নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো মেয়ে

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১১

- মেয়েটার কি নাম?

- ফালানী

- ফালানী কেন?

- আর কইও না, কালার ঠেলায় চেহারা দেহন যায় না। অর বাপে চাইছিল মাইয়াডারে ফালাই দিতে, হেই থেইকা নাম হইছে ফালানী।



- মেয়েটার নাম কি?

- কালানী

- কালানী কেন?

- দেইখ্যা বোঝো না? পাতিলের তলার লেহান গাঁয়ের রং। নাম কালানী হইব না তয় ধলানী হইব?



আমরা সত্যি সত্যিই মেয়েটার নাম জানতাম না। কি নাম তার? জোহরা? ফাতেমা? আয়শা? রাবু? রেনু? মিতু? সুমি? বা অন্য কিছু? কি নাম তার? কুচকুচে কালো মেয়েটার?

মেয়েটার নাম জানলাম, আরও পরে। বছর পাঁচেক বাদে। মেয়েটা কেবল ফ্রক ধরেছে। কামিজে কখনও সখনও ওড়নাও। সেটা আমাদের আড়চোখে তাকানোর বয়স। ছেলে ছোকরাদের। একদিন আমাদের সেই আড়চোখ হঠাৎ চমকে ওঠে, 'আরে! কালানী না!! হ্যা, কালানী ই তো!

আমাদের কেউ একজন বলল, 'ওই দেখ, কালানী যায়'।

কেউ একজন বলল, 'ধুর ব্যাটা, তাকিয়ে দেখ, ও আর আগের মত অত কালো নেই। একটু কেমন শ্যামবর্ণ হয়েছে।'

কেউ একজন বলল, 'যা-ই বলিস, ওর চেহারায় কিন্তু একটা মায়া আছে, খেয়াল করে দেখ'।

কেউ বলল, আরে ব্যাটা, এই বয়সে সবাই সুন্দর হয়। মেয়েদের এইটা বাড়ন্ত বয়স। সব মেয়েরেই সুন্দর লাগে।

আমিও বলি, ও-ও বলে। সেও বলে। তারাও বলে।

শব্দ করে বলে, কানাকানি করে বলে, ফিস্ফিসিয়ে বলে। সবাই বলে...

ফালানী কিংবা কালানীর সত্যিকারের নামটাও জানা হয়। জোহরা? ফাতেমা? আয়শা? রাবু? রেনু? মিতু বা সুমি? কিছু একটা। জানা হয়। দু-চার খানা নীল খামের উড়ো চিঠিও আসে, 'ভালোবাসি কাজল মেয়ে, জীবন দেব ধেয়ে...'

মেয়েটা সে চিঠি খোলে না। তাকায়ও না চেয়ে। সে তার নিজের কালো রঙ দেখে। বাড়ন্ত শরীর দেখে। আর দেখে বইয়ের পাতা। দাঁতে দাঁত চাপে, চোয়াল শক্ত হয়। বুকের ভেতর প্রতিজ্ঞা।

তারপর সময় গেল কত! কত সময়। কি এক শপথ চেপে পড়াশোনার পাঠ চোকায় মেয়ে। একটা চাকুরিও হয়। বাবা দেখে, তার ফেলে দিতে চাওয়া মেয়েটা, সেই ফালানী, বাবার ছিঁড়ে যাওয়া ছাতাটা ফেলে দেয় দূরে, একটা ঝকঝকে নতুন ছাতা, একজোড়া নতুন জুতো। সেই মেয়ে, ফালানী!

মা দেখে, তার সেই কালো মেয়ে কালানী, মায়ের শরীরে মলিন কাপড়ে জড়ায় পাট ভাঙা শাড়ী, জুতো, একটা পানের বাটাও। সেই মেয়ে, কালানী!



এবার? বিয়ে?

বয়স হয়েছে। বাড়ন্ত সেই ছিপছিপে শরীর আরও বেড়েছে, মেদ জমেছে, হঠাৎ কালো থেকে শ্যমাবরন সেই 'ভালোবাসি কাজল মেয়ে, জীবন দেব ধেয়ে...' আবার কালো হয়েছে। একটু বেশীই কি! আগের চেয়েও বেশী! বয়সরে বাবা, সকলই বয়স!! বয়স কি আর থাইমা থাকে! বয়স হয়েছে মেয়ের। কে বিয়ে করবে? কে?



