নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে বলে নারী রাজাকার ছিল না ?

১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮


মার্চ ২৩ , ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশ(বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস এ সংরক্ষিত)
পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ,
তৎকালীন অর্থ মন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে যান । সেখানে দালাল আইনে গ্রেফতারকৃত মোট ৯ হাজার ৪৯৩ জন আসামী ছিল , যারা কোন না কোন ভাবে দেশের বিপক্ষে গিয়ে পাকীদের গণহত্যায় মদদ যুগিয়েছে ।
সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এদের মধ্যে ৫০ জন নারীও ছিল যারা পাকিস্তানীদের সহচরী হিসেবে কাজ করায় দালাল আইনে গ্রেফতার হয়েছিল ।
এছাড়া সারা দেশে দালাল হিসেবে যে লিস্ট করা হয়েছে ছিল সেখানে ৬২ জন নারীর কথা উল্লেখ আছে ।

এই সম্পর্ক বিস্তারিত জানতে গিয়ে বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম পুরুষ দালালদের রেকর্ড থাকলেও এই ৫০ জন নারীর রেকর্ডগুলো পুরোপুরি মুছে দেয়া হয়েছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জানতে পারলাম এই ৫০ জনের মধ্যে বেশির ভাগ মহিলাই সম্ভ্রান্ত এবং ক্ষমতাধর পরিবারের ছিল। এদের বেশির ভাগই ছিল ইয়াহিয়া সহ পাকিস্তানী আর্মির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কেপ্ট , সোজা বাংলায় শয্যা সঙ্গিনী । এরা মনে প্রাণে পাকিস্তানের গণহত্যা সমর্থন করত ।মূলত নিজের এবং স্বামীদের উন্নতি সহ নানা সুযোগ সুবিধা পাবার জন্য এরা পাকিস্তানী অফিসারদের সাথে ঘনিষ্ঠ হত এবং দেশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করত ।

তৎকালীন বেশ নাম-ডাক ওয়ালা ঔষধ কোম্পানি করিম ড্রাগস এর মালিকের স্ত্রী এই তালিকায় ছিল । পরবর্তীতে মেজর জিয়া দালাল আইন বাতিল করার সুযোগে মামলা মুক্ত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় ।
এছাড়াও আফরোজা নূর আলী নামে এক মহিলার নাম পাওয়া যায় যে তৎকালীন এক উচ্চপদস্ত সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী ছিল।
এখানে আরও একজনের নাম পাওয়া যায় । শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হকের মেয়ে রইসী বেগম , যে তৎকালীন পাকিস্তান জমিয়তুল সিলমের প্রেসিডেন্ট ছিল, সে (১২ই এপ্রিল ১৯৭১) সালে তার বিবৃতিতে লিখেছে-


আমাদের প্রিয় পাকিস্তানের সীমান্তের ওপার থেকে শত্রুপক্ষ কর্তিক সংগঠিত ও প্ররচিত কতিপয় দেশদ্রোহীদের দ্বারা চরম ভয়ভীতি ও হুমকির মধ্যে কাল কাটাচ্ছিলাম । কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্‌ মহান আল্লাহ্‌তালা লাঞ্ছিত ও অত্যাচারিত মুসলমানদের সারা রাতের আকুল প্রার্থনা কবুল করেছেন এবং পাকিস্থান কে সমূহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এটা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের জাত শত্রুদের সহায়তায় পাকিস্তানের সাতকোটি জনগণের এ অঞ্চলকে বিশ্বনাথ , কালি , ও দুর্গার মন্দিরে পরিণত করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। আল্লাহ্‌ আকবরের স্থলে শেখমুজিব পৌত্তলিকদের যুদ্ধের শ্লোগান জয় বাংলা আমদানি করেছিলেন।

এই মহিলা ধর্ম কে ঢাল বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশদ্রোহী , ধর্মদ্রোহী আর শেখ মুজিবুর রহমান কে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়েছিল। সে হুমকি দিয়েছিল যে পাকিস্তানের কাছে বশ্যতা স্বীকার না করলে পাকিস্তান এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।

৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ৪৯ জন কে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয় তাদের মধ্যে ২ জন নারী ছিল ।

বেগম রোকেয়া আব্বাস (২৫)।ঢাকা । এবং ফরিদা বেগম(২৯) শিবচর ফরিদপুর।

ঢাকা, ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ । সেক্টর ২-এর অধীনস্থ সিদ্দিক বাজার গেরিলা ইউনিটের দুর্ধর্ষ সেনানীরা কুখ্যাত জরিনা'কে গ্রেফতার করা হয়। এই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তা করতো এবং গেরিলা কার্যকলাপ সম্বন্ধে তাদের কাছে খবরাখবর আদান প্রদান করতো। গ্রেফতারের পর জরিনা স্বীকার করে যে, তার সহায়তায় পাক বাহিনী বহু মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। জরিনা অবশ্য দাবী করে যে, এই সমস্ত মেয়েদের ভরণ-পোষণের ভার তার (জরিনা) হাতেই ন্যস্ত ছিল।

দৈনিক পূর্বদেশ এ প্রচারিত রিপোর্ট অনুযায়ী , ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ , খুলনাতে মহিলা প্রতিরোধ কমিটি নামে পাকিস্তান সমর্থক মহিলাদের একটা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে বক্তারা যে কোন মূল্যে পাকিস্তান রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেন ।

