নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার !

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯

আমাদের জেনে রাখা উচিৎ কথায় কথায় আমরা যাদেরকে ধর্ম বাপ ডাকি তাদের মূল চরিত্র।এমন বর্বর কোন বেদুঈন পৌত্তলিক বা কুরাইশ বা ইহুদিরাও ছিলনা কখনও হবেওনা।ধর্ম এদের কাছে ভোগ বিলাশের বস্তু।ধর্মের ছোয়া এদের তো লাগেই নি হজ্ব বা ওফাত কে তারা পর্যটন শিল্পের মত ব্যাবহার করে।ভোগ বিলাশ মদ শূরায় এরা ডুবে থাকে।একজনের কয় বিবি কয় সন্তান এরা নিজেরাও জনেনা।মানবতার কোন বালাই নাই।সময় থাকতে সচেতন হোন।
কিছু ঘটনা বিশ্লেষন করে দেখা যাক-

সুখ স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনের আশায় আদম বেপারির মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে সহায় সম্পদ বিক্রি করে সরকারি ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অসংখ্য নারী শ্রমিক। এসব প্রতারিত নারীকর্মীদের ক্ষুদ্র একটি অংশ পরিবারের সহযোগিতায় দেশে ফিরলেও আদম বেপারীকে দেয়া অর্থ উদ্ধারে কোনো সুবিচার পাচ্ছেন না বলে আভিযোগ করা হচ্ছে।
অভিযোগ আসছে, দীর্ঘদিন যাবৎ লাঞ্চনা-বঞ্চনার শিকার হয়ে জর্দানে পাড়ি জমিয়ে অন্ধ কুটিরে শতশত মা-বোন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কর্মস্থলে ভয়াবহ লোমহর্ষক যৌন নির্যাতনের শিকার অসংখ্য বঙ্গনারী পালিয়ে ফিরছেন জর্দানে বসবাসরত অন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের বাসায়। আবার অনেকে যৌন নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে মালিকের দায়ের করা মিথ্যা চুরির মামলায় জর্দানের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার জর্দান থেকে ভুক্তভোগী অসংখ্য বাংলাদেশি মহিলাকর্মী ফোনে এমন তথ্য জানিয়ে তাদের জীবন রক্ষায় দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তারা জর্দানস্থ আম্মানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে যশোর জেলার পুলেরহাটের বাসিন্দা নাজমা খাতুন বাংলাদেশ এক্সপোর্ট কর্পোরেশন এর (১৮৮/১ মতিঝিল সার্কুলার রোড, আরামবাগ, ঢাকা) মাধ্যমে এ বছরের ২৩ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে পাড়ি জমান। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যশোরের দালাল জাহাঙ্গীর ও রাজধানীর হেমায়েতপুরের আদম বেপারি আবুল কাশেমের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে বেশি বেতনে চাকরির জন্য নাজমার বিধবা মা আয়শা সহায় সম্পদ বিক্রি করে ওই আদম বেপারির হাতে এক লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন।
আদম বেপারি নাজমার পরিবারকে জানিয়েছিলো দুবাইয়ে বাংলাদেশি টাকায় ১৮ হাজার টাকা বেতনে ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তানকে স্কুলে আনা-নেয়া এবং তাদের অফিসের কিছু কাজকর্ম করতে হবে। কিন্তু দুবাইয়ে যাওয়ার পর নাজমাকে একটি পুলিশ অফিসারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার বা মেইড সার্ভেন্টের কাজ দেয়া হয়। মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতনে ভোর ৫টা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত একটানা পরিশ্রমের কাজ। কাজে ভুল হলে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করা হতো। সামান্য দেরি হলে মারধর করা হত। এমন নির্মম নির্যাতনে নাজমা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ ধরনের নির্যাতন ছাড়াও নাজমাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে চাপাচাপি করলে তাকে একটি অফিসে নিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করা হয় এবং পায়ের বুট দিয়ে নির্মমভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাড়ানো হয়। এরকম প্রহারে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