আমাদের সেই ছেলে ছোকরাদের এখন বাছ-বিচারের বয়স। পুরুষ হবার বয়স। আমাদের আড় চোখ এখন আর চমকে ওঠে না। বাছ বিচার করে, কোমরের মাপ, গায়ের রং। ফালানী কিংবা কালানীর নাম যেন কি? কি নাম আবার, ফালানী...

- না না, ওর নাম ছিল কালানী...

- আর কিছু কি ছিল? কিছু একটা ছিল...

- কি জানি!

আমাদের মনে পড়ে না আর। কি দরকার! ওতো কালানী বা ফালানীই। সবাই ও কে চেনে।



মেয়েটা আবার দাঁতে দাঁত চাপে। চোয়াল শক্ত হয়। বুকের ভেতর প্রতিজ্ঞা, 'কাউকে কাউকে একা চলতেই হয়'। কিন্তু একা মেয়ে, বাসা ভাড়া? না না না, এ হবে না। তোমার স্বামী কই?

- কি আপা, এখন অন্তত বিয়ে টিয়ে করেন, আর কত?

- কিরে মা, তোর বয়স তো কম হইল না, বিয়া শাদি কর।

- আর কতদিন? মাইয়া মাইনসের স্বোয়ামী না থাকলে কি পরিচয়?

- ভোটার হবেন? স্বামীর নাম? কি, এখনও বিয়ে করেন নি? কোন সমস্যা আপা? কাহিনী কি?

- এই, চলেন না, অফিসতো বন্ধ, দুইদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আসি... যাবেন না কি!

- বিয়া হয় না? ক্যামতে হইব, চরিত্রের দোষ!

- তোমার মাইয়াডার বিয়া শাদির ব্যবস্থা কর। মাসে মাসে ঢাকারতন টাকা পাঠাইলেই হইব। যেই টাকা খাইতাছ, সেইডা হালাল, না হারাম ভাবছ কুনুদিন?



মেয়েটা রাস্তায় হাটে, একা, তার আজকাল মেঘ হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। কাজল কালো মেঘ। তারপর বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়তে ইচ্ছে হয়... খুব...খুব...

কিন্তু মেয়েটা কেবল মেঘ হয়েই থাকে, বৃষ্টি না।

----------------------------------------------------

কালো মেয়ে/ সাদাত হোসাইন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। একেবারে জীবনঘেষা।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫

হিটলার সাহেব বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো... :)

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

মনিরুল হাসান বলেছেন: মেয়েটার নাম জানিয়ে একটা মোটকা কালো ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেই হতো। মন ভালো হওয়া একটা খবর দিয়ে শেষ হলে ভালো হতো।

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




অল্পকথায় অনেক সুন্দর করে বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছো। দারুন +++

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:১৩

আজাইরা পঁ্যাচাল বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে, আপনার সবগুলো লিখাই জীবন কেন্দ্রিক।
ফেসবুকেও আপনার লিখা সবসময় পড়ি।
শুভকামনা। :)

৬| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮

আমি বাংলাদেশের বলেছেন: Click This Link

৭| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

ইমিনা বলেছেন: বাস্তবতাটাই তুলে ধরেছেন।
আমাদের এই সমাজে একটি ফর্সা রকম মেয়েকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া যায়, তাকে নিয়ে আর দশ জনের সামনে অহংকারী হওয়া যায়, তার চলার পথে চেয়ে থেকে গল্প/কবিতা কিংবা গান লিখা যায়, তার মনের গতি নিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করা যায় কিংবা তার অনুভূতিগুলো নিয়ে গবেষনা করা যায়। অথচ একটা কালো মেয়েকে নিয়ে ভাবার এতো সময় বা অনুভূতি কোনটাই আমাদের নেই।

হা হা হা ... এই হচ্ছি আমরা, আমাদের সাজানো সুন্দর পৃথিবী।

৮| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর বাস্তবতার ছোঁয়া । এইসকল ;) বাস্তবতা লেখাতেই মানায় শুধু কিন্তু আসল বাস্তবে কেউ অনুভূতিতে আনে না । লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো । ব্ল্যাক কুইনদের খুঁজে নামতে হবে ।.. ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.