রাজিয়া ফয়েজ
৭১ এ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য পাক প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানে দুজন নারী সদস্যের নাম পাওয়া যায় যারা । একজন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক মন্ত্রী রাজিয়া ফয়েজ ( মৃত) এবং আর একজন
ড: ফাতেমা সাদিক।
এরপর রাজিয়া ফয়েজ ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগ (খান এ সবুর) থেকে প্রথম নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরশাদের সময়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শিশু ও মহিলা এবং সমাজ কল্যাণ বিষয়ক পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছিলেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যও ছিলেন রাজিয়া ফয়েজ।
২০০৬ সালের শেষের দিকে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেন। গত কাউন্সিল অধিবেশনে তাকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়।


সোহরাওয়ার্দী কন্যা বেগম আক্তার সোলায়মান ১৯৭১ সালের ১২-ই জুন রেডিও পাকিস্তানে বক্তব্য রাখে। ভাষণে প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের সদস্যদেরকে নিজ নিজ এলাকায় জনগণের মধ্যে পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা স্থাপনের জন্যে কাজ করার আহবান জানায়। আক্তার সোলায়মান তার ভাষণে ‘টিক্কা খান' এই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সঠিক ব্যবস্থা নিয়েছে’ বলে উল্লেখ করে।
তথ্য সূত্র - ( দৈনিক আজাদ , ১৩ ই জুন )


রোকেয়া কবীর এবং মুজিব মেহেদী 'মুক্তিযুদ্ধ ও নারী' এই বইটিতে লিখেছেন , -
নারীরা সর্বত্রই সক্রিয়, যেমন সক্রিয় ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী ভুমিকায়ও। যারা এ রকম ভুমিকায় লিপ্ত ছিলেন, তাদের অধিকাংশেরই ওই কাজের পেছনে পারিবারিক স্বীকৃতি ছিল। যদিও মূলে ছিল ধর্মান্ধতা। পরিবারই এদের প্ররোচিত করেছে নেতিবাচক ভুমিকায় লিপ্ত হতে। এ ক্ষেত্রে সকল শ্রেণি ও স্তরের নারীদের সক্রিয়তা থাকলেও উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত স্তরের নারীদের সক্রিয়তাই ছিল বেশী তাৎপর্যপূর্ণ। লক্ষণীয় যে, এরকম প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই সক্রিয়দের পিতা বা চাচা, স্বামী বা ভাই কিংবা পুরো পরিবারটিই শান্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। অবশ্য নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে অন্য কারণও লক্ষ করা গেছে। যেমন, পাকসেনা বা রাজাকারদের ক্যাম্পসমুহে কর্মরত আয়ারা।


মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইগুলো তে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা থাকলেও নারী রাজাকারদের বর্ণনা ছিল না। যেহেতু নারী রাজাকার বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর সম্ভবত এই কারণে বিষয়টিকে আড়ালেই রাখা হয়েছে।
এই নারীদের লিস্ট খোজার চেষ্টা করছি কিন্তু এদের রেকর্ডপত্র যেভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তাতে ধারনা করতে পারি যেহেতু ক্ষমতাধরদের সাথে এদের ঘনিষ্ঠতা ছিল, সেহেতু পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা এবং অর্থ প্রয়োগের মাধ্যমে রেকর্ড বুক থেকে এরা নিজেদের নাম পরিচয় গায়েব করে ফেলেছে।

যুগে যুগে ঘষেটি বেগমরা ছিল , ৭১ এও তার ব্যতিক্রম ছিল না ।
এই ৫০ কিংবা ৬২ জন ঘষেটি বেগম এখন কোথায় আছে , আদৌ বেচে আছে কিনা এখনো জানতে পারিনি । বেঁচে থাকুক কিংবা না থাকুন এদের প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং শত ধিক থাকবে সব সময়ই।



অশেষ কৃতজ্ঞতা-ফড়িং ক্যামেলিয়া

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এইটা একটা গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট।

৭১ এ রাজাকারীতে নারীর অংশগ্রহন ছিল কিনা?
যা দেখালেন তাতেতো আক্কেল গুড়ুম!!!!!!!!!!!!!!!

২| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অনেক কষ্ট করে এইসব অজানা তথ্য পরিবেশন করার জন্য।

৩| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯

বিজন রয় বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪৮

আরজু পনি বলেছেন:

শিরোনাম দেখে চমকালাম !

পুরোটা পড়ার জন্যে প্রিয়তে নিলাম...সময় নিয়ে পড়বো ।

৫| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১১

নীলকে রহমান রনি বলেছেন: চমৎকার তথ্য তুলে ধরেছেন!

৬| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: কিছু জানতাম আরও কিছু জানা হলো।

চমৎকার পোস্ট।

৭| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:১১

অদিতি আফরিন বলেছেন: চমতকার। জানা হল অনেক :)

৮| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১১

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: সর্বনাশ ! আগে তো জানতামই না। আপনি অনেক কষ্ট করেছেন।প্রিয়তে নিলাম

৯| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: এই রকম কিছু যে ঘটতে পারে তা কখনও মাথাতেই আসে নি !!! ....... লেখককে ধন্যবাদ ।

১০| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৮

লিযেন বলেছেন: ভিন্যধমী্ পোষ্ট...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.