন ভরে না।’ গত বছরের ৯ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বিএম এনামুল হক ৮ দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হয়েছিলেন। এই ৮ দিন নিজের দখলে তিনটি গাড়ি রেখেও তিনি প্রশাসকের গাড়িটি ব্যবহার করেন। ‘মোদ্দাকথা, স্যারের পেট ভরে তো চোখ ভরে না।’ তিনি এলেনবাড়ি অফিসার্স কোয়ার্টারের যে ভবনে থাকেন সেখানে তার প্রিমিও মডেলের একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে গাড়ি কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে ৩৫ লাখ টাকায় গাড়িটি কিনেছেন।

বিব্রত পুলিশ : বনানী মাঠ সংলগ্ন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন ভিআইপি নেতার বাসায় দায়িত্বরত একজন কনস্টেবল যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৮০০৭ সাদা রঙের জিপটি নিয়ে প্রায়ই একজন লোক স্যারের বাসায় আসতে দেখা যায়। এসব মডেলের গাড়ি সাধারণত মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ব্যবহার করে থাকেন। ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড দেখে প্রথমে কোনো সচিব বা শীর্ষ কর্মকর্তা ভেবে দায়িত্বরত কনস্টেবলরা স্যালুট করে থাকেন। পরে গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায় একজন যুবককে। এ সময় তারা বিব্রত হয়ে পড়েন। ওই কনস্টেবল বলেন, জিপটির চালকের কাছ থেকে জানা গেল এই গাড়িতে চড়ে যিনি এখানে আসেন তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার ছোট ভাই। মিলেমিশে দালালি : যুগান্তরের অনুসন্ধানকালে এ প্রতিবেদকের কাছে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্ত্রী ও তার ছোট ভাই এমদাদুল হক মিলেমিশে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। সম্প্রতি অস্থায়ী ভিত্তিতে (কাজ করলে মজুরি না করলে নেই) দৈনিক ২৬৫ টাকা মজুরি হিসেবে ৯৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ করা হয়। এতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আবেদনকারীকে নিজের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এই অভিযোগের সূত্র ধরে নিয়োগের জন্য বিএম এনামুল হক ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে সরাসরি টাকা দিয়েছেন এমন চাকরি প্রার্থীর খোঁজে প্রতিবেদকের তথ্যানুসন্ধান শুরু হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এই অভিযোগের সত্যতা মেলে। একই পরিবারের তিনজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য চার লাখ টাকা দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এই তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ, দুজন মহিলা। নিয়োগ পাওয়া পুরুষ লোকটি যুগান্তরকে জানান, তার স্ত্রী ও বোনের চাকরি নিশ্চিত করতে বিএম এনামুল হককে ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। তাদের নিয়োগের পক্ষে সুপারিশ করেন তার স্ত্রী। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, প্রথমে এমদাদুল হককে তাদের নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিনিময়ে তিনি তিনজনের জন্য ৯ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সরাসরি বিএম এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই শ্রমিক। চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দিলে এনামুল হক তাকে বলেন, ‘যেহেতু তোমরা গরিব মানুষ তাই যা পার দিও।’ তবে তাদের নিয়োগে তিনি ঘুষ নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করেননি। চাকরি হওয়ার আগেই এই তিনজন তাদের অনেক কষ্টে জোগাড় করা চার লাখ টাকা বিএম এনামুল হকের হাতে তুলে দেন। এ প্রসঙ্গে ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, ‘সাহেবের স্ত্রীর মাধ্যমে এমদাদুল হক অনেক তদবির করেন। সাহেব এমদাদকে বেশি বিশ্বাস করেন না। তাই এমদাদ তদবির করেন ম্যাডামের মাধ্যমে।’ তবে একমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগে একই পরিবারের তিনজনের কাছ থেকেই তুলনামূলক টাকা কম নেয়া হয়েছে। তবে অন্যরা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার নিচে কেউই চাকরি পায়নি। এ হিসাবে ২০ জনের এই কোটা থেকে বিএম এনামুল হকের পরিবার হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৪০ লাখ টাকা।

২ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ১/এ রোডের ২৮৪নং প্লটে নির্মাণাধীন ৯ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল ভবনে ২২০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বিএম এনামুল হক। সাম্পান ডেভেলপারস এ বাড়িটি নির্মাণ করছে। বর্তমানে বাড়িটিতে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। অত্যন্ত গোপনে প্রতি সপ্তাহে স্ত্রীকে নিয়ে ফ্ল্যাটটির নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন বিএম এনামুল হক। সাম্পান ডেভেলপারসের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ২০১২ সালের দরে এই ফ্ল্যাটে প্রতি স্কয়ার ফিট বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। এ হিসাবে ফ্ল্যাটটির দাম পড়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৫ সালের ২৬ মে। শুধু ফ্ল্যাটই নয়, নামে-বেনামে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন এই কর্মকর্তা।

ডিএনসিসির টাকায় চিকিৎসা : সূত্র জানায়, সম্প্রতি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের ঐচ্ছিক ফান্ড থেকে ৯ লাখ টাকা নিয়ে এ্যাপোলো হাসপাতালে স্পাইনাল কড অপারেশন করেন বিএম এনামুল হক। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই চিকিৎসার পুরো ব্যয় সিটি কর্পোরেশন থেকে মেটানো হয়েছে।

২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনে মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) পদে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। এরপর তৎকালীন ডিসিসির সচিব পদে ১৮ ফেব্র“য়ারি যোগদান করেন। ওই বছরের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সচিবের দায়িত্বে থাকাকালীন রংপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হন। ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

বিএম এনামুল হকের বক্তব্য : স্ত্রী ও ভাই টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যে নেমেছে তথ্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বিএম এনামুল হক। তিনি বলেন, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও অসত্য। স্ত্রী ও ভাই সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি ব্যবহার করছে তা তিনি জনেন না। ২০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে নিজের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নিয়োগ দিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা ব্যক্তিগত আক্রমণ। এতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।’ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ২ কোটি টাকায় অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট ক্রয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কেন তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।’ এরপর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। - See more at: View this link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.