নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘটকপুরাণ-৩

২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৩:২০

ঘটকপুরাণ-৩
++++++++
দিনোর মা'র পাঠশালায় আমরা ছয় মাসের মত পড়েছি। ওই ছয় মাসে আমরা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, আকার-ইকার থেকে শুরু করে সতক্ষিয়া কড়াক্ষিয়া, কুড়ি ঘর পর্যন্ত নামতা শিখেছি। দিদিমণি আমাদের কয়েকজনকে সেবছর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হবার জন্য সুপারিশ করলেন। আমরা মানে আমি, প্রকাশ, হৃশিকেষ, কৃষ্ণ, গৌতম, ভজন, সুনীল, শশোদা, সুভাসিনী, পারুল, প্রভাতী প্রমুখ।

আমাদের প্রাইমারি স্কুলের নাম ৪ নং পশ্চিম চর বানিয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ আমাদের গ্রামের নাম উত্তর বানিয়ারী। আবার আমাদের স্কুলটাও আমাদের গ্রামে অবস্থিত। কিন্তু স্কুলের নাম কেন পশ্চিম চর বানিয়ারী'র নামে হলো, সেই রহস্য এখনও আমাকে তাড়া করে বটে!

এবিষয়ে আমার বাবা'র ব্যাখ্যা ছিল এরকম- বানিয়ারী গ্রামটা আদতে বিশাল। মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নে সবচেয়ে বিশাল আয়তন বানিয়ারী গ্রামের। এই বিশাল আয়তনকে প্রশাসনিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করার জন্য বানিয়ারী গ্রামকে মোট ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়। উত্তর বানিয়ারী, দক্ষিণ বানিয়ারী, পূর্ব বানিয়ারী, পশ্চিম বানিয়ারী, মধ্য বানিয়ারী ও চর বানিয়ারী।

এই ছয়টি গ্রামের মধ্যে তখন তিনটি গ্রামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। চতুর্থ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মিনিমাম তিনটি গ্রামকে আওতাভুক্ত করতে হবে। তাই পশ্চিম বানিয়ারী, চর বানিয়ারী ও উত্তর বানিয়ারী এই তিন গ্রামকে টার্গেট করে, এই তিন গ্রামের সীমান্তে আমাদের স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যে কারণে এই স্কুলের নামকরণ করা হয় পশ্চিম চর বানিয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর ওটা ছিল আমাদের গ্রামের ৪ নম্বর স্কুল।

স্কুলের নামে উত্তর বানিয়ারী না রাখার কারণ, তখন উত্তর বানিয়ারীতে একটা স্কুল ছিল, যেটা আবার সীমানা নিয়ে পূর্ব বানিয়ারীর সাথে ঝামেলায় জড়িয়েছিল। তাই আমাদের স্কুলটি উত্তর বানিয়ারী গ্রামের একেবারে পশ্চিম সীমান্তে স্থাপন করা হলো। যার পশ্চিম দিকে পশ্চিম ও চর বানিয়ারী এবং দক্ষিণ দিকে মধ্য বানিয়ারী। আর উত্তর দিকে রাস্তা ও স্কুলের সমান্তরাল বলেশ্বর নদ।

এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন আমার বাবা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার। প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যান্যরা ছিলেন আবদুস সাত্তার, নূর মোহাম্মদ মোল্লা, মহেন্দ্র নাথ মণ্ডল, শিবচন্দ্র হীরা, কৃষ্ণচন্দ্র বড়াল, জীতেন্দ্র নাথ মণ্ডল, মণীন্দ্র নাথ মণ্ডল প্রমুখ। এই স্কুলের জন্য জমি দান করেন তিন জন। কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল, মহেন্দ্র নাথ মণ্ডল ও আমার বাবা।

আমরা যখন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হই, তখন স্কুলের দুই পাশে অর্থ্যাৎ উত্তর ও পশ্চিম পাশে ছিল রাস্তা। আমাদের স্কুলটি ছিল দক্ষিণমুখী। আর স্কুলের সামনে অর্থ্যাৎ দক্ষিণপাশে ছিল বিশাল খেলার মাঠ। একতলা দালানের লম্বা স্কুলে ছিল মোট চারটি কক্ষ। পূর্ব থেকে পশ্চিমের কক্ষগুলো ছিল ক্রমশ বড়। আর কক্ষগুলোর সামনে ছিল টানা লম্বা বারান্দা।

আমরা যখন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হই তখন স্কুলের বারান্দার অংশটুকু ঢালাই পাকা ছাদ ছিল। আর পূর্ব পাশের প্রথম কক্ষটির ছাদ ছিল টিনের ছাউনি। ওই কক্ষে বসতেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী। আমাদের স্কুলে তখন চার জন শিক্ষক ছিলেন। বাবু শ্রী নিরোদ চন্দ্র রায় প্রধান শিক্ষক, শ্রীমতি রেনু বালা (সেকেন্ড স্যার), বাবু শ্রী ক্ষিতীশ চন্দ্র মণ্ডল (থার্ড স্যার) ও শ্রীমতি নাহার বালা (ফোর্থ স্যার)।

পূর্ব দিক দিয়ে দ্বিতীয় কক্ষটি ছিল তখন পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ, তৃতীয় কক্ষটি ছিল চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ আর চতুর্থ কক্ষটি ছিল সবচেয়ে বড় আর ওটি ছিল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষকদের কক্ষ বা লাইব্রেরি ছাড়া অন্য কক্ষগুলোতে তখন ছাদ বা ছাউনি না থাকায় সাধারণত বর্ষাকালে নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষের সামনের বারান্দায় তখন সেসব শ্রেণির ক্লাশ হতো। বছরের অন্য সময়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাশ হতো।