বিষয়টি নাজমার মা জানতে পেরে কন্যাকে ফেরত আনতে এক আবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা কামনা করেন। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ও দুবাইয়স্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের সহযোগিতায় অবশেষে নিজের বেতনের অর্থের বিমানের টিকেট ক্রয় করে নাজমা ১৫ জুলাই দেশে ফেরত আসেন। অথচ নাজমাকে যে আদম বেপারি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুবাইয়ে পাঠিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নাজমার পরিবার অভিযোগ করে বলেছেন, আদম বেপারির হাতে তুলে দেয়া এক লাখ টাকা এখনও ফেরত দেয়া হচ্ছে না।
জর্দান থেকে ফোনে ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন, নারী গৃহশ্রমিকরা জর্ডান বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তাদেরকে স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসের লোকেরা বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে তাদের অফিসে নিয়ে যায়। রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে নেয়ার পর সেখানে তাদেরকে বাসা-বাড়িতে কাজে পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত ঐ অফিসেই থাকতে হয়। রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস কারাগারের মতো। চারদিকের দেয়াল অনেক উচু। জানালা, গ্রিল এবং গেট সর্বক্ষণ তালাবদ্ধ। এই অফিসের ভেতরে তাদেরকে ঠিকমতো খাওয়া দেয়া হয় না। খাবারের কথা বললে স্থানীয় কবুজ/রুটি দেয়া হয়। কোন তরকারি নাই। শুধু রুটি। এই রুটি নবাগত বাংলাদেশি কাজের মেয়েরা খেতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে অন্য কোন খাবার দেয়া হয় না। এমনকি এই রুটি দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন শুধুমাত্র টেপের পানি খেতে হয়। অন্য কোনো খাবার নাই। কোন কথাবার্তায় অমিল বা তর্ক হলে অফিসের ভেতরেই ভীষণ মারধর এবং অনৈতিক কাজ করা হয়। এজেন্ট অফিসের অধিকাংশ লোকেরা ব্যাচেলর। অফিসের ভেতরে বাথরুমে নারীকর্মীদের বিবস্ত্র করে আটকে রাখা হয়। অফিসের ভেতরে মেয়েরা নিতান্তই অসহায় হয়ে পড়ে এবং মারধরের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস থেকে জর্ডানিয়ানরা মেয়েদেরেকে বাসা-বাড়ির কাজের জন্য নিয়ে যায়। এজন্য জর্ডানিয়ানরা রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসকে কম-বেশী জর্ডানিয়ান দিনার ১ হাজার ৬শ অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করে থাকে। এই চুক্তিটি জর্ডানিয়ান ব্যক্তি এবং রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসের মধ্যে বলবৎ থাকে যার মেয়াদ দুই বছর।
সমপ্রতি ঝালকাঠির রাজাপুরের শুক্তাগড় গ্রামের মো. সামছেল হকের মেয়ে তিন সন্তানের জননী মাহাম্মুদা বেগম (২৬) জর্ডানে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে দেশে ফিরে পাওয়ার জন্য তিন শিশুসহ পরিবারের লোকজন আকুতি জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে রাজাপুর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।বর্তমানে জর্ডানে নির্যাতিত অবস্থায় থাকা মাহামুদা বেগমের পিতা মো. সামছেল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত বছরের ৯ জুন ঢাকার মিরপুরের মো. ফরহাদ হোসেনের রিক্রুটিং অফিসের মাধ্যমে মাহামুদা জীবিকার তাগিদে জর্দান যান। তার ভিসা নং জেও -১-২০১২.০৩২১৬৬৮ (০৪.০৬.১২), পার্সপোর্ট নং এ এ ০৫৫৮৮৭৩।
রিক্রুটিং দালাল তাকে মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা ও ওভারটাইমসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে পাঠান। কিন্তু এতো সুযোগ-সুবিধাতো দূরের কথা বাড়িতে ঠিকমত মোবাইলের মাধ্যমে কথাও বলতে পারছেন না মাহমুদা। তিনি জর্দানে যাওয়ার পর প্রতিমাসে মাত্র ২/১ মিনিট মোবাইলে কথা বলেন। তখন মাহমুদা পরিবারের লোকজনের কাছে জানান, আমি ভাল নেই। আমাকে উদ্ধার কর, আমি জেলের মত বন্দি অবস্থায় আছি। শারীরিক নির্যাতনের কথাও বলেন তিনি। এমনকি বাড়িতে কথা বলার সময় মালিক অন্য নারী পাশে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
