নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধিনতার শত সহস্র, লক্ষ কোটি সুফল - কিন্তু একটি মাত্র “কুফল” - দেশের নিতি নির্ধারণে অযোগ্য লোকেরা সব উচ্চাশনে - রাজনিতিতে ও প্রশাসনে - ফলে দেশটি যথাযথভাবে উন্নতিতে আগাতে পারছে না। তারপরেও যে টুকু এগিয়েছে সব টুকু ব্যাক্তি উদ্যোগে - সরকারের ভূ

রুহুলআমিন চৌধুরি

আমার জন্ম ০৬ মে, ১৯৫৬ খৃস্টাব্দ (আমার এস এস সি সনদ, জাতিয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনপত্রে জন্ম তারিখ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ খৃস্টাব্দ - যাকে আমি রাষ্ট্রিয় জন্ম দিন বলি)- বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ খৃস্টাব্দে এস এস সি (বিজ্ঞান) - ১৯৭৫ খৃস্টাব্দে ব্রজমোহন কলেজ , বরিশাল থেকে এইচ এস সি (বিজ্ঞান) - মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাশ করি - আমি জানুয়ারি, ১৯৭২ খৃস্টাব্দ থেকে জানুয়ারি, ১৯৮৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর আসর, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সি পি বি) সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সক্রিয় ছিলাম - আমি বরিশাল শহরে অনামি লেন, সদর রোডে বড়ো হলেও - আমার নিজের বা বাবার কোনো বাড়ি নেই - আমার দাদার বাড়ি (দাদার বা তার বাবারও কোনো বাড়ি নেই - ওটিও দাদার দাদার বা তারও আগের কোনো পূর্ব পুরুষের) পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার ০১ নং বলদিয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়িতে - আমি ১৯৬৫ খৃস্টাব্দে প্রথম আুষ্ঠানিক ভাবে স্কুলে যেতে শুরু করি - তৃতীয় শ্রেনিতে - স্কুল থেকে পাক ভারত যুদ্ধ বিরোধি এবং ফাতেমা জিন্নার হেরিকেনের পক্ষে মিছিল করে বরিশাল শহর প্রদক্ষিণ করে হাটু পর্যন্ত ধূলা বালিতে একাকার হয়ে বাসায় ফিরি - সাদা জুতা মোজা প্যান্ট নষ্ট করে - তারপর ১৯৬৯ পাকিস্থান দেশকৃষ্টি বিরোধি আন্দোলন ও ১১ দফা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনে বরিশালের ততকালিন ছাত্র নেতা শহীদ আলমগির, আ স ম ফিরোজ, মনসুরুল আলম মন্টু, নওশের জাহান, আনোয়ার হোসেন, আনেয়ার জাহিদ, আব্দুল হালিম, কাশি নাথ দত্ত সহ আরো অনেকের সান্নিধ্যে যাবার সৌভাগ্য হয় - ১৯৭০ এর ভয়াল জলোচ্ছাসে উদয়ন স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে আমি \"কাকলি ছাত্র সংঘ\" গড়ে তুলি - আমরা জুতা পালিশ করে, খবরের কাগজ বিক্রি করে, পেয়ারা বিক্রি করে, অর্থ সংগ্রহ করি ও বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে পুরনো জামা কাপড় সংগ্রহ করে ভোলার দুর্গত এলাকায় পাঠাই - ১৯৭১ এর পয়লা মার্চ থেকে মিছিল মিটিং ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিলে মামা ও নানার সাথে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে, স্বরূপকাঠী কলেজ মাঠে জাহাঙ্গির বাহাদুর ও আবু বকর ছিদ্দিকের নেতৃত্বের মুক্তি বাহিনির সাথে সক্রিয় ছিলাম এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে মহসিন ভাইর মুজিব বাহিনি এলে কাটাপিটানিয়া ক্যাম্পে ০৮-১২-১৯৭১ (বরিশাল মুক্ত