নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিপড়া ত্ত্ত্ব ও সত্য কথন

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৪৭

আসলে আমরা লক্ষ্যই করিনি ছোটবেলায় খেলা মাধ্যমে আমাদের মধ্যে কি সাম্প্রদায়িকতার বীজ ঢুকানো হয়েছে।প্রচলিত একটা কথা হয়তো সবাই শুনেছেন
কালো পিঁপড়া ভালো পিঁপড়া, লাল পিঁপড়া খারাপ। কারণ কালো পিঁপড়া কামড়ায় না, শান্তনিরীহ প্রকৃতির; আর লাল পিঁপড়া অনেক খারাপ, কামড়ায়, ব্যথা দেয়। কালো পিঁপড়া মুসলমান, লাল পিঁপড়া হিন্দু। কালো পিঁপড়া মারা যাবে না, মারতে হবে লাল পিঁপড়া।
ছোটবেলায় এরকম আপাতনিরীহ অনেক তুলনা দেখেছি। বড় হয়ে বুঝেছি এগুলো আসলে অল্পবয়সে ভেতরে মৌলবাদের বীজ বোনার স্বার্থান্বেষীদের এক ধরনের চেষ্টা। লাল পিঁপড়া পিষে মেরে ফেলা শিশুকিশোররা বেড়ে উঠবে হিন্দুদের প্রতি এক ধরনের বিরূপ মনোভাব নিয়ে, তাকাবে বিতৃষ্ণার সাথে। হিন্দুদের নির্যাতন করলে, তাদের জায়গাজমিবাড়িঘর দখল করে নিলে, মেরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে এইসব মনে হয়ত সবার আগে ভেসে উঠবে লাল রঙের বিষপিঁপড়ার কথা। সেই ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে যাওয়া স্ফীত চামড়ার কথাই মনে পড়বে শুধু। সহানুভূতি জাগবে না, প্রতিবাদ করবে না কেউ। কারণ মুসলমানরাই কেবল ভালো, হিন্দুরা খারাপ।
যুগে যুগে এই "কালো পিঁপড়া" একদম অপরিবর্তিত থেকে যায়। অপরিবর্তিত থাকে "লাল পিঁপড়া"রাও। সময়ের সাথে শুধু নামটা বদলায়। যেমন তাদের কখনও ডাকা হয় হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান,কাদিয়ানী,আহমেদিয়া ও শিয়া।
আরও কত যে প্রবাদ শুনেছি
১) ছোট থাকলে ভয় পেলে একটা ছড়া বলতাম ভুত আমার পুত পেত্নী আমার ঝি রাম লক্ষণ বুকে আছে ভয় আমার কী?বলতাম কারন ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে শিখেছিলাম।
পরে এক খালা দিল রাম লক্ষণ হিন্দুরা বলে। আমরা বলবো,
ভুত আমার পুত পেত্নী আমার ঝি
আল্লাহ রসুল বুকে আছে ভয় আমার কী?
২)আর জল/পানি, দাদা/ভাই - এসবের মাঝেও হিন্দু-মসুসলমান দেখে বড় হয়েছি আমরা। ভাবলেও অদ্ভুত লাগে।(যদিও পানি একটি হিন্দি শব্দ)
৩)মাথা কালো পাছা লাল ঢাউস সাইজের আরেক কিসিমের যে পিপড়া আছে তার কথাতো বললেন না। উনারা মোনাফেক পিঁপড়া নামে পরিচিত ছিল
৪)ছোট বেলায় আমার একটু ঠান্ডা সমস্যা ছিল বলে আমাদের বাসার ছাদে মা কিছু তুলসী লাগিয়েছিলেন।মধু দিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায় তাই। একজন এসে বললেন-"এসব হিন্দুয়ানি গাছ লাগিয়েছ কেন?"
৫) আমার এক পাড়াতো ছোটভাই আমাকে দাদা বলে ডাকে। একজন আমার ওই ছোট্ট ভাইটিকে বলল, ভাইকে দাদা ডাক কেন? ওটা তো হিন্দুরা বলে।
আমার শুধু এটা মনে হয় এইসব আজাইরা বিভেদ শিকিয়ে বাচ্চাদের মানসিকতায় সাম্প্রদায়িক মনভাব তৈরি করা হয়। এর চেয়ে ছেলেধরা বা যৌন নির্যাতন কারী নিয়ে সঠিক শিক্ষা দিলে কি হয়? সেটা বেশিরভাগ সময় কাজে লাগে।
আমাদের দেশে দুই ধরনের পিপড়া দেখা যায়। কালো পিপড়া আর লাল পিপড়া। ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে ধারনা ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে, কালো পিপড়া কামড়ায় না তাই তারা মুসলমান আর লাল পিপড়া কামড়ায় তাই তারা হিন্দু। কালো পিপড়া মারলে আল্লাহ্‌ গুনাহ দিবেন আর লাল পিপড়া মারলে সওয়াব দিবেন। আমি তখন খুঁজে খুঁজে লাল পিপড়া মারতাম।
