নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলা ও কিছু অন্যান্য প্রসঙ্গ!

০১ লা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৩২

বইমেলা ও কিছু অন্যান্য প্রসঙ্গ!

কাগজ:
আমাদের চাহিদার তুলনায় কাগজের বাজার ছোট। তাই প্রতি বছর আমাদের কাগজ আমদানি করতে হয়। অমর একুশে বইমেলাকে ঘিরে এবছর সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছিল কাগজ নিয়ে। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও এলসি সংক্রান্ত জটিলতাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা বাজারে কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।

এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বেশি মুনাফা ঘরে তুলেছে এই কাগজ ব্যবসায়ীরা। কাগজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে তিন-চার গুণ বেড়েছে। কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোনো নজরদারি ছিল না। কাগজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজি করেই কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। তারপর তারা কৌশল করেই কাগজের দাম তিন-চার গুণ বাড়িয়ে নিজেদের ঘরে মুনাফা তুলেছে।

প্রেস, প্লেট ও বাইন্ডিং:
এবছর প্লেট, বই ছাপানো ও বাইন্ডিং সব জায়গায়ই প্রকাশকদের বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। করোনা মহামারীর পর এই সেক্টরে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প হয়ে গেছে। বিশেষ করে বাইন্ডিংখানায়। অনেকে বাইন্ডিং ছেড়ে দিয়ে পেশা বদল করেছে। ফলে নতুন বই তৈরি করতে ছাপা খরচ বেড়েছে, প্লেট-পেস্টিং খরচ বেড়েছে। আর বেড়েছে বাইন্ডিং খরচ। ফলে প্রকাশকদের এবছর বই তৈরি করতে খরচ বেশি হয়েছে।

পরিবহন:
এবছর পরিবহন খরচও বেড়েছে। যা প্রকাশকদের পকেট থেকে গেছে।

বিক্রয় কর্মি:
এবছর বইমেলায় প্রকাশকদের বিক্রয় কর্মিদের পেছনে আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি খরচ করতে হয়েছে।

বইয়ের দাম:
উপরের এই বিষয়গুলো সমন্বয় করতে প্রকাশকরা এবার বইয়ের বাড়তি মূল্য রাখতে অনেকটাই বাধ্য হয়েছেন। ফলে এবছর বইয়ের ফর্মা প্রতি দাম অনেক বেড়েছে। কেউ কেউ মানহীন কাগজে বই ছাপিয়েও বাড়তি মূল্য রেখেছেন। খারাপ ছাপা, মানহীন বাইন্ডিং করেও অনেকে বাড়তি দামের এই সুযোগ নিয়েছেন।

মূল্যস্ফিতি:
বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফিতি কত তা হয়তো জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আগে সিগারেটের প্যাকেটে যে দাম লেখা থাকতো সেই দামে বা তার চেয়ে কম দামে সিগারেট কেনা যেত। এখন সিগারেটের প্যাকেটের গায়ের চেয়ে দোকানিরা ইচ্ছামত বাড়তি দাম রাখে। ঢাকার কোথাও আপনি একই দামে সিগারেট কিনতে পারবেন না।

যে কোনো জিনিসের দাম কত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায় সরকারের। অথচ বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। এমনকি বাজারের পণ্য বিক্রির উপর নজরদারিও নাই। ফলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের কারসাজিতেই পণ্যের দাম ঠিক করে। সে ডিম হোক, সিগারেট হোক, পানি হোক, মাছ-মাংস-চাল-ডাল যাই হোক না কেন।

বাজারে নিয়ন্ত্রণের এই সংকট থেকেই ব্যবসায়ীরা একচেটিয়া সুবিধা নিচ্ছে। সেই একই সূত্র ব্যবহার করে এবার কাগজ ব্যবসায়ীরা ঘরে মুনাফা তুলেছে। বাইন্ডিংখানা মুনাফা তুলেছে। প্রেস মুনাফা তুলেছে। প্রকাশকরা মুনাফা তোলার চেষ্টায় বইয়ের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু বই একটি স্লো আইটেম। প্রকাশকদের এই মুনাফা আদৌ ঘরে আসবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে তাদের চেষ্টায়ও সেই মুনাফা তোলার ব্যাপারটি সক্রিয় ছিল।

দেশে যদি মুদ্রাস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে যে কোনো ব্যবসায়ী এই সুযোগ নেবার চেষ্টা করে। ফলে বই বাজারে এর প্রভাব এবছর সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান মনে হয়েছে।