দিবস) পর্যন্ত সক্রিয় ছিলাম - যেহেতু আমি নিজে কোনো পাকিস্থানি মিলিটারি মারিনি - অতএব মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া সমিচিন মনে করিনি - আজো করি না - যে সব অমুক্তিযোদ্ধা মিথ্যে সনদ নিয়ো রাষ্ট্রিয় সুবিধা নিচ্ছে - তাদের কারণে অসহায় অসচ্ছল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ মানবেতর জিবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে - সনদ পাবে - চাকুরি পাবে - ভাতা পারে - ছেলে মেয়ে নাতি পুতি সুবিধা পাবে - এমন আশা করে কোনো একজন মুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযুদ্ধে যায় নি - প্রত্যেকে জিবন বাজি রেখে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে গেছে - সুবিধাবাদি অমুক্তিযোদ্ধারাই ভূয়া সনদ নিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করছে - হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয় নি - তারপরেও লাখ লাখ সনদধারি মুক্তিযোদ্ধা কোথা থেকে এলো ? আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের পর পরই স্বাধিনতা বিরোধিরা (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুরা) সুকৌশলে সনদ নিয়ে, আজ এই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে - আসলে সরকারের নিতি নির্ধারণেও কিছু ত্রুটি ছিলো - উচিত ছিলো -“মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান” এই সনদ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া - কিন্তু ভাতা - চাকুরির বয়স বৃদ্ধির সুবিধা - পোষ্যদের চাকুরি প্রদানের সুবিধা - মাসিক ভাতা - এগুলো কেবলমাত্র হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই দেয়া সংগত ছিলো - এখানেও আমলাদের বা নিতি নির্ধারণে স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) বিশাল ভূমিকা রয়েছে বলে আমি মনে করি - দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করি - না হলে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও বিতর্কের কারণ কি হোতে পারে ? খেতাব প্রদানের সময় থেকেই স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) সক্রিয়তা বুঝতে পারেনি - মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সমর্থকরা ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা - কারণ যারা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্থান সরকারের আজ্ঞাবাহক ছিলো সেই সব আমলারাই ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ সরকারের নিতি নির্ধারক হলেন ? স্বাধিনতার শত সহস্র লক্ষ কোটি ‘সুফল’ আছে - কিন্তু একটি মাত্র ‘কুফল’ - যা আজো জাতিকে পিছু টানছে - প্রতিনিয়ত - তা হোলো “উচ্চাসনে (নিতি নির্ধারণে) অযোগ্যরা (রাজনিতিক ও আমলা) ।। ।। আমি নিজ সামর্থানুসারে চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হত দরিদ্র শিক্ষার্থিদের আর্থি ক সহায়তা করে থাকি । দু’টি এতিমখানাতে ও চার - ছয়টি মসজিদে মৃত মা বাবা ও অকাল প্রায়াত ভাতিজির (স্বপ্নীল) নামে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করি। সকলের দোয় প্রার্থি ।

