নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীনের বইবাড়ি স্বপ্নটির সূচনা লগ্নের সাক্ষি। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যেভাবে!!!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯

৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, কাক-ডাকা ভোরে ঢাকা থেকে আমরা গিয়েছিলাম মানিকগঞ্জে। সারা দেশে যখন শৈত্য প্রবাহ চলছে, তখন কেন আমরা কম্বলের নিচের গরম তুচ্ছ করে কনকনে শীতকে বরণ করতে গেলাম? কারণ একটা স্বপ্নকে নিজের চোখে সূচনালগ্নের মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত থাকার প্রয়াস থেকেই। আমরা যারা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সারাবছর অন্তরে লালন করি, আমাদের বৃহত্তর গ্রামীণ জনপদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম করি, সেই দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য থেকেই আমরা গিয়েছিলাম ধলেশ্বরী নদীর পারে মানিকগঞ্জের জাগীর জনপদের বইবাড়িতে।

আমার বন্ধু রবীন আহসান একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক ও কবি রবীন আহসানের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন একটি বইবাড়ি। সেই স্বপ্নের সূচনাপর্বটা নিজের চোখে দেখার আনন্দেই গিয়েছিলাম জাগীর গ্রামে। ধলেশ্বরী নদী এখন মৃতপ্রায়। ধলেশ্বরীতে এখন আর শুস্ক মৌসুমে জোয়ার ভাটা টের পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে প্রমত্তা পদ্মার এই শাখানদী ফিবছরও যৌবন ফিরে পায়।

সেই জাগীর গ্রামে ধলেশ্বরী নদীর পারে রবীন একটি স্বপ্ন বুনেছে। কী সেই স্বপ্ন? রবীনের স্বপ্ন সারাদেশে হবে বইবাড়ি। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় রবীন একদিন এই বইবাড়ি ছড়িয়ে দেবে। রবীনের স্বপ্নের বইবাড়ি'র সূচনালগ্নে সঙ্গী হতেই আমরা ঢাকা থেকে শতাধিক মানুষ বইবাড়িতে গিয়েছিলাম।

রবীনের এই বইবাড়ি স্বপ্নযাত্রায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ডিপার্টমেন্টের একদল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আমাদের সঙ্গী হয়েছিল। সঙ্গী হয়েছিল আমাদের বন্ধুরা। সঙ্গী হয়েছিল জাগীর গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। ৭ জানুয়ারি রবীনের বইবাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো। বইবাড়ি আদতে কী? বইবাড়ি একটি গণপাঠাগার। বইবাড়ি একটি স্কুল। বইবাড়ি একটি সাংস্কৃতিক সেতু। সবাইকে বই পড়ায় আগ্রহ তৈরি করার জন্য একটি বিশাল উদ্যোগ এই বইবাড়ি।

বইবাড়িতে কি কি থাকবে? বইবাড়িতে থাকবে বই। বইয়ের বাড়িকে আমরা বলছি বইবাড়ি। বই নিয়ে বাড়ি বানানোর এমন সুন্দর স্বপ্ন চোখে দেখার আনন্দ সত্যি সত্যিই সীমাহীন। বইবাড়িতে থাকবে সর্বস্তরের মানুষের জন্য বই পড়ার সুযোগ। শিশুদের জন্য থাকবে আঁকাআঁকি শেখার স্কুল, গানের স্কুল, থিয়েটার স্কুল, নাচের স্কুল। বইবাড়িতে থাকবে বইয়ের সাথে রাত কাটানোর অপূর্ব সুযোগ।

ছুটির দিনে ঢাকার অদূরে কেউ যদি সারাদিন একটা নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশে বই পড়ে কাটাতে চায়, সে অনায়াসে চলে যেতে পারবে বইবাড়িতে। বইবাড়িতেই থাকবে থাকা খাওয়ার সুযোগ। রাত কাটানোর সুযোগ। নব দম্পতিদের জন্য বইয়ের সাথে সময় কাটানোর এক অপূর্ব সুযোগ। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, নির্মাতারা নিজেদের লেখার বা পরিকল্পনা করার জন্য সারা বছরই বইবাড়িতে সময় কাটাতে পারবেন।