বইয়ের মান:
হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনা ছাড়া দেশে প্রকাশকদের কোনো সম্পাদনা পরিষদ নাই। কোন বিষয়টি প্রকাশযোগ্য সেই মানদণ্ড ঠিক করার একচ্ছত্র অধিকার রাখেন প্রকাশক। ফলে বইয়ের মান নিয়ে প্রকাশকদের মধ্যে কোনো ধরনের সুচিন্তা একেবারে সিলেবাসের বাইরে। ফলে মুড়ি মুড়কির মত বাজারে মানহীন বই চলে আসছে। আর এসব বইয়ে ভুল বানান, ভুল বাক্য, সম্পাদনাহীন যত সব আজব কিচ্ছা।

মুরগা লেখক:
বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি এখন ২১ কোটি হয়, তার মধ্যে লেখক হয়তো ২২ কোটি। কে পাঠক কে লেখক নির্ণয় করার এখন সুযোগ নাই। সারা বছর একটি বইও পড়ে না, সেও এখানে লেখক। নিজের খায়েস মেটানোর জন্য প্রকাশকদের টাকা দিয়ে এরা বই ছাপান। বইয়ের মত দেখতে সেগুলো আদতে কাগজের আবর্জনা।

এসব মুরগা লেখকরা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্খীদের অনেকটা জোর করেই বই গছিয়ে দেন। আর এই সংখ্যা প্রতিবছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের প্রকাশকরা এদের বই নেওয়ার জন্য একপায়ে খাড়া। কারণ বই ছাপানোর আগেই প্রকাশকের পকেটে নগদ মুনাফা। এই যে প্রবনতা তৈরি হয়েছে এটা প্রকৃত লেখকদের জন্য বড় সংকট তৈরি করছে।

রয়্যালিটি:
প্রকাশকরা এখানে খুব কম লেখকদের প্রতি বছর রয়্যালিটি দেন। কারণ তাদের কাছে মুরগা লেখকরাই এখন লাভজনক। প্রকৃত লেখকদের বই কত বিক্রি হলো, সেই হিসেবেও নেই কোনো স্বচ্ছতা। ফলে রয়্যালিটি না দেবার প্রবনতা বজায় রাখতেই প্রকাশকদের আগ্রহ বেশি।

পাইরেসি:
বাজারে পাইরেসি বই ভরপুর। পাইরেসি বই বাজার থেকে তাড়ানোর এখানে যেমন কোনো কার্যকর পদ্ধতি নাই। তেমনি এটা নজরদারি করার জন্য কোনো সংস্থাও নাই। ফলে ভুইফোঁড় প্রকাশকরা এই পাইরেসি বই দিয়ে প্রকৃত প্রকাশকদের চেয়ে বেশি মুনাফা ঘরে তুলছে। আবার অনেক প্রকাশক এখন পাইরেসি বইকে ইচ্ছাকৃতভাবে নন-পাইরেসি করার কৌশল আবিস্কার করছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও চালাক মানুষ যেহেতু বাংলাদেশে বসবাস করে, ফলে পাইরেসি বইকে নন-পাইরেসি করা এখানে মামুলি ব্যাপার।

অমর একুশে বইমেলা হোক দশদিন:
মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ধীরে ধীরে আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে যাচ্ছে। নানান পেশার মানুষ ফেব্রুয়ারির এই এক মাস বইমেলার কারণে নানান কিসিমের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমি মনে করি, ১২ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি মোট দশদিন একুশে বইমেলা করা হোক।

প্রকাশকরা নতুন বছরে যতগুলো বই প্রকাশ করবেন, তারা ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেসব বই বাংলা একাডেমিতে জমা দিতে বাধ্য থাকবে।
গোটা মাস জুড়ে বই প্রকাশ করাটা মোটেও প্রফেশনাল অ্যাটিচুড নয়। গতকাল বইমেলার ২৮তম দিনেও অনেক নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। বছরের বাকি দিনগুলো ওই বইয়ের ভাগ্যে কী আছে তা স্বয়ং ভগবানও জানেন না!

প্রকশকদের নেটওয়ার্ক:
হাতে গোটা কয়েকটা প্রকাশনা ছাড়া অমর একুশে বইমেলার পর প্রকাশিত নতুন বইগুলো কোথাও আর বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যায় না। এর প্রধান কারণ এই ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে মৌসুমী প্রকাশনা সংস্থার উত্থান। বছরের বাকি সময়ে এই নতুন প্রকাশিত বই প্রকাশকদের গুদামে পড়ে থাকে। প্রকাশকদের কার্যকর নেটওয়ার্ক না থাকায় বইগুলো কার্যত পাঠকের হাতে পৌঁছায় না।

