নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা বলি..... বর্তমানের- কথা বলি ভবিষ্যতের.......

মাই নেম ইজ রেজাউল ইসলাম। এন্ড আই অ্যাম নট এ রাজাকার !!!

মোঃ রেজাউল ইসলাম

আমি নতুন সর্বদা----

মোঃ রেজাউল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুর হাতে একে-৪৭ নাকি রং-তুলি ?

১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬

আমার একজন স্কুল ফ্রেন্ড ছিল। নাম মামুন। খুবই ভাল ছেলে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমি যখন এইচ.এস.সি. পাশ করে মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও ভর্তির চেষ্টা করছি তখন সে একদিন এসে হাজির। এভাবেই সে হঠাৎ হঠাৎ বাসায় আসত। আসলে হয়ত দুপুরে খেয়ে একসঙ্গে রেস্ট নিতাম। ঘরে ছিনেমা দেখতাম। গল্প করতাম। সে মাঝে মাঝে রাতেও থেকে যেত। ............ ভূমিকা এখানেই শেষ।



একদিন, সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদেরকে সশস্ত্র জিহাদ করতে হবে। আমাদের দেশের আওয়ামীলীগ বা বিএনপি এরা সবাই ইসলামের শত্রু। এই যে সিনেমা হল গুলোতে চরম অশ্লীল সিনেমা চলছে, অফিসে সবাই ঘুষ খাচ্ছে, মন্ত্রিরা সব লুটে পুটে খাচ্ছে, পতিতা বৃত্তিকে রাষ্ট্র হালাল করে দিয়েছে............ ইতাদি ইতাদি যত অনাচার অবিচার চলছে, তা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে জিহাদ। সশস্ত্র জিহাদ। সে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও বলল- প্যালেস্টাইন, আফগানিস্থান, বসনিয়া ইত্যাদি।



আমি জানতে চাইলাম, তাইলে এখন কি করবি? সে জানাল যে সে এমন সংগঠনের খোজ পেয়েছে যারা জিহাদের জন্য তাদেরকে সংগঠিত করবে।



আমি যুক্তি দিলাম, তুমি কিভাবে জিহাদ করবে? তোমার তো জিহাদ করার মত রসদ নাই।



সে বলে, মহানবী (সাঃ) যখন কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তখন তো তাঁর হাতে ছিল তলোয়ার আর তীর। তা দিয়েই সে কাফিরদের হারিয়ে দেয়।



- তাইলে কি তোমরাও তলোয়ার আর তীর নিয়ে জিহাদে নেমে পরবে? মহানবী (সা;) এর সময় তো তীর বা তলোয়ারই ছিল সবথেকে আধুনিক অস্ত্র। অর্থাৎ সে সময় মুসলিম বীরেরা সময়ের সব থেকে আধুনিক অস্ত্র সরঞ্জাম নিয়েই কাফিরদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এবং আল্লাহ্‌র রহমতে সেই যুদ্ধে তারা জয়লাভও করে।

আরও একটা ব্যাপার, সেই তলোয়ার বা তীর কিন্তু মুসলমানরা নিজেরাই তৈরি করত। অর্থাৎ অস্ত্রের জোগানের জন্য তারা অমুসলিমদের মুখাপেক্ষী ছিল না।

কিন্তু আজকের দিনে তোমরা যে জিহাদ করবা তা সেই অস্ত্র পাবা কই? একটা রাইফেলও তো বানাতে পার না। হয় অস্ত্র কিনবা আমেরিকান, নয়ত চাইনিজ অথবা রাশিয়ান। এই তো ? এরা তো সবাই অমুসলিম, কাফির। কাফিরদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে, সেই কাফিরদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করবে?



আমার সেই প্রিয় বন্ধুটিকে কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না। তাঁর যুক্তি হচ্ছে, আল্লাহ্‌র রহমত থাকলে দুনিয়াতে সবই সম্ভব। আবাবিল পাখির সে কাহিনীও শুনাল।



আমিও নাছোড় বান্দা। কিছুতেই তার কথা মানলাম না। আমি তাকে বুঝালাম, দেখো, আজকের পৃথিবীতে যুদ্ধটা অন্য রকম হয়ে গেছে। এখন আমরা করতে পারি 'অর্থনীতিক যুদ্ধ। বিজ্ঞানের যুদ্ধ'। কম্পিউটারের সামনে বসে, মাউসে ক্লিক করে আমরা একজন যে যুদ্ধ করতে পারি, একশ জিহাদি অস্ত্র নিয়ে সেই যুদ্ধ করতে পারবে না।

হ্যা, আমাদের সমস্যা আছে। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানের পথ এ.কে. ৪৭ হাতে নেমে পরা নয় (অন্তত এই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতায়)।



আমার বন্ধুটি তবুও সন্তুষ্ট হল না। আমি ছোট ছিলাম। দেশ বা আন্তর্জাতিক রাজনীতি হয়ত খুব ভাল বুঝতাম না। তবে যা বুঝেছি, সেটা তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম। সাবধান করলাম।



সে আমার কথা আর যুক্তি শুনে মুখ কালো করে থাকল। তার টাকার খুব দরকার ছিল। আমি তাকে দুশ টাকা দিলাম। সকাল বেলা সে তার ছোট্ট লাল সাইকেলটা চালিয়ে বিদায় নিল। সেটাই ছিল শেষ বিদায়। আর কখনো সে আমার বাসায় আসে নি। যোগাযোগ করে নি। ফোন তো ছিলনা। কিন্তু চিঠিও দেয় নি। আমি মাঝে মাঝেই তার কথা ভাবি। সে কি সত্যি সত্যি জিহাদে নেমে পরেছিল। বাংলাভাইএর অনুচর হয়ে কি সে কোথাও বোমা মারার পায়তারা করছিল। সে কি র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ?



নাকি আসলে কিছুই হয় নি ? সে খুব ভাল ছবি আঁকতে পারত। ড্রয়িং জানত। আমাকে বলেছিল যে সে ঢাকা যাবে। একটা কাজের অফার পেয়েছে। রিকশার পেছনে যে আকা-বুকি থাকে, সেই কাজ। ফল, পাখি, লতা, সিনেমার নায়ক নায়িকা এসব আঁকতে হবে। তার টাকার খুব দরকার ছিল। খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান......



কে জানে, হয়ত সে সত্যিই একজন ভাল আকিয়ে হতে পেরেছে। হয়ত বা তাই !!



তবুও র‍্যাব যখন কোন জঙ্গি গ্রেফতার করে, টিভিতে দেখায়, পত্রিকাতে ছবি আসে, আমি খুব মন দিয়ে দেখি, তাকে খুজি।



নাহহ, এতটা নেগেটিভ ভাবাটা বোধয় ঠিক না...... সে নিশ্চয় রঙ তুলি হাতে ছবি আকছে !!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.