নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহজ কথা যায় না লেখা সহজে

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৫৭


সহজ কথা যায় না লেখা সহজে
এবারের (২০২৩) বইমেলায় গিয়ে একবার অসুস্থ বোধ করছিলাম। মানে, মাথাব্যথা আর শারীরিক দুর্বলতায় (সম্ভবত প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিল) ভুগছিলাম। আমার এক ছাত্র, যে বইমেলায় দায়িত্ব পালন করছিল (শাহবাগ থানার অধীন) সে আমাকে বইমেলাস্থ প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেল।

ওখানে দু'জন স্ত্রীলোক বসা ছিলেন। তারা আমার নাম এবং বয়স একটা খাতায় টুকে নিলেন। তারপর জানতে চাইলেন কী সমস্যা আমার। সমস্যার কথা জানালাম তাদের। তারপর সুন্দর মতো একটা প্যারাসিটামল দিলেন তারা। নাম-বয়স আর সমস্যা যেভাবে আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, আমি ভেবেছিলাম বিশেষ চিকিৎসা সেবা পাব। কিন্তু এখন দেখি শুধু প্যারাসিটামল।


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা মনে পড়ল। তখন মেডিক্যাল সেন্টারে গেলে এই প্যারাসিটামল দিত। হয়তো মাঝেমধ্যে হিস্টাসিন দিত। মনে মনে ভাবতাম, শুধু এই ওষুধ বিতরণের জন্য মেডিক্যাল সেন্টার?

আসলে দোষ তাদের না, বস্তুতঃ দোষ কারও না। বইমেলা বলি, আর বিশ্ববিদ্যালয় বলি; যে পরিমাণ মানুষ, সবাইকে একটা করে প্যারাসিটামল দিলেও কিন্তু অনেক।


বিভিন্ন স্কুলে যখন পড়াতাম, মাঝেমধ্যে গাল-মন্দ করতাম শিক্ষার্থীদের। বিনা কারণে না অবশ্য। পড়া না পারলে বা কথা না শুনলে। মাঝেমধ্যে মারধরও করতাম। অবাক করা ব্যাপার হলো, এরা খুব কম সময়ই আমার নামে অভিযোগ করেছে। মন খারাপ করেছে ঠিক আছে কিন্তু একসময় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অথচ অনেক শিক্ষক সামান্য রাগ করে কথা বললে ক্ষেপে যেত ওরা। মা-বাবার আদরের ছেলে-মেয়ে। এরা কোনো শাসন বারণ পছন্দ করত না।

আমার সহকর্মীরা বিশ্বাস করতেন না আমি বকাঝকা করতে পারি। তারা সবসময়ই আমাকে ভদ্রগোছের ভাবতেন। ভাবতেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারি না। অথচ ভাজা মাছ খুব পছন্দের আমার। কাঁটাসহ খেয়ে ফেলি।

এখন দুটো বাচ্চাকে একসঙ্গে পড়াই। ছোটটা পড়ে প্লেতে। পড়াতে গেলে আমার মুখ দেখে বুঝে যায় মন ভালো না কি খারাপ। মাঝেমধ্যে বকাঝকা করলে বলে, "স্যার, আপনার মন খারাপ?" তখন খুব মায়া হয়। বলি, "হ্যাঁ, মা।" তখন সেও মন খারাপ করে। একসময় স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করি। সেও স্বাভাবিক হয়।

বড়টা থ্রিতে পড়ে। চুপচাপ স্বভাবের। সেও আমাকে পড়তে পারে। পড়ালেখা ঠিকমতো না করলে বকলে মন খারাপ করে। পরে মন খারাপ করেছে কি না জানতে চাইলে বলে, "না, স্যার। ভালোর জন্যই তো বকেছেন। অন্যসময় তো আদর করেন।"

বাচ্চারা কখনো জানার সাহস করে না কেন মন খারাপ বা এসব। কিন্তু অন্যরা যখন জিগ্যেস করে, আমি বুঝে উঠতে পারি না ঠিক কী বলব। অনেক সময় দেখা যায়, ওদের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে গিয়ে একটা কিছু বলে ফেলি। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে অসৎ মনে হয়। মনে হয়, আমি হাতুড়ে ডাক্তার। অসুখ নির্ণয় না করেই ওষুধ খুঁজি। আসলে রোগ সারে না।


১০ বছর বয়স থেকে ছড়া লিখি। পরবর্তীতে কবিতা, গল্প; এমনকি উপন্যাসও আছে। যদিও প্রকাশিত হয়নি। গল্প-কবিতা কিছু কিছু পত্রিকা বা সাময়িকীতে গেছে।

তো এসব লিখতে গেলে মনে হয় যা বলতে চাই, বলতে পারিনি। এমনও হয়েছে, গোটা লেখা বদল করে ফেলেছি। এমনকি মূল বক্তব্য পুরোপুরি বদল হয়ে গেছে।

আমার মনে আছে, একবার এক বসায় ৭০ টা কবিতা কেটে দিয়েছিলাম। গত ১৯ বছরে যতগুলো কবিতা লিখেছি (৮০০+), এখান থেকে নিজের কাছে ভালো মনে হওয়াগুলোই রেখে দিই, বাকিগুলো বাতিলের খাতায় থাকে।