মাহামুদা বেগমের পিতা মো. সামছেল হক সাংবাদিকদের কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, তার মেয়ে ওখানে গিয়ে রিক্রুটিং দালালের মাধ্যমে কেনাবেচা হচ্ছেন। কারণ মাহামুদার মালিক ব্যাচেলর পুলিশ ও ঐ বাসায় অন্য তার এক পুলিশ বন্ধু থাকে। আর তারা যখন বাড়ির বাইরে যান, তখন তাকে ঘরে তালাবদ্ধ রেখে যান। মাহমুদা বেগম গরীব দিনমজুর পরিবারের রুটি-রুজির জন্য আয়ের তাগিদে দেশের বাইরে গেলেও অদ্যাবধি কোনো টাকা-পয়সা পাঠাননি। এমতাবস্থায় গত ৫/৬ মাস ধরে পরিবারের লোকজন ওখানের মালিকের নম্বরে কল করলে মাহমুদা নামে কেউ নেই বলে ফোন কেটে দেয়।
সর্বশেষ গত বছরের ৩০ অক্টোবর জর্দানের একটি হাসপাতালের এক বাঙালি নার্স ফোন দিয়ে জানান যে, মাহমুদাকে তার মালিক লাথি দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিলে তার দু’টি পা ভেঙে গেছে। বর্তমানে তিনি ঐ হাসপাতলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাহমুদাকে দেশে ফেরত পেতে তার তিন শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
অপরদিকে জর্দান থেকে অপর একটি সূত্র ফোনে জানান, জর্দানের মেইনট্রেন্ড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি তাইওয়ানী গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতে প্রায় ছয়শ নারী শ্রমিক যান। সাত মাস আগে সরকারি সংস্থা বোয়েসল এর মাধ্যমে তাদের সেখানে পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষ লোকসান ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সমপ্রতি ঐ কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে তাদের কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই নারী শ্রমিকরা এখন তাদের ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাদের কেউ কেউ আবার অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা এমন কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা সকলেই জানিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ অত্যন্ত প্রতিকূল। নারী শ্রমিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা গৃহকাজে নিযুক্ত নারী শ্রমিকদের শ্লেভ রূপেই বিবেচনা করে থাকে। বহুক্ষেত্রে তারা যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়ে থাকেন।
নির্যাতিত কর্মীরা গড়ে প্রতি মাসে ৩৫টি অভিযোগ করেন বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশন-বমসার কাছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির কাছেও মাসে গড়ে এ ধরনের ১০ থেকে ১২টি অভিযোগ আসছে। এ রকম সমস্যার কারণে বছরে পাঁচ শতাধিক নারীকর্মী দেশে ফেরত আসেন বলে বমসা সূত্রে জানা গেছে। দেশে প্রবাসী নারীকর্মীদের নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এ তথ্য জানান। নারীকর্মীদের ওপর বেশি নির্যাতনের অভিযোগ আসে জর্ডান, দুবাই, লেবানন, ওমান, বাহরাইন ও সৌদি আরব এবং লিবিয়া থেকে। সংশ্লিষ্টদের দাবি হলো- সরকার যাতে দালাল চক্রের হাত থেকে এসব নারীকর্মীকে বাঁচায় এবং সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের বিদেশ পাঠায়।
এ ব্যাপারে জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষন ব্যুরো’র মহা পরিচালক বেগম শামসুন নাহার জানিয়েছেন, শুধুমাত্র জর্দানেই ২০১২ সালে ১১ হাজার ৫শ ৮২ জন ও এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ হাজার ২শ ১৩ জন বাংলাদেশি নারীকর্মী সরকারি ভিসায় চাকরির উদ্দেশ্যে গমন করেছেন।তিনি আরো বলেন, জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই বাংলাদেশি মহিলাকর্মীরা সুনামের সাথে কাজ করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছেন।জর্দানে বাংলাদেশি মহিলাকর্মীরা নির্যাতিত হলেও দূতাবাসের সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আসছে বললে তিনি জানান, জর্দানে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশি মহিলাকর্মী। তাই দু’একজনের মধ্য থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতেই পারে। আর আটক নারীদের দেশে ফেরত আনতে সরকারের পক্ষ থেকে বিমানের টিকেট দেয়া সম্ভব না বলে তিনি জানান