স্কুলের সামনে ঠিক মাঝখানে ছিল আমাদের পতাকা স্ট্যান্ড। আর চতুর্থ শ্রেণির সামনে যে একমাত্র লম্বা তাল গাছটি ছিল, তার পাশেই আমরা ফেব্রুয়ারি মাসে অস্থায়ীভাবে মাটি দিয়ে নির্মাণ করতাম শহীদ মিনার। স্কুলের বারান্দায় সোজা এক লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' ও শপথ অনুষ্ঠান দিয়ে আমাদের স্কুল শুরু হতো।

সাধারণত স্কুল শুরু হবার অনেক আগেই আমরা স্কুলে যেতাম। যার প্রধান কারণ ছিল খেলাধূলা করা। ইচিং বিচিং, দাড়িয়াবান্ধা, বুড়িচি, কানামাছি, বুদ্ধির ঠিলা, ওপেন টু বাইস্কোপ, কড়ি খেলা, কাবাডি খেলা, কুতকুত খেলা, গোল্লাছুট, ডাংগুলি, নুনতা খেলা, চন্দন টোকা বা ফুল টোকা, বাঘ ছাগল খেলা, ষোল গুটি খেলা, মার্বেল খেলা বা চাঁপা খেলা, লাটিম খেলা, মোরগ লড়াই, এক্কাদোক্কা খেলা, এলাটিং বেলাটিং খেলা, ফুটবল খেলা ইত্যাদি ছিল তখন আমাদের অন্যতম খেলা।

এর মধ্যে স্কুলের সময় মার্বেল খেলা বা চাঁপা খেলা ছিল একদম নিষিদ্ধ। ফুটবল খেলা হতো ছুটির পর বা বিকেলে। হাডুডু খেলা হতো টিফিন পিরিয়ডে বা বিকেলে। তবে হাডুডু খেলায় বড়দের কেউ রেফারি না থাকলে খেলা নিয়ে খুব মারামারি হতো। অন্য খেলাগুলো স্কুল শুরু হবার আগে, টিফিন পিরিয়ডে বা স্কুল ছুটির পর খেলা যেতো।

স্কুলের বারান্দার যে লম্বা ছাদ, ওই ছাদে ওঠা এবং লাফিয়ে নিচে পড়াও ছিল আমাদের একটা আনন্দময় খেলা। এছাড়া টিফিন পিরিয়ডে বলেশ্বর নদে সাঁতার কাটা ছিল আমাদের অন্যতম আনন্দময় খেলা। জলের মধ্যেও ছিল আমাদের অনেক ধরনের খেলা। সাধারণত হেড স্যার স্কুলে আসার আগপর্যন্ত আমরা খেলা চালিয়ে যাবার সুযোগ পেতাম।

তিন বা চার মাস আমরা প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপর পরীক্ষা দিয়ে আমরা ক্লাশ টু-তে উঠে যাই। আর তখন আমাদের প্রধান শিক্ষক বাবু শ্রী নিরোদ বিহারী রায় বদলি হয়ে যান অন্য স্কুলে। আর স্কুলে তখন প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন মৌলভী আবুল হোসেন। তিনি তখন আমাদের কাচারি ঘরে থাকতেন।

মৌলভী আবুল হোসেন আমাদের পড়াতেন বাকরগঞ্জের ভূগোল। তার খুব পান খাওয়ার একটা বদ-অভ্যাস ছিল। শিক্ষার্থীদের তিনি পান সুপারি নিয়ে আসতে বলতেন। যারা পান সুপারি না আনতেন তাদের তিনি বেত মারতেন। তো যেদিন আমার মেজদি পান নিতে ভুলে গেছেন, সেদিন তিনি মেজদিকে বেত মারেন। মেজদি বাড়িতে এসে বাবাকে সেই ঘটনার নালিশ দেন।

আমার বাবা স্কুলের অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে মিটিং করে কয়েকদিন পর মৌলভী আবুল হোসেনকে বদলির আদেশ দেন। তখন কয়েক মাস আমাদের বড় দিদিমণি মানে শ্রীমতি রেনু বালা ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তখন আমাদের স্কুলের জন্য একজন ভালো শিক্ষক অনুসন্ধান শুরু হলো। তখন মূলত ছোট দিদিমণি মানে শ্রীমতি নাহার বালা ও ক্ষিতীশ স্যার আমাদের ক্লাশ নিতেন।

আমরা ক্লাশ থ্রি-তে ওঠার আগেই আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে যোগ দিলেন বাবু শ্রী অমৃত লাল রায়। যিনি আমাদের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বাবু শ্রী নিরোদ বিহারী রায়ের ভাই। অমৃত স্যার একদিকে যেমন ছিলেন খুব কড়া শিক্ষক, তেমনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। প্রতিটি ছেলেমেয়েদের দিকে তাঁর আলাদা নজরদারী ছিল। এমনকি স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরাও অমৃত স্যারকে যমের মত ভয় পেতেন।

-----------------------চলবে-----------------------






মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩

আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৪৫

ইসিয়াক বলেছেন:




আপনার লেখাটি ভালো লাগছে। সত্যি বলতে কি আপনি মন্তব্যের উত্তর দেন না তাই মন্তব্য করা হয় না। পরবর্তী পর্ব আশা করছি।
শুভকামনা রইলো।

৩| ০৩ রা মে, ২০২২ দুপুর ২:৩৩

বিজন রয় বলেছেন: কেমন আছেন?

ঈদ মোবারক।

শুভকামনা।

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৩

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: অনেক দিন নুতন লেখা নাই, আশা করি ভাল আছেন।

৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:৪১

খন্দকার সাইফুর রহমান আরিফ বলেছেন: কি খবর রেজা ? কেমন আছো ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.