এমনও হয়েছে যে, কোথাও যখন লাল পিপড়া খুঁজে পাচ্ছি না তখন খুঁজে খুঁজে তাদের বাসা বের করতাম। তারপর সেখানে হয় মুতে ভাসাতাম অথবা পানি ঢেলে বন্যা বন্যা খেলতাম। পিপড়াগুলার দিকবিদিক ছোটাছুটি দেখে আমি পৈচাশিক আনন্দ উপভোগ করতাম।
আমি তখন বয়সে ছোট হলেও সাইজে লাল পিপড়াদের থেকে অনেক গুন বড় ছিলাম। তাই আমার ক্ষমতা ও শক্তির কাছে লাল পিপড়া সমাজ হার মানতে বাধ্য ছিল।আস্তে আস্তে আমরা বড় হলাম কিন্তু সময় বদলায়নি।আজও সেই মানুষিকতা রয়ে গেছে।
আর তখন থেকেই একটা ব্যাপার আমাদের মাঝে ঢুকে গেল যে -
সংখ্যলঘুরা দু্র্বল ক্ষমতাবলে নখের তলে দাবিয়ে রাখার মধ্যেই আমাদেরইহজগতের সকল সুখ নিহিত...!!
আর তার ফলাফল তাজিয়া মিছলে হামলা,আহেমেদিয়া মুসলিম জামাতে হামলা,খুলনায় কাদিয়ানী মসজিদে বোমাহামলা,গোপালগঞ্জ চর্চে বোমা হামলারামুর বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেয়া,দিনাজপুরে মঠ পুরোহিতকে হত্যা।আর মূর্তি ভাঙ্গা সংখ্যালঘু ধর্ষন,পাহাড়ী নারী ধর্ষন,এসব তো ডালভাত।
অথচও ইসলামে কি স্পষ্ট বর্ননা দেয়া আছে
নবী(সঃ) বলেন: অমুসলিম প্রতিবেশীরও মুসলিমদের উপর অধিকার রয়েছে। একবার এক মুসলিম আর এক অমুসলিম নবী(সঃ) এর কাছে বিচার চাইতে গেলে নবীজী অমুসলিম এর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। ইচ্ছে করলে তিনি অন্যায়ভাবে মুসলিম লোকটির পক্ষে রায় দিতেপারতেন। যারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবি করেন, আর দুর্বল গোষ্ঠির প্রতি অন্যায়-অবিচার-নির্যাতন-নিপীড়নকে মনে মনে সমর্থন করেন, তারা নিজেদের মুসলমানিত্ব ঝালাই করে নেন । আপনার ভেতর প্রবলভাবেই সমস্যা আছে ।
রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা মুসলিম দেশে অবস্থানকারী অমুসলিম দেশের কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দুরত্ব থেকে লাভ করা যায়।
সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ৬/২৫৩৩
৮) যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে লড়াই করেনি এবং বাড়ীঘর থেকে তোমাদের তাড়িয়ে দেয়নি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না৷ আল্লাহ ন্যায় বিচারকারীদের পছন্দ করেন৷ (সুরা আল মুমাইন)
৯) আল্লাহ তোমাদেরকে শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করছেন যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে লড়াই করেছে, বাড়ীঘর থেকে তোমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে এবং তোমাদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য করেছে৷ যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে তারাই জালেম৷ (সুরা আল মুমাইন)
“যে কাউকে হত্যা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলো। এবং যে কাউকে বাঁচালো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচালো।” (কোরান ৫:৩২)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:১৮

কালনী নদী বলেছেন: আসলে এসব ব্যাপারে একন কথা বলতে কেমন লাগে, সবাই সেনসেটিব তাই কখন কে কষ্ঠ পায়! বোঝাটাই দায়।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



মনে হয়, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.