সংসারে সচ্ছলতার আশায় কুড়িগ্রামের এক নারী মাস ছয়েক আগে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান। কিন্তু সৌদি গৃহকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নেন রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে। দুই মাস পর ৬ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন।
গতকাল প্রথম আলোকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দেন এই নারী। তাঁর স্বামী ও ভাই কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবই তো শুনছেন। এখন আমরা কী করব বলে দেন।’
সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে গত এক বছরে এমন দেড় শতাধিক নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং নির্যাতিত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা এসব তথ্য দিয়েছেন।
নির্যাতিত ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জীবন বাঁচাতে ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অতিরিক্ত কাজের চাপ ও নির্যাতন সামলাতে না পেরে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে দূতাবাসের সেফ হাউসে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ১৫০ জন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত তিন মাসেই ৩৫ নারীর স্বজনেরা তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করেছেন।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, লেবানন, ওমান ও কাতারেও গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারীরা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এক বছরে আড়াই শরও বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এসব দেশে। এর মধ্যে সৌদি আরবের ৬০ জন, লেবাননের ৪৩ জন, জর্ডানের ৪৪ জন, দুবাইয়ের ৩৩ জন, আবুধাবির ১০ জন, ওমানের ১৪ জন ও কাতারের ১০ জনের স্বজনেরা তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রণালয় ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি দেশে ফিরেছেন।
এ ছাড়া সিরিয়ায় অবৈধভাবে পাচার হওয়া বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নারী যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ পরিবারের উদ্যোগে দেশে ফিরতে পেরেছেন। এ নিয়ে তাঁদের পরিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর চুক্তি হয়। সে বছর ২০ হাজার ৯৫২ জন নারী দেশটিতে গিয়েছেন। আর এ বছরের প্রথম তিন মাসেই গেছেন ২০ হাজার ৩৬ জন। এ ছাড়া গত তিন বছরে ৬০ হাজার নারীকর্মী জর্ডানে, ৫০ হাজার নারী আরব আমিরাতে, ৪০ হাজার নারী লেবানন, ৩০ হাজার নারী ওমান ও ১৭ হাজার নারী কাতারে গেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী নির্যাতন নতুন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অনেক দিন ধরেই বিষয়টি তুলে ধরছে। নির্যাতনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ দুই-তিন বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুলসংখ্যক গৃহকর্মী পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে গত বছর থেকে নারী কর্মীরা যাচ্ছেন। আর সেখানেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের অভিযোগ। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানোর যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে সেটি হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাগুলো দুঃখজনক। আমরা যখনই এই ধরনের অভিযোগ পাই, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। অন্তত ১০০ মেয়েকে আমরা ফিরিয়ে এনেছি। সচিবের নেতৃত্বে আমাদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সৌদি আরব ঘুরে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে এসেছে। যেসব গৃহকর্তা এসব ঘটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ওই দেশের আইনে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটিও আমরা দেখছি।’
নির্যাতন, গায়ে আগুন, মাথায় সেলাই: সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা রংপুরের এক নারী বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে অভাবের কারণে তিনি ২০১৫ সালের ২৫ জুন সৌদি আরবে যান। যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেখানে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। বাইরে থেকে আসা পুরুষেরাও নির্যাতন করত। প্রতিবাদ করায় গত বছরের ২১ আগস্ট তাঁর গায়ে আগুন দেওয়া হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়েটি বলেন, ‘আর কোনো মেয়েকে যেন ওই দেশে পাঠানো না হয়।’
এই বছরের ২ জানুয়ারি সৌদি আরবে যান ঢাকার উত্তর বাড্ডার এক নারী। যে বাসায় তিনি কাজ করতেন, ওই বাসার পুরুষেরা তাঁকে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করত। প্রতিবাদ করলে তাঁর চুল টেনে টেনে তুলে ফেলা হতো। মেয়েটির ভাই জানান, তিনি মন্ত্রণালয়ে অবেদন করার পর দুই মাসেও বোনকে ফেরত আনা হয়নি।
মানিকগঞ্জের পূর্ব আওরাঙ্গবাদ গ্রামের এক নারী সৌদি আরবের বনি ইয়াসার এলাকায় কাজ করতেন। নির্যাতনের কারণে গত ১৭ মার্চ চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এখন তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে। গত বছরের ১১ নভেম্বর সৌদি আরবে যান কুমিল্লার এক নারী। তাঁকে নির্যাতন করে মাথা ফাটিয়ে দিলে ১৪টি সেলাই লাগে।
ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন: সৌদি আরব থেকে ফেরা তিনজন নারী যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। যশোরের এক নারী বলেন, গত বছরের ৫ নভেম্বর তাঁকে সৌদি আরবে পাঠায় ফাতেমা ওভারসিজ। যে বাসায় কাজ করতেন, সেই বাসার গৃহকর্তা, তাঁর ছেলে এবং ছেলের বন্ধুরা তাঁকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেছে। ঢাকার শাহবাগ এলাকার এক লোক অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রীকে সৌদি আরবে একটি কক্ষে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের এক নারীর স্বামী অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রীকে যৌনকাজের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কুমিল্লার একজন জানান, তাঁর স্ত্রী নির্যাতন সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে সৌদি নিয়োগকর্তার কাছে যান। কিন্তু নিয়োগকর্তা তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন না।
সৌদি দূতাবাসের বিভিন্ন চিঠিতেও এই চিত্র উঠে এসেছে। গত ৪ নভেম্বর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সৌদি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ লেখেন, ‘এ পর্যন্ত ৫৫ জন গৃহকর্মী অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুর্ব্যবহার বা নির্যাতনের কারণে গৃহকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিনই তিন-চারজন গৃহকর্মী এভাবে আশ্রয় নিচ্ছে।’ গত অক্টোবরে পাঠানো আরেক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘গৃহকর্মীদের মধ্যে ৫৬ জন দূতাবাসের সহায়তায় এবং ৫৫ জনকে রিয়াদের দুটি কোম্পানির সহায়তায় দেশে পাঠানো হয়েছে। যাঁরা আসছেন, তাঁদের অনেকেরই শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেই। সৌদি গৃহকর্তাদের বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।’ ওই চিঠিতে নারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বেশ কটি বিকল্প প্রস্তাব দেন তিনি।
বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন, প্রতিদিনই তাঁদের কারও না কারও নির্যাতনের খবর পাচ্ছি। এটি বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। পাঠানোর আগে প্রত্যেককে মোবাইল ফোন দেওয়া ও দূতাবাসের পক্ষ থেকেও নিয়মিত তদারকির জন্য বহুদিন ধরে বলছি।’
অভিযোগ আছে, জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো একেকজনকে পাঠানোর জন্য এক হাজারের বেশি ডলার পায় বলে তারা যেকোনোভাবে নারী কর্মী পাঠাতে মরিয়া থাকে। তবে বায়রার সভাপতি আবুল বাসার বলেন, ‘সৌদি আরবের নিয়োগকর্তারা আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছিল, আমাদের মেয়েরা কোনোভাবেই নির্যাতিত হবে না। কোনো ঘটনা ঘটলে উভয় পক্ষই তদন্ত করবে। যখনই কোনো অভিযোগ উঠছে, যে প্রতিষ্ঠান তাকে পাঠাচ্ছে তারা উদ্যোগী হয়ে ফেরত আনছে।’
অন্য দেশেও নির্যাতন: খুলনার দৌলতপুরের এক নারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোন গত বছর জর্ডানে যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেখানে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। গৃহকর্তা তাঁর বোনের সারা শরীরে মদ ঢেলে দিতেন। তিনি বোনকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে চিঠি দিলেও এখনো আনতে পারেননি।
জর্ডান, লেবানন, ওমান, কাতার, দুবাই ও আবুধাবিতে এমন শতাধিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রথম আলোর কাছে রয়েছে। ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ৬ মার্চ সরকারকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশ ওমানে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী আসছে, যাদের অনেকেই নির্যাতনের শিকার। অনেকে পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। এসব কারণে ভবিষ্যতে দূতাবাসের ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে।