ভুইফোঁড় প্রকাশনা:
অমর একুশে বইমেলায় মৌসুমী ভুইফোঁড় প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ করা বন্ধ করতে হবে। সারা বছর যারা বই প্রকাশ করতে পারে না, তারা মোটেও প্রকাশনা শিল্পের জন্য শুভকর নয়। এরা ফেব্রুয়ারি মাসে একটা ব্যবসা করার অছিলায় অমর একুশে বইমেলায় হাজির হয়। এরাই দেশের প্রকাশনা শিল্পের বারোটা বাজাচ্ছে।

বাংলা একাডেমির শীতনিদ্রা:
১ মার্চ থেকে ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১০ মাস বাংলা একাডেমি শীতনিদ্রায় দিনযাপন করে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস বাংলা একাডেমি সচল থাকে। অমর একুশে বইমেলার আয়োজক হিসেবে বাংলা একাডেমি এই দুই মাস জেগে থাকতে বাধ্য হয়। অথচ বাংলা একাডেমির মূল কাজ গবেষণা করা। বাংলা ভাষার বইকে গোটা বিশ্বে অন্যান্য ভাষায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং অন্যান্য ভাষার বইকে বাংলায় রূপান্তর করাই প্রধান কাজ।

কিন্তু অথর্ব বাংলা একাডেমি এসব নামকাওয়াস্তে করে বটে কিন্তু এর প্রধান টার্গেট থাকে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করা। যা মোটেও বাংলা ভাষার জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলা একাডেমির এই শীতনিদ্রা কবে দূর হবে তা স্বয়ং ঈশ্বরও জানেন না। অমর একুশে বইমেলার দায়িত্ব সংস্কৃত মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের যৌথ আয়োজনে করতে হবে। যেখানে বাংলা একাডেমি কেবল মনিটরিং করবে।

বাংলা একাডেমির আয়-ব্যয় নিয়মিত তদন্ত করা হোক:
অমর একুশে বইমেলা থেকে বাংলা একাডেমির আয় ও ব্যয় তদন্ত করা উচিত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)কে প্রতি বছর বাংলা একাডেমির আয় ও ব্যয় নিয়ে তদন্ত করা উচিত। কারণ বাংলা একাডেমির নিজস্ব কাজ বাদ দিয়ে কেবল অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করার মধ্যে একটা বিশাল আয়-রোজগারের ব্যাপার স্যাপার আছে। যা কখনোই তদন্ত করা হয় না।

নতুবা নিজের খেয়ে তারা এভাবে বনের মোষ তাড়াতে এত আগ্রহী কেন! বাংলাদেশে কোথায় যে দুর্নীতি হয় না, তা যেহেতু গবেষণা করে বের করতে হবে, তাই বাংলা একাডেমি যে দুর্নীতির উর্ধ্বে, সে কথা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রতি বছর ৩০ মার্চের মধ্যে বাংলা একাডেমির আয় ও ব্যয়ের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক বইমেলা:
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে অন্তত এক সপ্তাহের একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন করা উচিত। যেখানে বাংলাদেশ থেকে বাংলা একাডেমি ও কেবল প্রফেশনাল প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের বড় বড় প্রকাশনা সংস্থাকে অংশগ্রহণের জন্য সুযোগ দিতে হবে।
----------------------------
১ মার্চ ২০২৩, ঢাকা

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৪১

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


সিন্ডিকেট দেশ গিলছে,বইমেলার মান কমতে কমতে গায়েব হয়ে যাবে, একসময় দেখা যাবে বইমেলায় সব ব্যবসায়ী; কোনো লেখক,পাঠক,ভিজিটর নেই।

২| ০১ লা মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৬

ঢাবিয়ান বলেছেন: ্ববইমেলা এখন মুরগা লেখক এবং মানহীন প্রকাশকদের মেলা। ফেসবুকে যেসব বন্ধু/বান্ধবীরা লেখক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, ছাত্রজীবনে তাদের বই এর আশেপাশেও কোনদিন দেখি নাই। আর প্রকাশক!! শুনেছি যার কোথাও কোন চাকুরি জোটে না, সেই কিছু টাকা নিয়ে এই ব্যবসায় নেমে যায়।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৮

এম ডি মুসা বলেছেন: শুভকামনা

৪| ০২ রা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার একটা পোষ্ট দিয়েছেন।
বাংলা একাডেমি ঢেলে সাজানো দরকার। যারা বাংলা একাডেমিতে কাজ করেন তাদের জবাব্দিহিতা থাকা দরকার।

৫| ১৭ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:০৭

এইযেদুনিয়া বলেছেন: যা বলেছেন! এই মুরগা লেখকদের জন্য এখন নিজের বই প্রকাশ করার কথা ভাবতেও পারি না।

৬| ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৫

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: সব গোলায় যাচ্ছে, গেছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.