রুহুলআমিন চৌধুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'সুরিঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যু: নক্ষত্রের পতন\'

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

'সুরিঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যু: নক্ষত্রের পতন'

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত । নামেই তিনি সমধিক পরিচিত । চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে । আর ফিরবেন না । আমাদের হাসাবেন না । তার কথায় কেউ রাগ করবেন না । এখন তিনি শুধুই স্মৃতি । বেদনাদায়ক স্মৃতি । মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথা শুনছি । বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য, তুখোড় বক্তা, স্পষ্টভাষী, সাতবারের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং আরো কত কি । সবই ভালো ।
এর সাথে আমি শুধু একটু যোগ করতে চাই, তা হলো: সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন সজ্জন ও পারফেক্ট জেন্টেলম্যান।
তিনি ছিলেন রাজনৈতিক ।
বড়মাপের নেতা ।
বিদ্যা-বুদ্ধি, মেধা, পড়াশোনা, সংসদীয় রীতিনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ছিলেন তিনি ।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধু নানা গুনে গুণান্বিত ছিলেন তা-ই নয়, বরং সেই গুণকে মাধুর্যময় ডেলিভারি দিতেও তিনি ছিলেন ওস্তাদ ।
বক্তৃতায় তিনি ছিলেন 'এন এক্সপার্ট হেড মাস্টার'; আর টেবিল টকে 'হিরো'। তাকে 'রাজনৈতিক কথাশিল্পী' বললে বেশি বলা হবেনা।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভালো মানুষ ছিলেন।
দেবতা ছিলেন না।
মানুষ ভুল করে, তিনিও ভুল করেছেন।
দোষেগুণে মানুষ ছিলেন তিনি।
রাজনীতি করতেন, তাই সুনাম ও দুর্নাম দু'টিই ছিলো।
সামান্য ত্রূটি-বিচ্যুতি বাদ দিলে এক বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছেন তিনি।
মানুষের সাথে মিশেছেন।
মানুষকে ভালোবেসেছেন।
মানুষ তাকে ভালোবেসেছে ।
শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে।
মানুষই আবার তাকে বিপদে ফেলেছে ।
অভিযোগ করেননি কারো বিরুদ্ধে ।
রেগেছেন, আবার সামলে নিয়েছেন।
কারো ক্ষতি করেননি ।
তবে কথা বলতে ছাড়েননি।
কথার শক্তি অসীম ।
কথা মানুষকে ওপরে ওঠায়, নীচেও নামায়।
কথাই দাদাকে ওপরে উঠিয়েছে, সম্ভবত: যেটুকু তিনি নীচে নামতে বাধ্য হয়েছেন তাও কথারই জন্যে।
কারণ সত্যকথা প্রায়শ: অপ্রিয় হয়। কঠিন হয়।
আর এই কঠিন কথা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সহজ করে সহজ ভঙ্গিমায় প্রকাশ্যে সবার কাছে প্রকাশ করে দিতেন।
বড় উঁচুমাপের মানুষ ছিলেন তিনি। তার ওপর সুদর্শন। অভিনয় করলে নায়কদের ভাত মারা যেতে পারতো।
ওপথে যাননি। রাজনীতি ছিলো তার নেশা, পেশা।

মন্ত্রী হবার আগে তিনি নিউইয়র্কে এসেছিলেন। তখন শোনা যাচ্ছিলো তিনি মন্ত্রী হচ্ছেন। আমরা ক'জনা তাকে নিয়ে বসেছিলাম। আমাদের মাঝে কেউ কেউ চাচ্ছিলো না যে তিনি মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করুন।
কারণ দলের মধ্যে তিনি বিদ্রোহী।
ভয় হচ্ছিলো তিনি বিপদে পড়তে পারেন।
আমরা কিছু একটা বলেছিলাম যা অনেকটা এরকম যে, মন্ত্রীত্ব হয়তো পাবেন, নিবেন কিনা সেটা আপনি জানেন।
আমরা জানতাম, তিনি নেবেন। কারণ দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন, কখনো মন্ত্রী হ'ননি। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সবকিছুই পেয়েছেন, মন্ত্রীত্ব বাদে। আর তাছাড়া ২০০৯-এর মত একটি গণতান্ত্রিক সরকারে মন্ত্রী হওয়া তো লোভনীয়।
দাদা মন্ত্রী হলেন, তার কপাল পুড়লো। তার স্বল্পকালীন মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ঢাকা গিয়েছিলাম।
রেল ভবনে মন্ত্রীর সাথে দেখা করি। ব্যস্ত ছিলেন, বসতে বললেন, বসলাম। শুনলাম, আলোচনা করছেন রেলের ভাড়া বাড়ানোর নিয়ে। লোকজন বাইরে গেলে টুকটাক কথা হলো। বললাম, দয়া করে ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়ে বদনাম কুড়াবেন না!

