নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষার বর্তমান দুর-অবস্থার কারন এবং প্রতিকার

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১১

বাংলা পৃথিবীর জীবন্ত ৭১০৬ টি ভাষার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষার কথা বলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দও এর মত অসাধারন সাহিত্যিক রয়েছে এই বাংলা ভাষায় ; রয়েছে ১০০০ বছরের পুরানো সাহিত্য ভাণ্ডার।



তবে বাংলার বিশেষত্ব সাহিত্য কিংবা সংখ্যায় না। বাংলাভাষার মূল বৈশিষ্ট এর সংগ্রামী ইতিহাসে। বাংলাভাষা ব্যবহারকারীরাই প্রথম ভাষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় সংগ্রাম করেছে এবং এই সংগ্রামকে কেন্দ্র করে একটি দেশ এর অভ্যুদয় হয়েছে। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাকে উর্দুর সাথে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে বলে দাবি উঠে, এরপর আস্তে আস্তে সামনে আসে অর্থনৈতিক বৈষম্য এর ব্যাপারটি। এক সময় ভাষার দাবি পুরন হয়, তবে মানুষের কাছে অর্থনৈতিক বৈষম্য এর ব্যাপারটি ধরা পরে গেছে। যার অনিবার্য পরিণাম হিসাবে আসে স্বাধিকার আন্দোলন।



১৯৭১ সালে আমাদের ভাষিক এবং অর্থনৈতিক দুই মুক্তি-ই অর্জিত হয়। তবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন কারনে বাংলাদেশ ১৯৭২ সাল থেকেই একটি সার্বিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে পরে যায়। তাই ভাষার উন্নয়নে তেমন সম্মিলিত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি কখনও। পাকিস্তান আমল এ ভাষা আন্দোলনের কারনে বাংলা ভাষার উন্নতি, এই ভাষায় জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা এবং সাহিত্য সৃষ্টির জন্যে একটা বিরাট জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তার ফলে পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম দিকে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষার অনেক কাজ হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন এর পর সেই জোয়ার স্বাভাবিক ভাবেই কমে যায়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই বাংলার স্থানে ইংরেজি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু হয় সমাজের এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। বোদ্ধারা এর পেছনে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ, টিআইবি মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন আরও ভাল ভাবে বললে পশ্চিমা সংগঠন এবং এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন উপদেষ্টাদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন। আর এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাদের রাজনীতিতে বা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন এবং নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন। পাশ্চাত্যের প্রভাব এদের মাধ্যমে প্রবল হয়ে ওঠে । এর ফলে অফিসের কাজ কর্ম যথাসম্ভব ইংরেজিতে করার একটি প্রচেষ্টা প্রবল হয়ে ওঠে । এদেশের ভাষাপ্রেমী মানুষ বিশ্বাস মনে প্রানে করতো একটি জাতির উন্নতির জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চাসহ সব ক্ষেত্রে মাতৃভাষায় হওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে একটি কথা খুবই জনপ্রিয় ছিল, যদি বিদেশি ভাষায় জ্ঞান চর্চা সঠিক হত তাহলে ইংরেজরা গ্রিক ভাষায় পড়াশোনা করতো, সব ইংরেজিতে অনুবাদ করতো না। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে তাদের মধ্যে এই চিন্তা এবং চেতনা নষ্ট হয়ে গেল। ফলে ভাষার উন্নয়নশীলতা এবং সমৃদ্ধির প্রক্রিয়া বধাগ্রস্থ হয়ে যায়।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি পট-পরিবর্তন হয়। তবে খুব বেশি লাভ হয় না। গত ২৪ বছর বাংলাদেশ শাসন করছে দুইটি দল বা দুইটি পরিবার। আর এই দুটো পরিবারকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতির ধারা তার পেছনে আছে কিছু ডোনার এজেন্সীজ বা দাতা সংস্থা। বাংলাদেশে যারা ডেভেলাপমেন্ট পার্টনার হিসেবে আসছেন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার এশিয় বন্ধু ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই শক্তিগুলো বাংলাদেশকে যেভাবে চালায় বাংলাদেশ সেভাবেই চলছে। এদের ছএ ছায়ার দেশে গেড়ে বসেছে হাজার হাজার এনজিও এবং মাল্টি ন্যশানাল কোম্পানি। মাল্টি ন্যশানাল কোম্পানিগুলো তাদের যাবতীয় কার্যক্রম ইংরেজিতে পরিচালনা করে। এনজিও নিউজ এর ওয়েব সাইটে দেখা যায় দেশে ২৩৩৩ টি এনজিও আছে। এই সব এনজিও মধ্যে এবং উচ্চ পর্যায় এ তাদের সমস্ত কার্যক্রম চালায় ইংরেজিতে এমনকি নিম্ন পর্যায়ও ইংরেজিতে করতে উৎসাহিত করে। এই এনজিও নানাভাবে জাতীয় সংস্কৃতির কথা বলেন ঠিকই, তবে তারা পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এবং আকাশ সংস্কৃতি নিয়ে আসছে। এরা সমাজে একই সাথে ভাষা এবং সংস্কৃতিতে সমস্যা তৈরি করছে।