সূত্র প্রথমআলো ও রোকেয়া রহমান

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭

বিসকুট পাগলা বলেছেন: Valo likhechen boss...... Ami jantam emon ta hoy tobe sposto kono proman dekhchilam na. Arab er lok jon to r o chut__a, jotodur jani.

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:৫৯

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: ধন্যবাদ সচেতন হোন

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮

খন্দকার আঃ মোমিন বলেছেন: ৬৬ ধর্ষণ, ১১৩ জন আত্মহত্যা ,৪০-এর বেশি শিশু হত্য , তিন মাসের বাংলাদেশ

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

আমি এ আর বলছি বলেছেন: eita notun noi ,tobe poriman berece :(

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:০১

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: ঠিক,সত্য ঘটনা একটার পর একটা বের হয়ে আসছে

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশের সবাই জেনে শুনে বাংগালী মেয়েদের ওখানে বিক্রয় করে। আপনি হ্যো ১ম বার শুনছেন।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:০৩

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: এই তথ্য ভুল।সবাইকে প্রলোভন দেখান হয় দালালদের মাধ্যমে,যারা ওখানে যায় খাদ্দামা ভিসায় অর্থাৎ গৃহ পরিচালিকা ভিসায় তাদের ক্লাসটা খুব লোয়ার,তাদের উচু বেতনের চাকুরী র লোভ দিয়ে সহজেই প্রভাবিক করা যায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.