দেখা যায়, বেশিরভাগ লেখা নিয়ে অতৃপ্তি থাকে। মনে হয়, সময় নিয়ে লেখা উচিত ছিল। অথচ সময় নিয়ে কিছু লিখতে পারি না। এখন যে লেখাটা লিখছি; এটাও তাৎক্ষণিক। মানে, ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে মাথায় যা এসেছে, তা নোটপ্যাডে লিখছি। আর লেখার ভাবনাটা এসেছে সন্ধ্যের ঠিক আগে আগে।


'সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা' পঙক্তিটার সঙ্গে সকলেই কমবেশি পরিচিত। মানুষের মাঝেমধ্যে এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় যে, সে ঠিক বুঝতে পারে না তার সমস্যাটা ঠিক কোথায়। অথবা ধরতে পারে না কোথায় তার সমস্যা নেই। এত এত সমস্যার সাগরে সে সাঁতরে বেড়ায় যে, সে দিশা খুঁজে পায় না। তখন সে মানসিক অসুস্থ হয়ে যায় অথবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যে নিজেকে ধরে রাখতে পারে, সেই টিকে থাকে।

টিকে থাকতে হলে দরকার সমস্যার কারণ অনুসন্ধান। তারপর সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকলে ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। মনোবল বাড়ানো প্রয়োজন।

পৃথিবীটা মস্ত বড়। সবার যে প্রথম চেষ্টায় সফল হতে হবে, এমন না। ব্যর্থ হওয়ারও দরকার আছে জীবনে। নেলসন ম্যান্ডেলা বিজয়ী হয়েছেন, সেটা মনে রাখা যেমন জরুরি, তারচেয়েও জরুরি এটা জানা যে তিনি কতবার ব্যর্থ হয়েছেন। হারতে হারতেই তো মানুষ জিততে শেখে।

যার অল্প রুজি সে যেমন বেঁচে থাকে, যার অনেক রুজি সেও বেঁচে থাকে। হয়তো জীবনধারা ভিন্ন। এখানে মুখ্য হলো বেঁচে থাকা আর জীবনটাকে উপভোগ করা, জীবনকে অর্থবহ করে তোলা। অনেক অর্থ থাকা সত্ত্বেও অনেকে জীবনে আনন্দ খুঁজে পায় না অথচ অনেকে সামান্য অর্থ উপার্জন করেও জীবনের অর্থ খুঁজে পায়।

পৃথিবীটা সুন্দর। এখানে সুন্দরভাবে বাঁচতে শিখতে হয়, অন্যকেও সঙ্গে নিতে হয়। জীবনকে উপভোগ করাই বড় কথা।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:২৩

ডার্ক ম্যান বলেছেন: জীবনের অর্থ একেকজনের কাছে একরকম। কেউ ব্যক্তিত্বে সুখ খুঁজে আর কেউ বস্তুতে সুখ খুঁজে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানসিক সন্তুষ্টিটাই আসল।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৪৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এ লেখাটায় বেশ ম্যাচিউরিটির ছাপ আছে। শুভেচ্ছা রইল সাধু।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন।

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৪৯

কিরকুট বলেছেন: সব কথা বলার দরকার বা কি? কিছু কথা নাবলাই থাকা ভালো। তা সহজ হোক বা কঠিন হোক।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তা ঠিক। কিছু কথা গোপন থাকাই ভালো।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


৮০০+ কবিতা লিখেছেন,বইমেলায় বই বের করার ইচ্ছা জাগেনি?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন:

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৩

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: লেখাটি সুখপাঠ্য হয়েছে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৪৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



লেখাগুলো পড়ে ভালো লেগেছে। বই মেলাতে অনেক বছর হলো যাই না। তাছাড়া আমি যেই এলাকায় থাকি এখান থেকে বই মেলা অনেক দুর।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:২৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার রুটিন হয়ে গেছে বলতে গেলে। সুযোগ পেলে মিস করি না।

৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:৪৮

ইসিয়াক বলেছেন: বেঁচে থাকা এক বিষ্ময়কর ব্যপার। আমি মনে করি জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করা উচিত। অনেক অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির পর এখন
শত প্রতিকুলতায় আমি নিজেকে নিজে দারুণভাবে সামলে নেই। ছোটবেলায় সামান্য সমস্যায় ভেঙে পড়তাম। তারপর যখন বড় বড় আঘাত, বিরূপ পরিস্থিতির সামনে পড়লাম তখন ঠিক করলাম না আমাকে ভালো ভাবে বাঁচতে হবে কিছুতেই হার মানা যাবে না।আসলে আমি বাঁচতে ভালোবাসি। নিজেকে সামলে কিভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে সেই সল্যুশন নিজেই বের করার চেষ্টা শুরু করলাম।সব সময় মাথায় রাখি সবার আগে ভালোভাবে বাঁচতে হবে। ভালো থাকতে হবে।
জীবন সুন্দর।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:৩১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সত্যিই তাই। শুধু শুধু দুঃখ করে মন ভারী করার মানে হয় না। যা হওয়ার হবেই। ভালো থাকার চেষ্টা তো করতে হবে। আগেই হাল ছাড়া ঠিক না। পৃথিবীটা তো একটা পাঠশালা। নিত্য নিত্য কতকিছু শিখতে হবে।

৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:০৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো লাগলো ঘটনাগুলি। জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে নিজেকেই।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৫২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে নিজেকেই। ঠিকই।

৯| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার মধ্যে হতাশা এখন নেই। বরং আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমারও তাই মনে হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.