ধলেশ্বরী নদীর তীরে শব্দমুক্ত নির্জন জায়গায় বসে নিজের স্বপ্ন বুনতে আপনি অনায়াসে যেতে পারবেন বইবাড়িতে। সারাদিন বসে বসে লিখতে পারবেন, চা-কফি খেতে পারবেন, ভেজালমুক্ত বেসিক খাবার খেতে পারবেন বইবাড়িতে। গ্রামীণ জনপদে ঘুরতে পারবেন। নদীর তীরে সারাদিন কাটাতে পারবেন। নদীতে বইবাড়ির নৌকায় ঘুরতে পারবেন। যারা সূর্যাস্তের ছবি তুলতে চান তাদের জন্য ধলেশ্বরী নদীর তীরে রবীনের বইবাড়ি একটি আদর্শ স্থান।

যারা শীতকালে শস্যক্ষেতের ছবি তোলার জন্য সারা বছর স্বপ্ন লালন করেন, তাদের জন্য বইবাড়ি একটি আদর্শ স্থান। ঢাকা মানিকগঞ্জ হাইওয়ের ধলেশ্বরী ব্রিজ ক্রোস করেই জাগীর ইউনিয়ন কমপ্লেক্স মাঠ। সেখানে গাড়ি রাখার সুন্দর ব্যবস্থা। গাড়ি রেখে দশ মিনিটের হাঁটা পথ। পায়ে হেঁটে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত মাড়িয়ে ধলেশ্বরী নদী। নদীর তীরে একটি মজবুত বাঁশের সাঁকো। বাঁশের সাঁকোর অপর পারেই বইবাড়ি।

ইচ্ছে করলে আপনি বাঁশের সাঁকো দিয়ে হেঁটে বইবাড়িতে প্রবেশ করতে পারবেন। বাঁশের সাঁকোর নিচে থাকবে বইবাড়ির দুটো স্থায়ী নৌকো। কিছুক্ষণ নৌকোতে ঘুরে তারপর অপর পারে বাইবাড়িতে নোঙ্গর করা যাবে। বইবাড়িতে রয়েছে একটি আধুনিক টয়লেট। আপনার প্রাকৃতিক কাজের জন্য নেই কোনো বাড়তি চাপ।

বইবাড়ি আদতে কী করবে? শহরের আধুনিক মানুষদের সাথে গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটি সেতুবন্ধন গড়ে তুলবে বইবাড়ি। গ্রামীণ জনপদের সর্বস্তরের শিশুদের বিনা পয়সায় সারা বছর বই পড়ার সুযোগ দেবে বইবাড়ি। বইবাড়ি আদতে একটি গণপাঠাগার। কিন্তু বইবাড়ি ধীরে ধীরে অনেকটা শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি স্কুল গড়ে তুলবে। যেখানে শিশুরা বিনা পয়সায় বই পড়বে। গান শিখবে। নাচ শিখবে। আবৃত্তি শিখবে। থিয়েটার শিখবে। বইবাড়িতে থাকবে ছুটির দিনে বিনা পয়সায় ডাক্তার দেখানোর সুযোগ।

আমাদের প্রায় বিলুপ্ত গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর সাথে শহরের মানুষের একটি যোগাযোগ স্থাপন করবে বইবাড়ি। বইবাড়ি যাত্রা শুরু করেছে বাউল গান, আবৃত্তি, বইমেলা ও গুনাইবিবি যাত্রাপালা দিয়ে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে তুলতে বইবাড়ি এখন থেকে সারাবছর ভূমিকা পালন করবে।

এখন থেকে প্রতিবছর মানিকগঞ্জের জাগীর ইউনিয়ন কমপ্লেক্স মাঠে বইবাড়ি সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এবছর বইবাড়ির প্রস্তুতির জন্য প্রথমবারের অনুষ্ঠান জানুয়ারির ৭ তারিখে হলো। আগামী বছর থেকে এটা আমরা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ছুটির দিনে হালকা শীতে আয়োজন করব। ধীরে ধীরে এটি তিন দিনের বা সপ্তাহব্যাপী বইবাড়ি সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নেবে।

রবীন বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় একটি করে বইবাড়ি গড়ে তুলতে চায়। শুরুটা হলো মানিকগঞ্জ জেলা দিয়ে। বইবাড়ি সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম। দিনব্যাপী উৎসবে ছিল বাউল গান, আবৃত্তি, বইমেলা ও গুনাইবিবি যাত্রাপালা।