ইংরেজি এর প্রতি অতি-উন্মাদনা তৈরির পেছনে বড় দায়ী আমাদের সুশীল সমাজ এর একটি অংশ এবং কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যম। এরা বাইরে খুব ভালো কথা বলেন বাংলা এবং বাঙালীত্বের পক্ষে। তবে দিনশেষে তারাই নানাভাবে ইংরেজির প্রয়োজনীয়তাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করেন। এইসব সুশীল ব্যক্তি, টিভি ষ্টেশন এবং এফএম রেডিও এর উপস্থাপকগন বিভিন্ন অনুষ্ঠান ক্রমাগত বিকৃত বাংলা উচ্চারণ করছেন, কথা বলার সময় অযাচিত ভাবে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছেন। এরাই ইংরেজি মাধ্যম নামে দেশে ব্রিটিশ এবং অ্যামেরিকান স্কুল চালু করেছেন। এর মাধ্যমে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। এই স্কুলগুলোকে এখন দেশে আভিজাত্যের প্রতীক মনে কারা হয়। দেশের বেশির ভাগ উচ্চবিও এবং উচ্চ-মধ্য বিও পরিবারের ছেলে মেয়ে এইসব স্কুলগুলোতেই পড়াশোনা করছে। এই স্কুলগুলোর গেট থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত কোথাও বাংলাভাষার কোন স্থান নেই। এরা কৌশলে বিশ্বায়নের কথা খুব জোরে সোরে প্রচার করছে । তারা বলছেন - বাংলা দিয়ে আর কি হবে ; বাংলা কতদিনই বা থাকবে - এখনতো পৃথিবীতে এক ভাষাই হয়ে যাবে ইংরেজি; ফলে সবাইকে ইংরেজির দিকে যাওয়া উচিত । এ রকমভাবে নানান কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রচার করা হচ্ছে ।

ইংরেজি এবং হিন্দির প্রতি উন্মাদনা বৃদ্ধির আর একটি কারন দেশের সংস্কৃতি তথা গান, চলচিএ, নাটক এর দৈন্যদশা। এজন্য মানুষ হিন্দি এবং ইংরেজি গান, চলচিএ, নাটক এর দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দি এবং ইংরেজির প্রতি তাদের একটি প্রীতি তৈরি হচ্ছে যার অনিবার্য প্রভাব পড়ছে বাংলার উপর। আরও একটি বিষয় যা সব ভাষাকেই বিকৃত করছে তবে প্রভাবটা বেশি পড়ছে অ-ইংরেজি ভাষায় তা হল ইন্টারনেট। বর্তমানে শহরতো বটেই গ্রাম গুলোতেও সামাজিক যোযগাযোগের সাইটগুলো তুমুল জনপ্রিয়। তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষও ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইভার, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে। এখানে তারা ভাষা ব্যবহারে এত বেশি বিকৃতি করছে যে বিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ডেভিট ক্রিস্টাল Internet Linguistics নামে ভাষাবিজ্ঞানে নতুন একটি শৃঙ্খল (discipline) প্রস্তাব করেছেন যা নিয়ে এখন ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণা হচ্ছে। এগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে দেশে উচ্চশ্রেণী এবং মধ্যশ্রেণী এমনকি নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরও ইংরেজির প্রতি বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যা মারাত্নক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে আমাদের ভাষা এবং একই সাথে সংস্কৃতিকে।

আমাদের সরকারগুলো এই বিষয় গুলো নজর দেওয়া এবং প্রতিকার করা কতটা জরুরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২১ শে ফ্রেবুয়ারি কেন্দ্র করে প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠান, সিম্পেজিয়াম, সেমিনার হচ্ছে বটে তবে তাতে লাভ কতটুকু হচ্ছে তা দৃশ্যমান নয়। এখন আমাদের ভাষা দিবসকে অর্থবহ করতে আমাদের দেশের শিক্ষা এবং প্রশাসনের সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলন দরকার। অবশ্যই এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমাদের ইংরেজি শিখতে হবে। বর্তমান সিলেবাসে যা আছে তার থেকে বেশি শিখতে হবে। ইংরেজির পাশাপাশি আমাদের ফরাসি, চিনা, এবং আরবিও শিখতে হবে। তবে জ্ঞান চর্চার মাধ্যম হবে বাংলা। আমাদের আর দরকার একটি সুস্ঠ ভাষানীতি। সেখানে বাংলার পাশাপাশি আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার উন্নয়ন এর ব্যাপারে সরকারের একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২০

বিদগ্ধ বলেছেন: ভালো একটি লেখা, কিন্তু শিরোনামে বানানের ভুল লেখাটির গুরুত্ব ম্লান করে দিচ্ছে।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৮

সুফিয়া বলেছেন: আমি মনে করি বাংলা ভাষা কোন দূরবস্থায় পড়েনি। বাংলা ভাষা তার নিজ সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। তবে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষা নিয়ে যথেষ্ট উন্নাসিকতা রয়েছে। তারা নিজের মাতৃভাষা বাদ দিয়ে বিদেশী ভাষায় কথা বলার মাধ্যমে মনে করে নিজেদের অতি আধুনিক রূপ প্রকাশ করতে পারছে। আমি মনে করি প্রকৃত দুরবস্থা তাদের, ভাষার নয়।

ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২

শোভন মোস্তাফিজ বলেছেন: বাংলা ভাষার এখন অবস্থা ভাল না!লোকজন শুদ্ধ বানান পারে না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.