এরপর মাস খানেকের মাথায় তিনি কুপোকাৎ।
রেলমন্ত্রী হবার সময় তিনি বলেছিলেন, 'রেলের কালো বিড়াল' ধরবেন।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তাকেই 'কালো বিড়াল' হয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। দাদা নেই, কিন্তু কালো বিড়াল ঘটনাটি এখনো পরিষ্কার নয়।
দাদা পরিষ্কার করেননি। করলেও হয়তো মানুষ বিশ্বাস করতো না।
এখন একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা পারেন, ওই অধ্যায়ের মোড়ক উন্মোচন করতে। করা উচিত।
পাগলেও বোঝে দাদাকে ফাঁসানো হয়েছে।
মৃত্যুর পর একটি টিভি দেখলাম বলছে, 'সহকর্মীর দুর্নীতির বোঝা কাঁধে নিয়ে তিনি মন্ত্রীত্ব ছাড়েন'।
যাই হোক, সত্যটা প্রকাশ হওয়া দরকার।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহাপুরুষ ছিলেন না বটে, কিন্তু চোর ছিলেন না।
অথচ একটা সময় এমন একটা ধারণা দেয়া হয়েছিলো যে, তিনি ছাড়া দেশে আর কোন দুর্নীতিবাজ নেই?
অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার: তার ড্রাইভার কেন বিডিআর ক্যাম্পে ঢুকলো?
এই ড্রাইভার তো বিএনপি'র এক নেতার ড্রাইভার ছিলেন!
বিএনপি নেতা ইলিয়াস নিখোঁজের সাথে এঘটনার কি কোন সম্পর্ক আছে ?

আরো আছে, অন্তত: দু'টি টিভি কিভাবে আগে ভাগেই খবর পেলো ?
প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয় টিভি দেখেনা,
অথচ মধ্য রাতে মন্ত্রীর গাড়িতে টাকা যাচ্ছে সেই খবর ঠিকই পেয়ে যায় ?
যেই পুলিশ সার্জেন্ট মন্ত্রীর গাড়িটি সার্চ করেছিলেন তিনি ঐ সাহস পেলেন কোত্থেকে ?
পুলিশ মন্ত্রীর গাড়ি তল্লাশি করে এমন রেকর্ড কি আমাদের দেশে আছে ? সামাজিক মিডিয়া বলছে, ঘটনাটি সাজানো।
দলীয় কোন্দলের জের ।
আবার কেউ বলছে, সরকারকে বিপাকে ফেলতে এই অপকর্ম ।
কারো কারো মতে দাদা বেশি বেড়ে গিয়েছিলেন।
হিন্দুদের কণ্ঠস্বর স্তব্দ করতেই এ ষড়যন্ত্র যুক্তি সংখ্যালঘু'র।
তারা প্রায় সমসাময়িক সময়ে অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিকের দৃষ্টান্ত দেন। জানুয়ারি ২০১৫-তে ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে নিউইয়র্ক ফেরার পথে আমাদের দিল্লির বাসস-এর প্রতিনিধি বাদল বলেছিলোঃ মনীষা কৈরালার সাথে ওর দেখা হয়েছে এবং মনীষা রাষ্ট্রদূত নিম ভৌমিককে চেনেই না, নামও শুনেনি। অথচ আমরা কত রোমান্টিক গল্প শুনেছি।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কি দুর্নীতিবাজ ছিলেন ?
পাল্টা প্রশ্ন করা যায়, দেশে দুর্নীতিবাজ নয় কে ?
অথবা মন্ত্রী হবার আগে দাদার বিরুদ্ধে কি দুর্নীতির অভিযোগ ছিলো ?
তবে দাদা ধরা খেয়েছেন।
আবার দাদার গাড়িতে যখন টাকা পাওয়া গেলো তখন তিনি গাড়িতে ছিলেন না, বলা হলো টাকা মন্ত্রীর বাড়িতে যাচ্ছিলো।
গাড়ি কি আসলেই মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলো ?
বলা হলো, ভাগের টাকা। তাহলে অন্য ভাগগুলো গেল কোথায় ?
এসব প্রশ্নের জবাব মেলাটা আসলেই জরুরি।
দাদার জন্যে নয়, জাতির জন্যে, রাজনীতিকে কলংকমুক্ত রাখার জন্যে।
নইলে ভবিষ্যতে যে কেউ ধরা খেতে পারেন।
দাদা মারা যাবার পর বহু মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তার এলাকায় জনতার ঢল নেমেছে। তারপরও বলতে হয়, ঢাকায় যত মানুষ হওয়া উচিত ছিলো, তা হয়নি।
তাকে শহীদ মিনারে নেয়া হয়নি।
তার চিতাভস্ম কোথায় রাখা হবে তা আমরা জানিনা।
ভিনদেশের অত্যাচারী বাদশা মারা গেলে আমরা 'জাতীয় শোক দিবস' পালন করি, কিন্তু নিজ দেশের 'জাতীয় বীর' মরলে কোথায় যেন বাধে!