দুপুরে আমরা জাগীর ইউনিয়ন মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলেছি। দীর্ঘদিন পর আবার ফুটবল খেললাম। খেলার শুরুতেই আমরা ১ গোলে পিছিয়ে যাই। কারণ আমাদের বিপক্ষ দলে অন্তত তিন জন পেশাদার ফুটবলার ছিল। তাদের আক্রমণ রুখে দিতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। মাঠে সবচেয়ে বেশিবার ফাউলের শিকার হয়েছি আমি। অন্তত ১৭ বার আমি পলটি মেরেছি। খেলার শেষপর্যায়ে আক্রমণ করে আমরা একটি পেনাল্টি পাই। পেনাল্টি থেকে আমি গোল পরিশোধ করি। শেষপর্যন্ত আমাদের খেলাটি ১-১ গোলে ড্র হয়।

ফুটবল খেলা শেষে আমরা বইবাড়িতে গ্রামীণ টাটকা খাবার খেয়েছি। শীতের পিঠা ও খেজুর গুড়ের পায়েস ছিল দুর্দান্ত। গুনাইবিবি যাত্রাপালা উপভোগ করে রাতেই আমরা ঢাকায় ফিরে আসি। দীঘদিন পর যাত্রা দেখার সুযোগ পেয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছি।

রবীনের বইবাড়ি সফলভাবে গড়ে তুলতে আমরা বন্ধুদের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বইবাড়িতে আজীবন সদস্য হওয়া যাবে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায়। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে আপনি খুব সহজেই বইবাড়ির আজীবন সদস্য হতে পারবেন। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে আমরা শুরুতেই আপনাকে পাঁচ হাজার টাকার বই দিয়ে দেব। রবীনের শ্রাবণ প্রকাশনীর পাঁচ হাজার বই আপনি নগদে পাচ্ছেন।

বইবাড়ির আজীবন সদস্য হওয়ার এই অফারে আমরা এখন ৫০% ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। এই সুযোগ থাকবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত। ১ মার্চ ২০২৩ থেকে বইবাড়ি আজীবন সদস্য হতে আপনার লাগবে দশ হাজার টাকা। অমর একুশে বইমেলায় আপনি শ্রাবণ প্রকাশনীর স্টলে এসে বইবাড়ির আজীবন সদস্য হতে পারবেন। কিংবা শ্রাবণ প্রকাশনীর কার্যালয়ে সপ্তাহের যে কোনো দিন এই সুযোগ পাবেন।

বই আমাদের সত্যিকারের মানুষ হবার এক অপার মাধ্যম। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বাঁচানোর একটি পরম উপায়ও বই। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে আমাদের বই পড়ার অভ্যাস একদম কমে যাচ্ছে। কিন্তু একটি ভালো বই আপনার সারাজীবনের বন্ধু। বই হোক আপনার জীবনবন্ধু। বইবাড়ি হোক আপনার নিজের বাড়ি। বইবাড়ি কার্যত একটি সাংস্কৃতিক সেতু। একটি ওপেন লাইব্রেরি, একটি গণপাঠাগার। বইবাড়িকে আপনি নিজের যত্নে রাখবেন এই প্রত্যাশা। বন্ধু রবীনের বইবাড়ি সফল হবে এটাই হৃদয় দিয়ে কামনা করি। শুভ হোক বইবাড়ির, বইয়ের বাড়ির। জয়তু বইবাড়ি।

৮ জানুয়ারি ২০২৩

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫০

আরাফআহনাফ বলেছেন: বেশ ভালো উদ্দ্যোগ, বই পড়ার ব্যাপারে সত্যি বলতে আমরা পিছিয়ে আর এখন তো স্মার্টফোনের যুগ - যা চাই হাতের মুঠৌয় পৌঁছে যায় - সুতরাং কে আর যায় কস্ট করে বই কিনে বা সংগ্রহ করে পড়তে !

বইঘরের জন্য শুভ কামনা রইলো।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০০

রাজীব নুর বলেছেন: এবং আমি জানি ভোরবেলা আপনি নৌকা চালিয়েছেন। আপনি ভাল নৌকা বাইতে পারেন।

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬

সোনাগাজী বলেছেন:


ভালো ভাবনা ও উদ্যোগ।

ছবিতে, আপানার ডানে যিনি আছেন ( বড় চশমা পরিহিত), উনাকে টুথপেষ্ট ও টুথব্রাশ কিনে দেবেন।

৪| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৫১

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: অসাধারণ মহৎ এক উদ্যোগ, বর্ণনা শুনে মনে হলো পিকনিক স্পটের মত সাথে বই ফ্রী। বই পড়ুয়াদের জন্য এটা একটা দারুণ স্পট হতে পারে। একদিন যেতে হবে।

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৩০

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: চমৎকার উদ্যোগ, শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.