কুয়ার ব্যাঙের পক্ষে যেমন সমুদ্রের বিশালতা মাপা সম্ভব নয়, তেমনি ক্ষুদ্র মনমানসিকতা নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মত বড় মাপের নেতাকে মাপা কঠিন। মাঝে মধ্যে মনে হয় এতবড় নেতাকে 'ধারণ ক্ষমতা' আমাদের নেই। এটা কি এজন্যেই যে তার নামটি সুরঞ্জিত ?
রাজনীতি দাদাকে ভাসিয়েছে।
রাজনীতিই ডুবিয়েছে।
সত্তরে নৌকার দাপটের মধ্যে বিজয়ী একমাত্র বাম নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। একাত্তরে ৫ নং সেক্টরে সাব-কমান্ডার।
৭২-এ সংসদে একমাত্র বিরোধী সদস্য।
কিন্তু একাই একশ।
বঙ্গবন্ধুর মত নেতার সামনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উত্থান।
যোগ্যতার বলে।
স্বাধীনতার পর তিনি উদ্ভাসিত।
এমনকি বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত বলেছেন, সুরঞ্জিত একা হলেও তার আনীত সংশোধনী যথার্থ হলে তা গৃহীত হবে।
কথাগুলো হয়তো হুবহু ওরকম নাও হতে পারে, কিন্তু অর্থটা একই।
বঙ্গবন্ধুর আমলেই দেশের মানুষ দাদাকে জানতো।
জানতো দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসাবে।
আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, দাদাকে চিনতাম না, কিন্তু নাম জানতাম। জানতাম তার কীর্তির কথা।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। সংবিধানে ক্ষুদ্র ও নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় তিনি ফাইট করেছেন, পারেননি। তাই খসড়া সংবিধানে স্বাক্ষরও করেননি। তখনকার সব বামনেতাই পড়াশোনা করতেন, দাদারও বেশ পড়াশোনা ছিলো, তার কথাবার্তা, রেফারেন্স, বক্তব্য থেকে সেটা স্পষ্ট। ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগে যোগদানের পর তিনি সত্যিকার আওয়ামী লীগ হয়ে যান। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ নেতা 'ন্যাপের মহিউদ্দিনের' মত দাদা 'ন্যাপের সুরঞ্জিত' ছিলেন না। আমার ধারণা, আওয়ামী লীগ তাকে পেয়ে লাভবান হয়েছে, দাদা লাভবান হয়েছেন বলে মনে হয়না। ঠিক একইভাবে মন্ত্রী নাহলে দাদার আসন আরো উচ্চ হতো। দাদা ছিলেন অমায়িক ভদ্রলোক। আমাদের দেশের অনেক নেতার মধ্যে এই গুণটির যথেষ্ট অভাব আছে।

আওয়ামী লীগ বড় দল, সবাই নেতা। তবু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছোট দল থেকে এসেও হারিয়ে যাননি। কিন্তু সংস্কারপন্থী হিসাবে 'উপাধি মিললে দলে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। ঐসময় একটি ছোট্ট ঘটনা বলি। দাদা ছেলের কাছে ভ্যাংকুভারে এসেছেন। একদিন কল দিলাম। অনেকক্ষন কথা হলো, বললাম আওয়ামী লীগ মানেই শেখ হাসিনা, তাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ করবেন সেটা অসম্ভব। রাজ্জাক ভাইয়ের বাকশাল প্রসঙ্গ টানলাম। তিনি ক্ষেপলেন। তারপর কথা শেষ। পরদিন তিনি আবার কল দিলেন, বললেন, গতকাল সারাদিন তোমার কথাটা ভেবেছি, তুমি রাইট, ফরাসত আলীও (এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান) তাই বললো। বললাম, দাদা, সংস্কার ঠিক আছে, সংস্কারও চান, নেত্রীও চান। পরে তিনি তাই চেয়েছেন, কিন্তু তখন দেরি হয়ে গিয়েছিলো। ২০১৬-তে তিনি দু'বার আমেরিকা আসেন। শেষেরবার নিউইয়র্ক আসেননি। প্রথমবার একান্তে ডেকেছিলেন। একটি কাজ দিয়েছিলেন, সেটা সম্পন্ন করেছিলাম। সাক্ষী, দাদার একান্ত সচিব, কামরুল। কামরুলকে বলেছিলেন, আমাদের দুই কাপ চা দাও, তারপর যাও।

যেকেউ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পছন্দ নাও করতে পারেন, গালিগালাজ করতে পারেন, কিন্তু তাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। তিনিই বলতে পারেন, 'বাঘে ধরলে ছাড়ে, হাসিনা ধরলে ছাড়েনা। আবার তারই উক্তি, 'শুটকীর হাটে বিড়াল চৌকিদার'।শেষবার তিনি আমাকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা একজনই, তার জায়গাটি তিনি নিজেই তৈরী করে নিয়েছেন, তার সমকক্ষ বাংলাদেশে আর কিছুই নেই। দাদার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আসনটি যেমন ছিলো সু-উচ্চ, তেমনি নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধার কোন ঘাটতি ছিলোনা। তবে দাদার আরো কিছুটা সন্মান প্রাপ্য ছিলো, আমরা তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। মারা যাবার পর দাদার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে যত কুৎসা রটনা হয়েছে, সেটা লজ্জাস্কর। এমনকি সরকারের একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি জাকিরুল ইসলাম এক স্ট্যাটাসে 'বিড়াল ও লবন' নিয়ে একটি গল্প ফেঁদেছেন। অবশ্য ফেইসবুকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নিয়ে কটাক্ষ করায় গৌরনদীতে পুলিশ যুবলীগ কর্মী হাবুল খলিফাকে গ্রেফতার করেছে।

আসলে দাদা চলে যাবার পর অনেক কথাই মনে পড়ছে। সেসব লিখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। দাদাকে কখনো ধর্ম নিয়ে কথা বলতে দেখিনি। যদিও বৌদি সারাক্ষন 'সন্তোষী মা'র' পুজো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। 'হয়তো সতীর পুণ্যে পতির পুন্য' নীতি মেনেই বৌদি তা করতেন। মিডিয়ায় দেখলাম, তার লাগানো গাছ কেটেই তাকে দাহ করা হয়েছে। আমরা ক'জন গাছ লাগাই? মাটির সাথে এই নেতার সংযোগ নিবিড়। বাংলার মাটিতেই তিনি মিশে গেছেন। তার মৃত্যু 'নক্ষত্রের পতন'। এ শূন্যস্থান অপূর্ণই থেকে যাবে? শেষ করবো দাদার একটি ভাষণের কিয়দংশ শুনিয়ে, যেটি আমি প্রায়শ: বলে থাকি: এরশাদ তখন ক্ষমতাসীন। একদিন বায়তুল মোকাররমে এক সভা হচ্ছিলো। ভাষণ দিচ্ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলছিলেন: নির্বাচন হলো ডাঃ কামাল ও বিচারপতি সাত্তারের মধ্যে। জনগণ ভোট দিলো ডাঃ কামালকে। জিতলেন বিচারপতি সাত্তার। আর--ক্ষমতায় বসলেন হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ--। এই হলো, সবার প্রিয় সুরঞ্জিতদা।

শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
৬ ফেব্রূয়ারি ২০১৭। নিউইয়র্ক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.